তবু ভালোবাসি তোকে (২)
তবু ভালোবাসি তোকে (২)
তবু ভালোবাসি তোকে
একটি প্রেমের গল্প
পর্ব - ২
কলমে - কৃষ্ণ ব্যানার্জী
রেশমীর সাথে আমার যখন আলাপ হয় , তখন আমি সপ্তম শ্রেণীতে পড়ি । পাশের পড়ার রঞ্জন দার কোচিং সেন্টারে পড়তাম আমরা । রঞ্জনা ছেলে - মেয়েদের আলাদা আলাদা পড়াতেন । রেশমীর তখন সবে পঞ্চম শ্রেণী । আমাদের গ্রূপটাই ছিলো সবচাইতে ছোট গ্রুপ । আমরা মাত্র পাঁচ জন পড়তাম ওই গ্রুপে । কিছুটা দেরি করে ভর্তি হওয়ার ফলে অন্য গ্রুপে জায়গা মেলেনি আমাদের । একদিকে ভালোই হয়েছিল , আমাদের পরের গুরুপটাই হলো রেশমীদের , আমরা বেরতাম আর ওরা ঢুকতো। ওর তখন পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে । আসা যাওয়ার পথে ধীরে ধীরে আলাপ হয় রেশমীর সাথে , তারপর একটা বন্ধুত্ব , বন্ধুত্ব একটু গভীর হতে ফেরার পথে ওর জন্য অপেক্ষা করতাম । ওদের ছুটি হলে ও আমার সাইকেলে চোরে বাড়ি যেতো । ধীরে ধীরে ওদের পরিবারের সাথেও আলাপ হয়ে গেলো । ওর একটা ছোট বোন ছিলো , ওর থেকে দুই বছরের ছোট । তখন সে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে । ওর বান্ধবীরা আমাদের নিয়ে কথা বলতো কিন্তু রেশমীর কোন প্রতিবাদ ছিলোনা ফলে আমার মনে হোতে লাগলো আমার প্রতি ওর একটা ফিলিংস আছে । এভাবে দেখতে দেখতে আমি মাধ্যমিক পাস করলাম । স্কুলের মধ্যে টপ করলাম । সেই আনন্দে ওদের বাড়িতে একটা ছোট পার্টি হল , সেখানে ওর ব্যবহার আমাকে আরবেশি কনফার্ম করেদিল ওর মনেও আমার জন্যে একটা ফিলিংস রয়েছে কিন্তু কিছু বলতে পারলামনা সেই মুহূর্তেও , আমার কেমন যেন মনে হয়েছিল কলেজে ওঠার পর ওকে অফার করবো । দেখতে দেখতে ওর মাধ্যমিক আর আমার উচ্চমাধ্যমিকের টেস্ট শেষ হয়েগেলো , ওর মা - বাবা আর ওর আবদারে প্রতিদিন সকালে ওকে পড়াতে যেতে লাগলাম আমি । ওর কিছু কিছু আচরণ আমাকে যেনো আরো পরিষ্কার করেদিল আমাদের ভালোবাসাকে । আমি সম্পূর্ন রূপে ওর ভালোবাসার জালে আবদ্ধ হলাম । কখনও সখনও মাথা বেথা হলে আমার কোলে শুয
়ে পড়তো ও । আমি ওর মাথাতে হাত বুলিয়ে দিতাম । যখনি আমি বাড়ি যেতে চাইতাম তখনি বার বার আমাকে আটকাতো সে । এইরুপ আচরণ দেখে কি ভাবে যায় বলুন । সময় কাটতে লাগলো ওদের আগে পরীক্ষা হলো তারপর আমাদের । ও যথেষ্ঠ ভালই রেজাল্ট করলো আরো একটা আনন্দের দিন । আমি আবারও স্কুলের মধ্যে প্রথম হলাম । এবার আমার কলেজ যাওয়ার পালা , একাউন্টেন্সিতে অনার্স নিয়ে ভর্তি হলাম কলেজে । দুচারদিন কলেজ করার পড় মোন মোন ঠিক করলাম এবার ওকে বলে দেওয়াই ভালো । এখন অবশ্য আমাদের মধ্যে দুরত্ব একটু বেরেছে । আমি এখন আর রোজ ওদের বাড়িতে জাইনা কারণ ওর আর আমার সাব্জেক্ট আলাদা । ওর
সাবজেক্ট আর্স আর আমার কমার্স। মাঝে মধ্যে ইংরেজীটা দেখিয়ে দেই । সেদিন কথাটা ওর কাছে পারবো এমন সময় বাড়ি থেকে ফোন আসে বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে । খবরটা ওকে জানিয়ে আমি হাসপাতালে ছুটলাম । ওর বাবা সেখানে এলেও ও সেদিন আসেনি । রাতে বাবা চলে গেলেন । মাথার উপর থেকে একটা ছাতা চলে গেলো । পড়ে অবশ্য ও, ওর মা , বোন সকলেই এসেছিলো । সেই মুহূর্তে কিছুই বলা হোলনা । কিছুদিন কাটে গেলো , আমার ফার্স্ট সেমিস্টারের পরীক্ষা শেষ হয়ে গিয়েছে । বাবার কোম্পানি থেকে কিছু টাকা দেওয়া হয়েছিল , সেই সামান্য টাকা দিয়ে অনেক কষ্টে হিসাবকরে চালাতে থাকে মা । মাকে প্রস্তাব দেই প্রাইভেট পড়াবার, মা বেজায় চোটে গিয়ে বলেছিলেন যেভাবে চলছে ঠিক চলেজাবে পড়াশুনার সাথে কোন আপস চলবেনা । বুঝলাম বলে কয়ে কিছু করা যাবেনা । এক বন্ধুর বাড়ির নিচের তলার একটা ঘর পেলাম , তার মা বলল ভাড়া লাগবেনা ইলেকট্রিক টুকু দিলেই চলবে । গোপনে চলল জীবনের গোপন অধ্যায় । পেটে না খেয়ে সেই টাকা জমাতে লাগলাম ব্যাংকে ।
একদিন বিকালে ওর সাথে দেখা করলাম । ওকে জানালাম মনের কথা । চুপ করে সবটা শুনলো সে । তারপরে বলল আগামী কাল উত্তর দেই । আমি সম্মতি জানালাম । ওর বোলেদেওয়া জায়গাতে অপেক্ষা করছি , একটা ছেলের বাইকের পিছনে চোরে আমার সামনে এসে দাড়ালো আমার মনের রাজকুমারী । ছেলেটিকে দেখিয়ে বলল ওর নাম রানা , ওর বাবা একজন ব্যবসায়ী । ওদের দুটো প্রাইভেট কার রয়েছে , ও রাস্তায় বেরলে ওর পকেটে সবসময় হাজার পাঁচেক টাকা ক্যাশ থাকে । এছাড়া ডেভিট কার্ড , কেডিটকার্ট আগুলোতো থেকেই । আমি কিছুটা আঁচ করতে পেরেও ওকে বললাম ওর বাবার আছে সেতো ভালো কথা সেখানে আমার কি করবার আছে ? ও বলল আমি ওকে ভালোবাসি । আমি চাই আমার ভবিষ্যত টা যেনো সুখের হয় । আমার মনে দারুন আঘাত লাগলো , নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম ভালোতো , কিন্তু ওর নিজের কি আছে ? ও বলল রানা বাবার এক ছেলে , যেটা ওর বাবার সেটাই ওর । আমি বললাম সরি বিষয়টা আমি মানতে পারলামনা । ও বলল সেটা তোমার বিষয় তুমি যদি কোনদিন ওর জায়গাতে পৌঁছাতে পারো তবে আমার সাথে দেখা করতে এসো। আমি বললাম সেটা আমার পছন্দের নয় , আমি চাই আমার পরিচয়তে আমার বাবা - মায়ের পরিচয় হোক । তাই আমি নিশ্চই তোর সাথে দেখা করবো কিন্তু নিজের জায়গাতে পৌঁছিয়ে । তার পর থেকে পাঁচ বছর ওর সাথে আমার দেখা হোলনা …………… তবে যে অবস্থাতে দেখা হলো সেটা আমি কোনদিন চাইনি ।
বাকিটা গামী পর্বে ……..।