Kumar Archita

Abstract Comedy Romance

3.9  

Kumar Archita

Abstract Comedy Romance

নুন

নুন

4 mins
349


লতিকার রনের প্রতি এক অন্য রকমের আকর্ষণ ছিল সেই আকর্ষণটা সামান্য বন্ধুত্বের নয় বরং তার চেয়ে অনেকটা বেশি। লতিকা রনকে ভালোবাসতো কিন্তু সে ভয় পেত যদি রন তাকে এবং তার ভালবাসার মজা ওড়ায় তাকে ভুল বোঝে তাই সে কোনদিনও তাকে বলে উঠতে পারেনি যে সে তাকে খুব ভালোবাসে, কিন্তু যখন রনের বিয়ে ঠিক হল দিতিপ্রিয়ার সঙ্গে তখন লতিকা আর থাকতে না পেরে দৌড়ে চলে যায় রনের বাড়িতে। যখন লতিকা রনের বাড়ির দোরগোড়ার   সামনে গিয়ে উপস্থিত হয় তখন সে দেখে..... গোটা বাড়ি লাল হলুদ গাঁদা ফুল দিয়ে আর রংবেরঙের আলো দিয়ে সাজানো হচ্ছে। লতিকা সেটা দেখে নিজেকে আটকাতে পারল না সে দৌড়ে দালানের মধ্যে দিয়ে উপরে উঠে যায় সিঁড়িতে দৌড়ে উঠতে গিয়ে যে তার পায়ের সোনার নুপুর খানা যে কখন খুলে পড়ে গেছে সেটার ও খেয়াল নেই তার....। যখন সে রনের ঘরে গিয়ে পৌঁছায় তখন দেখে সবাই রনকে হলুদে মাখামাখি করছে আর খুব হাসি ঠাট্টা করছে। লতিকা পর্দার আড়ালে লুকিয়ে তাদের সব কথা শুনছিল... লতিকার চোখ দিয়ে জল পড়ছে অনাবরত তবুও সে চুপ করে আড়ালেই দাঁড়িয়ে আছে,কিন্তু তাও সে রনের ঘরে ঢুকে গিয়ে রণকে নিজের ভালোবাসার কথাটা বলে উঠতে পারল না।তার এখনো ভয় করছে যদি তার এই ভালোবাসার কথা বলতে গিয়ে পাছে তার প্রানের বন্ধুকেও হারিয়ে না ফেলে, তাই সে শাড়ীর আঁচল দিয়ে চোখ মুছে রনের বাড়ির রান্না ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়...।


সেখানে লতিকা গিয়ে দেখে রনের মা মিঠু কাকিমা সব খাওয়া খাওয়া-দাওয়ার আয়োজনে ব্যস্ত আছে কারণ তখনকার দিনের মতো এখনোও অনেক বিয়ে বাড়িতেই প্রচুর বড় ভিএন বসে। মিঠু কাকিমা চোখটা তুলতেই লতিকা কে দেখতে পেল...."কিরে! লতু.. তুই কখন এলি...? রনের সঙ্গে দেখা করেছিস না কি তুই বাড়িতে ঢুকেই রান্নাঘরের দিকে চলে  এলি....? নানা কাকিমা আমি ওপড়ে গিয়েছিলাম তখন রনকে ওরা হলুদ মাখাচ্ছে দেখলাম.... তাই..... ওকে আর ডিস্টার্ব না করে তোমার কাছে চলে এলাম। তা তুই ভালোই করেছিস। আপনার কি কোন সাহায্য লাগবে কাকিমা তো আমাকে  বলুন আমি আপনাকে সাহায্য করে দিচ্ছি। হ‍্যাঁ...রে আমার সাহায্য লাগবে রে....কারণ বিয়েবাড়ী বুঝতেই পারছিস প্রচুর কাজ আর আর এখন সব কাজের লোক তো নয় যেন সব অকর্মার ঢেঁকি..., তুই এক কাজ কর তুই বরং এই নুনের দিবিটা মৃদুলদা কে গিয়ে দিয়ে দে ওইসব ভিএন এর ব্যবস্থা দেখছে।ঠিক আছে কাকিমা তুমি দাও আমি মৃদুল কাকুকে গিয়ে দিয়ে আসছি। লতিকা মৃদুল দা কে নুনের দিবিটা দিয়ে এলো ফিরে আসার পথেই লতিকার মনে হলো যে ওই নুন ই তার মনের কথা রনের কাছে পৌঁছে দিতে তাকে সাহায্য করতে পারে....., কিন্তু কিভাবে....?


লতিকা বুদ্ধি খাটিয়ে ভাবল যদি নুনের দিবিগুলোতে জল পড়ে যায় তাহলে কেমন হবে,? কিংবা নুনের দিবিগুলো হাওয়া করে দেয়া হয় তাহলে একটা বড় কাজ হতে পারে।লতিকা নিজেই সব কাজের দায়িত্বের ভার কাঁধে তুলে নিল,তার প্ল‍্যান অনুযায়ী সে আস্তে করে রান্না ঘরে গিয়ে রান্নাঘরের নুনের বস্তার মধ্যে জল ঢেলে দিল আর বাকি নুনের দিবি গুলোকে ভেঙে দিল। মিঠু কাকিমার মাথায় বাজ ভেঙে পড়ল.... কারণ রান্নায় যদি নুন না থাকে তাহলে লোকে তো ছিঃ ছিঃ করবে আর কেউ মুখে খাবারই তুলতে পারবেনা.... আর তাছাড়াও এত খাবার নষ্ট হয়ে যাবে। তখন মিঠু কাকিমা রতন কাকুকে এই মারে.... তো সেই মারে.... কারণ রতন কাকু তো মিঠু কাকিমার অবর্তমানে রান্নাঘরটা সামলা ছিল আর মৃদুল কাকু যখন ফোনে কারোর সঙ্গে কথা বলতে ব্যস্ত ছিল তখনই লতিকা এই সব কাজ সেরে এসেছে। তার প্ল্যান মত সে একটা নুনের দিবি আস্ত রেখেছিল আর সেটা সে নিজের কাছে লুকিয়ে রেখেছিল। সময়মতো সে নুনের দিবি টার মধ্যে নিজের মনের কথা একটা কাগজে লিখে ফেলে দিয়েছিল.... সে কাগজ ভরা নুনের দিবিটা রনের হাতে দিয়ে বলল যে এই নুনের দিবিটা কাউকে দেবে না কারণ এই নুনের দিবিটার মধ্যে একটা গোপন তথ্য লুকিয়ে রাখা আছে,আর লতিকার ভালোভাবে জানা ছিল যে রনের একটি গোয়েন্দা গোয়েন্দা স্বভাব রয়েছে আর তাকে এই কথাটা বললেই সে অবশ্যই নুনেরদিবিটা খুলে দেখবে আর ঠিক তাই হলো নুনের দিবিটা খুলে দেখতেই সে লতিকার লুকিয়ে রাখা কাগজটা পেয়ে গেল আর পড়ে ও নিল। চিঠিটা আর নুনের দিবি তা নিয়ে ও লতিকার সামনে গেলে। রন সামনে গিয়ে লতিকা কে জিজ্ঞেস করল এই চিঠিটাতে যে কথাটি লেখা আছে সেটা সত্যি কিনা...? লতিকা বলল হ্যাঁ...., লতিকা বলল," আমি তোমাকে ভালবাসি রন....,কিন্তু আমি তোমাকে হারাতে ভয় পাই,আমি ভাবতাম যদি আমি তোমাকে এই কথাটা বলি আর তুমি আমার সঙ্গে বন্ধুত্ব টুকু না রাখ তাহলে আমিতো মরেই যাবো। রন জড়িয়ে ধরল লতিকাকে। কিছুক্ষণ বাদে রন নিজের মাকে গিয়ে সব কথা বুঝিয়ে বলল লতিকার এই মজাদার কীর্তির সব কথা শুনে মিঠু কাকিমার তো চক্ষু চড়কগাছ....,আর লতিকার বাবা হরনাথ জেঠুর তো হাসতে হাসতে পেটে খিল পড়ে যাওয়ার অবস্থা।


রন দিতিপ্রিয়া কে সব কথা জানাতে রন জানতে পারল যে দিতিপ্রিয়া ও তাকে বিয়ে করতে ইচ্ছুক নয় সেও ঠিক এরকম কাজ করার কথা ভেবেছিল কারন সে এখন বিয়ে করতে চায় না সে এয়ার হোস্টেস হতে চায়। দিতিপ্রিয়ার কথা শুনে রন ফোনটা হাতে ধরে হাসতে হাসতে বিছানায় শুয়ে পড়ল। সে ভাবলো যে এরকম করে যে কোন বিয়ে আটকানো যায় সেটা তার জানা ছিল না।যথাসময়ে লতিকা আর রনের বিয়ে হল আর তারা খুব ভালভাবে সংসার করার জন্য প্রস্তুতি শুরু করলো।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract