Madhuri Sahana

Classics Inspirational Others

4  

Madhuri Sahana

Classics Inspirational Others

ডুয়ার্স

ডুয়ার্স

8 mins
413


২২/১/২৩ রবিবার শিয়ালদহ স্টেশন থেকে তিস্তা তোর্সা এক্সপ্রেস ধরে চলেছি ডুয়ার্সের পথে। বাঙালিদের ভ্রমণ পিপাসু মন প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য খোঁজে। সাধারণ গৃহস্থের গৃহস্থালি সামলে সামান্য যা সঞ্চয় তাই নিয়ে যতটুক আয়োজন করা সম্ভব তাই নিয়ে চলেছি সপরিবারে। আমার দুই কন্যা এবং আমরা দুজন। ২০১৮ সালে সিকিমে পেলিং শহরকে কেন্দ্র করে দিন সাতেক একটা ট্যুর করেছিলাম আমরা তারপর এবার ২০২৩ সাল। সেবার আমরা শিলিগুড়ি গেছিলাম ভলভো টুরিস্ট বাসে। শিলিগুড়ি থেকে গাড়ি বুক করে পেলিং। সেও ছিল এক অনন্য অভিজ্ঞতা। পাহাড়ি পথের রোমাঞ্চকর যাত্রা। 

৬.৪৫ মিনিটে ট্রেন ছাড়লো। এরপর নৈহাটি স্টেশন সেখানে আমার বড় ভাই আমাদের জন্য রাতের খাবার দিয়ে দেবে। এটাও সফরের একটা বাড়তি পাওনা। আমরা‌ যে কুপে রয়েছি সেখানে আমাদের সহযাত্রী রয়েছেন চার জন। দুই জন অল্প বয়সি দম্পতি আর দুই জন পৌঢ় দম্পতি। অল্প বয়সি দম্পতি দুজন মোবাইলে মগ্ন। আর পৌঢ় দম্পতি দুজন সাংসারিক আলোচনায় ব্যস্ত ওদের কথা বার্তায় নতুন কিছু নেই, ওরা ওদের সংসার‌ সাথে নিয়ে চলেছে।‌ জেনারেল কম্পার্টমেন্টে ট্রেনের জানালা দিয়ে অনেক কিছু দৃশ্য দেখতে দেখতে যাওয়া যায় এসি কম্পার্টমেন্টে জালনা দিয়ে বাইরে দেখার সুখটা কম তবে ছিমছাম সাচ্ছন্দ্যবোধ হয়। বড়ভাই বৌ সোনালীর রান্নার হাত বেশ। কড়াইশুটির কচুরি চিকেন কারি দিয়ে জমিয়ে খেলাম সাথে আছে গাজরের হালুয়া। ট্রেন চলেছে নড়িতে নড়িতে। নদীতে নৌকা চড়লে একটা আলাদা দোলার অনুভূতি হয়। আর ট্রেনের দোলায় একটা ঘুম ঘুম ভাব আসে। অনেকের কাছে শুনেছি ট্রেনে ঘুম আসে না কিন্তু আমার ট্রেনের দোলায় ঘুম আসে।

২৩/১/২৩ এখন সকাল ৬.৩০। রাতে ঘুম হলো ভালোই। ঠান্ডা লাগেনি। ট্রেন লেটে চলছে। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনের কাছাকাছি চলে এসেছি। ট্যুরের মজায় রয়েছি । বাংলায় ডুয়ার্স হলো সবচেয়ে সুন্দর ট্যুরিস্ট স্পট। দার্জিলিং কালিংপং অপূর্ব প্রাকৃতিক শোভায় উজ্জ্বল তবে জনবসতির চাপে জর্জরিত। আলিপুর দুয়ার এখনও সুন্দর রয়েছে তবে ভবিষ্যতে কি ঘটবে কে জানে। প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর হিমালয়ের পথে যে মনোরম শোভা দেখে ছিলেন আমরা এখন তা দেখতে পাইনা। প্রকৃতির উপর অত্যাচার করলে মানুষেরই ক্ষতি। আমরা ময়নাগুড়ি স্টেশনের জন্য অপেক্ষা করছি। এবার সকলের চা লাগবে। আজকে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন। ছুটির দিন। তাই চা' আলারা ছুটি নিয়েছে বোধ হচ্ছে এখনো হাঁক ডাক শুনছি না।

ময়নাগুড়ি স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে আমাদের গাড়ি বলা ছিল চলে এলাম হোম স্টেতে। মুর্তি নদীর কাছাকাছি আমাদের এই দুই দিন থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। বেশ সুন্দর নিরিবিলি আন্তরিক পরিবেশ। শীতের সময় তাই নদীর জল কম বর্ষায় নদীতে স্রোত থাকে। সেই স্রোতে নদীগর্ভের পাথর গুলি ক্ষয় হয়ে ভিন্ন ভিন্ন আকৃতির ছোট ছোট নুড়িপাথর হয়ে‌ তটে ছড়িয়ে আছে আর সেই নুড়িপাথর গুলো রোদের আলোয় চকচক করছে খুব সুন্দর লাগছে দেখতে। পাহাড়ি নদীর তটে এই দৃশ্য অনেকেই দেখেছেন। সমুদ্র সৈকতে গেলে লোকে ঝিনুক কুড়িয়ে জড়ো করে আর মুর্তি নদীর থেকে নুড়িপাথর। আমি একটা পছন্দ মতো পাথর নিয়েছি সংগ্রহে রাখবো।

লাঞ্চ সেরে আমরা চললাম লাটাগুড়ির ভিতর দিয়ে গরুমারা রিজার্ভ ফরেস্ট। ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে জিপসি গাড়িতে চড়ে জঙ্গল সাফারি। জঙ্গলের একটা নিজের নিয়ম আছে। আমরা সেখানে ঘন্টা খানেকের জন্য যাব তার জন্য সেই নিয়মে বিঘ্ন না ঘটাই শ্রেয়। জিপসি গাড়িতে করে জঙ্গল সাফারি ট্যূরিজিমের একটা অংশ মাত্র। মুম্বাইয়ে গিয়ে যদি বলিউড তারকার দর্শন হয় তাহলে সে এক পরম পাওয়া তেমনি জঙ্গলে যদি দৈবাৎ গন্ডার বাঘ হাতি বা কোনো জঙ্গলের প্রাণির দর্শন পাওয়া যায় সেটাকে অতিরিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্যে গণ্য করতে হবে। আমরা আমাদের সাফারিতে কয়েকটি ময়ুর আর কিছু পাখি দেখতে পেয়েছি। 

আজকে রাতের আয়োজন ছিল ক্যাম্পফায়ার ও চিকেন রোস্ট। ঠান্ডা বেশ ভালোই। লনে আগুন জ্বালিয়ে চিকেন রোস্ট করা হলো । আগুন ঠান্ডা রবীন্দ্রসঙ্গীত বেশ আনন্দে কাটলো সন্ধ্যাটা। মানু সানু আর ওদের বাবা ফোটোগ্রাফি করতে খুব পছন্দ করে ওরা দেদার ছবি তুলেছে। এই এলাকা ওয়াইল্ড লাইফের আন্ডারে কয়েকটি আউল এসে বসে ছিল লনে। 

২৪/১/২৩ আজকে ঘুম ভেঙেছে সাড়ে ছয়টায় । বেশ কুয়াশা মোড়া আলো ফুটছিল আস্তে আস্তে। পাখির ডাক গুলো বেশ স্পস্ট শুনতে পাওয়া গেল। মোরোগ ময়ুর আর কিছু নাম না জানা কিচিরমিচির। আমরা যে লজটাতে আছি তার দোতলার বেলকনিতে দাঁড়িয়ে কিছুটা দুরে মুর্তি নদীর অববাহিকা তার‌ পিছনে ঘন জঙ্গল চোখে পড়ে। স্থানীয় লোকজন তাদের চাষের জমি থেকে ধান কেটে নিয়েছে তাই চাষের জমি গুলো বেশ মাঠের মতো লাগছে । শুনেছি জমিতে ফসল থাকলে জঙ্গল থেকে হাতি চলে আসে। আজকে আমরা ডুয়ার্সের ঝালং গ্রাম দেখতে যাব । একটা ফোর সিটার গাড়ি বুক করা হয়েছে সকালে ব্রেকফাস্ট করে আমাদের বেরনোর কথা।

আমাদের গাড়ি এসে দাড়িয়ে আছে। ন'টা বাজে। আমার দুই মেয়ে তৈরি হতে একটু সময় নিচ্ছে। ড্রাইভার ছেলেটি ভালো। এই পাহাড়ের আবহাওয়ার মানুষ বেশ খোলামেলা হয়ে। খেপিয়ে না দিলে এরা চট করে দুর্ব্যবহার করে না। আমরা প্রথমে সামসিং ভিউপয়েন্ট দেখলাম। এই পয়েন্ট থেকে সামনের পাহাড়ের ভিউ বেশ লাগে। পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে ছোট ছোট গ্রাম এবং লাগোয়া চা বাগান নীচে মুর্তি নদীর বয়ে চলা খুব নয়নোভিরাম দৃশ্য। এরপর আমাদের গাড়ি এগিয়ে চললো চড়াই উৎরাই পাকদন্ডী পথ ধরে। ঘন জঙ্গলাকীর্ণ পাথুরে রাস্তার ধারে খাদ বেশ বিপদসংকুল পথ। আমরা পৌছালাম রকি আইল্যান্ড। সেখানে কিছু সময় থেকে আবার এগোলাম আমাদের পরবর্তী গন্তব্যে । এভাবেই একসময় পৌঁছে গেলাম পশ্চিমবঙ্গ এবং ভুটানের সীমান্ত লাগোয়া বিন্দুগ্রাম। বিন্দুগ্রামে একটা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে। জলঢাকা নদীর খরস্রোতকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। বিন্দুগ্রামে ভুটানি মহিলারা স্টল সাজিয়ে বসে আছে। টুরিস্টরা কেনাকাটা করছে পছন্দ মতো। আমি কিছু টুকিটাকি জিনিস কিনলাম। ফেরার পথে একটা বাঙ্গালী ধাবায় লাঞ্চ করলাম। সারাদিন অনেক সুন্দর সুন্দর ছবি তোলা হয়েছে। হোটেলে ফিরে এসে আজকে শুধু রেস্ট।

২৫/১/২৩ আজকে সকালে শরীর খারাপ লাগছে। দুই মেয়ে বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ট্রেন জার্নি তার পর গাড়িতে গোটা দুই দিন জার্নির একটা ধকল আছে সম্ভবত সেটিই কারন। মুর্তিকে বিদায় দিয়ে আজকে চলে যাব জয়ন্তী নদীর কাছে। ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে পথ। এক অনন্য অভিজ্ঞতা। পৌঁছে গেলাম আমাদের নতুন গন্তব্যে একটা সুন্দর ছিমছাম বনবাঙ্গলো অরিজিনাল হোম স্টেতে। পথে দেখেনিলাম বক্সা টাইগার রিজার্ভ ফরেস্টের মিউজিয়াম। এই জঙ্গলে যে সব জন্তু জানোয়ার আছে তাদের সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পরিচয় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে এই মিউজিয়ামে। এই অফিস থেকেই জঙ্গলে প্রবেশের অনুমতি নিতে হয়। আমাদের গাড়ির ড্রাইভার ছেলেটি স্থানিয় হওয়ার কারণে জঙ্গলের অভিজ্ঞতা বেশি। আমাদের খুব ভালো ভাবেই গাইড করছে। জঙ্গল আমার কাছে অপরিচিত তাই এর সর্বত্র রহস্যে ঘেরা বলে মনে হচ্ছে। কত রকমের গাছ দেখলাম। এই জঙ্গলে রাতের আঁধার আমার অপরিচিত। আজকে আকাশে চাঁদ নেই তাই নক্ষত্রদের উজ্জ্বল দেখছি। মোটের উপর আমাদের এই আস্তানাটি আমার পছন্দ হয়েছে। ফরেস্টের মাঝখানে মানুষের বসতি। শুনেছি রাত বিরেতে হাতিরা দলবল নিয়ে হাজির হয় ক্ষেতের ফসল নষ্ট করে। মানুষকে সেরা হয়ে ওঠার লড়াইয়ে কখনো কখনো জঙ্গলের কৌশলে ফিরে যেতে হয়। স্ট্রাগেল ফর এগজিস্টেন্স।

২৬/১/২৩ আজকে ভারতীয় প্রজাতন্ত্র দিবস এবং সরস্বতী পুজো একই দিনে উদযাপন করা হচ্ছে। আজকে আমাদের সকালের ট্যুর প্লানে ছিল পোখুরি লেক। বক্সা ফরেস্টের ভিতর প্রথমে জিপসি গাড়িতে করে কিছুটা দূরে গিয়ে ট্রেকিং করে লেকের কাছে পৌঁছতে হয়। আমরা ব্রেকফাস্ট করে আমাদের প্লান অনুযায়ী রওনা দিলাম সাফারি গাড়িতে আমাদের গাইড ছিলেন লুকু মাহাতো। লুকু মাহাতো টুরিস্ট গাইড এর কাছে জেনে নিলাম বক্সা ফরেস্টে সাড়ে চারশো প্রজাতির প্রজাপতি, ঊনসত্তর প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, একচল্লিশ প্রজাতির সরীসৃপ, পাঁচশো প্রজাতির পাখি রয়েছে। এই জলাশয়টি সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে এগারোশো ফিট উচ্চতায় অবস্থিত। এই জলাশয়টি স্থানীয়দের কাছে পবিত্র। এর জলে প্রচুর ক্যাটফিস বাংলায় যাকে বোয়াল মাছ বলা হয় এবং কচ্ছপ আছে। এই জলাশয়ে মাছ ধরা নিষিদ্ধ। এই জলাশয়ে দেবী দুর্গা কালরাত্রি রূপে পুজিতা হয়ে থাকেন। বৌদ্ধদের কাছেও এই জলাশয়টি পবিত্র। পথে যেতে যেতে বুনো হাতি বা চিতা বাঘের সাক্ষাৎ হতে পারে তবে আমরা হরিণ বানর আর হর্ণবিল দেখেই খুশি হলাম। এরপর দুপুরে লাঞ্চ করে আবার চললাম জঙ্গল সাফারিতে। 

জয়ন্তী নদী বর্ষায় জলে টইটম্বুর থাকে তবে এই শীতের সময়ে নদীতে জল নেই। শুকনো নদীর বুকে গাড়ি চলাচল করছে। আমাদের জিপসি গাড়িও চলছে ওয়াচ টাওয়ারের দিকে যদি হাতি দেখতে পাওয়া যায়। এই পথে লেপার্ডের দেখা পাওয়া যায়। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত জয়ন্তী পাহাড় ও নদী এখানে প্রকৃতির পাশেই দিব্যি সময় কেটে যায়। ট্যুরিস্ট স্পটের কোলাহল বা বাজার হাট মুক্ত নিরুপদ্রব সৌন্দর্য। ভুটিয়াবস্তি ওয়াচ টাওয়ার এবং চুনিয়া ওয়াচ টাওয়ার থেকে জঙ্গলকে দেখলাম। এক অনন্য অভিজ্ঞতা।

২৭/১/২৩ সকাল হলো তখন ঘড়িতে সাড়ে পাঁচটা। আমরা পতিদেব এমেচার ফোটোগ্রাফি করে থাকেন। আগে ল্যান্ডস্কেপ ফোটোগ্রাফি করতেন এখন ওয়াইল্ড লাইফ ছবিতে আগ্রহ অনেক চেষ্টা করেও হাতি গন্ডার ক্যামেরায় ধরা পড়েনি তাই আজ চলছে বার্ড ফোটোগ্রাফি করতে। আগের দিনের গাইড লুকু মাহাতো তাকে নিয়ে যাবে নির্দিষ্ট স্পটে যেখানে ফরেস্টের ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির পাখি আসে। পাখির ছবি তুলতে সে চলে গেল ভোর থাকতেই। অনেক অনেক রং বেরঙের হামিং বার্ড আমাদের হোম স্টের সামনের গাছ গুলিতে এসে বসেছে সারাদিন। অপূর্ব তাদের কোলাহল।

আজকে আমাদের ট্যুর প্রোগ্রাম আছে ছোট মহাকাল। জয়ন্তী রিভার বেডের উপর দিয়ে চার পাঁচ কিলোমিটার গেলে এক অপূর্ব প্রাকৃতিক পরিবেশে এই স্থান। এই অঞ্চলের থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার ট্রেক করে পাহাড়ের উপর বড় মহাকালের মন্দির। সে এক দূর্গম যাত্রা। এই যাত্রা পথের সৌন্দর্য দেখলে বোঝা যাবে কেন এই অঞ্চলটি কে সৌন্দর্যৈর রাণী বলা হয়েছে। আমাদের যাত্রা পথ আমরা ছোট মহাকাল পর্যন্ত রেখে ছিলাম।‌ মহাশিব রাত্রি উপলক্ষে এখানে ভক্ত সমাগম হয় মেলা বসে। এই অঞ্চলটি অবস্থান গত দিক থেকে ভুটান এবং ভারতের সীমান্ত অঞ্চলে। এই অঞ্চলের উৎসবে দুই দেশের মানুষ অংশ নেয়। জয়ন্তী নদীতে জল থাকলে এই পথে যাতায়াত বন্ধ থাকে।

সকালে ছোট মহাকাল ঘুরে এসে লাঞ্চ করে আমরা চললাম সান্তালবাড়ি। সান্তালবাড়ি থেকে ট্রেক করে বক্সা ফোর্ট এবং লেপচাখা ভুটিয়া গ্রামে যেতে হয়। সান্তালবাড়িতে পৌঁছতে আমাদের খানিকটা দেরি হয়ে গেছিল। চেকপোস্টে আমাদের বক্সা ফোর্ট যাওয়ার অনুমতি দিল না। কাছাকাছি জিরো ভিউ পয়েন্ট এবং টাইটানিক ভিউ পয়েন্ট পর্যন্ত ট্রেকিং করে গেলাম। দুর থেকে বক্সা ফোর্ট এবং লেপচাখা গ্রাম দেখে চক্ষু সার্থক করলাম।‌ যাত্রা পথের সৌন্দর্য আবারও মুগ্ধ হলাম। 

২৮/১/২৩ আমার মায়ের মৃত্যু বার্ষিকী ২০০৭ সালে এই দিনে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকে মায়ের মৃত্যু হয়েছিল। এই দিনটাকে আমি ভুলতে পারি না।‌ এই দিনে প্রতিটি মুহূর্ত মা আমার সামনে থাকেন। 

আমাদের ট্যুরের শেষ দিনে কোচবিহার ঘুরে আলিপুর দুয়ার স্টেশন থেকে কাঞ্চনকন্যা ট্রেনে শিয়ালদহ ফেরার কথা। সেই মতো সকল নটায় আমাদের ড্রাইভার রানা‌ আমাদের নিয়ে বক্সা ফরেস্ট থেকে কোচবিহার চলে এলো। বেলা এগারটায় মদনমোহন মন্দিরে পৌঁছে স্থানীয় স্টল থেকে পুজোর সামগ্রী কিনে নিয়ে মন্দিরে পুজো দিলাম। কোচবিহারের মদনমোহন মন্দির এক বিখ্যাত ধর্মীয় স্থান। এই মন্দিরের বিগ্রহকে দেখে মুগ্ধ হলাম। কোচবিহার রাজবাড়ীও স্থাপত্য রীতিতে অনবদ্য। এর ভেতরের মিউজিয়ামটি খুবই সমৃদ্ধ। ভীষণ ভালো লাগলো শতাব্দী প্রাচীন মুর্তি গুলো দেখে এবং এক সমৃদ্ধ ইতিহাসের সাক্ষী থেকে। রাজবাড়ির সংগ্রহশালায় সপ্তম শতাব্দীর নবগ্রহের মুর্তি ও মায়ের কোলে সদ্যজাত শিশুর নিপুণ ভাস্কর্য আমাকে মুগ্ধ করেছে। কোচ বংশোদ্ভুত নৃপতি নৃপেন্দ্রনারায়ণ এই প্রাসাদটি নির্মাণ করেন ১৮৮৭ খ্রীষ্টাব্দে। বাংলা তথা ভারতীয় রাজনীতিতে এই রাজবাড়ির ভুমিকা অনস্বীকার্য। মদনমোহন মন্দিরের সোনার গৌরাঙ্গ বঙ্গবাসীর প্রাণের থেকে প্রিয়।

২৯/১/২৩ পৌঁছে গেলাম শিয়ালদহ। আলিপুর দুয়ার জংশন থেকে কাঞ্চনকণ্যা এক্সপ্রেস ছাড়লো ঠিক দুপুর তিনটে পনেরো মিনিটে। আঁকাবাঁকা রেল পথ জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে আবার কখনো লোকালয় দিয়ে ছুটে আমাদের পৌঁছে দিল। আমাদের এক সপ্তাহ ডুয়ার্স ভ্রমণ সুন্দর একটা অভিজ্ঞতা হয়ে থেকে যাবে মনে। বাড়তি পাওনা মোবাইলে এবং ক্যামেরায় তোলা ছবিগুলো যা এলবামে থাকবে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics