Rita De

Abstract Others

2  

Rita De

Abstract Others

পুরঞ্জন ইতিবৃত্ত -ড. রীতা দে

পুরঞ্জন ইতিবৃত্ত -ড. রীতা দে

5 mins
191


পুরঞ্জন রাজা।কিন্তু তার গৃহ অতি ক্ষুদ্র ছিল।রাজা তো।প্রাসাদ তৈরীর শখ হ'ল।তবে কোথায় প্রাসাদ তৈরী করবেন তার জন্য সর্বসুযোগসমন্বিত সর্বসৌন্দর্য্যমণ্ডিত স্থান চাই।পছন্দ হতে হবে তো।এই আমরা সাধারণ মানুষরা যখন বাড়ি বানাই ,কোথায় বাড়ী বানাবো তার জন্যে মনে মনে চিন্তা করি।যেখানে বাড়ি বানাবো সেখানে যথোপযুক্ত রাস্তাঘাট চাই, ছেলেমেয়েদের পড়ার জন্যে স্কুল চাই, সর্বোপরি দৈনন্দিন যে খাবারদাবারের দরকার তার জন্যে বাজারও চাই ।সুষ্ঠু একটা পরিবেশ চাই ।পরিবেশ একটা বিশাল ব্যাপার । সৎ সঙ্গের মতো।সৎ সঙ্গ হলে আমার ভেতরে যে জীবাত্মা আছে তার উন্নতি হবে।তখন জীবাত্মা আমাকে সুকর্ম করতে আজ্ঞা দেবে।সেই সব সুকর্ম করলে আমি পরমাত্মার খোঁজ পাবো।নিঃস্বার্থ সেবাই পরমাত্মার কাছে পৌঁছে দেবে।জীবনের চরম লক্ষ্য মোক্ষ।সেখানে পৌঁছানোর জন্য চারটে দ্বার আছে। "There are four gate keepers at the entrance of the realm of Freedom (Moksa). They are self control, spirit of enquiry , contentment and good company.The wise seeker should diligently cultivate the friendship of these or at least one of them."

বাধা বিপত্তি আসতে পারে ।তাকে জয় করতে হবে। 

    এখন পুরঞ্জন ঠিক একটা উত্তম জায়গার খোঁজে বেরিয়ে পড়লো।অনুচর প্রজাহীন রাজা উত্তম স্থানের সন্ধানে চলেছেন ।ঠিকমতো জায়গা যেন পাচ্ছেন না উত্তম পুরী তৈরী করার জন্যে।ইতিমধ্যেই পেরিয়ে এসেছেন অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ, পৌণ্ড্র ও সুদ্ধ - পাঁচটি পূর্বাঞ্চল রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতারা এক বংশের সন্তান ছিলেন।খ্রীষ্টপূর্ব ছয় শতকে অঙ্গকে মগধ রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত করেছিলেন বিম্বিসার।তাঁর পুত্র অজাতশত্রু এর প্রশাসক নিযুক্ত হয়েছিলেন।দ্রাবিড়, মগধ,কাঞ্চী সব পেরিয়ে রাজা পুরঞ্জন যাম্যদিকে পৌঁছলো।শীতল স্নিগ্ধ নির্জন জায়গা, প্রকৃতি যেন উজাড় করে দিয়েছে তার সৌন্দর্য্য।সারি সারি পাইন গাছ, খরস্রোতা নদী যেন সুমধুর কন্ঠস্বরে গান শুনিয়ে যাচ্ছে, তাতে সঙ্গত দিচ্ছে পাইন দেবদারুর সারি ।আর তাতে মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে সেই সঙ্গীত উপভোগ করছে কত রকমের নানান রঙের ফুল।যখন সূর্য ওঠে তখন যেন বরফমণ্ডিত পর্বতের চূড়াগুলো রূপোর মতো চকচক করে ওঠে ।তখন যেন মনে হয় সারা বিশ্ব হাজার সূর্যের আলোয় উদ্ভাসিত । সারা বিশ্ব জুড়ে যজ্ঞ চলতে থাকে -

 ' অগ্নে যং যজ্ঞমধ্বরং বিশ্বতঃ পরিভূরসি।'

 যজ্ঞ হচ্ছে অধ্বর বা অহিংসা বিশ্বব্যাপী এই অহিংসার যজ্ঞ চলছে।সূর্য যেন সেই অগ্নি ।সূর্যের আলোকরশ্মি যেন জ্ঞান। সেই জ্ঞানকে যারা লালনপালন করে তাদের সূর্যাগ্নি রক্ষণাবক্ষেণ করে।

আর রাতে স্নিগ্ধ বাতাস আর বরফের শান্তরূপ চাঁদের কিরণের মতো মনকে শান্ত করে দেয়।

এই সব অনুভূতির মধ্যে দিয়ে চলতে চলতে রাজা হঠাৎই থমকে দাঁড়ালো এক পুরীর সামনে। অপূর্ব তার গঠন।'নবদ্বার পুরীখান গড়েতে বেষ্টিত ।' বিহ্বল বিমূঢ় পুরঞ্জন পুরীতে ঢুকে পড়লো। সে যতখানি শান্ত হয়ে আসছিল ঠিক ততখানিই চঞ্চল হয়ে পড়লো এক অপূর্ব রূপসী নারীর সন্দর্শনে । সে যতখানি সংযত হয়ে একটা সর্বগুণসম্পন্ন জায়গা খুঁজছিল ঠিক ততখানিই অস্থির হয়ে পড়লো সেখানে সেই সুন্দরী নারীদের দেখে। তার সংযমের বাঁধ ভেঙ্গে পড়লো। প্রাসাদ তৈরী তো দূরের কথা , সৌন্দর্যমণ্ডিত পুরীর মধ্যে অপূর্ব নারীর দর্শনে সে সব ভুলে গেল।সে দেখলো সেখানে সবাই নারী।পুরুষ বর্জিত স্থান। একাদশ জন নারী রয়েছে ।তারা সকলে সেই অপূর্ব নারীর কথা অনুসারে কাজ করে। পুরঞ্জনের মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল -' কে তুমি কামিনী কর একাকী বসতি ' , যেই মূহুর্তে পুরঞ্জনের মুখ দিয়ে 'কামিনী' শব্দটা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বেরিয়ে এল পুরঞ্জনের যৌবনের সকল বাঁধ ভেঙ্গে গেল।সে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে লাগল নারীর বৃত্তান্ত শোনার জন্যে । সে জানতে পারলো যে নারীর নাম পুরঞ্জনী। সে কার কন্যা তা সে বলতে পারবে না। এই একাদশ সহচরী যে রয়েছে তারা তার ইচ্ছা অনুসারে কাজ করে।পুরঞ্জনী রাজার নাম জানতে চাইলে যখন শুনলো রাজার নাম পুরঞ্জন তখন পুরঞ্জনী বলল - এই মিলন দৈবের নির্দেশই। এসো , আমরা বিবাহ করি।

" দোঁহা হেরি দুইজনে হইল মোহিত।

 দোঁহা গলে মালা দিল দু'জনে ত্বরিত ।।"

তখন পুরঞ্জন নরপতি হরষিত হয়ে পুরঞ্জনীকে বিয়ে করলো। 

পুরঞ্জন যে উদ্দেশ্য নিয়ে বেরিয়েছিল অর্থাৎ উত্তম প্রাসাদ তৈরী করবে বলে স্থান নির্বাচন করতে তা ভুলেই গেল ।কামনার সাগরে ডুবে গেল । তাদের হাজার পুত্র হল। এক প্রাণ এক মন দুই মাত্র দেহ হয়ে তারা কামনার সাগরে ভেসে গেল।

এবার রাজা পুরঞ্জন ঠিক করলো যে সে অশ্বমেধ যজ্ঞ করবে।রাষ্ট্রের মেধ ( প্রগতি ) কামনার জন্যে রাজা এই অশ্বমেধ যজ্ঞ করেন।

'The Ashvamedha is a horse sacrifice ritual followed by the Srauta tradition of vedic religion. It was used by the ancient Indian kings to prove their imperial sovereignty: a horse accompanied by the king's warriors would be released to wander for a period of one year.'

    অশ্বমেধ যজ্ঞ শেষ হল না , পুরঞ্জন পুরে জ্বরা এসে উপস্থিত হল।শৈশব যৌবন পেরিয়ে মানুষকে বার্ধক্যে পৌঁছতে হয়।যৌবনের সমস্ত তেজ বার্ধক্যে এমনিতেই স্তিমিত হয়ে আসে, সেই সঙ্গে যদি জ্বরা এসে উপস্থিত হয় তাহলে তো কথাই নেই ।সেই জ্বরার সঙ্গে যুদ্ধ করে যুদ্ধে পুরঞ্জনের পুত্ররা ও পুরঞ্জনও হেরে গেল।পুরঞ্জন জ্বরা জর্জরিত হলে পুরঞ্জনী রাজাকে ছেড়ে চলে গেল।পুরঞ্জনকে জ্বরা গ্রাস করে নিল।পুরঞ্জনীর যখন ছায়াও দেখা গেল না তখন রাজা পুরঞ্জন 'পুরঞ্জনী পুরঞ্জনী' বলে দেহত্যাগ করলো।শ্রীহরির নাম স্মরণ না করে পুরঞ্জন কামিনী কাঞ্চনের বশবর্তী হয়ে পুরঞ্জনীকে ডাকতে লাগলো।মৃত্যু সময় ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। সেই সময়ে যে যেভাবে চিন্তা করে ঠিক সেইভাবেই সে পরের জন্মে জন্ম গ্রহণ করে ।

    মোক্ষের যে চারটে দ্বার আছে সেই দ্বারের সন্ধান করতে গেলে সেই ভাবে জীবন যাপন করতে হবে। সেটা অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেলে তবে মৃত্যু সময়ে সেই মোক্ষের ভাবনা আপনিই আসবে।তাহলে পরের জন্মে মোক্ষ লাভের পথে এক পা এগিয়ে থাকা যাবে। এখানে তার উল্টোটাই হ'ল।রমনীর নাম নেওয়ার জন্যে পুরঞ্জন পরের জন্মে বিদর্ভ রাজার কন্যা হয়ে জন্মাল। রাজা মলয়ধ্বজের সঙ্গে তার বিয়ে হ'ল। আবার ভোগ। তারপর মলয়ধ্বজ দেহত্যাগ করলো। বিধর্ব রাজার কন্যার মলয়ধ্বজের প্রতি এতই আকর্ষণ যে সে সহমৃতা হতে চাইল।সে চিতা সাজাল। 

  মলয়ধ্বজের স্ত্রীর জীবাত্মা সহমৃতা হতে চাইলে তার ভেতরের পরমাত্মা অপা তাকে বাধা দিল।বিধর্ব রাজার কন্যা অর্থাৎ মলয়ধ্বজের স্ত্রী অর্থাৎ পুরঞ্জনীর স্বামী পুরঞ্জনের কিছু সুকর্ম থাকার ফলে পরমাত্মা অপা তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন ।পরমাত্মা তাকে 'রহ রহ' বলে সহমৃতা হওয়া থেকে বিরত করেন ।

  পরমাত্মার নির্দেশে দেবঋষি সেখানে এলেন ।

পুরঞ্জন অর্থাৎ মলয়ধ্বজের স্ত্রীকে তার পূর্বের কথা স্মরণ করিয়ে কিভাবে কামিনী কাঞ্চনের বশবর্তী হয়ে নিজের সর্বনাশ ডেকে এনেছে তার বৃতান্ত দিতে গিয়ে বলেন - হিমালয় পর্বতের পাশে যে পুরী সে দেখেছে সেটা হচ্ছে দেহ। তুমি পুরঞ্জন জীব আর পুরঞ্জনী বুদ্ধি।মানুষের বুদ্ধি যদি সুবুদ্ধি না হয় তাহলে মানুষ নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনে ।ভোগের বুদ্ধি দ্বারা পরিচালিত হলে এরকমই দশা হবে।এই দেহে নটা দ্বার আছে অর্থাৎ চোখ, কান, নাক, মুখ, মলদ্বার ,মূত্রদ্বার ইত্যাদি । আর একাদশ যে নারী ওরা একাদশ ইন্দ্রিয়।পঞ্চশির যে সাপ রয়েছে সে হচ্ছে প্রাণ।আর পরমাত্মা অপা সখা, সেই তোমাকে যোগতত্ব শেখাবে।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract