Sayandipa সায়নদীপা

Horror

0.2  

Sayandipa সায়নদীপা

Horror

পাপ

পাপ

4 mins
616


পাকদন্ডী বেয়ে এঁকে বেঁকে চলছে গাড়িটা। ড্রাইভার একনাগাড়ে হাজার কথার ভীড়ে তার জন্মভূমির মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে তৎপর। ওপাশের খাদ থেকে ধোঁয়া ধোঁয়া মেঘ কুণ্ডলী পাকিয়ে শামিয়ানা তৈরি করেছে নীচের গ্রামটার মাথার ওপর। এপাশের পাহাড়ের গায়ে নাম না জানা এক হলুদ ফুলের আধিক্য। স্বর্গ কখনও দেখেনি অবিনাশ, তবে স্বর্গ কি এই পাহাড়ি পথের চেয়েও সুন্দর হয়?


"সাব জি ও দেখিয়ে হামারা ফেমাস ফলস। গাড়ি সে উতর কর ফটোসটো খিঁচ লি জিয়ে।"

  ঝর্ণাটার দিকে ঘুরেও তাকালেন না অবিনাশ, না তাকালেও তিনি জানেন ঝর্ণাটা খুব সুন্দর। কিন্তু এই মুহূর্তে ও দিকে তাকালে তাঁর চলবে না।


"নেহি, তুম গাড়ি চালাতে রহো।"

"পর স্যার…"

হাত তুলে ড্রাইভারকে থামতে বললেন অবিনাশ, হয়তো খানিক আহত হল ছেলেটা। তবুও খদ্দেরের কথার ওপর তো কথা চলে না, তাই বিরস মুখে আবার গাড়িতে স্টার্ট দিলো সে।


  কিছুক্ষণের মধ্যেই গাড়িটা এসে থামল একটা পুরোনো চার্চের সামনে। পাহাড়ের অনেকটা ওপরে চার্চটা, আশেপাশে কোনো জনবসতি নেই। সাধারণত শনি আর রবিবারই ভীড় হয় এখানে, অন্যদিন টুকটাক মানুষজন আসতে থাকেন। চার্চের একপাশে একটা পরিত্যক্ত বাড়ি, কোনো এককালে চার্চের ফাদার থাকতেন ওখানে। পরবর্তীকালে কোনো ফাদার এই জনমানবহীন প্রান্তরে থাকতে রাজি না হওয়ায় নীচের শহরেই এখন তাদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে।


  ড্রাইভারকে একটু ঘুরে আসতে বলে চার্চের ভেতরে ঢুকে গেলেন অবিনাশ। অবিনাশের সামনে ক্রুশে ক্ষতবিক্ষত প্রভুর সেই পরিচিত মূর্তি। হাঁটু মুড়ে প্রভুর সামনে বসে বিড়বিড় করে কিছু একটা বললেন অবিনাশ। তারপর উঠে সোজা চলে গেলেন প্রভুর মূর্তির পেছনে। সেখানে মেঝেটা কাঠের পাটাতনে তৈরি, পরিচর্যার অভাবে ধুলো জমেছে। গুনেগুনে সাত নম্বর পাটাতনটার ওপর দাঁড়ালেন অবিনাশ, তারপর ব্যাগ থেকে একটা ছোট্ট শাবল বের করে চাড় দিতে থাকলেন আট নম্বর পাটাতনে। এই ঠাণ্ডাতেও তাঁর কপালে ফুটে উঠতে লাগলো বিন্দুবিন্দু ঘাম। অনেক প্রচেষ্টার পর অবশেষে খুলে গেল পাটাতনটা। শুকিয়ে ওঠা ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠল প্রচ্ছন্ন হাসি। শরীরটাকে বাঁকিয়ে খানিক কসরৎ করে সেই ফাঁক দিয়ে গলে গেলেন অবিনাশ ওরফে অবিনাশ সাইমনস, এই চার্চের একসময়ের ফাদার।

ভুগর্ভস্থ্য ঘরটার ঘুটঘুটে অন্ধকারে বুক চিরে দিলেন টর্চের আলোয়। হিসেব কষে এগিয়ে গেলেন দক্ষিণ দিকে, মাকড়সার জাল এসে জড়িয়ে গেল তাঁর মুখে। টর্চের আলো ফেললেন দেওয়ালে। কিন্তু কোথায় গেল বাক্সটা! এমনভাবে ওটাকে রেখেছিলেন তিনি যেটা তাঁর ছাড়া অন্যকারুর নজরে পড়ার কথা নয়, তাছাড়া এখানে তো বিশেষ কেউ আসার কথা নয়। আর কদিন পর এই গির্জার সংস্কারের কাজ শুরু হবে, তার আগে বাক্সটাকে পেতেই হবে। এই গির্জা ছেড়ে অন্য গির্জায় বদলি হওয়ার সময় পরিস্থিতি অনুকূল ছিলনা বলে বাক্সটাকে নিয়ে যেতে পারেননি তিনি, আর তাই এতদিন শান্তিতে ঘুম ধরেনি রাতে।

কিন্তু আজ… ঝুঁকে পড়ে ভালো করে জিনিসটা খুঁজতে যেতেই মনে হল কেউ যেন বসে রয়েছে দেওয়ালের কোণে। বুকটা চ্যাঁত করে উঠল অবিনাশের। নিঃশ্বাস ঘন হল। কাঁপা কাঁপা হাতে টর্চের আলোটা কোণের দিকে ফেলেও কিছু দেখতে পেলেননা অবিনাশ। মনের ভুল ভেবে টর্চের আলোটা ঘোরাতে যেতেই কোথার থেকে একটা গম্ভীর কন্ঠস্বর ভেসে এলো, "আহ টর্চটা নেভাও, টর্চের আলোয় কষ্ট হয় আমার।"

  আচমকা অপ্রত্যাশিত কন্ঠস্বর শুনে চমকে উঠলেন অবিনাশ, হাত থেকে পড়ে গিয়ে নিভে গেল টর্চটা।

"কে… কে!" চিৎকার করে উঠলেন অবিনাশ।

"আমাকে তো তোমার ভোলার কথা নয়, আমি রাধে।"

"রাধে!"

"হুমম আমি রাধে, যে রাধে তার বউয়ের চিকিৎসা করাবার জন্য বাধ্য হয়েছিল নীচের মা কালীর মন্দিরের গয়না চুরি করতে। আর তুমি তাকে সাহায্য করার নাম করে তার কাছ থেকে গয়নাভর্তি বাক্সটা হস্তগত করেছিলে। মনে পড়ে সে কথা?"

"কিন্তু তু… তুমি বেঁচে আছো কি করে?"

"হাঃ হাঃ হাঃ… কে বলেছে ফাদার আমি বেঁচে আছি! তুমি আমাকে যে খাদে ধাক্কা মেরে ফেলেছিলে, সেখানে কেউ বেঁচে থাকতে পারে?"

"ম… মানে?"

"পাপ আমরা দুজনেই করেছি কিন্তু শাস্তি আমি একা পাবো কেন ফাদার! ফাদার হয়েও তুমি চুরির জিনিস চুরি করবে, একটা জলজ্যান্ত মানুষকে খুন করে সেই রক্ত মাখা হাতে হাজার হাজার মানুষকে আশীর্বাদ করবে তাই কি প্রভু মেনে নিতে পারেন?"

"রাধে.." 

রাধের গলা আর শোনা গেলোনা, কিন্তু তার আগেই ওপরের কাঠের পাটাতনটা সশব্দে পড়ে গিয়ে এই ঘরে নেমে এলো নিশ্ছিদ্র অন্ধকার। আর্তনাদ করে উঠে পাটাতনটা খোলার নিষ্ফল চেষ্টা করতে লাগলেন অবিনাশ। চিৎকার করে সাহায্যের জন্য ডাকতে লাগলেন কাউকে, কিন্তু জনমানবহীন প্রান্তর থেকে সাড়া এলোনা কারুর।


                   ★★★


  মায়ের গায়ের গহনাগুলো চুরি হওয়ার পর থেকে এই মন্দিরে কেউ প্রদীপ জ্বালাতে পারেনা একটাও। রোজ সন্ধ্যায় নিষ্ফল চেষ্টা করা কিন্তু লাভ হয়না কিছুই। আজ দীপাবলির দিনেও এই মন্দিরে একটাও প্রদীপ জ্বলবে না ধরে নিয়েই জ্বলন্ত দেশলাইটা প্রদীপের সলতেয় ছুঁইয়েছিলেন পুরোহিতমশাই। উজ্জ্বল হয়ে জ্বলে উঠল প্রদীপটা, সেই দেখে হতবাক পুরোহিত মশাই একের পর এক সলতেয় আগুনের ছোঁয়া দিতে থাকলেন আর জ্বলে উঠতে লাগলো তারাও। বহুদিন বাদে আবার প্রদীপের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠল মন্দির চত্বর।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror