Biplab Das

Horror Thriller Others

3  

Biplab Das

Horror Thriller Others

প্ল্যাটফর্মের মহিলাটি

প্ল্যাটফর্মের মহিলাটি

8 mins
879


অফিস থেকে বেরোতে যে এত দেরি হবে তা কখনই ভাবেনি অচিন্ত্য। প্রায় দৌড়তে দৌড়তে ষ্টেশনে ঢোকে লাস্ট ট্রেনটা ধরার জন্য। প্ল্যাটফর্মে পৌঁছে দেখে ট্রেন ছাড়বে ছাড়বে করছে। দৌড়ে একটা কামরায় উঠে পড়ে। হাঁফ ছেড়ে বাঁচে অচিন্ত্য। লাস্ট ট্রেনটা মিস করলে সমস্যায় পড়তে হত। 

অচিন্ত্য হাজরা কলকাতার একটি ওষুধের কোম্পানিতে কাজ করেন। অনেকদিন ধরে কাজ করছেন। মনোযোগ দিয়ে কাজটা করেন। তাই অফিসের ওপরের মহলে তার সুখ্যাতিও রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ কোনও কাজ থাকলে তার ডাক পড়ে। আজ অফিস থেকে দেরিতে বেরনোর কারন একটি জরুরি কাজ পড়ে যাওয়া। প্রথমে ভেবেছিল একটি হোটেলে কোনও রকমে রাতটা কাটিয়ে দেবেন। কিন্তু বাড়িতে রেশমি অর্থাৎ বউ একা থাকবে বলে মত পাল্টান এবং বাড়ির দিকে রওয়ানা দেন। আর তাছাড়া সদ্য বিয়ে করেচ্ছেন। রেশমিকে ছাড়া থাকতে তার মন যেন কেমন করে।

কামরাটি ফাঁকাই ছিল। অচিন্ত্য জানলার ধারের একটি সীটে বসল। রাত হয়ে গেছিলো, তাই আবহাওয়াও কিছুটা ঠাণ্ডা হয়ে গেছিলো। ঠাণ্ডা হাওয়ায় কখন যে ঘুম চলে এসেছিল তা বুঝতেই পারেনি। ঘুম যে খুব গাড় ছিল তাও নয়। তাই ফিসফিসানিটা শুনতে অসুবিধা হল না। স্পষ্ট শুনতে পেলেন, ‘অনেক ঘুমিয়েছ। এবার ওঠ’। এই কথাগুলি শোনা মাত্রই অচিন্ত্যর ঘুম ভেঙ্গে গেল। ঘুম থেকে উঠে চারপাশটা একবার দেখে নিলো। না কেউ কোথাও নেই। কামরার অপর প্রান্তে দু’একজন লোক বসে আছে। তাদের পক্ষে কথা গুলি অচিন্ত্যর কানে ফিসফিস করে বলে কামরার অপর প্রান্তে চলে যাওয়া সম্ভব নয়। ঘুম আর আসলো না অচিন্ত্যর। জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইল। বাইরের কালো অন্ধকারের দিকে বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকা যায়না। একটার পর একটা ষ্টেশন চলে যাচ্ছে এবং অচিন্ত্য ভেবে যাচ্ছে কে তার কানে এসে কথা গুলি বলল।

নিজের ষ্টেশন আসছে দেখে সীট ছেড়ে দরজার সামনে গিয়ে দাড়ায়। মন-মেজাজ ঠাণ্ডা করে দেওয়ার মতন হাওয়া। অন্ধকার আর একঘেয়েমি লাগে না অচিন্ত্যর। সে ভাবতে থাকে কখন বাড়ি পৌঁছাবে। ষ্টেশন থেকে আধ ঘণ্টা হাঁটতে হয়। ইস, যদি সাইকেলটা নিয়ে আসত তাহলে ভালো হত। সাইকেল রাখার জায়গাটি অনেক রাত পর্যন্ত খোলা থাকে। আধ ঘণ্টা হাঁটতে হবে বলে অচিন্ত্য কিছুটা বিরক্তই হয়। রেশমি বহুবার বলেছে যে সাইকেলটা নিয়ে যেতে কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনা। অচিন্ত্য ভাবতে থাকে বউ হয়ত তার জন্য অপেক্ষা করছে। অচিন্ত্যর না খাওয়া হলে সে খায় না। এরকম নানা চিন্তা অচিন্ত্যর মনে আসতে থাকে।

হঠাৎ অনুভব করে কেউ যেন তার কানের কাছে এসে কথা বলছে। সঙ্গে সঙ্গে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে। দেখে কেউই নেই। অথচ স্পষ্ট শুনতে পায় কে যেন বলল, ‘আমি এখানে ট্রেন থেকে লাফ দিয়ে ছিলাম’। কেউ কি তার সাথে মশকরা করছে? কিন্তু মশকরা করলে এতক্ষণে সে ধরে ফেলতে। তাছাড়া কাউকেই তো সে দেখতে পাচ্ছে না। কে এখান থেকে লাফ মেরেছিল? এই প্রশ্নের উত্তর সে খুঁজতে থাকে। হঠাৎ তার মনে পড়ে পাড়ারই একজন বলে ছিল যে শেষ ট্রেনে নাকি অশরীরী আত্মার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। তাহলে কি সেই অশরীরী আত্মা তার কানে এসে কথা গুলি বলে গেল? ধুর, এই বিজ্ঞানের যুগে কেউ ভুতে বিশ্বাস করে নাকি? হয়ত সারাদিন কাজের পর শরীর ক্লান্ত বলে তার এরকম মনে হয়েছে। আর ভুত যদি থাকতই তাহলে একবার দেখা দিত। সঙ্গে এও ভাবতে থাকে তার মাথার কোনও গণ্ডগোল হয়নি তো। মানসিক রোগীরা অনেক সময় নানা জিনিস শোনে এবং দেখে। এদিকে অচিন্ত্যর ষ্টেশন চলে এসেছে। ট্রেন থেকে নামার প্রস্তুতি নিতে থাকে। মনে মনে ঠিক করে নেয় সে বড় রাস্তা দিয়েই বাড়ি ফিরবে। শর্টকাটটা ধরবে না।

ট্রেন ষ্টেশনে এসে থামে। ট্রেন থেকে যেই নামতে যাবে অচিন্ত্য তখনি মনে হয় কে যেন পিছন থেকে তাকে ধাক্কা মারে। হুমড়ি খেয়ে প্ল্যাটফর্মে পড়ে অচিন্ত্য। হাতের একটি অংশ ছড়েও যায়। প্ল্যাটফর্মে পড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পিছনে ঘুরে দেখার চেষ্টা করে কে তাকে পিছন থেকে ধাক্কা মারল। কিন্তু পিছন ঘুরে কাউকেই দেখতে পেল না। অথচ তাকে যে কেউ একজন ধাক্কা মারল সেই ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। অচিন্ত্যর এও মনে হল তাহলে কি সে নামতে গিয়ে পড়ে গেল? শরীর ক্লান্ত বলেই কি সে পড়ে গেল?

কিছুক্ষন পরেই বুঝতে পাড়ল চোট ভালই লেগেছে। হাঁটুর কাছটাও কেটে গেছে। প্ল্যাটফর্মে একটি বসার জায়গা ছিল সেখানে অচিন্ত্য বসে পড়ল। হাত-পা দুটোই টনটন করছে। সঙ্গের ব্যাগটিতে একটি জলের বোতল ছিল, সেটি বার করে জল খেতে লাগল। মনে মনে ভাবতে লাগল, ভাগ্যিস অফিস থেকে বেরনোর সময় বোতলে জল ভরে নিয়েছিল। বসে বসে ভাবতে লাগল বাড়িতে বউ হয়ত তার কথা চিন্তা করছে।

পায়ের এবং হাতের ব্যাথাটা একটু কম মনে হতে লাগলে সে বাড়ি যাওয়ার জন্য তৈরি হতে লাগল। কিন্তু যেই কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়েছে তখনি দেখতে পেল উল্টো দিকের প্ল্যাটফর্মে একজন মহিলা দাড়িয়ে রয়েছে। মহিলা মনে হতে লাগল তার কারন সে শাড়ি পড়ে রয়েছে। অচিন্ত্য উঠে দাড়াতে প্ল্যাটফর্মের অপর প্রান্তের মহিলাটিও হাঁটতে শুরু করল। ফুটব্রিজ ব্যবহার করল না। সোজা লাইন অতিক্রম করে এগিয়ে আসতে লাগল। অচিন্ত্য একটু ঘাবড়ে গেল। কি কারনে মহিলাটি তার দিকে এগিয়ে আসছে তা বুঝতে পারল না। একে রাত হয়ে গেছে তার ওপর জোরে হাওয়াও দিচ্ছে। মহিলাটির কথা না ভেবে অচিন্ত্য প্ল্যাটফর্ম থেকে বাইরে যাওয়ার জন্য জোরে হাঁটতে শুরু করে দিল। কিন্তু পায়ে চোট লাগার ফলে বেশি জোরে হাঁটতেও পারছে না। খোঁড়াতে খোঁড়াতে একদিকে প্ল্যাটফর্ম থেকে বাইরে যাওয়ার পথটা দেখে নিচ্ছে অন্যদিকে তার দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসা মহিলাটির দিকেও নজর রাখছে।

কিন্তু মহিলাটি আসার আগেই অচিন্ত্য প্ল্যাটফর্ম থেকে বেড়িয়ে রাস্তায় নেমে পড়ে। রাস্তায় নেমেই পিছন ফিরে দেখে মহিলাটি তার পিছু নিয়েছে কিনা। নাহ। কেউ নেই পিছনে। অচিন্ত্যর মনে হয় মহিলাটি বোধহয় প্ল্যাটফর্মেই থাকে। হয়ত ভিখিরি গোছের কেউ হবে। ওকে এত রাতে একা দেখতে পেয়ে খাবারের জন্য এগিয়ে আসছিল। ভাগ্যিস কথা হয়নি। কারন অচিন্ত্যর কাছে খেতে দেওয়ার মতন কিছুই নেই। খাবারের কথা মনে পড়তেই অচিন্ত্য বুঝতে পারল যে তার জোর খিদে পেয়েছে।

রাস্তায় নেমে জোরে হাঁটতে লাগল। ষ্টেশনে মহিলাটিকে দেখার পর ঠিক করে নিয়েছে সে শর্টকাট ধরবে না। বড় রাস্তা ধরেই বাড়ি ফিরবে। তাছাড়া শর্টকাটের রাস্তাটি বেশিরভাগ সময়েই অন্ধকার থাকে। বড় রাস্তা দিয়েই যাওয়া উচিত।

বড় রাস্তাই ধরল অচিন্ত্য। রাস্তায় কয়েকটা কুকুর ওকে দেখে ডেকে উঠল। অচিন্ত্য ‘হুশ হুশ’ বলে কুকুরগুলোকে তারিয়ে দিলো। কুকুরগুলো অচিন্ত্যর তাড়া খেয়ে দূরে গিয়ে ডাকতে শুরু করল। অচিন্ত্য হাঁটতে শুরু করল। বেশ জোরেই হাঁটতে লাগল। পকেট থেকে মোবাইল ফোনটা বার করে বউকে ফোন করার চেষ্টা করল। কিন্তু একি ফোনে কোনও নেটওয়ার্ক নেই। অথচ এমনটা তো হওয়ার কথা নয়। রাতের দিকে দিব্বি নেটওয়ার্ক থাকে। প্রায়ই রাতের দিকে সে কথা বলে অফিসের কলিগদের সাথে। কিন্তু আজ নেই। মোবাইলটা পকেটে রেখে দিলো।

কিছুক্ষন হাঁটার পর অচিন্ত্য বুঝতে পারল যে রাস্তা তিনি ধরেছেন তা তাকে কখনই বাড়িতে পৌঁছে দেবে না। তাহলে কি সে দিক ভুল করল? প্ল্যাটফর্মের মহিলাটিকে পাশ কাঁটাতে অন্য রাস্তায় এসে পড়ল? কিন্তু যখন প্ল্যাটফর্ম থেকে বেরিয়েছিল তখন যে রাস্তা রোজ ধরেন সেই রাস্তাই ধরেছিল। ভুল রাস্তায় সে কিভাবে এসে পড়ল তা অচিন্ত্য বুঝেই উঠতে পারছে না। হঠাৎ অচিন্ত্যর মনে হল কেউ যেন কানের পাশে এসে ফিসফিস করে বলে, ‘এবার কি করবে?’ কথাটি শুনে অচিন্ত্য ভয় পেয়ে যায়। তাহলে কি সে শেষ পর্যন্ত কোনও অশরীরীর খপ্পরে পড়ল? চারপাশ ভালো করে দেখতে লাগল যদি কিছু চেনা পড়ে। কিন্তু কিছুই চেনা লাগেনা। অচিন্ত্যর মনে হয় সে প্রথমবারের জন্য এই জায়গাটায় এসেছে। মনে মনে ঠিক করল যে পথে এসেছে সেই পথেই ফিরে যাবে। ষ্টেশনের সামনে গিয়ে শুরু করবে। কারন ষ্টেশন থেকে বাড়ি ফেরার পথটা তার চেনা।

অচিন্ত্য যে পথে এসেছিল সেই পথেই হাঁটা লাগাল। কিন্তু কিছু দূর পৌঁছে আবার বুঝতে পারল যে সে পথ হারিয়েছে। কি করবে সে বুঝতে পারে না। খানিকক্ষণ দাড়িয়ে থাকার পর তার মনে হতে থাকে কেউ যেন দূর থেকে তাকে ডাকছে এবং বলছে, ‘এই যে এদিকে এস’। আরও দু’একবার সেই ডাক শোনার পর বুঝতে পারে যে তার রেশমি তাকে ডাকছে। হ্যাঁ, ওই তো রেশমি। কাছে গিয়ে সামনে থেকে দেখে আরও নিশ্চিত হয়।

অচিন্ত্যর ফিরতে দেরি হচ্ছে দেখে রেশমি তাকে খুঁজতে বেড়িয়েছে। কিছুক্ষন হাঁটার পর অচিন্ত্যকে দেখতে পেয়ে যায় এবং ডাকতে থাকে। রেশমিকে দেখতে পেয়ে অচিন্ত্য হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। এতক্ষণ অচিন্ত্য ভাবছিল কিভাবে বাড়িতে পৌঁছাবে এখন তার মনে হতে থাকে খাওয়ার কথা। খিদে কোনরকমে চেপে জিজ্ঞেস করে বসে রেশমিকে ‘বাড়িতে কি রান্না হয়েছে’। উত্তরে রেশমি বলে, ‘তোমার প্রিয় চিংড়ি মাছ’। চিংড়ি মাছ শুনে আরও জোরে হাঁটা লাগালো অচিন্ত্য।

কি আশ্চর্য। যে রাস্তাটি এতক্ষন ধরে খুঁজছিল অচিন্ত্য তা অতি সহজেই পেয়ে গেল। বাড়ি পৌঁছে হাত-মুখ ধুয়ে খেতে বসে পড়ল। তৃপ্তি সহকারে চিংড়ির মালাইকারি শেষ করে। খেয়ে দেয়ে বাইরে আসে ঘুমনোর আগে একটু ঠাণ্ডা হাওয়ায় মনটাকে জিরিয়ে নিতে। বাইরে কিছুখন দাড়িয়ে দাড়িয়ে ভাবতে লাগল কি কারনে আজ সে রাস্তা ভুল করেছিল। তার জন্ম এখানে। সে কি করে রাস্তা ভুল করতে পারে। বাইরে দাড়িয়ে একটা সিগারেট খায় তারপর ভিতরে যাওয়ার জন্য সে প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু তখনই রেশমি ভিতর থেকে বাইরে এসে বলে, ‘চেয়ার এনে দেবো? বাইরে কিছুক্ষণ বসবে’? অচিন্ত্য ভাবল কিছুক্ষন বাইরে বসা যাক। সুন্দর হাওয়া বইছে। তাই রেশমিকে বলল, চেয়ারটা এনে দিতে যদি তাতে তার কাজে কোনও অসুবিধা না হয়। রেশমি চেয়ার এনে দিলো। চেয়ারে বসে ভাবতে লাগল আজ সন্ধ্যের পর থেকে তার সাথে কি কি হয়েছে? ভাবতে ভাবতে অচিন্ত্যর মনে পড়ল যে রেশমির সাথে রাস্তায় দেখা হওয়ার থেকে একবারও রেশমি তার সামনে আসেনি। যেটুকু কথাবার্তা হয়েছে তা দূর থেকে। তারপর তার মনে হল হয়ত কাজে ব্যস্ত তাই ওকে বেশি সময় দিতে পারেনি। এই ভাবতে ভাবতে অচিন্ত্য চেয়ারে বসেই ঘুমিয়ে পড়ল।

ঘুম ভাঙল ট্রেনের হুইসেলের আওয়াজে। ঘুম থেকে উঠে ভাবে ভোর হয়ে গেছে। কিন্তু ভোর কোথায়? চারপাশে তো নিকষ কালো অন্ধকার। অচিন্ত্য অবাক হয়ে দেখে যে সে ট্রেনের প্ল্যাটফর্মের একটি চেয়ারে বসে রয়েছে। অথচ তার স্পষ্ট মনে আছে এই কিছুক্ষণ আগেই সে তার বাড়ির বাইরে একটি চেয়ারে বসে ছিল।

ইতিমধ্যে ট্রেনটি চলে গিয়েছে। প্ল্যাটফর্ম সম্পূর্ণ ফাঁকা। কিন্তু উল্টোদিকের প্ল্যাটফর্মে কেউ একজন দাড়িয়ে রয়েছে না। ভালো ভাবে দেখার পর বুঝতে পারে উল্টোদিকের মানুষটি আসলে একজন মহিলা। আরে এরকম একজন মহিলাকেই তো ট্রেন থেকে নামার পর দেখেছিল।

সব গুলিয়ে যাচ্ছে অচিন্ত্যর। কিভাবে সে প্ল্যাটফর্মে এসে হাজির হল তা বুঝতেই পারছে না। এদিকে উল্টোদিকের প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো মহিলাটি হাঁটতে শুরু করে দিয়েছে। রেল লাইন পার করে তার দিকেই আসছে। অচিন্ত্যও উঠে দাঁড়াল। হাঁটতে শুরু করে দিলো। কিন্তু এবার আর আগের বারের মতন হল না। অর্থাৎ ওই মহিলাটির মুখোমুখি হওয়া থেকে নিজেকে বাঁচানো গেল না। মহিলাটি অচিন্ত্যর সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। শাড়ি পরা। মাথায় ঘোমটা। অবিকল রেশমির মতন কথা। গলার আওয়াজ ও প্রায় এক। সে অচিন্ত্যর কাছে জানতে চাইল ‘চেয়ার এনে দেবো? বাইরে কিছুক্ষন বসবে’? কি আশ্চর্য এই কথা গুলো তো কিছুক্ষন আগে রেশমি অচিন্ত্যকে জিজ্ঞেস করেছিল। অচিন্ত্য কি করবে বুঝে পাচ্ছিল না। হঠাৎ দেখল যে মেয়েটি পা দুটো উপরের দিকে উঠে গেল। এই দৃশ্য দেখে অচিন্ত্য আর ঠিক থাকতে পারল না। অজ্ঞান হয়ে প্ল্যাটফর্মে পড়ে যায়

জ্ঞান ফেরে পরের দিন সকাল বেলায়। দেখল নিজের বাড়িতে নিজের বিছানায় শুয়ে রয়েছে। রেশমি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। সুস্থ হয়ে উঠে জানতে পেড়েছিল বহু বছর আগে এক মহিলা ওই ষ্টেশনের সামনে আত্মহত্যা করেছিল। মেয়েটির বিয়ে ভেঙে গেছিলো। তারপর থেকে মাঝে মাঝে যারা দেরি করে বাড়ি ফেরে তাদেরকে এইভাবে ভয় দেখান। পরে এও জানতে পেড়েছিল যে সকালবেলা তাকে অচৈতন্য অবস্থায় প্ল্যাটফর্মের এক হকার দেখে পায়। সেইই লোকজনকে খবর দেয়।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror