Rita De

Abstract Children

3  

Rita De

Abstract Children

মীন অবতার

মীন অবতার

4 mins
324


পুকুর আমাদের মোটামুটি সবারই দেখা।তবে গ্রামের পুকুরের আর শহরের পুকুরের গঠনগত তফাৎ আছে ।শহরের পুকুরের চারধার বাঁধানো থাকে।কশ্চিৎ কদাচিৎ সেখানে কারুকে স্নান করতে দেখা গেলেও সাঁতার কাটতে দেখা যায় না । আর গ্রামের পুকুর বললেই কেমন একটা খোলামেলা ব্যাপার । পুকুরের পাশ দিয়ে মেঠো রাস্তা, বাঁশঝাড়ের নীচেই পুকুর ,তার মধ্যে ছেলে মেয়েদের উদ্দাম সাঁতার কাটার দৃশ্য ।আর তারই একপাশে পুকুরে নামার কাঁচা মাটির জায়গা দিয়ে বৌমাদের বাসন মাজার ঝনঝনানি জলছলকানো শব্দ।আর দুপুরে যখন নিস্তব্ধ হয়ে যায় সারা পাড়া তখন তাদের দেখা যায় পুকুরে নিশ্চিন্তে খেলতে।তারা আর কেউ নয়, তারা হচ্ছে মাছ, শুদ্ধ ভাষায় মীন। ছোট্ট ছোট্ট মাছেরা কেমন খেলতে খেলতে পাড়ের কাছে আসে।ছোট্ট ছোট্ট থেকে মাঝারি মাপের মাছেদেরও দেখা যায় ।তবে তার মধ্য যখন সূর্যের আলো বাঁশঝাড়ের ফাঁক দিয়ে পুকুরে চলকে চলকে পড়ে তখন মাছগুলো রূপোর মত চকচক করতে থাকে। এরই মধ্যে দু'একজন ঐ পুকুরে চান করছে কিন্তু মাছ ধরে না।রুই , কাতলা, মৃগেল ইত্যাদি কত ধরণের মাছ আছে। এ ধরণের মাছও যে ধরিত্রীকে রক্ষা করার জন্যে আছে তা আর কতজনের জানা আছে।এই পুকুরের কথা বললেই অর্থাৎ জলের কথা বললেই নদী, হ্রদ, সাগর এমন কি মহাসাগরের কথাও মনে পড়ে।

   এরকমই এক নদীজলে তর্পণ করছিলেন রবির পুত্র সত্যব্রত রাজা।তিনি হরি পূজো করেন , তপস্যা করেন।হরিতে তার সর্বদা মন।অঞ্জলিভরে জল নিয়ে দেবতার উদ্দেশ্যে দিচ্ছিলেন ।এমন সময় হঠাৎই একটা মাছ সত্যব্রত-র হাতে এসে উঠলো। সত্যব্রত- র খুব মায়া হলো মাছটার ওপর।তিনি মাছটাকে জলের মধ্যে ছেড়ে দিলেন।মাছটা খুব ছোট্ট ছিল।মাছটা কাঁদ কাঁদ স্বরে বলল-  আমায় জলের মধ্যে ছেড়ে দিও না। জলে যত বড়ো বড়ো বলবান মৎস্য , কুম্ভীর, মকর সব তাকে খেতে আসার জন্যে ধাওয়া করে ।তুমি আমাকে রক্ষা করো। তার করুণ প্রার্থনা শুনে রাজা সত্যব্রতর হৃদয় দুঃখে ভরে গেল । র তিনি বললেন- তোমার ভয় করার কোনো কারণ নেই ।তুমি আমার সঙ্গে চল। বলে মাছটাকে কমণ্ডলু করে নিয়ে এসে আশ্রমের কুণ্ডমধ্যে রাখলেন। অবাক কান্ড !ক্ষণে ক্ষণে সে বাড়তে থাকে। এক রাত্রির মধ্যে সে এতই বড়ো হয়ে গেল যে কলসীর মধ্যে আর তাকে রাখা যাচ্ছে না ।মৎস্য বলল-  কলসীর মধ্যে আমি আর থাকতে পারছি না। আমাকে সরোবরে রাখ।সত্যব্রত তাই করলেন।ক্রমশঃ সে এতই বাড়তে লাগল যে সরোবরও তার পক্ষে যথেষ্ট হলো না ।মৎস্যের দেহ ক্রমশঃই বাড়তেই থাকে।যতই মৎস্যের দেহ বাড়তে থাকে ততই মৎস্যের কথামতো সত্যব্রত তাকে সরোবর থেকে নদীতে, নদী থেকে হ্রদে রাখে। সত্যব্রত অবাক হয়ে যায় তার পর্বত প্রমান দেহ দেখে।সত্যব্রতকে অবাক করে দিয়ে মৎস্য বলল যে এবার তাকে সাগরে নিয়ে চলুক সেখানে সে বিস্তারিত ভাবে সব কথা বলবে। সত্যব্রতও শক্তিতে কম যায় না। তাকে কাঁধে করে নিয়ে সাগরের বুকে ছেড়ে দিল। সত্যব্রতর অবাক হবারই কথা । মৎস্য বলল - এক সপ্তাহ পরে প্রলয় হবে। এমন একটা বিরাট ব্যাপার- এর কথা মৎস্য বলছে ।মৎস্য অথচ মানুষের মতো কথা বলছে ।এতক্ষণ সে এই ব্যাপারটা তলিয়ে ভেবে দেখে নি। মৎস্য প্রকৃতপক্ষে কে? বললেন- তুমি নিশ্চয়ই দেবতা হবে।মীনরূপ ধরে তুমি নিশ্চয়ই নারায়ণ হবে । 

   তখন মীন অর্থাৎ মৎস্যরূপী নারায়ণ বললেন- তোমাকে রক্ষা করতে আর বেদ উদ্ধার করতে তিনি মীন অবতার । এক সপ্তাহ পরে প্রলয় হবে ।সেই প্রলয়ের কালে জগৎ জলে ডুবে যাবে।সেই প্রলয়ের কালে হয়গ্রীব দৈত্য বেদ নিয়ে জলের মাঝারে ঢুকে পড়বে। দেবতা, ব্রাহ্মণ , সাধুর রক্ষার্থে ও বেদ উদ্ধারিতে আমার আগমন।

বেদ শব্দের অর্থ জ্ঞান ।হিন্দুদের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বপ্রধান শাস্ত্র। বেদ চার প্রকার - ঋগ্বেদ , সাম , যজুঃ, অথর্ব বেদ। ঋগ্বেদ কতগুলো মন্ত্র ও সূক্তের সংকলন। 

সামবেদকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় যথা।   এক - আর্চিক , দুই - গান।

 The Yayurveda is the veda primarily of prose mantras for worship, rituals.

অথর্ব বেদে দৈনন্দিন জীবনযাত্রার প্রনালী আছে।

হিন্দুদের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বপ্রধান শাস্ত্র বেদ নিয়ে  হয়গ্রীব দৈত্য জলের মধ্যে ঢুকে পড়েছে ।দেবতা ও দৈত্যদের যুদ্ধ চিরকালীন। সেই বেদকে উদ্ধার করতে আর তোমাকে রক্ষা করতে আমার আগমন।সাতদিন পরেই মহাপ্রলয় হবে।আমি তখন একটা নৌকা পাঠাবো।তারপর তুমি সপ্তঋষিগণকে নিয়ে এবং জীবজন্তু নিয়ে ঐ নৌকায় উঠে পড়বে।এই কথা বলতে বলতে মীন অবতার অন্তর্হিত হয়ে গেল । ঐ নৌকার প্রসঙ্গে Noah's ark- এর কথা এসে পড়ে ।Noah'sark is the vessel in the Genesis flood narrative through which God spares Noah ,his family and examples of all the world 's annimals from a world-engulfing flood.

রাজা সত্যব্রত ধ্যান করতে শুরু করে দিলেন ।দেখতে দেখতে সপ্তম দিনের পর সব জলে ভরে গেল।সর্ব আপোময় জগৎ।সারা সৃষ্টি রসাতলে গেল ।সে কি ভয়ঙ্কর জলোচ্ছ্বাস! সে কি শব্দ ! কান পাতা দায় । যেদিকেই চোখ যায় সেদিকেই জল। সেই সময়েই একটা তরী এসে রাজা সত্যব্রতর সামনে উপস্থিত হয় । সেই নৌকাতে রাজা সত্যব্রত লতাদি ঔষধি বীজাদি নিয়ে নৌকায় উঠে পড়লো।তখন সুবর্ণ মৎস্য এল আর বাসুকিকে রজ্জু করে নৌকা নিরাপদে মহাসাগরে বইতে লাগল ।কোনো ভয় নেই ।

এদিকে তো চতুর্বেদ উদ্ধার করতে হবে।মীন অবতার জলের নীচে চলে গেলেন।

জলের নীচে মীন অবতার আর হয়গ্রীব দৈত্য মুখোমুখি ।হয়গ্রীব দৈত্য রাগে ফুঁসছে। তার নাসিকা থেকে জলের স্ফুলিঙ্গ ফোয়ারার মতো বের হচ্ছে ।ফলে কিছুই আর দেখা যাচ্ছে না ।মীন অবতার যতই দিকে এগোচ্ছে ততই সে ছিটকে যাচ্ছে ।বেদ কোথায় লুকিয়ে রেখেছে বুঝতেই পারছে না ।হয়গ্রীব দৈত্যও ছাড়বার পাত্র নয়।সে তার শরীরের মধ্যে বেদ লুকিয়ে রেখেছে । দৈত্যকে মারলে তবে বেদ উদ্ধার করা যাবে।দুজনের মধ্যে ভয়ঙ্কর যুদ্ধ হলো ।দুম্ দুম্ ফট্ ফট্ আওয়াজ । তার সঙ্গে জলোচ্ছ্বাস । সত্যব্রতর নৌকো টলমল করে চলছে। নীচে যুদ্ধ হচ্ছে ওপরে তার প্রভাব ।অবশেষে অনেক যুদ্ধের পর মীন অবতার হয়গ্রীব দৈত্যকে মেরে বেদ উদ্ধার করলেন ।হিন্দুশাস্ত্র ও ধর্ম রক্ষা পেল।রাজা সত্যব্রত ও সঙ্গীসকল রক্ষা পেল।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract