মনের আকুতি
মনের আকুতি
আমি শ্রী নিবারণ ঢোল, পেশায় সরকারি কেরানি। আমার অর্ধাঙ্গিনী (কবে যেন সমগ্র অঙ্গরাজ্যের ই অধিকারীনি হয়ে গেছেন) শ্রীমতী রানুবালা ঢোল প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা। এক কন্যা ও এক পুত্র নিয়ে আমার সংসার। এক্ষেত্রে সুখের কথাটা ঠিক ব্যবহার করতে পারলাম না। কারণ একটাই ছোটবেলায় ঠাকুমার কাছে শুনেছিলাম 'সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে ' এখানে যেটার বড়ো অভাব। না না ভুল বুঝবেন না গুণগত মানের অভাব নেই, সুখের অভাব। কারণ অবশ্যই আমার পরলোক গত মা। তিনি আমার বিবাহের পর পরই সংসারের দায়িত্ব তার লক্ষীমন্ত বৌমার হাতে তুলে দিয়ে নিশ্চিন্তে কেটে পরেছিলেন। সাথে করে আমার সব স্বাধীনতা টুকুও নিয়ে ভাগলেন। সেই থেকে আজ সুদীর্ঘ আঠাশ বছর আমি পরাধীন।
এক্ষেত্রে একটু বলে রাখা উচিত আমি বরাবর একটু খাদ্য রসিক এবং যার ফলে স্বাভাবিক কারণে একটু পেট রোগাও। এখন তো আবার উল্টো বিপত্তি, সাথে মধুমেহ রোগ, আর উচ্চ রক্তচাপ। যদিও গিন্নির মতে এটা আমার অতিরিক্ত ভোজনের ভালো-মন্দ ফল। সে যাই হোক নিন্দুকের কথায় কান না দিয়ে আমি নিজের বয়েসকেই দুষেছি। সেক্ষেত্রে আমি বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে প্রায় রোজই তীব্র চেষ্টা চালাই নিজের জিহ্বা এবং উদরকে পরিতৃপ্তি দানের। সে ঘরেই হোক কি বাইরেই হোক, ত্রুটি রাখিনা। এই নিয়ে নিত্য দিনের অশান্তি ও লেগে থাকে। যার ফলে বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত সঙ্কটে। আমার হাতে টাকাও থাকে না, আবার ঘরে একটু ভালো মন্দ ও কিছু জোটে না। অফিসের কেউ যদি দয়া করে কিছু খাওয়ায় তবেই না....
এই ভাবেই দিন কাটছিল আমার, তো ঘটনা হল মেয়ে সবে চাকরি পেয়েছে, মা গেছে মন্দিরে পূজো দিতে, মেয়ে এমনিতেই খুব বাবা ভক্ত (যদিও কারণ টা আমার আজও অজানা, এবং মনেও হয়না
যে এর জন্য আমার কোন রকম কন্ট্রিবিউট আছে বলে), এসে বলল, " বাবা আজ তুমি কি খাবে বলো? "
কথাটা প্রথমে শুনে নিজেকে কেমন অন্য গ্রহএর মানুষ মনে হচ্ছিল। তারপর একটু ধাতস্থ হয়ে জিজ্ঞেস করতে জানতে পারলাম ও আজ চাকরি পাওয়ার আনন্দে আমায় খাওয়াবে। নিজেকে কেমন গর্বিত পিতা মনে হলো, যদিও সেটা মেয়ের চাকরি পাওয়ার কারণে, নাকি আমাকে খাওয়াবার কারণে সেটাই বোধগম্য হলো না।
তো যাইহোক আধুনিকা মেয়ে আমার ফোনে খাবার অর্ডার করলে এবং মা বাড়ি আসার আগেই তা দুজনেই উদরস্থ করে ফেললাম।
শুরু হলো রাত থেকে তার চরম পরিনতি, প্রথমে গ্যাস অম্বল, তারপর বুক জ্বালা, শেষে পাঁচ মিনিট অন্তর অন্তর প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়া। আর যায় কোথায় আমার অর্ধাঙ্গিনী, বাক্যবাণে আমায় জর্জরিত করলেন।
মেয়ে বেচারা ভয়েই অস্থির, বাবার পেট বাবার সাথে এতো বড়ো বিশ্বাসঘাতকতা করল, এবার বাবাও নিশ্চয়ই সব বলে দেবে।
এখন প্রায় শেষ রাত, আমি গিন্নির সেবায় একটু সুস্থ বোধ করছি। ক্লান্ত রানুও এখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, হঠাৎ অনুভব হল একটা শীতল স্পর্শ কপালে, তাকিয়ে দেখলাম আমার সেই ছোট মেয়েটা কবে যেন বড়ো হয়ে গেছে। আমায় ফিসফিস করে বলল, " সরি বাবা বুঝতে পারিনি তোমার এতোটা শরীর খারাপ হবে। অথচ তুমি দেখ মার কাছে সব গোপন করলে। "
ওর হাতটা হাতে নিয়ে বললাম, "ধুর পাগলী আমার পেটটা বেইমান হতে পারে, ও বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে, আমি কখনও পারি আমার মেয়ের সাথে করতে? অনেক রাত হলো, এবার ঘুমতে যা। " এই বলে অনেকদিন পর ওকে আবার ছোট বাচ্চাদের মতো আদর করে দিলাম।