নার্ভের রোগী
নার্ভের রোগী


ছাত্র হয়ে দিদিমণির ভুল ধরার স্পর্ধার ফল ভুগতে হল তথাগতকে আজীবন। ক্লাস সিক্সের ছাত্র বোর্ডে মিসের কষে দেওয়া অঙ্কের ভুল ধরে ছিল আর তাই শাস্তিস্বরূপ মাটিতে বসে ক্লাস করতে হত তাকে রোজ। শুধু ওনার ক্লাসেই নয়,কড়া নির্দেশ ছিল তাঁর,সব ক্লাসই মাটিতে বসে করতে হবে। এতেও শান্ত হতে পারেননি মিস,যখনতখন টেবিলের সামনে ডেকে সিলেবাসের বাইরের পড়া জিজ্ঞেস করে না পারলে দু'আঙুলের ফাঁকে পেন্সিল ঢুকিয়ে চেপে দিতেন জোরে।
বাড়িতে কোনোদিন সেকথা বলতে পারেনি তথা। মা রোজ বলতেন,"প্যান্ট এত নোংরা হয় কেন? কি করিস?" বলতে পারেনি তথা ক্লাসের সবার সামনে নিজের অপমানের কথা,তার ওপর মিসের অত্যাচারের কথা,মা কষ্ট পাবে বলে। অবশেষে এক সহৃদয় স্যার তথাগতকে মাটি থেকে বেঞ্চে বসার অনুমতি দেন। তাঁর বক্তব্য,"আমি তোমায় কোনও শাস্তি দিইনি,তাই আমার ক্লাসে তুমি মাটিতে বসবে না,মিস যদি কিছু বলেন আমি তাঁকে বলব।" পেরেন্ট-টিচার মীটিংএ স্যারের কাছ থেকে তথার বাবা-মা এ কথা জানতে পারেন। ততদিনে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। ক্লাসঘর ভরা ছেলেদের সামনে রোজ প্রতিটি ক্লাসে মাটিতে বসা এবং মিসের অত্যাচারে সে হল এক নার্ভের রোগী।
আজ সে বড় হয়েছে,বড় কর্পোরেট সংস্থায় বড় পজিশনে চাকরি করে,তবে তার সঙ্গের সাথী হয়ে আছে নার্ভের ওষুধ সেই স্কুলজীবনে শুরু,চলবে আজীবন। ঘুমের মাঝে এখনও সে চমকে চমকে ওঠে সেই বিভীষিকার দিনগুলোর স্বপ্ন দেখে।