পাঁচশো টাকার নোট
পাঁচশো টাকার নোট


বাড়ি ফিরে ভ্যানিটি ব্যাগটা টেবিলের উপর উল্টে ফেলল অনিমা। তন্ন তন্ন করে খুঁজল ব্যাগের প্রত্যেকটি খাপ। নাহ কোথাও নেই। কিন্তু পরিষ্কার মনে আছে মানিব্যাগে বাকি টাকাগুলোর সাথেই রেখেছিল পাঁচশো টাকার নোটটা। আজ নন্দর দোকানের বাকি টাকাটা দেবার কথা ছিল । ভেবেছিল তুলির বাড়ি থেকে ফেরার পথে একেবারে টাকাটা দিয়ে ফিরবে । কিন্তু দোকানের সামনে গিয়ে নোটটা আর খুঁজেই পেলো না । মাইনে হবার এখনো সাত দিন বাকি ।
অনিমা একটা ছোট চাকরি করে । আগে তাকে এত হিসেবে চলতে হতো না । কিন্তু স্বামী দীপঙ্কর হঠাৎ করে মারা যাওয়াতে সব বদলে গেল । একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে খুব ভাল পোস্ট এ কাজ করত দীপঙ্কর । দারুণ হুল্লোড়ে আর খরুচে ছিল দীপঙ্কর। লোকজন খুব ভালোবাসতো ।ও বাড়ীতে থাকলে মনে হত বাড়ীতে কোন উৎসব হচ্ছে। হয় জোরে গান চালিয়ে শুনছে, নাহলে ফোনে কাউকে নেমন্তন্ন করে দিচ্ছে। তারপর নিজেই রান্নাঘরে গিয়ে রান্না করতে শুরু করছে। বেশির ভাগ উইকএন্ডেই হয় ওরা তুলির বাড়ী যেত আর নাহলে তুলিরা ওদের বাড়ী আসতো। তুলি আর বিপুলদাকে খুব ভালোবাসত দীপঙ্কর । ওদের
বাড়ী যাবার সময় , অ্যাত্তোবড় মিষ্টির বাক্স নিয়ে যেত অনিমারা। তুলি আর বিপুলদা খুব খুশি হত ওরা গেলে। কত হাসি গল্প , কত রকম খাওয়া । ওদের বাড়িতে ঢুকতে না ঢুকতেই চিৎকার করত দীপঙ্কর, “ পুটির মা, লপুঁটির মা তুলির পুরনো কাজের-লোক। ওর হাতে অন্তত তিন-চার কাপ চা না খেয়ে দীপঙ্কর ফিরত না । আর ফেরার পথে নিয়ম করে পুটির মায়ের হাতে একশ টা টাকা দিয়ে আসত। দীপঙ্কর চলে যাবার পর এখন তুলির বাড়ি যাতায়াত অনেক কমে গেছে। অনেকদিন বাদে, আজ গেছিল। এইসব নানা কথা ভাবছিল অনিমা, এমন সময় ফোনটা বেজে উঠল। ওপার থেকে তুলির গলা শোনা গেল,” পৌঁছে গেছিস? আচ্ছা শোন, পুটির মা এসেছিল এক্ষুনি। তুই কি পুটির মাকে যাবার সময় পাঁচশো টাকা দিয়ে গেছিস? নাকি ভুল করে...... আমি কি কথা বলব?”
মুহুর্তের মধ্যে অনিমার সামনে সব পরিষ্কার হয়ে গেল। দিপঙ্করের আমলের কিছু কিছু জিনিস সে এখনও বদলায় নি। তাই ফেরার পথে পুঁটির মার হাতে গুঁজে দিয়েছিলো একটা নোট। কিন্তু সেটা যে পাঁচশো টাকার নোট, একশো নয় সেটা খেয়াল করেনি।অল্পক্ষণ চুপ করে থেকে, শুকনো গলায় অনিমা বলল, “না, না তুলি, তুই এই নিয়ে আর কোন কথা বলিস না ...... গরিব মানুষ ......।“