Madhuri Sahana

Children Stories Others

3.4  

Madhuri Sahana

Children Stories Others

দুন্দুভি দেশের গল্প

দুন্দুভি দেশের গল্প

4 mins
206



দুন্দুভি দেশে এক রাজা ছিল। তার মস্ত প্রাসাদ ও অনেক প্রজা। রাজা ও তার রানী মহাসুখে রাজ্য চালাতেন কোথাও কোন অভিযোগ ছিল না। রাজা রানীকে প্রজারা খুবই ভালোবাসত। রাজা কখনও প্রজাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতেন না। রাজার প্রকান্ড প্রাসাদ সেখানে হাতি ঘোড়া বাঘ সিংহ হরিণ সবই প্রচুর। রাজার প্রাসাদ ঘিরে ছিলএকটা উঁচু প্রাচীর আর প্রাচীরের বাইরে এক প্রকান্ড পরিখা সেই পরিখা সমস্ত প্রাসাদটাকে ঘিরে রেখেছিল। পরিখাটিতে অনেক জল আর বড় বড় কুমীর থাকতো। 


রাজ্যে কোন চোর ডাকাতের উপদ্রব ছিল না। অন্য রাজ্য থেকে কখনো যদি কোন দুষ্টু লোক আসত সে ভয়ে রাজপ্রাসাদের কাছে ঘেঁষতো না । হাঁ করা কুমীর দেখে ভয় পেয়ে পালিয়ে যেত। রাজার প্রাসাদের বাগানে বাঘ সিংহ নির্ভয়ে চরে বেড়াত। রাজা রানী ঘোড়া চড়ে প্রতিদিন সকালে রাজপ্রাসাদের বাইরে প্রজাদের সঙ্গে তাদের গ্রামে যেতেন তাদের সঙ্গে কথা বলতে। 


একদিন রাজা রাণী উত্তর দিকের একটা গ্রামে চললেন গ্রামটি ছিল বৈদ্যদের গ্রাম। এই গ্রামের মানুষ পেশায় সকলে বৈদ্য। নানান ধরনের ঔষধি গাছের চাষ হতো সেখানে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের প্রজারা এই বৈদ্যদের কাছে আসতেন চিকিৎসা করাতে। বৈদ্যদের কাছে চিকিৎসা সেবা নিয়ে সুস্থ হতেন।


রাজা রানী গ্রামের প্রান্তে এসে দাঁড়ালেন তারপর গ্রামবাসীদের বার্তা দিলেন। রাজার বার্তা পেয়ে দলে দলে বৈদ্য প্রজারা এলেন বৈঠক করতে । রাজা রানী জানতে চাইলেন চিকিৎসায় নতুন কিছু আবিস্কার হয়েছে নাকি প্রধান বৈদ্য ঘাড় নেড়ে জানালেন একপ্রকার বিশেষ ধরনের গুল্মজাতীয় গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে যা নাকি ভাঙ্গা হাড় নিমেষেই জুড়ে দেবে । রাজা রানীর সামনে এক পা ভাঙ্গা রোগী নিয়ে আসা হলো এবং প্রধান বৈদ্য তার পায়ের চিকিৎসা করলেন একপ্রকার বটিকার প্রলেপ দিয়ে এবং কিছুক্ষন পরেই রোগীকে ঠিক করে তাকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে দিলেন । রাজা রানী খুশি হয়ে বৈদ্যদের পুরস্ককৃত করে স্বর্ণমুদ্রা বিতরণ করলেন। বৈদ্যদের খুশি করে তাদের আশির্বাদ নিয়ে রাজা রানী প্রাসাদে ফিরে এলেন।


এরক'য়েক দিন পর রাজা রানী তাঁতীদের গ্রামে গেলেন। তাঁতীরা তাদের কাজের নমুনা দেখালো। রানীকে মসলীনের শাড়ি ও রাজাকে মসলীনের বস্ত্র উপহার দিল । রাজা রানী মনোযোগ দিয়ে তাদের কর্মকাণ্ড দেখলেন এবং তাঁতীদের সাধুবাদ জানিয়ে প্রাসাদে ফিরে এলেন। 


এরক'য়েক দিন পর রাজা রানী কুমোরদের গ্রামে গিয়ে কুমোরদের কাজকর্মের খোঁজ নিলেন। কুমোররা তাদের আবিষ্কার এক প্রকান্ড জল রাখার পাত্রটা দেখালেন। এই পাত্রে সারাবছরই জল থাকবে কখনো জলশূণ্য হবে না । রাজা রানী কুমোরদের কাজে খুশি হয়ে কুমোরদের পুরস্কার দিলেন এবং প্রাসাদে ফিরে এলেন।

রাজা রানী রাজ্যের কোনো না কোনো গ্রামে গিয়ে গ্রামের প্রজাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন এবং তাদের কাজ তদারকি করে ফিরে আসেন প্রাসাদে । রাজা রানী তাদের প্রজাদের উন্নতিতে যারপরনাই খুশি ।


রাজ্যবাসীরা রাজাকে শ্রদ্ধা করে । রাজ্যে সর্বত্র শান্তি বিরাজ করে। পড়শী রাজ্যের রাজা রাণীরা এ সংবাদে হিংসা করে। তারা দুন্দুভি রাজ্যের রাজপ্রাসাদ দখল করার পরিকল্পনা করে লোক পাঠায় কিন্তু ব্যর্থ হয়। দুষ্টু লোক কুমীরের খাদ্য হয় । হিংসুটে রাণীরা জ্বলে পুড়ে মরে । 


এই ভাবে বছরের পর বছর হিংসার আগুনে পুড়ে খাক্ হয়ে হিংসুটে পড়শী রাজ্যের রাজারাণীরা এক ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র করল । তারা একটি ভয়ঙ্কর দানবের সাথে যোগাযোগ করলো ও দানবকে লোভ দেখিয়ে বুঝিয়ে সুঝিয়ে দুন্দুভি দেশে পাঠালো । দানব দুন্দুভি রাজ্যের শেষ প্রান্তে এসে একটা ছোট বামুন মানুষের ভিতরে প্রবেশ করল। রাত গভীর হলে দানব মানুষ রূপ ত্যাগ করে ধ্বংস লীলা শুরু করে আবার সকালে বামুন মানুষ হয়ে চুপ করে বসে থাকে। 


ছদ্মবেশী দানব একের পর এক গ্রামে অত্যাচার করে ধ্বংস করে দিচ্ছে। দুন্দুভি দেশে ভীষণ কষ্ট। চারিদিকে হাহাকার। গ্রামের মানুষ গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে। চরম আতঙ্কে দুন্দুভির প্রজারা দিশাহারা।

চারিদিকে মৃত্যুর মিছিল সকলে দিশাহারা হয়ে রাজা রাণী কাছে গিয়ে নালিশ করেছে । প্রতিকার চাইছে। রাজা নিজের প্রাসাদ ছেড়ে গ্রামের প্রজাদের সঙ্গে গ্রাম পাহারা দিচ্ছেন কিন্তু দানবের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না । 


দানব নিঃশব্দে এসে দুন্দুভি দেশের গ্রামের মানুষ মেরে ফসল তছনছ করে চলে যায় কিন্তু কোথায় যায় কেউ তাকে দেখতে পায়না । রাজা রানী হয়রান হয়ে দানবকে খুঁজতে চর লাগিছেন দানব কিছুতেই ধরা পড়ছে না। 

নিরুপায় রাজা তখন রাণীকে একটা উপায় করতে অনুরোধ করলেন। রাণী একটা কৌশল অবলম্বন করলেন। সমস্ত গ্রামের প্রধানদের ডাকলেন। আলাদা করে ডেকে নিয়ে আদেশ দিলেন যে প্রত্যেককে নিজের গ্রামের মানুষদের নিয়ে লাইন দিয়ে দাঁড়াতে হবে। নির্দেশ মতো সবাই এলো এবং লাইনে দাঁড়ালো।


কিন্তু একজন বামুন মানুষ দেখা গেল কোনো গ্রামেরই পরিচিত নয় সে নতূন লোক। তখন রাজা এই নুতন মানুষটিকে তার পরিচয় দিতে বললেন। রাজার আদেশ শুনে ছদ্মবেশী দানব পালাতে গেল। ওরদিকে রাজার বাগানের বাঘ সিংহ রা হালুম হালুম করে তেড়ে এলো। দানব পড়িমরি করে ছুটে পালাতে গিয়ে পরিখার মধ্যে পড়েগেল। পরিখার কুমীর গুলো দানবটিকে টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে খেয়ে নিল । দুন্দুভি দেশের মানুষ রাজা রানীর নামে জয়ধ্বনি করে উঠলো । রাজ্যে শান্তি ফিরল । পড়শী রাজ্যের হিংসুটে রাণীরা আবার জ্বলে পুড়ে গেল ।।



Rate this content
Log in