SHUBHAMOY MONDAL

Abstract Drama Tragedy

3  

SHUBHAMOY MONDAL

Abstract Drama Tragedy

ন-হন্যতে (তৃতীয় পর্ব)

ন-হন্যতে (তৃতীয় পর্ব)

4 mins
359


চিত্রগুপ্তর মন খারাপ, কতদিন হয়ে গেলো - ছুটি পায়নি সে। বিচিত্রগুপ্ত তো মেয়ের মুখে-ভাতের নামে দিব্যি কয়দিন ছুটি কাটিয়ে এলো। কিন্তু সে?


ধর্মরাজ তাঁকে ছুটিই দিতে চান না। বলেন - হিসেব রক্ষার বিস্তর হ্যাপা। তোমায় ছুটি দিলে আমার তো কাজকর্মই চলবে না। 


রোজকার একঘেয়ে পাপ পূণ্যের হিসাব কষতে ভালো লাগছে না এদিকে চিত্রগুপ্তেরও। বলে বসলো - প্রভু, লোকে যাকে পাপ বলে, সে পাপ নয়। লোকে যাকে পূণ্য বলে, সেও তো পূণ্য নয়।


কারো কলসে পাপ, তো কারের পূণ্য - কখনও কারো কোন কলসই হয় না তো শূন্য! হিসাবরক্ষা বড় দায়, কঠিন কাজ। ছুটির আর্জি তাই আবার জানাই আজ - অন্তত একটা দিনের ছুটি আমায় দিন ধর্মরাজ।


অনেক দরাদরি করে শেষে ঠিক হলো চিত্রগুপ্ত নিদ্রা যাবে - দুইটি ঘন্টা। বিচিত্রগুপ্তের সাহায্যে ততক্ষণ যমরাজ নিজেই করবেন সব বিচার।


বিচিত্রগুপ্ত জানি না কি ভেবে, ডেকে নিয়েছিলো দুই অপেক্ষমান আত্মাকে - মেঘা আর মেনকা @ সানিয়া। এতক্ষণ তাদেরই জীবদ্দশার সমস্ত কার্য কাহিনীর বর্ণনা শুনছিলেন ধর্মরাজ।


ধর্মরাজ বললেন - তোমরা দুজনেই মানব কন্যারূপে পৃথিবীতে জন্মেছিলে। তোমাদের সেই জীবদ্দশার ঘটনাগুলো শুনলাম বিচিত্রগুপ্তের কাছে। তোমাদের দুজনের প্রেতাত্মারই মুক্তির অপেক্ষা আছে।


সানিয়া - প্রভু, আমি ছিলাম নিরুপায়। একে কিশোরী, তায় অনিরাপদ। মা ছিলো না, বাবা পঙ্গু। আমায় কেই বা রক্ষা করতো? যে দাদাকে বিশ্বাস করে বাড়ির বাইরে এসেছিলাম, সেই তো মৃত্যুর পথে ঠেলে দিয়ে গেলো......।


ধর্মরাজ - বেশ, তোমার আত্মপক্ষ সমর্থন করে, আর কিছু না বললেও চলবে। তবে, তুমিও বিপথগামী হয়ে পাপ তো করেছ-ই। চাইলে, বাঁচার রাস্তা তোমার যে একেবারেই ছিলো না তা তো নয়। তুমি সেই পথে যাবার কখনও চেষ্টাই করোনি। 


মনুষ্যলোকে শান্তিরক্ষক বলে একশ্রেণীর মানুষ আছে, তারা তোমায় সাহায্য করতেই পারতো। যারা তোমার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলো, তুমি তাদেরকেও জানালে তারাও তোমায় রক্ষা করতে পারতো। তুমি সেসবের চেষ্টাই করোনি।


আত্মরক্ষার অধিকার তো তোমার কেউ কেড়ে নিতে পারতো না। তুমি আত্মহননের পথে না গিয়ে মহাপাতক হবার থেকে রক্ষা পেয়েছো। কিন্তু তুমি যেভাবে তোমার জীবদ্দশা সাঙ্গ করে এসেছো, তাও তোমার করা কাম্য ছিলো না।


তবুও, শুধু মানবজন্মে তোমার সেই তখনকার নাবালিকত্বের খাতিরে, তোমার পরিস্থিতি আমি নিশ্চয়ই গভীর ভাবেই বিচার করে দেখবো।


কিন্তু তার আগে, মেঘা, তুমি তো বর্তমান মনুষ্যলোকে প্রচলিত শিক্ষা লাভ করেছিলে যথেষ্ট। ভগবান প্রদত্ত বেশ উর্বর মস্তিষ্কও ছিলো তোমার। তবুও তুমি ভুল/অন্যায় করেছো। তুমি আত্মপক্ষ সমর্থনে কি বলবে?


মেঘা - আপনি ঠিকই বলেছেন প্রভু। আমি ভুল করেছি, আজীবন শুধুই ভুল করেছি। যেদিন স্কুল বাসের ঐ পেয়াডোফাইল খালাসিটা আমায় স্পর্শ করেছিলো, উচিত ছিলো সেদিনই স্কুলের প্রিন্সিপ্যালকে গিয়ে সেটা বলা, আমি বলিনি।


যেদিন, স্পর্শকাম টিউটর আমার শরীর স্পর্শ করেছিলো, সেদিন থেকেই তার ত্রিসীমানায় যাওয়া আমার বন্ধ করে দেওয়া উচিত ছিলো, আমি তা করতে পারিনি।


নিজের ধর্ষকাম কাকার চরিত্র বুঝে, আমার তো অনাথ আশ্রমেই আশ্রয় নেওয়া উচিত ছিলো শৈশবেই, বাবা মা কে হারানোর পরেই। আমি তাও নিতে পারিনি।


আমি তো একবার তখন বিষ খেতেও চেয়েছিলাম, খাই নি। ভেবেছিলাম, সব পুরুষই কামার্ত বা মানসিক ভাবে অসুস্থ নয়। কই আমার বাবা তো অমন ছিলেন না? 


স্কুলের স্যারদের কেউ তো কখনও, এমনকি আমি প্রণাম করার পরও, আশিস-বোধক আদর করে দেবার জন্যও কখনও তো স্পর্শ করেন নি আমায়! শুধু মুখে স্নেহপ্রকাশ করেছেন, আশীর্বাদ করেছেন।


সেই ভরসাতেই তো, আমি ভালোবেসেছিলাম কুণালকে। মনে হয়েছিলো, উত্তম পুরুষ বলতে যাদের বোঝায়, ও তাই। নারী জাতির প্রতি ওর চোখে সম্মান দেখেছিলাম। 


কথাবার্তায়ও তার দেখতাম, সম্ভ্রম প্রকাশ পেতো বিপরীত লিঙ্গের মানুষের প্রতি, সবসময়ই। কিন্তু, ওকেও পুরো চিনে উঠতে পারার আগেই আবার ভুল করে বসলাম।


কুণাল আমায় ক্লোজ হবার কথা বলেছিলো একদিন। শৈশবের কঠোর অভিজ্ঞতা আমার মন, আমার মনন, আমার স্মৃতি, আমার আত্মাকে, দূষিত করেছিলো এমন যে, ঐ সামান্য কথাটার পিছনে তার প্রকৃত বক্তব্য বুঝে ওঠার চেষ্টাটুকুও করিনি।


আশাভঙ্গের তীব্র হতাশায় তাকে আঘাত করে বসি। সমস্ত বিশ্বাস ভেঙে যায়। মনে হয় - আমার নিশ্চয়ই নিজেরই কিছু সমস্যা আছে, নয়তো সমস্ত বিকৃত কাম মানসিকতার লোকেরা বারবার আমাকেই কেন আক্রমণ করে!


এখন বুঝেছি, আমি একা নই - পৃথিবীতে রোজ, নানা ভাবে, নানা অছিলায় নির্যাতিতা হয়ে আসছে প্রতিটি নারী। কেউ মমতাময়ী, তার অসুস্থ পরিবারের মানুষের সেবায় নিয়োজিতা, কাজে যায় - সমাজ তাকে পতিতা বানায়।


কেউ, নিজের ভবিষ্যত নিজে গড়তে পরিশ্রম করে দিবারাত্র, নির্লজ্জ পুরুষের অনাকাঙ্ক্ষিত অপমান, কমবেশি তাকেও সহ্য করতে হয়!


বলতে পারেন ধর্মরাজ, নিজের বাড়িতেও যে নারী নিরাপদ নয়, সেই সমাজের মেয়েরা কেন বিষপান করবে না? আমাদের তো জন্ম থেকেই নীলকণ্ন্ঠী হতেই শেখানো হয়!


আমি প্রচণ্ড রাগ, অভিমান, ক্রোধ নিয়ে সমাজ ত্যাগ করে, পতিতা হয়ে উঠে নিজেকে ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিলাম। মনে হয়েছিলো, মেকি ভালোবাসা তো শুধুই শরীর চায়। আমি শরীর দিয়েই দেখবো ভালোবাসা পাই কিনা খুঁজে।


এটা ছিলো আমার জীবনের সবথেকে বড় ভুল। ক্রোধের বশে নেওয়া সিদ্ধান্ত মানুষের কখনও ঠিক হতে পারে না। আমারও হয়নি। তবু সাহস ছিলো, সাথে বিষটুকু থাকায়। আমার মনে হত, আমি ইচ্ছামৃত্যুর অধিকারী।


বিষ আমি খেয়েছিলাম ধর্মাবতার, তবে শুধু আমার ভিতরের বিষটুকু নষ্ট করে দিতে। ঈশ্বরের কৃপায়, আমাদের দেশে মনীষী জন্মেছেন অনেক। তাঁদেরই একজন, আমার প্রিয় রবি ঠাকুর বলেছিলেন - মানুষের ওপর বিশ্বাস হারানো পাপ। আর আমি সেই পাপই করেছিলাম।


ক্রমশঃ



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract