STORYMIRROR

Krishna Banerjee

Abstract Classics Others

3  

Krishna Banerjee

Abstract Classics Others

তবু ভালোবাসি তোকে

তবু ভালোবাসি তোকে

4 mins
17


                     আমি অনিরুদ্ধ সরকার , বর্তমানে একটি কল সেন্টারের M.D , একটা সময় ছিল যখন ভেবিছিলাম নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরে জন্ম নেওয়া বড্ড পাপের । এদের জীবনে কোন আসা - ভালোবাসা কিছুই থাকেনা , থাকে শুধু সংঘর্ষ , বাবাকে দেখেছি যুদ্ধ করতে করতে মাত্র 55 বছর বয়সে চলে গেলেন । তখন আমার বয়স সবে কুড়ি । একটু বেশি বয়সে বাবার বৈবাহিক জীবন শুরু হয় । মায়ের সাথে বয়সের ডিফারেন্স নাই নাই করে বছর দশেকের । আমি তখনও পড়াশুনা করছি ,বি কমের ছাত্র আমি , দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র । বাবা একটি প্রাইভেট কোম্পানীতে কেরানীর কাজ করতেন । যেটুকু বেতন পেতেন তাতে সব কিছু চালিয়ে সঞ্চয়ের ভাড়ারটা শূন্যই থাকতো । তখনও বাবার রিটায়ার মেন্টার বয়স হয়নি , কোম্পানি এক কালিন কিছু টাকা মাকে দিয়েছিলেন বটে , তবে সেই টাকা মাকে প্রচণ্ড হিসাব করেই চালাতে হত। মায়ের একটাই চিন্তা ছিল যেভাবে হোক আমার পড়াটা শেষ করাতেই হবে । তিনি হয়তো ভাবতেন স্নাতক হতে পারলেই তার ছেলের কপালে একটা চাকরি জুটে যাবে । আমাদের রাজ্যে চাকরি এতটা সহজ বিষয় নয় , সেটা মা না বুঝলেও আমি খুব ভালো ভাবেই জানতাম । তাই গোপনে কিছু প্রাইভেট পড়াতে শুরু করি । মাকে প্রথমে বিষয়টা বলিনি কারণ মার ধারণা ছিল অন্য কিছুর মধ্যে আমি যুক্ত হলে আমার পড়া শুনার ক্ষতি হয়ে যাবে । মা সরস্বতী হয়তো আমাকে একটা সমর্থনের হাত আমার মাথায় রেখেছিলেন । প্রথম থেকেই ওটাতে আমি বেশ ভালই ছিলাম । ফাইনাল ইয়ারেও কলেজের মধ্যে আমি প্রথম হই। এই দের বছরে আমি আমার একটা জায়গা তৈরি করে নিতে পেরেছি , প্রথমে বাড়িতে গিয়ে পড়াতাম এখন একটা ছোট্ট ঘর ভাড়া নিয়েছি যদিও সেটা মাকে না জানিয়েই , কারণ আমাদের বাড়িতে একটা ঘর রয়েছে যেটা শুধু মাত্র আমার পড়ার জন্য , বাবা - মায়ের কাছে ওই রুমটা হল মন্দির । ওই ছোট্ট রুমটার মধ্যেই তাদের অনেক স্বপ্ন জড়িয়ে রয়েছে হয়তো ওটাকে কোচিন রুম বানাতে গেলে বাবা - মায়ের স্বপ্নে আচর কাটা হতো ।

এই দের বছরে আমার সঞ্চয় আড়াই লক্ষ টাকা , কিন্তু একটা টাকাও আমি খরজ করতে পারিনি কারণ আমি জানতাম ওই টাকাগুলো এক সময় আমার কাজে আসবে । স্নাতক হবার পর থেকেই সরকারি চাকরির পরীক্ষা দিতে শুরু করলাম , কয়েকটি পরীক্ষা দিতেই আমি বুঝে গেলাম পরীক্ষা দিয়ে সরকারি চাকরী জোটানো এতো সহজ নয় । কেমন যেন মনে হলো আমি বোধহয় সময় নস্ট করছি আরো দুটো বছর কেটে গিয়েছে , এখন আমার ছাত্র সংখ্যা ১৬০ জন প্রায় । মা এখন সবটাই জানেন , আমি মায়ের হাতে সংসার খরচ বাবদ কিছুটাকা দেই , তার পরেও আমার সঞ্চয় প্রায় ছয় লাখ । কয়েকবার ভেবেছিলাম এটাকেই প্রফেশান করে নেবো কারণ ছাত্রদের সাথে তাদের বাবা - মায়ের সাথে আমার সম্পর্কটা বেশ ভালই । তবুও কিছু সময় পর আমার মনটা কিছুটা ঘুরে গেলো । একজনের কথা খুব মনে পড়ছিলো সেদিন , আমি ঠিক করলাম M.B.A করব। মাকে জানালাম , মা এক কথায় রাজি হয়ে গেলেন বটে তারপর বললেন বাবা ওটা পড়তে কেমন খরচ পড়বে রে । আমি বুঝলাম পড়ার খরচ নিয়ে মা একটু টেনশনে পরে গিয়েছেন , আমি তাকে আস্থা দিয়ে বললাম ওসব নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবেনা । প্রাইভেট পড়ানো বন্ধ করলাম না , কলেজে পুরো বিষয়টা জানিয়ে জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করলাম । একটা কঠিন যুদ্ধের পর আজ আমি এখানে দাড়িয়ে ।

                               এই কথাগুলো আপনাদের সাথে না বললেও চলতো , কিন্তু এই কথাগুলো আপনাদের না জানালে আপনারা সম্পূর্ন গল্পটির সঠিক মজা পাবেন না। আজ আমি যে এই জায়গাতে দাড়িয়ে তার জন্য একটা বিশেষ ভূমিকা রয়েছে রেসমির । আমার জীবনে রেশমি যদি না আসতো তাহলে হয়তো আজ জীবনকে এতটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করতাম না । হয়তো কোচিন ক্লাসটা আর একটু বাড়িয়ে একটা সংসার পেতে , যে উপার্জন টা হতো সেটা নিয়ে বেশ আনন্দে দিন কাটিয়ে ফেলতাম । কিন্তু রেশমি আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছিল ভালোবাসা শুধুমাত্র একটা ভালো মানুষ বা একটা ভালো মনের মানুষ হলেই পাওয়া যায়না , বর্তমানে ভালোবাসা পেতে হলে , ভালো অঙ্কের টাকা থাকতে হয় । আর যেদিন সেটা আমি ওর বয় ফ্রেন্ডের সাথে কথাবলে বুঝেছিলাম । ওর বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে যতটা ওর গর্ব ছিলো তারথেকে বেশি অহংকার ছিলো ছেলেটির বাবার সঞ্চিত অর্থের । আমি সেদিন ছেলেটিকে শুধু একটা কথাই বলেছিলাম তোমার কি আছে ? ছেলেটি বলেছিলো আমি বাবার এক মাত্র সন্তান , তাই যা বাবার সেটাই আমার । সেদিন আমি মনে মনে একটা প্রতিজ্ঞা নিয়ে ফেলেছিলাম এই যে যেটা আমার সেটা শুধুই আমার , একদিন আমি নিজে বড়লোক হয়ে ওকে দেখিয়ে দেবো আমি নিজের ক্ষমতায় বড়লোক হয়েছি , আমার বাবা - মা বলবেন ছেলের টাকা মনে আমার টাকা । আমি মোন থেকে ভালোবেসেছিলাম রেশমি কে , রেশমি আজ বিবাহিত তবুও আজও আমি ভালোবাসি ওকে । এই গল্প আমার আর রেশমীর একটি অসমাপ্ত প্রেমের গল্প । কি ভাবে এতটা ওলট পালট হয়ে গেলো আমার জীবন । এখন আমার বয়স বত্রিশ । সমাজে আজ আমি প্রতিষ্ঠিত । প্রতিদিনই কোন না কোন মেয়ের বাবা আসেন আমার মায়ের কাছে মেয়েদের সম্বন্ধ নিয়ে কিন্তু আমি রেশমীর সাথে একটি বার দেখা করতে চাই আমার বিয়ে ফাইনাল করবার আগে ……………..।

                           বাকিটা আগামী পড়বে …………


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract