নয়নজুলি
নয়নজুলি
সূর্য ডোবার সময় সুজিতের নতুন ফ্ল্যাটবাড়ির জালনা দিয়ে গঙ্গার একটা চমৎকার ভিউ দেখা যায়। সুজিতের মনে পড়ে একটা নয়নজুলি ছিল পুরোনো বাড়িটার পাসে। সেখানে কত মাছ ধরেছে ছোটবেলায়। ইট ভাঙা দেয়ালের ফাঁক দিয়ে ছিপ গলিয়ে দিত। বড়শিতে কৈ, মাগুর বা শোল মাছ উঠত ।
বাবা ক্র্যাচে ভর দিয়ে হাটতেন। খট্ খট্ আওয়াজ কানে গেলে ছিপ গুটিয়ে রাখত সুজিত। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে সময় পুলিশের তাড়া খেয়ে পালানোর সময় বাবার পায়ে গুলি লাগে। ডানপা হাঁটুর নীচ থেকে কেটে বাদ গেছিল। বাবার বাকি জীবনটা ক্র্যাচে ভর দিয়ে কেটেছে।
বাংলাদেশে খুলনা জেলায় ওদের আদিবাড়ি। সুজিতের ঠাকুরদা ব্রিটিশ তাড়াতে গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোলনে সরিক হয়েছিলেন। বেশ কয়েক বছর রাজবন্দী হয়ে ঢাকায় জেল খেটে ছিলেন। এরপর যখন বাংলাদেশের মানুষ পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে, সেই যুদ্ধে সুজিতের বাবাও জড়িয়ে পরে ছিলেন।
পাকিস্তানি সেনাদের থেকে পালিয়ে অসুস্থ অবস্থায় ভারতে এসে কাকিনাড়া নামের মফস্বল শহরে পিসির কাছে আশ্রয় নিয়েছিলেন। নিঃসন্তান পিসি ভাইপোকে নিজের বাড়িটা উইল করে দিয়েছেন। পুরানো ভাঙ্গা বাড়িটা সুজিত প্রমোটারকে বেচে দিয়ে নিজের একটা ফ্ল্যাট জোগাড় করেছে।
প্রমোটার পুরানো বাড়ি ভেঙে নয়নজুলি বুজিয়ে বিল্ডিং বানিয়েছে। বাড়িটা ভাঙার সময় একটা পুরনো লোহার ট্রামের মধ্যে পুরোনো কাপড়ের পুঁটলিতে একটা দেশি পিস্তল পেয়েছে সুজিত। আগে কখনো বাবা একথা সুজিতকে বলেননি। বাবার মৃত্যুর পর ক্র্যাচ দুটো ফেলে দিয়েছিল নয়নজুলির মধ্যে। পিস্তলটা লুকিয়ে রেখেছে সুজিত, বিপ্লবী বাবার স্মৃতি আছে পিস্তলটার গায়ে।