নারদ
নারদ
আজকাল দেখি ট্রোল একটা বড় ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে । অসামঞ্জস্য তুলনা করা একটা প্রহসনের ব্যাপার হচ্ছে । সোশ্যালনেটওয়ার্কিং এ একটি ছবি দেখি যেখানে মানুষকে নারদের সঙ্গে তুলনা করাহয়েছে । মানে এভাবে ব্যাপারটা পরিবেশনা করা হয়েছে যেখানে বলা হয়েছে নারদ স্বর্গে থাকলেও তার বংশধরেরা পৃথিবীর কোনায় কোনায় ছড়িয়ে আছে । আমি তো হতবাক এবং ভীষণ ভাবে কুন্ঠিত এই ভেবে যে যারা এগুলি লেখে তারা নারদ সমন্ধে আদতেও কি জানে ? না টিভিতে দেখা সং সাজা নারদের নারায়ণ নারায়ণ শুনেই নারদ সমন্ধে সব জেনে বসে আছে ? কতটা নিকৃষ্ট মানসিকতা নিয়ে এরা মেমে বানিয়ে লাইক ও শেয়ার সংগ্রহ করে । তারা হিন্দু দেব দেবীদের অপমান করে ফেম কিনতে মরিয়া ।
এবার বলি নারদ কে ছিলেন ? আমরা মোটামুটি সকলেই জানি দেবর্ষি নারদ অতিশয় হরিভক্ত ছিলেন তিনি হরিসাধন করতে ভালবাসতেন। দেবর্ষি নারদ নিজের ইচ্ছায় যত্রতত্র গমন করতে পারতেন এবং সকল জায়গায়ই তার অবাধ যাতায়াত ছিলো। এছাড়াও প্রয়োজন মনে করলে তিনি সকল ব্যাপারেই হস্তক্ষেপ করতেন
জগদ্ধাত্রী পূজার ঐতিহ্য অনুযায়ী আজও শুক্লা নবমীতে মূল পূজার পরও দুই দিন প্রতিমা রেখে দিয়ে বিশেষ পূজার আয়োজন করা হয় । জগদ্ধাত্রীর প্রতিমার পাশে জয়া-বিজয়া ও নারদ মুনির প্রতিমা থাকতে হয়। ব্রহ্মার মানসপুত্র নারদ, হিন্দু পুরাণমতে কলহসংঘটক হিসেবে খ্যাত একজন দেবর্ষি। পুরাণমতে, ব্রহ্মা দেবর্ষি নারদকে সৃষ্টি করার ভার গ্রহণ করতে বলেন। কিন্তু ঈশ্বর সাধনা ও ভগবৎপ্রাপ্তিতে বিঘ্ন সৃষ্টির আশঙ্কায় তিনি তাতে রাজি না হওয়ায়, ব্রহ্মার অভিশাপে নারদকে গন্ধর্ব ও মানবযোনিতে জন্মগ্রহণ করতে হয়েছিলো। এছাড়া নারদের জন্ম নিয়ে বিভিন্ন পুরাণে বিভিন্ন উল্লেখ রয়েছে।
সৃষ্টির প্রারম্ভে ব্রহ্মা প্রজাপতিদের সৃষ্টি করেন। এই প্রজাপতিরাই মানবজাতির আদিপিতা মনুস্মৃতি গ্রন্থে এই প্রজাপতিদের নাম পাওয়া যায়। এঁরা হলেন মরীচি, অত্রি, অঙ্গিরস, পুলস্ত, পুলহ, ক্রতুজ, বশিষ্ঠ, প্রচেতস বা দক্ষ, ভৃগু ও নারদ। সপ্তর্ষি নামে পরিচিত এ সাত মহান ঋষির স্রষ্টা ব্রহ্মা। এঁরা তাকে বিশ্বসৃষ্টির কাজে সহায়তা করেন । ব্রহ্মার এই পুত্রগণ তার শরীর থেকে জাত হয় নি, হয়েছেন তার মন থেকে। একারণে তাদের মানসপুত্র বলা হয়।
দেবর্ষি অতিশয় সংগীত অনুরাগী ছিলেন। প্রথমতঃ ব্রহ্মার নিকট কিঞ্চিৎ সংগীতবিদ্যা শিখেছিলেন তিনি। পরে উলুকেশ্বরের নিকট বহু বছর গান্ধর্ব বিদ্যা আলোচনা করে কিছু পারদর্শিতা ও দক্ষতা লাভ করেন। এ সময়েই তার মনে সংগীত বিষয়ে বেশ গর্বভাবের উদয় হয়, কিন্তু দর্পহারী অচিরেই নারদের দর্প চূর্ণ করে দেন। পরিশেষে ভগবান বিষ্ণু’র কৃষ্ণাবতারে তার নিকট গানযোগ শিক্ষা করিয়া ব্রহ্মানন্দলাভে কৃতার্থ হোন। বীনা বাদ্য যন্ত্রটি নারদেরই সৃষ্ট। তিনি নারদ সংহীতানামক সংগীত শাস্ত্র প্রণয়ন করেছিলেন। নারদ প্রণীত স্মৃতিও সমধিক বিখ্যাত। নারদ রচিত নারদীয় পুরাণঅষ্টাদশ পুরাণের অন্তর্গত।
এবার বলুন তো দেখি অবিবাহিত নারদের তো কোন ডেটা নেই পরকীয়া করার ও । তাহলে তার বংশধর এলো কোথা থেকে ? আর সাধারণ মানুষ যাদের নারদের বংশধর বলে তাচ্ছিল্য করা হয় তারা বাদ দিন , যারা তাচ্ছিল্যটা করে তাদের মধ্যে কি নারদ সম গুন অবস্থিত আছে ?

