পাশে যখন পরিবার:-
পাশে যখন পরিবার:-


প্ল্যান বানচাল হয়ে গেছে অস্মিতা আর দীপ্তর হানিমুনের। মার্চেই তো বেরোবার কথা ছিল, কিন্তু এই করোনা ভাইরাসের উপদ্রবে যে হানিমুন টাই ভেস্তে গেলো। স্বভাবতই দুজনের খুব মন খারাপ। এরম আশঙ্কা তো করেনি তারা কেউই। কিন্তু এমতাবস্থায় হানিমুন তো দূর অস্ত পাড়ার এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ি যাওয়া নিয়েই তো দক্ষযজ্ঞ বেঁধে যায়। বাড়ির লোকেরা বুঝতে পারেন, কিন্তু কি করবেন। এখন তো বাড়ি থেকে কোথায় বাইরে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই।
আর এরকম অবস্থা যে অস্মিতা এখন ইচ্ছে করলে একটু বাপের বাড়ি থেকেও ঘুরে আসতে পারবে না। যদিও খুব বেশি দূরে নয় আধ ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছানো যায় কিন্তু কি করে যাবে সে? বাড়ি থেকে বেরোলেই তো বিপদ।
দীপ্ত বুঝতে পারে অস্মিতার মন খারাপ। অস্মিতাও বুঝতে পারে দীপ্তও কত আগ্রহী ছিল বাইরে ঘুরতে যাওয়ার জন্যে। এইটাই তো দীপ্ত আর অস্মিতার সবচেয়ে বড় সখ ছিল, ঘুরতে যাওয়া। কিন্তু এই অবস্থায় ঘুরতে যাওয়ার তো প্রশ্নই নেই।
ওইদিন সকালে দীপ্ত উঠে দেখলো বিছানায় অস্মিতা নেই। ভাবলো নিচে গেছে বোধ হয়। লক ডাউনের কারণে অস্মিতা আর দীপ্ত বেশির ভাগ সময় গ্রাউন্ড ফ্লোরে তাদের বাবা মায়ের ওখানে বসেই সময় কাটায়। তারাও ছেলে বউয়ের সঙ্গে খুব আনন্দ ঘন মুহূর্ত উপভোগ করেন। সেদিন দীপ্ত ঘুম থেকে উঠে নিচে গিয়ে দেখে নিচের ঘর সব ফাঁকা। বাবা মা কিংবা অস্মিতা কেউ কোথাও নেই। একটু বেমানান লাগলো ব্যাপার টা তার কাছে। তাদের কে খুঁজতে খুঁজতে দীপ্ত চলে যায় বাড়ির পেছন দিকের বাগানে, সারি সারি ফুলের গাছ বাগানটায়। সেখানে গিয়ে যা দেখলো তা দেখে তার চোখ ছানাবড়া।
*******************
- এসব কি মা?
- কেনো? দেখতেই তো পাচ্ছিস।
- এত সব সাজ সজ্জা করলে কি করে?
- সব অস্মি করেছে রে নিজের হাতে।
- কিন্তু কি জন্যে এতো আয়োজন তা তো বলো?
- আজ তোদের বিয়ের এক মাস পূর্ণ হলো তাই তো এই আয়োজন।
দীপ্ত মুগ্ধ হয়ে দেখছে। ঘরের পুরনো পত্রিকা কাগজ গুলো দিয়ে ছোট ছোট কাগজের পাখি বানিয়েছে অস্মিতা। সেগুলো খুব সুন্দর করে টাঙানো বাগানের ঝোলানো টব গুলোতে। একটা ছোট্ট টেবিল তার পাশে চারটি চেয়ার। টেবিলে রাখা আছে একটি কেক। দীপ্ত জানে কেকটি তার মা বানিয়েছেন। ঘরে প্রায়শই বেকারী আইটেম বানাতেন তিনি। পুরো বাগান জুড়ে সুন্দর সুন্দর ফুল, ফুলের মিষ্টি গন্ধে ম ম করছে গোটা বাগান। তারই মাঝে বাবার সঙ্গে দাড়িয়ে আছে অস্মিতা। অদ্ভুত সুন্দর লাগছে তাকে।
- কি রে নে বস। আমরা এক সাথে আজ চা আর কেক খাবো তোদের বিয়ের এক মাস হাওয়ার খুশি তে।
- হ্যাঁ মা।
বসে পড়ে তারা চারজন টেবিলে। নাই বা হলো হানিমুন করতে বাইরে যাওয়া। নিজের পরিবারের সঙ্গে এই অমূল্য সময় কাটানো টাও কম কিসের! দীপ্ত আর অস্মিতার মুখে তখন ভালোবাসা মিশ্রিত হাসি।