তবু ভালোবাসি তোকে
তবু ভালোবাসি তোকে
সেদিন যে ওখান থেকে চলে এসেছিলাম তারপর বিগত দশ বছর ওর সাথে আর কোন যোগাযোগ ছিলোনা । কাকিমা অবশ্য রেশমীর বিয়েতে ওর বোনের বিয়েতে আমাকে আমন্ত্রণ করেছিলেন কিন্তু আমি হয়তো ইচ্ছে করেই যায়নি সেই সময় । পড়াশুনা শেষ করতে করতেই একটা চাকরি জুটেগালো । যদিও শুরুর স্যালারি তেমন একটা আহামরি ছিলোনা তবুও আমি চাকরি টা নিয়েছিলাম , কারণ আমার নিজের প্রতি বিশ্বাস ছিলো। চাকরির পাশাপাশি পড়াশুনা , তার পাশাপাশি কোচিং একটু কষ্ট হলেও ধনী হয়ে ওঠার ভূত মাথায় চেপে বসেছিল। বছর দুয়েকের মধ্যেই নিজের জায়গাটা কোম্পানীতে পাকা করে নিলাম । এখন আমি ওই কোম্পানির M.D । রেশমী এখন শুধু মাত্র তিক্ত স্মৃতি ছাড়া কিছুই নয় । ওর কিছু ছবি আমার ফোনে রয়ে গিয়েছিল , মাঝে মাঝে সেগুলোকে দেখলে আরো এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা পাই আমি । মাঝে মধ্যে ওকে যে দেখতে ইচ্ছে করেনা তা নয় , হয়তো ওর ফোন নম্বরটাও এক রয়েছে , দু - একবার ডায়াল করতে গিয়েও আবার থেমে যাই। রেশমী এখন বিবাহিত , হয়তো অনেক পরিবর্তন ঘটেগিয়েছে তার সব কিছুতেই । আমি যেখানে ওকে শেষ করেছি স্মৃতিটুকু ওই পর্যন্তই থাকুক এই ভেবে নুতন করে আর যোগাযোগ করিনি ওর সাথে ।
এর মধ্যে আমার জীবনেও অনেক ওলট পালট ঘটে গিয়েছে , একদিন রাতে হঠাৎ করেই মা আমাকে ছেড়ে চলে গেলেন । বাড়ির প্রতি যেটুকু টান ছিল সেটাও আর রইলনা । এখন শুধু এগিয়ে যাওয়ার দৌড় , নিজেকে কিভাবে আরো প্রতিষ্ঠিত করা যায় । কত টাকা থাকলে একটা মেয়ে একটা ছেলেকে দ্বিধা হীন ভাবে মেনে নিতে পারে । এখন আমার একাউন্টে কয়েকলক্ষ টাকা পড়ে রয়েছে , দিনে দিনে তাদের সুদ বাড়ছে । ব্যাংকে যা জমা হয় তার হিসাব আমি রাখিনা , কারণ টাকাটা আমার কাছে মেন্ডেটারি নয় , আমি শুধু এটুকুই দেখতে চাই একটা মানুষ সারা জীবনে কত টাকা কামাতে পারে । কত টাকার বিনিময়ে প্রেমকে পাওয়া যায় । আজকের ডেটে সবটাইতো দাঁড়িয়ে রয়েছে বিনিময়ের উপর । আমিওতো টাকার বিনিময়ে ডাক্তারের কাছে মায়ের প্রাণ ফিরোত চেয়েছিলাম , সেদিন আমার কোটি টাকার সাম্রাজ্যের একটা টাকাও কাজে আসলোনা। ডাক্তার বাবু বললেন যে মানুষটা একবার চলে যায় তাকে কোন কিছুর বিনিময়ে ফিরিয়ে আনা যায় না । আমি ডাক্তার বাবুকে বলেছিলাম তাহলে যখন টাকার বিনিময়ে মানুষের প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়া যায়না তখন টাকার জন্য আপনারা মানুষকে বিনা চিকিৎসায় মেরে ফেলেন কিভাবে ? ডাক্তার বাবু সেদিন কোন উত্তর দিতে পারলেন না । জানিনা আদেউ কিছু বুঝলেন কিনা নাকি বুঝেও না বোঝার ভান করে সেখান থেকে চলে গেলেন । সেদিন আমার জীবনের শেষ বাঁধন টুকুও ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল । তার পর থেকে দিন , রাত্রি , মাস , বছর ওসবের কোন হিসাব আর আমার জীবনে মূল্য রাখেনি ।
সেদিন সন্ধ্যায় একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরলাম । এখন একটা নুতন অভ্যাস হয়েছে । কোনদিন যদি তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরি সেদিন নিজের হাতে চিকেন কোষা আর রফিকের দোকানের তন্দুরি সাথে সামান্য লিকার । বিভিন্ন দেশের নামি দামী ব্র্যান্ড দিয়ে একটা সোকস বানিয়েছি । যেদিন যেটা পছন্দ হয় সেদিন সেটার থেকে দু - চার পেগ খেয়ে নেই । ওই চার পেগ খেতেই আমার ঘণ্টা দুয়েক কেটেজায়। বাড়ির ড্রয়িং রুমে একটা 51 ইঞ্চির টেলিভিশন সেট করা রয়েছে , ওটার কান মুলতে থাকি আর এক ঢোক করে লিকার সাথে চিকেন কোষা আর তন্দুরি । এভাবেই সন্ধ্যাটা বেশ রঙিন হয়ে যায় । আজ আর নিজের রান্না করতে ইচ্ছে করছিলনা , তাই অনলাইনে চিকেটা নিয়ে নিলাম ফেরার পথে তন্দুরি নিয়েই ঢুকলাম , ঘরে ঢোকার কিছু সময়ের মধ্যেই চিকেন মহারাজ হাজির । আমি ছাড়াও বাড়িতে 3 জন আছেন জার আমার রাজপ্রাসাদ দেখাশুনা করেন । আমি আসার পড় তাদের ছুটি দিয়ে দিলাম । তারপর সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে টেলিভিশন টা ছেড়ে বসে পড়লাম টি টেবিলের সামনের সোফাতে ।
বেশ কিছুটা সময় কেটে গিয়েছে , দুপেগ শেষ করে ফেলেছি । ওতে নেশা আমার হয়না , একটু ঝিম ঝিম ভাব আসে আরকি , তিন নাম্বার পেগটা বানাচ্ছি এমন সময় আমার সেল ফোনটা বেজে ওঠে । প্রথম বারটা আমি এরিয়ে যাই, সবে একটা চুমুক দিয়েছি ফোনটা আবার বেজে ওঠে । এবার আমি ফোনটার দিকে তাকিয়ে কিছুটা অবাক হই , আবার বলতে পারেন হতবাক হই। ফোন নম্বরটা আমার খুব চেনা , খুব বললে ভুল বলা হবে । ওই নাম্বারটা হয়তো জীবনে কোনদিন ভুলতেই পারবোনা । ধরবো - না ধরবোনা ভাবতে ভাবতে ফোনটা কেটে যায় । জীবনে এই প্রথমবার এক চুমুকে গ্লাসটা খালি করে ফেলি । আবার ফোনটা বেজে ওঠে । ফোনটা রিসিভ করার পর ওপার থেকে যে কণ্ঠস্বর ভেসে আসে সেটা আমার কানে যাওয়া মাত্র আমার দুচোখ জলে ছল ছল করে ওঠে । ওপারে আর কেউ নয় রেশমী। ও বলে চিনতে পারলে , আমি সরাসরি প্রশ্নে চলে যাই “ হঠাৎ কি মনে করে “ ? ও বলে কালকে আমাকে এক ঘণ্টা সময় দিতে পারবে । আমি মনে মনে বললাম তোমার জন্য তো সারা জীবনটা ফলেও কম হবে । তারপর বললাম কোথায় দেখা করবি ? ও বলল আমাদের পুরানো আড্ডাতে । আমাদের পুরানো আড্ডাটা হল ভিক্টোরিয়া , আমার আফিস থেকে 10 মিনিটের রাস্তা , আমি বললাম কখন । ও বলল সেটা সকালে জানিয়ে দিলে হবে ? আমি সম্মতি জানালাম । ফোনটা ডিসকানেক্ট করে দিলো । এটা ওর আগাগোরার অভ্যাস , নিজের কথা শেষ হলেই ফোন কেটে দেওয়া ।
সামান্য একটু নেশা হয়েছিল , কয়েক মুহূর্তে সেটা কেতেগালো । সেদিন রাতে আর খেলাম না। তবে ঘুমাতেও পারলাম না । সারা রাত ধরে অপেক্ষা করতে লাগলাম এক নুতন সকলের ।
বাকিটা আগামী পর্বে…………