STORYMIRROR

Paula Bhowmik

Fantasy Inspirational

4  

Paula Bhowmik

Fantasy Inspirational

ওম শান্তি

ওম শান্তি

5 mins
324

জায়গাটার নাম একম্বা। আর মুক্তিদের মামার বাড়ি যেতে হলে আমতলা যেতে হবে। মুক্তি আর শক্তি দুই বোনের সকাল সকাল মামার বাড়ি যাবার কথা। দিদা যেতে বলেছে। ওদের দাদু পার্থসারথি রাহার জন্মদিন আজ। অবশ্য এই জন্মদিনটা কাগুজে জন্মদিন। উনি ঐ গ্ৰামের পোষ্টমাষ্টার ছিলেন। বেশ কয়েক বছর আগেই অবসর নিয়েছেন।

আসল কথা নাতনিদের দেখার জন্যে কিছু না কিছু অজুহাত চাই। আগে তো নিজেই মাসে অন্তত এক দুই বার সাইকেল চালিয়েই চলে আসতেন এই মাইল দুই তিন রাস্তা। ইদানিং আর ততটা উৎসাহ পান না।

সাইকেল থেকে ব্যালেন্স হারিয়ে একবার পড়ে গেছিলেন রাস্তায়। এক আধটু ছড়ে গেছিলো হাতে পায়ে, ভাগ্যিস মাথায় লাগেনি। তারপর থেকেই সাইকেল চালানোতে প্রতিভা দেবীর কড়া বারণ।

মুক্তির স্নান টান সারা হয়ে গেছে। আর শক্তিটা এখনও ঘুমের দেশে। মুখটা বেশ হাসি হাসি। নিশ্চয়ই কোনো ভালো স্বপ্ন দেখছে বুনু । মায়া হয় ডাকতে। কিন্তু কিছু করারও নেই। না ডাকলে ও ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দশটাও বাজাতে পারে।

_______শক্তি, এ্যাই শক্তি, কিরে আজকে তো আমতলা যাওয়ার কথা। উঠবি ? নাকি চোখে মুখে জল ছিটিয়ে দেবো ?

_______না দিদিয়া, প্লিজ! আর মাত্র সাত মিনিট !

কথাটা বলেই দাঁড়িয়ে থাকা মুক্তিকে টেনে খাটের ওপর বসায় আর হাত দিয়ে পেটটা পেঁচিয়ে ধরে পাশবালিশের মতো।

______বারে! নিজে তো উঠছিসই না, আবার আমার সময় নষ্ট করা ? ছাড় ছাড় !

______বললাম না আর সাত মিনিট!

_______ই__ইস্ ! তোর দু মিনিট পার হয়ে গেছে এতক্ষণে।

মুখে রাগ দেখায় বটে আবার শক্তির বেঁধে রাখা চুলগুলো খুলে খুলে মাথা নেড়েও দেয়।

পাঁচ বছর পরের কথা। মুক্তির বিয়ে হয়েছে পানিশালায়। বর সৌদিতে কাজ করতো। ছেলের জন্মের বছর খানেকের মধ্যেই বাড়িতে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু ফিরে আসে বাক্সবন্দি মৃতদেহ। না মুক্তি আর সে দেহ দেখতে চায়নি। ছেলে গোগল, বাবাকে ফোটোতেই দেখে আসছে ছোটোবেলা থেকে।

মুক্তি এখন একজন আশা কর্মী। রাতবিরেতে মানুষ দরকারে ডাকলেও ওর সাহায্য লোকে পায় ।

শক্তি মাধ্যমিক পাশ করার পর পড়াশোনা করার পাশাপাশি কোচিং সেন্টারে ট্রেনিং নিচ্ছে । বেশি কিছু না, ভারতীয় সেনায় একটা চাকরি ওর চাই। ও তো ওর দিদিয়ার মতোই লম্বা । খেলাধুলোতেও বেশ ভালো। রোজ নিয়ম করে মাঠেও দৌড়ায়। চাকরি না পেলে বিয়ে করতে রাজি নয় ও কিছুতেই।

মুক্তির মতো মনের জোর ওর নেই। জামাইবাবুর হাসিখুশি চেহারাটা যেন চোখে ভাসে আজও । স্বামী না থাকলে একটা মেয়ে যে কত অসহায়, দিদিয়াকে দেখেই বুঝতে পেরেছে শক্তি। তবু ভালো যে ওর শ্বশুর শাশুড়িকে ও পাশে পেয়েছে। আর একজন মানুষ ওকে খুব সাহায্য করেছে। ওর এক ক্লাসমেট,

মিনতিদি। মিনতিদির স্বামীর সাথে বনিবনা হয়নি বলে ডিভোর্স নিয়ে একা থাকে । ওর দুটো ছোটো মেয়েকে নিয়ে প্রচুর লড়াই করতে হয়েছে। নানা রকম কাজ করতে গিয়ে পরিচিত হয়েছে নানা মানুষের সাথে।

এক অবাঙালী পরিবারের সূত্রে যোগাযোগ হয় এক আয়ুর্বেদিক কোম্পানির নেটওয়ার্ক ওয়ার্রকারের সাথে। তাঁর সাথেই পা রাখে শিববাবার ঘরে। মিনতিদিই মুক্তির অবস্থার কথা শুনে খোঁজ নিয়ে দেখা করতে এসেছিলো পুরোনো বান্ধবীর সাথে। সঙ্গে করে নিয়ে যায় ঐ প্রজাপতি ব্রহ্মাকুমারীর আশ্রমে। ওখানে নিয়মিত যাতায়াত করতে করতেই শক্তির দিদিয়া মুক্তি আবার হাসতে শিখেছে। আশাকর্মী হিসেবে কাজ করতে পারছে।

ওসব রাজ-যোগ, টোগ শক্তি অত বোঝেনা। কিন্তু একদিন দিদিয়ার সাথে গিয়েছিলো ঐ আশ্রমটায়। নিছক কৌতুহল বশে। আসলে জানার ইচ্ছে হয়েছিলো খুব জামাইবাবুর মৃত্যুর পর যে দিদির পাগলিনী প্রায় অবস্থা হয়েছিলো, সে কাদের সংস্পর্শে এসে আবার আগের মতো এত হাসিখুশি হলো।

তবে জায়গাটা দেখেই প্রথমে মুগ্ধ হলো। পূর্ব দিকে একটা বিরাট খাল। তার ওপারে অনেকটা ফাঁকা জমি। দূরে সবুজ গাছপালার ফাঁকে ফাঁকে দুচারটে বাড়িঘর উঁকি দিচ্ছে। উত্তর দিকে গলির ওপারে অবশ্য কিছু বাড়ি আছে কিন্তু একবার আশ্রমে ঢুকে পড়লে আর কোনো বাইরের লোকজনের শব্দ সেখানে প্রবেশ করেনা।

শিববাবার ভক্তরা পরস্পর দেখা হলেই নম্র ভাবে বলে ওঠেন "ওম শান্তি"। একটা বড় হল ঘরে দুজন মানুষের বড় ছবি আর নানারকম আরো ছবি দেয়ালে টাঙানো। এসবের মধ্যে দাদি আম্মার ছবিটা দেখে সত্যিই মন ভালো হয়ে যায়। দু সারিতে মাটিতে বসার জন্যে গালিচা পাতা রয়েছে। আর যাদের মাটিতে বসতে অসুবিধে তাদের জন্যে পেছন দিকে আছে চেয়ার।

এক সময়ে হালকা আলো জ্বালিয়ে একটা হিন্দি গান চালানো হলো। কথাগুলো মনে নেই, মর্মার্থ ছিলো শান্তি। কাউকে কোনোভাবে কেউ যেন আঘাত না দেয় তারই আকুতি।

চোখ বুজে ভাবতে তো খুউব ভালোই লাগছিল। কিন্তু শক্তি ভাবে, যদি সত্যিই তেমন হতো তাহলে তো কোথাও যুদ্ধ, খুনোখুনি এসব হতো না। দেশের সীমা রক্ষার জন্য কোনো সেনারও প্রয়োজন হতো না। আর কেউ মারতে এলে তাকে না মারলে তো নিজেদেরকেই মরতে হবে।

মিনতিদি মাউন্ট আবু থেকেও ঘুরে এসেছে। এখন আর ওর কোনো অভাব নেই। অলটোজ এন্টারপ্রাইজ এর একজন বড়সড় লিডার হয়ে গেছে

কয়েক বছরের মধ্যে। পায়ের তলায় ওর সর্ষে। মুখে ফেনা উঠে যায় কথা বলতে বলতে। প্রচুর খাটতে হয় বটে! কিন্তু যখন গোয়া কিংবা রায়পুর, কিংবা কটকে দলের লিডারদের সাথে ট্যুরে যায় তখন সব খাটুনির সুফল গুলো পেয়েই যায়। কোম্পানির সি.ই.ও রজত করের সাথে ছবি তুলতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবতী বলেই মনে হয়। কখনও কখনও মানুষ স্বপ্নের অতিরিক্তও কিছু পেয়ে যায়।

শক্তিও স্বপ্ন দেখে আজকাল অগ্নিপথ যোজনার শরীক হতে পেরেছে। চারবছর চাকরির শেষে ফিরে এসে কাউকে বিয়ে করে সুখে সংসার করছে। কিন্তু বিহারের কিছু জায়গায় ট্রেন জ্বালানোর খবর কানে এসেছে। আলো কি পৌঁছে যাবে অনেক বেশি মানুষের ঘরে ! যোজনাটা যদি শুধু মেয়েদের জন্যেই হতো! তাহলে কি আর এত গন্ডগোল হতো! দেশের সেনাদের তো নবীন প্রাণশক্তির ই বেশি প্রয়োজন।

বয়সের সাথে সাথে মানুষের এনার্জি স্বাভাবিক ভাবেই কমে যায়। পঁচিশ বছরে অবসর নিলে এর পর

সারাটা জীবন পড়ে আছে সামনে, নানা কাজ করার জন্যে। শক্তি বোঝেনা কজন ছেলে পঁচিশ বছরের আগেই চাকরি পেয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়, যে অবসরের বিরূদ্ধে এত লাফালাফি করছে !

আর দেশের সম্পত্তি এভাবে যারা নষ্ট করতে পারে, সেরকম মানসিকতার ছেলেদের তো সেনাতে যাওয়ার কোনো যোগ্যতাই নেই। ইচ্ছে হয় সব কটাকে ধরে ধরে ব্রহ্মাকুমারীর সেন্টারে পাঠিয়ে আগে মানুষ হবার ট্রেনিং নেওয়ায়।

পড়তো মিনতিদির পাল্লায়! ফোন করে খোঁজ নিতে শুরু করতো কি করে জমিতে অর্গানিক সার প্রয়োগ করে চারগুণ বেশি লঙ্কা ফলানো যায়।

মিনতির আসল নাম মমতা ঘোষ।

ফোন নম্বর :- ৭৭১৮১৩১৬২৫

                🙏🙏🙏ওম শান্তি!🙏🙏🙏


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Fantasy