নারী মাংসের লালসা🗡 পর্ব ৪
নারী মাংসের লালসা🗡 পর্ব ৪
নিশার কথায় শুধুমাত্র এমিলি রাজি হলেও বাকীরা অসম্মতি জানায় । সেদিন তারা সারাদিন বাইরে কাটিয়ে বিকালের দিকে ফিরে যায় গেষ্ট হাউসে । সন্ধ্যা থেকে ডিনার পর্যন্ত সবাই একসাথে এক জায়গায় বসেই গল্প করে কাটিয়ে দেয় তারপর তাড়াতাড়ি ডিনার শেষ করে চলে যায় নিজেদের নিজেদের রুমে । পারিজাত, আকাশ, সন্দীপ আর বিতান ছিল একই রুমে । দুই - তিন দিন পর সেদিন রাতে পারিজাত আবার সেই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের স্বপ্ন দেখে গোঙাতে শুরু করে ফলে বাকী তিনজন প্রচন্ড ভয় পেয়ে পারিজাতের চোখে - মুখে জল ছিটিয়ে ওর ঘুম ভাঙায় । ঘুম ভেঙে উঠে পারিজাত ভয়ে গুটিয়ে থাকে কিন্তু স্বপ্নের দৃশ্যগুলো কাউকে মুখ ফুটে বলতে পারে না শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে । তারপর কোনোরকমে নিজেকে সামলে নিয়ে পারিজাত বলে , " একটা খুব বাজে স্বপ্ন দেখছিলাম হয়তো, ওইসব বাদ দে এখন তোরা শুয়ে পড় আমি একদম ঠিক আছি । "
পারিজাতের কথা শুনে আকাশ, সন্দীপ আর বিতান শুয়ে পড়ে । শুয়ে পড়ে পারিজাতও কিন্তু কিছুর একটা আতঙ্কে আর দু - চোখের পাতা এক করতে পারে না ।
পরেরদিন ভোরবেলায় হঠাৎ কান্নাকাটির শব্দে সবাই যে যার ঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে আসে করিডোরে । করিডোরে দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছে সৌম্য, জয়ন্ত, রাতুলের গার্লফ্রেন্ড মৌ আর অগ্নির গার্লফ্রেন্ড বর্ষা এবং ওদের পাশেই জবুথবু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে পিটার ।
পিটারকে জবুথবু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সন্দীপ অবাক হয়ে বলে, " কি ব্যাপার বলোতো, ওরা কাঁদছে আর তুমি এইভাবে দাঁড়িয়ে আছো কি হয়েছে ? বাকীরা সব কোথায় ? কি হোলো এমিলি, রাকা আর নিশা কোথায় ? "
বিতান : ( বিরক্ত হয়ে ) " কি হয়েছে, কেউ কি বলবি তোরা ? কি হয়েছে তোদের ? "
জয়ন্ত : ( হাউহাউ করে কাঁদতে কাঁদতে )
" ভোরবেলা থেকে এমিলি, নিশা আর রাকাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না । চারিদিকে দেখলাম, পুরো গেষ্ট হাউসে খুঁজলাম কিন্তু ওরা তিনজন কোথাও নেই । কি হচ্ছে এইসব কিছুই বুঝতে পারছি না । "
জয়ন্তর কথা শুনে পারিজাত থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে ধপ্ করে মাটিতে বসে পড়ে , চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট । পারিজাতের অবস্থা দেখে সকলেই চিন্তিত হয়ে ওঠে ।
সৌম্য : ( কাঁদতে কাঁদতে ) " রাকা আমাকে কালকে একটা কথাই কয়েকশো বার বলেছে কিন্তু আমি পাত্তা দেই নি । খুব বড়ো ভুল হয়ে গেছে আমার । "
আকাশ : ( ব্যতিব্যস্ত হয়ে ) " কি কথা সৌম্য ? "
সন্দীপ সাথে সাথে আকাশ আর সৌম্যকে থামিয়ে দিয়ে ফিসফিস করে বলে, " এখানে বসে কোনোরকম আলোচনা করা ঠিক হবে না তার চেয়ে বরং সকলে মিলে বাইরে কোথাও চল । দূরে কোথাও বসে আলোচনা করে কি করা যায় তা ঠিক করতে হবে । "
তখন সবেমাত্র সকাল ছয়টা বাজে, যে যেই অবস্থায় ছিল গায়ে শুধুমাত্র গরম জামাকাপড় জড়িয়েই বেরিয়ে যায় গেষ্ট হাউস থেকে । প্রায় ঘন্টাখানেকের দূরত্বে একটা চায়ের দোকানে সকলে আলোচনায় বসে ।
আকাশ : ( আবারও ব্যতিব্যস্ত হয়ে ) " এই সৌম্য এবার বলতো রাকা তোকে বারবার কি একই কথা বলেছে ? "
সৌম্য : " রাকা দুদিন ধরে আমাকে বারবার বলেছে বাবুর্চি দুটো সারাদিন নানা রকম অছিলায় ওদের দিকে মানে আমাদের গ্রুপের মেয়েদের দিকে খুব বিশ্রীভাবে তাকিয়ে থাকে । ওরা দুজন নাকি আড়ালে - আবডালে ওদের উপর নজর রাখতো । "
সৌম্যর কথা শোনার সাথে সাথেই অগ্নির গার্লফ্রেন্ড বর্ষাও বলে ওঠে , " একদম ঠিক , এটা আমিও এই গেষ্ট হাউসে ঢোকার পর থেকেই খেয়াল করেছি । এই বাবুর্চি দুটোর কথা প্রথম আমাকে এমিলি বলে কিন্তু তার আগে আমি নিজেও ব্যাপারটা খেয়াল করে আমাদের গ্রুপের বাকী মেয়েদের জানিয়েছিলেন । "
সন্দীপ : ( প্রচন্ড রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে ) " এই গেষ্ট হাউসে যদি সত্যিই কোনও সমস্যা থেকে থাকে তাহলে তা আমাদের খুঁজে বের করতেই হবে । তাছাড়া রিয়া, দিয়া, এমিলি, রাকা আর নিশাকেও খুঁজে বের করতে হবে । ওদের না নিয়ে আমরা ফিরে গিয়ে ওদের বাড়ির লোকেদের কি জবাব দেবো ? "
সৌম্য হঠাৎ করে প্রচন্ড আক্রোশে আকাশকে মারতে গেলে সকলে মিলে ওকে আটকে দেয় ।
আকাশ : ( হঠাৎ আক্রমণে হতভম্ব হয়ে )
" তুই আমাকে মারতে আসছিস কেনো ? আমি কি করলাম ? "
সৌম্য : ( প্রচন্ড রাগে চীৎকার করে ) " তুই কি করেছিস জানিস না ? এই গেষ্ট হাউসটা তুই বুকিং করেছিস , তোর কথামতো আমরা এই গেষ্ট হাউসে গিয়ে উঠেছি । এই গেষ্ট হাউস থেকেই রহস্যময় ভাবে একে একে উধাও হয়ে যায় আমাদের গ্রুপের পাঁচ পাঁচটা মেয়ে , আর তুই বলছিস তুই কি করেছিস ? "
আকাশ : ( অবাক হয়ে ভ্রু কুঞ্চিত করে )
" কি বলছিস তুই পাগলের মতো ? তোরাই বলতো আমি কি করে জানবো এই গেষ্ট হাউসে কোনো সমস্যা আছে । আমার বাবার বন্ধু এই গেষ্ট হাউস ঠিক করে দিয়েছে তাতে আমার দোষ কোথায় ? "
ওদের কথা কাটাকাটির মধ্যেই হঠাৎ পিটার চীৎকার করে ওঠে, " এই তোমরা একটু চুপ করবে ? এখন কি করা যায় আগে সেটা ভাবতে হবে ঝগড়া করে কোনো সমাধান হবে কি ? "
রাতুলের গার্লফ্রেন্ড মৌ কাঁদতে কাঁদতে বলে,
" আমার মনে হয় আর দেরী না করে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব লোকাল পুলিশের সাথে যোগাযোগ করা উচিত । একমাত্র পুলিশের সাহায্য নিয়েই আমরা ওদেরকে উদ্ধার করতে পারবো । "
অগ্নির গার্লফ্রেন্ড বর্ষা : ( দুহাত দিয়ে চোখের জল মুছতে মুছতে ) " কিন্তু ওরা যে গেষ্ট হাউসেই আছে তার প্রমাণ কী ? "
পিটার : " আমার কেনো জানি না মনে হচ্ছে ওরা গেষ্ট হাউসেই কোথাও আছে । আমার মনে হয় আমাদের এখনি একবার লোকাল থানায় গিয়ে কথা বলা উচিত । "
পিটারের কথা শেষ না হতেই পারিজাত প্রচন্ড রাগে বিড়বিড় করে কিছু বলতে থাকে কিন্তু কথাগুলো এতোই ক্ষীণ আওয়াজে বলছে যে কারো বোধগম্য হচ্ছে না ।
সন্দীপ : ( অবাক হয়ে ) " এই প্যারী, তুই বিড়বিড় করে কি বলছিস রে ? আমরাতো কিছুই বুঝতে পারছি না । কিরে কি বলছিস তুই ? "
প্রায় কয়েকবার সকলে মিলে পারিজাতকে কি বিড়বিড় করছে জানতে চাইলেও সবাই খেয়াল করলো তাদের প্রিয় প্যারীর কেমন যেন একটা অপ্রকৃতিস্থ ভাবভঙ্গি । পারিজাতের এই অবস্থা দেখে সকলেই আরো ঘাবড়ে যায় ।
পিটার পারিজাতের দুই কাঁধ ধরে সজোরে ঝাঁকুনি দিয়ে চীৎকার করে বলে , " Parijat, what are you muttering ? what happened to you ? Please tell something , what's wrong with you ? "
পিটারের কাছ থেকে সজোরে ঝাঁকুনি খেয়ে কিছুটা প্রকৃতস্থ হয় পারিজাত তারপরেই ডুকরে কেঁদে ওঠে ।
রাতুল : " এই প্যারী কাঁদছিস কেনো ? কি হয়েছে একটু খুলে বল আমাদের । "
পারিজাত : ( ফ্যালফ্যাল করে একবার সবার মুখের দিকে চোখ বুলিয়ে ) " রাতুল তোর মনে আছে আমি রোজ রাতে খুব বাজে একটা স্বপ্ন দেখে ভয় পেয়ে ঘুম থেকে উঠে পড়ি । তুই আর জয়ন্ত ও দেখেছিস রাতে আমার অবস্থা , যার জন্য আমাকে সাইক্রিয়াটিস্টের সাহায্যও নিতে হয়েছে । "
জয়ন্ত : " হ্যাঁ সেতো আমরা বেশ কয়েকটি রাতে দেখেছি তোর অবস্থা কিন্তু স্বপ্নটা কি নিয়ে ? আর আজকে তোর এই স্বপ্নের কথা নিয়ে এতো আতঙ্ক কেনো হচ্ছে ? "
পারিজাত : ( মাথা নিচু করে ) " আজকে তোদের বলছি আমার স্বপ্নের কথা যার জন্য আমার রাতের পর রাত ঘুম নেই । না ঘুম নেই বললে ভুল হবে বরং বলা ভালো ঘুমাতে ভয় করে এখন । "
রাতুল : ( পারিজাতের পিঠে হাত বুলিয়ে ) " হ্যাঁ ভাই, তুই বরং আমাদের সব খুলে বল তাতে তোর মনের ভয় কিছুটা হলেও কাটবে । আমরা সবাই আছি তোর পাশে, তুই বল । "
পারিজাত : ( রাতুলের হাতটা চেপে ধরে )
" হুমম, সব বলছি । তোরা যখন বাড়িতে গিয়েছিলি তখন আমি হোস্টেলের রুমে বসে পড়তাম তারপর ঘুমিয়ে পড়তাম । একদিন রাতে সিরিয়াল কিলিংয়ের উপর একটা ইংলিশ গল্প পড়তে পড়তে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি নিজেই জানি না । ঘুমটা ভাঙলো খুব নৃশংস হত্যাকাণ্ডের দুঃস্বপ্নে , তারপর এতো মাস ধরে প্রতিদিন রাতে ঐ একই নৃশংস দুঃস্বপ্ন আমাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে । "
এই বলে একটু চুপ করলো পারিজাত ।
পারিজাত চুপ করে যেতেই অগ্নি বলে, " কিরে প্যারী , চুপ করে গেলি কেনো ? স্বপ্নটাতে কি এমন দেখিস তুই যে এখনও এতো ভয় পাচ্ছিস । আমাদের সবটুকু খুলে বল দেখি আমরা যদি তোকে কোনো সাহায্য করতে পারি । "
পারিজাত একবার অগ্নির মুখের দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো, " হ্যাঁ সব
বলছি । স্বপ্নের মধ্যে আমি শুনতে পাই আমার পাশের একটা ঘর থেকে ভেসে আসা গোঙানির শব্দ । সেই শুনে আমি আসতে আসতে এগিয়ে যাই সেই ঘরের দিকে তারপর খুব সন্তর্পণে দরজা খুলে ঢুকে পড়ি সেই ঘরের ভেতরে । আর সেই ঘরের ভিতরে ঢুকেই ভয়ে সারা শরীর হিম হয়ে যায় , ঘৃনায় গা গুলিয়ে ওঠে । সেই ঘরের ভেতরে চারপাশের শুধু পড়ে আছে নানা বয়সী ছিন্নভিন্ন নারী দেহ আর চারিদিকে বয়ে যাচ্ছে রক্তস্রোত । আমি ধীরে ধীরে এগিয়ে যাই এক একটি মৃত ছিন্নভিন্ন নারী দেশগুলোর সামনে তারপর মৃতাদের মুখগুলো দেখতে থাকি । সব মৃতাদের চোখমুখ প্রচন্ড যন্ত্রনায় একেবারে বিকৃত আর তাদের মাঝেই পড়ে আছে রিয়া আর দিয়ার ছিন্নভিন্ন দেহাবশেষ । রিয়ার শরীরের কিছু কিছু অংশের মাংস কেটে নেওয়া হয়েছে আর কেটে নেওয়া হয়েছে দিয়ার দুটো ঠোঁট, দুটো স্তন ও ঊরুর কিছু মাংস । সেখানে আট থেকে আশি সব বয়সের নারী দেহের রক্তস্নাত ছিন্নভিন্ন দেহাবশেষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে চারপাশে । আমি আর সহ্য করতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাই ওই রক্ত ভেজা মেঝের উপর । আজ কয়েক মাস যাবৎ এই একই দুঃস্বপ্ন আমাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে আর রিয়া, দিয়া, এমিলিরা নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই আমার আরো ভয় করছে । "
এই বলেই হাউহাউ করে চীৎকার করে কেঁদে ওঠে পারিজাত ।
এইসব কথা শুনে রাতুলের গার্লফ্রেন্ড মৌ কাঁদতে কাঁদতে চীৎকার করে ওঠে, " আমি বারবার বলছি এখনি সবাই চলো লোকাল থানায় । আর কিছু ভাবার মতো সময় নেই আমাদের হাতে, please চলো তোমরা । "
পিটার : " হ্যাঁ হ্যাঁ আর দেরী করা ঠিক হবে না , দেরী করলে হয়তো সব শেষ হয়ে যাবে । পুলিশের সাহায্য নিয়ে আজকেই গেষ্ট
হাউসটায় খানা তল্লাশি চালাতে হবে তাহলে হয়তো ওদের হদিস পাওয়া গেলেও যেতে
পারে । "
সকলেই সমস্বরে বলে উঠলো, " হ্যাঁ হ্যাঁ সবাই মিলে থানায় চলো । "

