পৃথুরাজা কর্ত্তৃক পৃথিবী দোহন - (প্রথম পর্ব) ড. রীতা দে
পৃথুরাজা কর্ত্তৃক পৃথিবী দোহন - (প্রথম পর্ব) ড. রীতা দে
নৃপ পৃথুর কাছে শ'য়ে শ'য়ে প্রজাগণ আসছে তো আসছেই। আসার আর বিরাম নেই।রাজা পৃথু অবাক হয়ে গেলেন ।কেনই বা এত লোকের সমাগম ? কি হয়েছে ? তখন প্রজাগণ সমস্বরে বলে উঠলো- আমরা খেতে পাচ্ছি না, আমরা সব এ রাজ্য ছেড়ে চলে যাবো। কোনো শস্য উৎপাদন হচ্ছে না, জমি এবড়োখেবড়ো হয়ে গেছে । ধর্ম কর্ম সব মাথায় উঠেছে । আপনার রাজ্য বুঝি আর রইলো না ।
রাজা মহাতেজস্বী, অসীম শক্তিশালী । কোনো কিছুতেই হেরে যাবার মানুষ নন তিনি ।তিনি প্রজাদের বললেন - দাঁড়াও, তোমরা সব এ রাজ্য ছেড়ে যেও না । আমি রাজা থাকতে তোমাদের কোনো অসুবিধে হবে না ।প্রজারা আশ্বস্ত হয়ে যে যার বাড়ী ফিরে গেল । রাজা কারণ অনুসন্ধানে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন এবং তিনি রোষান্বিত হলেন এই জেনে যে বসুমতী শস্য উৎপাদন করছেন না । আজ পৃথিবীকে ধ্বংস করে দেবো বলে তিনি ধনু হাতে নিলেন । বসুমতী পৃথুরাজার রাগ দেখে থরথর করে কাঁপতে লাগলেন। রাজার বিধ্বংসী রূপ দেখে ভয়ে বসুমতী ধেনু রূপ ধারণ করে পৃথুরাজার কাছ থেকে পালাবার চেষ্টা করলো। ধেনুরূপধারিণী বসুমতী প্রাণভয়ে পালাচ্ছে আর তাকে তাড়া করছেন পৃথুরাজা। ধেনু যার কাছেই আশ্রয় চাইছে কেউই তাকে আশ্রয় দিচ্ছে না । কারণ সকলেই পৃথুরাজার মহাবলের কথা জানে। ধরণীতে কোথাও আশ্রয় না পেয়ে সপ্তস্বর্গে গেল। দেবতারা আশ্রয় দেওয়া দূরে থাক তার সঙ্গে কথাও বললেন না । ধেনু এবার পাতালে গেল ।সেখানও আশ্রয় মিলল না ।পৃথুরাজার অসীম শক্তি আর তাঁর মহাতেজের কথা সবাই ভালোভাবেই জানে ।অবশেষে যখন ধেনু কাঁপতে কাঁপতে ঘামতে ঘামতে গোলকেতে বিষ্ণুর কাছে উপস্থিত হলে তখন চক্রপানি সুমধুর হেসে তাকে বললেন যে কি কারণে ধরণী এত কাতরা।কি কারণেই বা সে এখানে উপস্থিত হয়েছে ।
ধরণী হাঁপাতে হাঁপাতে বলল যে পৃথুরাজা তাকে বধ করতে আসছে, স্বর্গ মর্ত্য পাতাল , সবজায়গাতেই সে আশ্রয় চেয়েছে কিন্তু কেউই তাকে আশ্রয় দেয় নি পৃথুরাজার নাম শুনে। এখন তার কাতর আবেদন চক্রধারী তাকে যান রক্ষা করেন ।বিষ্ণু বললেন- পৃথুরাজার হাত থেকে কেউই তাকে বাঁচাতে পারবে না । যদি কেউ বাঁচাতে পারে তো পৃথুরাজাই বাঁচাতে পারবে। পৃথুরাজা মহাতেজা। আর পৃথুরাজার কাছেই তাকে আশ্রয় নিতে হবে। তুমি পৃথুরাজার কাছেই আশ্রয় নাও।
এতক্ষণ ধরণী পৃথুরাজার কাছ থেকে পালাবার চেষ্টা করছিল এবার সে পৃথুরাজার মুখোমুখি হওয়ার জন্যে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। ব্যস্ অমনি পৃথুরাজার মুখোমুখি ।যেই পৃথুরাজা তাকে মারতে উদ্যত হয়েছে তখন সে কাঁপতে কাঁপতে বলে - আমাকে মেরো না ।আমি অবলা নারী।
আর আমাকে মারলে প্রজাগণ থাকবে কোথায়?
পৃথুরাজা বললেন- সে ভাবনা তোমায় ভাবতে হবে না ।প্রজাগণকে আমি আমার মহাতেজ দিয়ে রক্ষা করবো। আগে তো তোমাকে বধি।
তুমি বল তুমি শস্যাদি সব লোপ করে দিয়েছো কেন? তখন ধরণী অনুনয় করে রাজাকে বলে - আমাকে রক্ষা করলে সব বলবো, আর তোমার কীর্তিও চারদিকে রটবে।
' পৃথিবী সমতল যদি তবে হয় ।
শস্য দিতে পারি ওরে গুণময়।।'
এই প্রার্থনায় পৃথু রাজা খুশী হল । ধরণীকে বধ করলো না এবং ধরণীকে বলল যে আমি পৃথিবীকে সমতল করবো।তখন পৃথুরাজা ধনু ঘুরিয়ে পৃথিবীকে সমতল করলেন । এবং শস্য উৎপাদন শুরু হয় । শুধু শস্যই নয় আরও কত কিছু যে উৎপন্ন হল তা বর্ণনা করেও শেষ করা যাবে না । প্রজারা পৃথুরাজার রাজ্যে শান্তিতে বাস করতে লাগল ।