Biplab Das

Abstract Children Stories Comedy

4  

Biplab Das

Abstract Children Stories Comedy

পায়েলের রিসার্চ

পায়েলের রিসার্চ

4 mins
266


পায়েল কলকাতায় ফিরে আসায় বাড়ির সকলেই খুশি। কানাডাতে রিসার্চের কাজে গিয়ে ছিল। বছর দুয়েক ওখানে ছিল। এখন ফিরে এসেছে। কানাডাতে করা রিসার্চের কাজ কলকাতা থেকেই করতে চায় বলে চলে এসেছে। পায়েলের রিসার্চের কাজটা একটু আলাদা। ও এক ধরনের ফাঙ্গাস নিয়ে কাজ করছে। ফাঙ্গাসটার নাম কর্ডইসেপ।

ফাঙ্গাসটা মারাত্মক। তবে মানুষের জন্য নয় - পিঁপড়ে, মথ, ফড়িং, বোলতা এই সব পোকামাকড়ের জন্য। তবে বিশেষ করে পিঁপড়েদের জন্য। ফাঙ্গাসটি প্রথমে পিঁপড়েদের মাথার ঠিক পিছনে বাসা বাঁধে, ধীরে ধীরে শরীর এবং মস্তিষ্কের ওপর আঘাত হানে এবং তাদের মেরে ফেলে। মেরে ফেলার পদ্ধতিটিও অদ্ভুত। মাথার পিছনে বাসা বাধার পর পিঁপড়েরা অদ্ভুত আচরন শুরু করে। মাথায় আঘাত হানার ফলে তাদের স্নায়ুতন্ত্রে প্রভাব পড়ে। এরপর সামনে যা কিছু পায় তাই কামড়াতে শুরু করে। এই ভাবে ফাঙ্গাসটি প্রথম আঘাতটা চোয়ালে হানে। সেই কামড়ই মরণকামড়ে পরিনত হয় এবং কামড়াতে কামড়াতেই পিঁপড়েগুলি মারা যায়।

এই ফাঙ্গাসটি এতটাই ভয়ঙ্কর যে একটি পিঁপড়েকে মেরে ফেলার পর এরা ফেটে গিয়ে এক থেকে বহু হতে পারে এবং সঙ্গে সঙ্গে আসেপাশের যত পিঁপড়ে আছে তাদের সকলের ওপর আধিপত্য কায়েম করতে পারে এবং একে একে তাদের সকলকে একইভাবে মেরে ফেলতে পারে।

ফাঙ্গাসটি আকারে পিঁপড়ের থেকে ২-৩ গুন বড়। লম্বা এবং সরু। মাঝে একটা ছোট বলের মতন আছে। পিঁপড়ের মাথার পিছনে যখন আটকে বসে থাকে যেন মনে হয় কেউ সূচ গেথে দিয়েছে। ফাঙ্গাসটি পিঁপড়েদের শরীরে কি চালান করে সেটা খুঁজে বার করাই পায়েলের রিসার্চের একমাত্র উদ্দেশ্য।

পায়েলদের বাড়িটা পুরনো আমলের এবং বড়। ও নিচ-তলাটা রিসার্চের কাজের জন্য নিয়েছে। নিচ তলাটায় কেউ বিশেষ আসেনা। ও একাই থাকে। বাইরের বেরনোর দরজাটা অন্যদিকে হওয়ায় এদিকটা বেশ নিঝুম। কাজ করার পক্ষে আদর্শ। নিচের তলার পাশেই বাগান। বাগানে বেশ কয়েকটি গাছও রয়েছে। কিছু ফুল গাছও রয়েছে। পায়েল বেশির ভাগ সময়ে বাগানেই থাকে। বাগানটাও রিসার্চের কাজের জন্য লাগে। কারন বাগানেই বেশির ভাগ পোকামাকড় দেখতে পাওয়া যায়। এখানেই পিঁপড়েদের দেখা বেশি মেলে।

পায়েল বাগানে যায় পিঁপড়েদের কলোনি খুঁজতে চায়। কিছুদিন খোঁজার পর সে বাগানের এক কোনে একটি পিঁপড়েদের কলোনি খুঁজেও পেয়ে যায়। এবং সেখানে কর্ডইসেপ ফাঙ্গাসের উপস্থিতিও লক্ষ্য করে। যে কলোনিটার খোঁজ পেয়েছে সেখানে ফাঙ্গাসের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলোও তা মহামারির আকার ধারন করেনি। কিন্তু পায়েল বুজতে পারে আর কিছুদিন পরেই তা মহামারির আকার ধারন করবে এবং তার ফলে প্রায় সব পিঁপড়েই মারা যাবে।

পায়েল রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করতে থাকে। ওর জীবনের বেচে থাকার উদ্দেশ্যই যেন হল এই ফাঙ্গাস। পায়েল কাজে এতটাই মগ্ন যে ও নিচ থেকে ওপরের তলায় ওঠেনা বললেই চলে। ওর ধ্যানজ্ঞান এখন এই কর্ডইসেপ ফাঙ্গাস। পায়েলের প্রতিদিনের কাজ হল ফাঙ্গাসটি কিভাবে পিঁপড়েদের আক্রমন করে এবং পিঁপড়েরা কিভাবে তার প্রতিক্রিয়া করে তা পর্যবেক্ষণ করা। এবং দিনের শেষে স্কাইপে তার স্টাডির ব্যাপারে কানাডাতে রিসার্চ টিমের বাকিদের জানানো।

বাবা-মা ছাড়া, পায়েলের সঙ্গি বলতে একটি বিড়াল। বিড়ালটি বাড়িতেই থাকে এবং পায়েলের সঙ্গেই থাকে। পায়েল যখন কলোনি স্টাডি করে তখন বিড়ালটি বাগানের মধ্যেই ঘুরে বেড়ায়। এই বিড়ালটির সঙ্গে সময় কাটানো ছাড়া পায়েলের অবসর কাটানোর আর একটি উপায় হল কম্পিউটার গেমস খেলা। যে গেমটি পায়েল সবচেয়ে বেশি খেলে তার বিষয়বস্তুর সাথে রিসার্চের কিছুটা মিল আছে। গেমটির বিষয়বস্তু হল একধরনের ফাঙ্গাসের মানুষের ওপর আক্রমন এবং মানুষেরা সেই ফাঙ্গাসটি থেকে নিজেদের কিভাবে রক্ষা করে তার লড়াই। একেবারেই যে বিষয়ে কাজ করছে অনেকটা তারই মতন। তবে বাস্তবে ফাঙ্গাসটির সঙ্গে লড়াই মানুষের নয়, পিঁপড়েদের।

এই ভাবেই রিসার্চ, বিড়াল এবং গেমস নিয়েই পায়েলের জীবন চলছিল। কিন্তু কয়েকটি ঘটনা পায়েলের জীবন পাল্টে দেয়। হঠাৎই একদিন পায়েল লক্ষ্য করে বিড়ালটা আর তার কাছে আসছেনা। বাগানে তো ঢোকেই না এমনকি নিচের ঘরটিতেও ঢোকেনা। দরজার বাইরে থেকে মিউ মিউ করে ডাকে। আর খুবই অল্প সময়ের ব্যাবধানে সারা গা একবার চুলকে নেয়। পায়েল কোলে নিতে গেলেই পালায়। বিড়ালটির এই আচরণে পায়েল কিছুটা অবাক হয়। কিন্তু কাজের চাপ থাকার দরুন এই বিষয়টি নিয়ে সময় খরচ করতে পারেনা।

এরই সাথে পায়েল লক্ষ্য করে বাগানের কিছু কিছু জায়গায় লম্বা সরু সরু সাদা মতন একধরনের উদ্ভিদই গজিয়ে উঠেছে। এগুলো কি ধরনের ধরনের উদ্ভিদ বা আদৌ উদ্ভিদ কিনা তা খুঁজে বার করার জন্য উঠে পড়ে লাগবে তার আগেই পায়েল অসুস্থ হয়ে পড়ে। সে অনুভব করে ওর শরীরের ভিতর কিছু একটা ঘটে চলেছে। ঘাড়ের কাছে ব্যাথা অনুভব করতে শুরু করে। মনে হতে লাগে কিছু একটা বেরিয়ে আসতে চাইছে। পায়েলের পেটের ভিতর অসহ্য ব্যাথা অনুভব করে। এবং দু একদিনের মধ্যেই পায়েল একেবারে বিছানায়। পায়েলের মাথায় সব অদ্ভুত চিন্তা ঘুরতে থাকে। মেয়ের এই অবস্থা দেখে যখন মা চিন্তিত হয়ে জানতে চায় কি অসুবিধা হচ্ছে। তখন পায়েল বলে ‘আমার কাছে আসবে না। ফাঙ্গাস গুলো আমার ওপর ওদের জাল বিছিয়েছে। আর কিছুদিনের মধ্যেই আমার ঘাড়ের কাছ থেকে ফাঙ্গাসটা বেরবে। আমার কাছে আসলে তুমিও এফেক্টেড হয়ে পরবে। যেমন বিড়ালটা হয়ে পড়েছে। বাগানে যে সাদা সাদা গাছ গুলো দেখছ সেগুলি আসলে ফাঙ্গাস।’

‘তুই এই সব কি বলছিস?’

‘ঠিকই বলছি মা। আমাকেও পিঁপড়েগুলির মতন বশ করে নিয়েছে।’

‘আমি এখনই তোর বাবাকে ডাকছি’।

‘আমিও পিঁপড়েগুলির মতন মারা যাব’।

স্ত্রীয়ের কাছ থেকে শুনে পায়েলের বাবা বুজতে পারে যে মেয়ের কোনভাবে একটা ধারনা হয়েছে ফাঙ্গাস গুলো ওর ওপর অ্যাটাক করতে চলেছে। পায়েলের বাবা যখন নিচে গেলো পায়েলকে দেখতে তখন পায়েলের কাতর অবস্থা। পেটের যন্ত্রণায় সে পারছেনা। সঙ্গে সঙ্গে তারা পায়েল কে হসপিটালে নিয়ে গেলো।

হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার পরই পায়েলের কিছু পরীক্ষা করা হল। রিপোর্ট সঙ্গে নিয়ে ডাক্তার যখন এসে জানালো পায়েলের সমস্যা বলতে বড় কিছু নয়। কিডনিতে কিছু সমস্যা ধরা পড়েছে, ওষুধেই কমে যাবে। ডাক্তার যাওয়ার আগে পায়েলকে বলে যায়, ‘আমি তোমার বাড়ির লোকজনের কাছে শুনলাম তুমি ফাঙ্গাস নিয়ে কাজ করো। তবে তোমার বাড়ির লোকেরা ফাঙ্গাসটির নাম বলতে পারেনি। তাই তোমায় জানিয়ে রাখি এই ওষুধও একধরনের ফাঙ্গাস থেকে তৈরি। ফাঙ্গাসটির নাম কর্ডইসেপ’।

পায়েলের মা পায়েলের দিকে তাকায় এবং কোলে থাকা বিড়ালটাকে ওর কোলে তুলে দিয়ে বলে, ‘বাগানে সাদা সাদা যেগুলো দেখেছিস তা হল ব্যাঙের ছাতা’। 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract