অজয়
অজয়
অজয়
ঠিক ১৬ মিনিট লেট করে বর্ধমানে ঢুকেছে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস, ভোর ৬,৩০ মিনিটে শিয়ালদহ স্টেশন ছেড়েছে। দুরপাল্লার ট্রেনগুলো সাধারণত হাওড়া স্টেশন থেকে ছাড়ে। যাত্রীদের জন্য মাটির ভাড়ে চা নিয়ে হকারদের শোরগোলের জমজমাটি হাকডাক মিস করছিল সেরু। বর্ধমানে ট্রেন থামতেই গরম চায়ের জন্য হাঁসফাঁস করে উঠলো সেরুর মন। দুকাপ গরম চা সালটে মাথা ছাড়লো। একটা ছোট উইকেন্ডে ট্যুরে বোলপুর যাচ্ছে ওরা। চৈত্র মাসের শুরুতে গরম থাকলেও ভোরের আবহাওয়া আজ বেশ মনোরম। সকালে ট্রেন ধরার তাড়া ছিল তাই রাতের ঘুমটা পুরো হয়নি। মাথাটা টিপ টিপ করছে। ট্রেনে যেতে যেতে স্টেশনের নাম গুলো পড়তে বেশ লাগছে যাপানডাঙা, জৌগ্রাম, পাল্লারোড, ঝাপটেরঢাল,,, ট্রেনের জানালা দিয়ে ছুটন্ত দৃশ্য গুলো একে একে ধানক্ষেত,মেটেপথ, তালগাছ, খেজুর গাছ,কুঁড়েঘর, গরু ছাগল কৃষক শ্রমিক অনেক অনেক পাখি ,জলসেচের খাল ,ঝোপঝাড় দৃশ্য গুলো সমানে বদলে বদলে যাচ্ছে।
ট্রেন ছুটে যাচ্ছে, জালনার থেকে চোখ সরছে না সেরুর। অজয় নদীর কাছে চলে এলো ট্রেন, অজয়নদীর ক্ষীণ জলরাশি এবং বিস্তীর্ণ বালির উপর রোদ পড়ে চকচক করছিল। স্বর্গীয় এই প্রাকৃতিক দৃশ্য। কিন্তু অজয়নদীর এক ভয়াল রূপের কাহিনী জানে সেরু, সেই কাহিনী ঠাকুমার মুখে শুনেছে সে। অজয়নদীর বন্যায় ভেসে গিয়েছিল একটি জনপদ। হাজার হাজার মানুষ ভিটা মাটি হারিয়ে ভিখারী হয়ে ছিল। শুধু সোনালী বালির স্রোতের এই নদীতে এতো জল কোথা থেকে এসেছিল তাই নিয়ে সেরুর মনে একটা সন্দেহ হয় যদি এই কাহিনী ঠাকুমার কাছে না শুনত তাহলে ভাবত এটা কোনো রূপকথার গল্প। ঠাকুমা বলেছিলেন এই অজয়নদীর পাড়েই ওদের গ্রাম, সেখানে বন্যায় ঠাকুমার বাবা মা দাদা দিদি জলে ভেসে যায়। ঠাকুমাকে কোনো রকমে জীবিত উদ্ধার করা গিয়েছিল।
মামার বাড়ি দাদু দিদিমার কাছে বড় হয়েছিল ঠাকুমা। সেরু ঠাকুমার মুখে শুনেছে এই কাহিনী। আজকে ট্রেনে যেতে যেতে অজয়নদী দেখে ঠাকুমার জন্য মন খারাপ হয়ে গেল সেরুর।