Rita De

Abstract Fantasy

3  

Rita De

Abstract Fantasy

ধারণা

ধারণা

4 mins
100


মন ছাড়া তো মানুষ হয় না। মনই মানুষকে ভাবায় , হাঁটায় চলাফেরা করায় । যত ধারণা সব তো মানুষের মনেই জন্মায়। আবার এই মনকে নিয়ন্ত্রণ করে চন্দ্র ।অদ্ভুত ব্যাপার !

কোথায় মানুষের মন আর কোথায় প্রকৃতির চাঁদ।অ্যাস্ট্রোলজি -তে চন্দ্র থেকে মনের বিচার করা হয়।এ এক জটিল ব্যাপার । এই জটিল ব্যাপার সমাধানের জন্য অভিমন্যুর পুত্র রাজা পরীক্ষিত এলেন ব্যাসদেবের পুত্র শুকদেবের কাছে। রাজা পরীক্ষিতের জানা নেই - ধারণার উৎস কি ? ধারণা কিসে প্রতিষ্ঠিত হয় ?

ধারণা শুদ্ধও হতে পারে, অশুদ্ধও হতে পারে।কি ধরণের ধারণা করলে কলুষ বিনাশ হয় ? এত্তো এত্তো প্রশ্ন । সত্যিই তো ধারণার উৎপত্তি কোথায় রে বাবাঃ ।চোখ দিয়ে যে দেখি , বুঝতেও পারি , বিজ্ঞানসম্মত ভাবে ব্যাখ্যা করা যায় । কান দিয়ে যে শুনি তারও ব্যাখ্যা করা যায়। 

বর্ষাকালে যখন মেঘ ডাকে তখন বায়ু থেকে শব্দ তরঙ্গ বহিঃকর্ণের মধ্যে দিয়ে কানের পর্দায় ধাক্কা দেয় এই ধাক্কার ফলে কানের পর্দা কেঁপে ওঠে ।এই কম্পন মধ্য কর্ণে তিনটি অস্থির মধ্যে দিয়ে অন্তঃকর্ণের ডিম্বাকার পর্দায় ধাক্কা দেয়, ফলে পর্দা কেঁপে ওঠে ।অন্তঃকর্ণের পেরিলিন্থ ও এণ্ডোলিন্থ কর্ণে ছড়িয়ে পড়লে তখন ঐ কম্পন ককলিয়ার ভেতরে কর্টির অঙ্গে পৌঁছায় । এই কর্টির অঙ্গে সংবেদনশীল রোমগুলো কেঁপে ওঠে ।এই কম্পন উদ্দীপনা auditory nerve দিয়ে মস্তিষ্কের শ্রবণ অঞ্চলে পৌঁছোলে শব্দের অনুভূতি পাওয়া যায় । আর তখনই মেঘ ডাকা বা মেঘ গর্জ্জণের ধারণা জন্মায় ।শব্দের অনুভূতি ধারণার জন্ম দেয়। বসুধা মহা ফাঁপরে পড়লো।তাহলে ধারণার আবার রকমফের আছে নাকি ? কি ধরণের ধারণার কথা রাজা পরীক্ষিতের মাথায় এসেছে ? 

এই নদী, তরুরাজি, মেঘশ্রেণী যা যা দেখছি তা নাকি সব এক একটা অঙ্গ, এক বিরাট পুরুষের অঙ্গ ।সেই পুরুষের যোজন পঞ্চাশ কোটি দেহের বিস্তার।তাহলে শুধু যে তাঁর পৃথিবী ব্যাপী বিস্তার তা নয় তার বাইরেও আছে ।বসুধা আর পারে না। পাতাল , রসাতল সবই নাকি তাঁর অঙ্গ ।যোগীগণ সেই ভাবেই ধ্যান/ ধারণা করেন।

যেমন তেমন ভাবলে চলবে না, ধারণা করার জন্য নিয়মনীতি আছে ।এই যে বসুন্ধরা স্বর্গ মর্ত্য পাতাল নিয়ে তৈরী, পাতালে সাপেরা বাস করে,

মর্ত্যে মানুষেরা বাস করে , স্বর্গে দেবতারা বাস করেন। এই স্বর্গ মর্ত্য পাতাল সবই একটা মানুষের অঙ্গ !  বাবাঃ কি বিরাট পুরুষ !

   সেই বিরাট পুরুষের ধারণা করতে হলে নিয়মনীতি আছে । তার জন্যে প্রথমে প্রাণায়াম করতে হবে ।প্রাণায়ামের অর্থ নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের বিস্তার ও নিয়ন্ত্রণ ।সমস্ত কামনা বাসনা ত্যাগ করে প্রাণায়াম করতে হবে।তবে অন্তর শুদ্ধ হবে।শুদ্ধ বাসনা আছে অশুদ্ধ বাসনাও আছে।যদি কামনা বাসনা নিয়ে কিছু সংকল্প করা হয় তাহলে তা অশুদ্ধ বাসনা , তাহলে ধারণা করা যাবে না ।আরে তেঁতুলে আচারের কথা বললেই তো জিভে জল আসে ।এ তো সামান্য ব্যাপার ।

আরো কত চাওয়া পাওয়া আছে - গাড়ি বাড়ি

যশ প্রতিপত্তি, কি চাওয়ার নেই ।ধারণার উৎস জানতে গেলে সব চাওয়া পাওয়ার উর্দ্ধে উঠতে হবে , জিতেন্দ্রিয় হতে হবে , তবে ধারণা করার জন্যে আধার তৈরী হবে ।প্রাণায়াম আর জিতেন্দ্রিয়-র মাধ্যমে আধার তৈরী হলে তবে শুকদেব যা বলছেন তা বোঝা যাবে।

      এই যে স্বর্গ মর্ত্য পাতাল নিয়ে যে জগৎ তা আসলে এক বিরাট পুরুষের অঙ্গ -

       ' সহস্রশীর্ষ পুরুষঃ

        সহস্রাক্ষ সহস্রপাদ

        স ভূমিং সর্বতো বৃত্বা

        অত্যতিষ্ঠৎ দশাঙ্গুলাম্ ।'


যোগীগণ এই বিরাট পুরুষের ধ্যান করেন ।


      'এরূপে স্থলের চিন্তা করি যোগীগণ 

      ধারণায় ক্রমে ক্রমে স্থির করি মন ।'


বসুধা মাথায় তার চুলগুলোয় হাত দিল আর মেঘশ্রেণীর দিকে তাকাল।সে পড়েছিল এক রাজকন্যার কথা , 'কুঁচবরণ কন্যা তার মেঘবরণ চুল'। এখানে মেঘকে চিত্রিত করা হয়েছে রঙ হিসেবে ।কিন্তু মেঘশ্রেণী নাকি চুল সেই বিরাট পুরুষের আর সন্ধ্যা হচ্ছে তাঁর বসন। বড়ো অদ্ভূত ব্যাপার । সন্ধ্যা হচ্ছে একটা ট্রানজিটারি পিরিওডি ( transitory period ) - তা যে তাঁর পোষাক। বসুধার হঠাৎ মনে পড়লো - মানুষ যখন মারা যায় তখন সে এই দেহ ছেড়ে আর এক অন্য দেহে আশ্রয় নেয় । একে পোষাক পরিবর্তনের ইমেজারি ( imagery ) - তে রাখা হয়েছে। 

     ' বাসাংসি জীর্ণানি যথা বিহায়

     নবানি গৃহ্ণাতি নরো'পরাণি

      তথা শরীরানি বিহায় জীর্ণা

      ন্যন্যানি সংযাতি নবানি দেহী ।'

আর যে নাভিকে জলে বিসর্জন দেওয়া হয়, বিরাট পুরুষের নাভি নাকি নদী। গাছপালা তাঁর লোমকূপ , রুদ্রদেব তাঁর অহংতত্ব , আর চন্দ্রদেব হচ্ছেন বিরাট পুরুষের মন।

  এতক্ষণে বসুধা বুঝলো কেন চন্দ্র থেকে মনকে বিচার করা হয় ।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract