নেপথ্যে
নেপথ্যে
চিতা জ্বলছিল। এককোণে দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলছিলেন রমেশবাবু। একমাত্র ছেলে ছিল তার রনি। কি অন্যায়ের শাস্তি দিয়ে গেল ছেলেটা, কোথা থেকে আর্সেনিক জোগাড় করেছিল, কেন খেয়েছিল তার কোন উত্তর তার জানা নেই। পাশে নিশীথবাবু ছিলেন, তিনি রমেশের কাঁধে হাত রেখে বললেন,” শক্ত হও রমেশ। জীবন তো আর থেমে থাকবে না। ঊর্মিলার দায়িত্বও তো তোমার উপরে।“
সব কাজকর্ম মিটে গেল। জীবন আবার স্বাভাবিক, নিরুত্তাপ।
একদিন দুপুরবেলা কি খেয়ালে রমেশবাবু জরুরি ফাইলগুলো নিয়ে ঘাটাঘাটি করছিলেন। মনের ভারাক্রান্ত ভাব এখনো যায়নি তার। হঠাত বেরিয়ে এল রনির মৃত্যুর মেডিক্যাল রিপোর্টগুলো। কিন্তু একী? রিপোর্টগুলোর উপরে এভাবে লাল লাল দাগ দিয়ে কে এভাবে লিখেছে? প্রথমটায় ভয়ে শিউরে উঠলেন রমেশবাবু। তারপর সাহস করে সেগুলো হাতে তুলে নিলেন তিনি। লাল অক্ষরে লেখাগুলো পড়তে পড়তে শিরদাঁড়া দিয়ে একটা ঠাণ্ডা স্রোত নেমে গেল তাঁর।
“শুধু কি আর্সেনিক? আরো কিছু কি আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী নয়? তোমার উচ্চাকাঙ্খা, তোমার শাসন, তোমার নির্দয় প্রত্যাশারা যারা প্রতি মুহূর্তে জীবনকে একটু একটু করে কেড়ে নিয়েছে আমার থেকে, তাদের কথা রিপোর্টে লেখা নেই কেন বাবা? তোমার মতে সেদিনই তো আমার জীবন শেষ হয়ে গিয়েছিল, যেদিন অল্পের জন্য মেডিক্যালে চান্স হলনা, তবে এখন কেন এই মিথ্যে নাটক?”
হাত থেকে রিপোর্টটা পড়ে গেল রমেশের। থরথর করে কাঁপতে লাগলেন তিনি।