Biplab Das

Comedy Drama

2.6  

Biplab Das

Comedy Drama

মোবাইল চোর

মোবাইল চোর

5 mins
237



‘অর্ক খেতে আয়, ভাত ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে’, অর্কর মা একতলার খাবার ঘর থেকে গলা চড়িয়ে দোতালায় নিজের ঘরে বসে থাকা অর্ককে ডাকে। অর্কও বাধ্য ছেলের মতন নিচে নেমে আসে। আজ সপ্তমী, রাতের খাওয়া সেরেই অর্ক বন্ধুদের সাথে গাড়ি করে হোল-নাইট ঠাকুর দেখতে বেরুবে। বন্ধুদের সাথে ঠাকুর দেখা তো আসলে ছুতো। আসল উদ্দেশ্য দূরে কোথাও গিয়ে সারা রাত ধরে মদ খাওয়া এবং ভোর ভোর ফিরে আসা। অর্কর সব বন্ধুদের কাছে বিষয়টি আনন্দ ও উত্তেজনার হলেও অর্কর মেজাজ সকাল থেকেই খারাপ। তার কারন হল সকালে সাধের মোবাইল ফোনটি চুরি গেছে। সকালে ম্যাডক্স স্কোয়ার গেছিলো স্কুলের বন্ধুদের সাথে দেখা করতে তখনই হারিয়ে ফেলে ফোনটি। অনেকক্ষণ ধরে খুঁজে ছিল কিন্তু পায়নি। তার থেকেই ধারনা হয় ফোনটি কেউ চুরি করেছে। বাড়ি ফিরে কাউকে জানাওনি। বন্ধুদেরও কিছু বলেনি। কিন্তু অর্ক ভাবছে ফোন ছাড়া ওর চলবে কি করে? তাছাড়া আজ রাতে সবার কাছে ফোন থাকবে। সেখানে যদি ওর ফোন না থাকে তাহলে অর্ক কাছে তা হবে খুবই লজ্জার বিষয় । 


খাওয়ার টেবিলে কোন কথা বলে না অর্ক। টেবিলে ওর সাথে আরও একজন খাচ্ছে, অর্কর মামা। অর্ক আর অর্কর মা মামাবাড়িতে থাকে। অর্কর বাবা মারা যাওয়ার পর দুজনে মামাবাড়িতে চলে আসে। অর্কর বাবার ম্যাসিভ হার্ট-অ্যাটাক হয়। খুব অল্প বয়সে বাবাকে হারিয়ে অর্কর জীবনে অনেকখানি পরিবর্তন আসে। 


খাওয়ার সময় অর্কর মামা অর্কর সাথে কথা বলার চেষ্টা করলেও অর্ক শুধু হ্যাঁ বা না বলেই চালিয়ে দেয়। অর্কর মামা বুঝতে পারে অর্ক কথা বলতে আগ্রহী নয়। কথা থামিয়ে দেয় এবং খাওয়াতে মনোনিবেশ করে। কিন্তু বেশিক্ষণ কথা না বলে থাকতে পারেনা। একটা কল চলে আসে। পকেট থেকে ফোনটা বার করে কলটি রিসিভ করে। অফিসের কল। কিছুক্ষণ কথা হয়। কথা হওয়ার পর ফোনটি আর নিজের পকেটে ঢোকায় না অর্কর মামা। ফোনটা টেবিলের ওপর রেখে দেয়। এবং বেসিনের দিকে যায় হাতমুখ ধুতে। এই সুযোগে অর্ক টেবিল থেকে ফোনটা নিয়ে নেয়। প্রথমে ফোনটিকে সুইচ-অফ করে দেয় এবং নিজের পকেটে চালান করে দেয়। তারপর হাতমুখ ধুয়ে খাবার ঘর থেকে বেরিয়ে সোজা বাইরে দারিয়ে থাকা গাড়িটিতে উঠে পড়ে। অর্ক উঠে পড়ার পর গাড়ি চলতে শুরু করে। গাড়িতে উঠে প্রথম যে কথাটি অর্ক বলে তা হল, ‘নতুন একটা ফোন কিনলাম’। 


অর্কর চুরির ইতিহাস আছে । এর আগেও বাড়ি থেকে অনেক কিছু চুরি করেছে । এদিকে অর্কর মামাও এতক্ষণে বুঝতে পেরেছে কে তার ফোন চুরি করেছে । অর্কর মামা ঠিক করে পুলিশে জানাবে । কিন্তু অর্কর মা শুনে ঘাবড়ে যায় । কারন বুঝতে পারে পুলিশ যদি খোঁজা শুরু করে তাহলে অর্ক ধরা পড়বে । দাদার সাথে অর্কর মায়ের একপ্রস্ত ঝগড়া হয়ে যায় । অর্কর মায়ের অনেক চেষ্টার পরও অর্কর মামা রাজি হয় না । ঠিক করে পুলিশে জানাবেই । 


অর্কর মা নিজের মোবাইল থেকে দাদার মোবাইলে কল করে অর্কর সাথে কথা বলার জন্য, কিন্তু অর্ক ফোন ধরে না । অর্কর বন্ধুরা জিজ্ঞেস করে কেন কলটা রিসিভ করলি না । অর্ক কোনও জবাব দেয় না । এরই মধ্যে অর্কর মা মেসেজ করে মামা পুলিশ স্টেশনে যাচ্ছে । অর্ক এবারও কোনও জবাব দেয় না । মদ খাওয়াতে মনোনিবেশ করে । 


কিছুক্ষণ পড়ে একটা মেসেজ আসে অর্কর মামার ফোনে । ইন্দ্রাণী নামক একটি মেয়ে মেসেজ করেছে, ‘আমি ফ্ল্যাটে চলে এসেছি । তুমি কতক্ষণ পড়ে আসবে ?’ অর্ক বুঝতে পারেনা ইন্দ্রাণী নামক মহিলাটি কে ? কোনও উত্তর দেয় না অর্ক। কিছুক্ষন পর আবার মেসেজ, ‘তোমার ওয়াইফ ঠাকুর দেখতে বেড়িয়েছে? আমি কিন্তু তোমার জন্য বসে আছি । তোমার প্রিয় হ্যান্ডকাফটাও এনেছি ।’ এতক্ষণে অর্ক বুঝে গেছে এই ইন্দ্রাণী নামক মেয়েটির অর্কর মামার কিসের সম্পর্ক । অর্ক এবার মেসেজের রিপ্লাই করে । ‘এই তো আর কিছুক্ষনের মধ্যে বেরবো ।’ সঙ্গে সঙ্গে মেসেজ আসে ইন্দ্রাণীর তরফ থেকে, ‘এখনও বাড়িতে? তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে চলে আসো’। 


এরই মধ্যে অর্কর মামা পুলিশে জানিয়ে দিয়েছে যে তার ফোন চুরি গিয়েছে এবং সাথে এও জানিয়েছে যে সে তার ভাগ্নেকেই সন্দেহ করছে । অর্কর মামা জানায় অর্ক সকালে ফিরবে । পুলিশ থেকে জানানো হয় সকালে অর্ক বাড়ি ফিরলে যেন তাদের জানানো হয় । অর্কর মামা পুলিশকে জানিয়ে বাড়ি ফিরে আসে । 


এদিকে অর্ক মামা সেজে ইন্দ্রাণী নামক মহিলাটির সাথে কথা বলে যাচ্ছে । মদ্যপান শেষ হলে একে একে সবাই বাড়ির দিকে ফেরা শুরু করে । অর্কও বুঝতে পারে তাকেও বাড়ি ফিরতে হবে । গাড়িটা বাড়ির সামনেই নামিয়ে দিয়ে চলে যায় । অর্ক ধীরে ধীরে গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির সামনে এসে দাড়ায় । বাড়ির বেল বাজায় । কাজের লোক এসে দরজা খুলে দেয় । অর্ক নিজের ঘরে ঢুকে যায় । কাজের লোকটি অর্কর মামাকে খবর দেয় । অর্কর মামা অর্কর মামীর ফোন থেকে পুলিস স্টেশনে জানিয়ে দেয় যে অর্ক ফিরেছে । পুলিশ স্টেশন থেকে জানানো হয় এখনই লোক পাঠানো হচ্ছে । কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ এসে হাজির হয় । 


এক অফিসার সোজা অর্কের ঘরে ঢুকে যায় । পিছন পিছন অর্কর মামা, মামী এবং মা ঢোকে । অর্ক বুঝতে পারে সে ধরা পড়ে গেছে । সে পকেট থেকে মোবাইলটা বার করে মামার হাতে তুলে দেয় । অফিসারটি সঙ্গে সঙ্গে বলে ‘অনেক দেরি করে ফেলেছ । থানায় তোমাকে যেতেই হবে ।’ অর্ক পুলিশের কথার কোনও উত্তর দেয় না । মামার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ইন্দ্রাণী কাল রাত থেকে মেসেজ করছে।’ অর্কর মামা ব্যাভাচ্যাকা খেয়ে যায় । অর্কর মামী জিজ্ঞেস করে, ‘ইন্দ্রাণী কে?’ অর্কর মামা কোনও উত্তর দিতে পারে না । এরই মধ্যে পুলিশ অফিসারটি বলে ওঠে, ‘চল থানায় চল’। অর্ক অর্কর মামার দিকে তাকায় এবং যেই কিছু একটা বলতে যাবে, অর্কর মামা বলে ওঠে, ‘অফিসার ওকে আর থানায় নিয়ে কোনও লাভ নেই । ফোন যখন পেয়ে গেছি তখন আর ওকে ধরার কোনও মানে হয় না।’ পুলিশ অফিসারটি অবাক হয়ে যায় । কিছুক্ষন চুপ থাকে । তারপর বলে, ‘আপনি যেটা ভালো বুঝছেন সেটাই করুন । আমার কিছু বলার নেই । তবে এইভাবে আমাদের সময় নষ্ট করবেন না ।’ এই বলে পুলিশ অফিসারটি ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে যান । 


অর্ক একবার ওর মামার দিকে তাকিয়ে হাসে এবং বিছানায় শুয়ে পড়ে। এদিকে অর্কর মামী তখনও অর্কর মামাকে জিজ্ঞেস করে যাচ্ছে ইন্দ্রাণী কে? 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Comedy