নাস্তিক কুঞ্জ বাবু
নাস্তিক কুঞ্জ বাবু
কুঞ্জ বাবু যতই ভাবে সমীরের সাথে আর তর্ক করবে না কিন্তু ওর কথাকে সমর্থন না করতে পারলেই ঠিক কি করে লেগে যায় তর্ক। আর সেটা এক এক বার খুব বেশি রকমের হয়ে ওঠে । আসলে কুঞ্জ বাবু ভগবানকে একেবারেই বিশ্বাস করেন না। উনি রাজনীতির দিক থেকে আগেই বাঁদিকে হেলে থাকতেন । এখন সোজা হয়ে বসলেও ডানদিকে খেলতে ওনার খুব আপত্তি। এখনো নিজেকে একজন নাস্তিক মানুষ বলে মনে মনে খুব গর্ব বোধ করেন। বউ কৃষ্ণার সাথে এই নিয়ে ওর ঝামেলার অন্ত নেই। কুঞ্জ বাবু খুব উত্তেজিত হয়ে সমীর কে বললেন
"তোর বিশ্বাস তোর কাছে রাখ আমাকে বোঝাতে আসিস না"
সমীর জানে এটা রোজকার ব্যাপার। কুঞ্জ বাবু আবার বাইরে গিয়ে ওর পিঠ চাপড়ে একটু পরেই বলবে
"কি রে সমীর সিঙ্গারা খাবি?"
কুঞ্জ বাবুকে ওই এলাকায় সবাই নাস্তিক কুঞ্জ বাবু বলেই চেনে। এতে অবশ্য ওনার কোন আপত্তি নেই।
সেদিন একটু দেরি করে ঘুম ভাঙ্গে কুঞ্জ বাবুর। উঠে টেবিলের দিকে তাকিয়ে চায়ের কাপটা নজরে পড়ে না । আসলে কুঞ্জ বাবুর বেড টি খাওয়ার অভ্যেস অনেক দিনের। ঘুম ভাঙলেই ওনার চা রেডি চাই । কৃষ্ণা সেটা রোজই টেবিলে রেখে কুঞ্জ বাবু কে ডেকে দেন । কিন্তু আজ টেবিলে চা নেই। কুঞ্জ বাবুর মাথাটা তখনই বেশ গরম হয়ে উঠল। বিছানা থেকে উঠেই ঘর থেকে বেরিয়ে কৃষ্ণার নাম ধরে ডাকতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই দেখল পাশের ঘরে বেশ ভিড়, মানে পাড়া-পড়শীর কয়েকজন কৃষ্ণার সাথে বসে কথা বলছে
কুঞ্জ বাবুকে দেখে কৃষ্ণা হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো
"সকাল থেকে রুবি কে পাওয়া যাচ্ছে না, আমি ওকে বাগানে খেলতে দিয়ে একবার ঘরে এসেছিলাম"
"কি সব বলছো বাগান থেকে রুবি কোথায় যাবে?"
রুবি কুঞ্জ বাবুর নাতনি। বছর দুই বয়স ।রুবির বাবা-মা দুজনেই চাকরি করে, তাই রুবি সারা দিন দাদু দিদার কাছেই থাকে।রাতে অফিস থেকে ফিরে কুঞ্জ বাবুর মেয়ে জামাই ওদের মেয়ে রুবিকে বাড়ি নিয়ে যায়। কুঞ্জ বাবুর চোখের মনি বলতে রুবি।
থানায় ডায়েরি করে কুঞ্জ বাবু বাড়ি ফিরতে প্রায় বিকেল হয়ে গেল কিন্তু রুবিকে কোথাও পাওয়া গেল না। কুঞ্জ বাবুর বউ আর মেয়ে রুবির জন্য কেঁদে কেঁদে বার বার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। কুঞ্জ বাবু যেন এই কয়েক ঘণ্টায় পাথরের মত হয়ে গেছেন। জামাই তার বন্ধুদের সাথে রুবিকে পাগলের মত খুঁজে বেড়াচ্ছে। কুঞ্জ বাবু ভাবল
ো আর একবার থানায় খবর নিলে ভালো হতো, সেই মনে করে উনি আবার থানার জন্য বাড়ি থেকে বের হলেন কিন্তু একটু পথ যাওয়ার পরেই ওনার মাথাটা খুব ঘুরতে আরম্ভ করলো ।শরীরটা ঠিক নেই ভেবে আবার বাড়ীর দিকেই যাবেন ভেবেও একটু দাঁড়িয়ে গেলেন
"কুঞ্জ বাবু আমি শুনেছি আপনার নাতনিকে পাওয়া যাচ্ছে না, একটা কথা বলবো আপনি কি কিছু মনে করবেন?"
কুঞ্জ বাবু পিছন ফিরে দেখে প্রফুল্ল বাবু।ওনার প্রতিবেশী। আশির ওপর বয়েস কিন্তু এখনো রাতে খাওয়ার পর রাস্তায় পায়চারি না করলে ওনার ঘুম আসে না।
"হ্যাঁ বলুন"
"আপনি যদি পারেন কাল একবার এক টাকার আধুলি মনে মনে রুবি কে ফিরে পাওয়ার জন্য মানসিক করে যে কোন মন্দিরে দেবেন "
কথাটা এক নিঃশ্বাসে বলেই প্রফুল্ল বাবু একটু ইতস্তত করে আবার বললেন
"আমি জানি আপনি নাস্তিক তাও এটা আমার মনে হল তাই বললাম"
এমনিতেই কুঞ্জ বাবুর মনটা খুব খারাপ ছিল তাই উনি কথাটা শুনে হ্যাঁ বা না কিছুই না বলে বাড়ির দিকে পা বাড়ালেন। বাড়ির খুব কাছে এসে উনি বাগানের মধ্যে একটু দাঁড়িয়ে পড়লেন। পকেটে হাত দিয়ে একটা এক টাকার কয়েন বার করে মুঠো করে ধরে থাকলেন। তখন ওনার মনে যেন একটা ঝড় বয়ে যাচ্ছিল। কুঞ্জ বাবু ভাবলেন যদি আমার রুবিকে পাওয়া যায় তাহলে এই এক টাকার কয়েন টা আমি যে কোন মন্দিরে দিয়ে আসব, আমার বিশ্বাস থাক বা না থাক। কয়েনটা উনি বেশ যত্ন করে রুমালে জড়িয়ে আবার পকেটে ঢুকিয়ে রাখলেন।
বাড়িতে ঢুকতেই উনি চমকে উঠলেন , কৃষ্ণার কোলে বসে আছে রুবি। রুবিকে জড়িয়ে ধরে কুঞ্জ বাবুর চোখ সজল হয়ে উঠল। রুবিকে পুলিশ ই খুঁজে এনে দিয়েছে। এক ছেলে ধরা রুবীকে নিয়ে চলে যাওয়ার সময় স্টেশন থেকে পুলিশ পাকড়াও করে। অবশেষে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে কুঞ্জ বাবু ঘরে ঢুকলো। কৃষ্ণার হাতে কয়েন টা বার করে দিয়ে বলল
"যদিও আমি নাস্তিক তাও আজ আমার রুবির জন্য আমি ভগবানের কাছে মানসিক করলাম"
এই বলে কৃষ্ণার হাতে এক টাকার কয়েন টা দিয়ে আবার বলল
"এটা কাল কোন মন্দিরে দিয়ে দিও"
কৃষ্ণা কুঞ্জ বাবু কে কোনদিন মন্দিরের কথা বলতেই শোনেনি। টাকাটা নিয়ে যত্ন করে রেখে কৃষ্ণা বলল
"নাস্তিক থেকে আস্তিক হলে রুবির জন্য এটাই ভগবানের খেলা"
কুঞ্জ বাবু কথার কোন উত্তর না দিয়ে চোখ বুঝে শুয়ে পড়ল।।