Rita De

Fantasy Others

2  

Rita De

Fantasy Others

জড় - রহুগণ উপাখ্যান - ড . রীতা দে

জড় - রহুগণ উপাখ্যান - ড . রীতা দে

3 mins
219


সাধারণ মানুষ যে জগৎ কে দেখে সেটা জড়

 জগৎ অর্থাৎ মর্ত্তভাব।মর্ত্তভাব বলতে কামনা বাসনাও হতে পারে । কামনা বাসনায় বশীভূত মানুষ জড় জগতের অন্তরের প্রকৃতিকে বা স্বরূপকে উপলব্ধি করতে পারে না ।আমাদের এই দেহও জড়পদার্থ ।আমি বোধ শরীরকে চালনা করে।আমি ব্যাপারটা মর্ত্তভাব। আবার আমি কাজ না করে পারে না।কাজের মধ্যে যখন সে নিজেকে সমর্পণ করে তখন কাজটাই তার পরিচয় হয়ে দাঁড়ায় ।

   এহেন সৌবীর-সিন্ধু অধিপতি রহুগণ রজঃ গুণ সম্পন্ন ।তাঁর মতো প্রজাপালন সেরে তিনি চলেছেন যোগ শিখতে। অর্থাৎ রজোগুণ ছেড়ে সত্ত্বগুণের অধিকারী হতে চান ।যোগ শিখতে চলেছেন শিবিকা চড়ে।এবং শিবিকা বাহকরা তাঁর সঙ্গী।সাধারণতঃ মানুষ যখন মোক্ষের করতে চায় তখন সে একাকী নির্জনে সাধনা করে ।এখানে ছবিটা একেবারেই উল্টো ।তিনি তাঁর যাতে ক্লেশ না হয় তার জন্যে শিবিকার মধ্যে বসে আছেন আর তাকে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে শিবিকাবাহকগণ।সাধনার পথে যে ক্লেশ স্বীকার করতে হয় তাতে তিনি অপারগ।অপরকে শারীরিক কষ্ট দিয়ে নিজের আরামভোগ করতে তাঁর বিন্দুমাত্র কষ্ট হচ্ছে না ।

  যোগ অনেক প্রকার - যেমন কর্ম যোগ,ভক্তি যোগ , জ্ঞান যোগ।জ্ঞান যোগ হচ্ছে -Path of self realisation. It is one of the three classical paths of Moksha. The other two are karmayoga and Bhaktiyoga.

যোগ শেখবার জন্য তিনি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাচ্ছেন লোকবলসহ। তিনি তাঁর পছন্দসই নির্দ্দিষ্ট স্থানের অনুসন্ধানে আছেন ।তারা চলেছে তো চলেছেই। এখনকার মতো সেই সময়ে যাতায়াতের এত সুবিধে ছিল না ।রাস্তাঘাটও এখনকার মত নয়। ঘন বনজঙ্গল প্রান্তর নদী পেরিয়ে তবে গন্তব্য স্থানে যাওয়া যাবে।ট্রেন প্লেন কিছুই ছিল না।শিবিকাই বাহন।

 কখনও গভীর জঙ্গল, আলো- আঁধারির মধ্যে দিয়ে শিবিকা চলেছে কখনও বা উন্মুক্ত প্রান্তর, ঠা ঠা রোদ্দুরের মধ্যে দিয়ে তারা চলেছে ।যা খাবার সঙ্গে ছিল সব ফুরিয়ে গেছে ।খিদে তেষ্টায় তারা একেবারে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।এইভাবে চলতে চলতে এক নদী তাদের নজরে পড়লো। টলটল করছে জল। স্নিগ্ধ স্রোতধারা , শান্ত ভাবে বয়ে চলেছে । সেইখানে তারা শিবিকা নামাল।নদীর নাম ইক্ষুমতী।সেই নদীতে স্নান সেরে , নদীর শীতল জল পান করে তারা কিছুটা বিশ্রাম নিতে থাকল। তখন শিবিকা-অধ্যক্ষ বলল- আরও একজন লোক পেলে ভাল হয় ।খোঁজ খোঁজ খোঁজ । হঠাৎ তারা একজনকে দেখতে পেল ।তার বিশাল বপু , দেখে মনে হয় তার খুব শক্তি আছে।শিবিকা বহন করতে এরকমই লোক দরকার ।সে জড়ভরতের মতো বসে ছিল ।এক একজন করে তাকে টেনে তুলে আনতে গেল, কিন্তু পারলো না ।তখন সবাই মিলে তাকে টেনে নিয়ে আসল শিবিকার কাছে ।

তাদের সঙ্গে তাকেও শিবিকা বহন করতে হবে ।

 জড়ভরত কোনোদিন শিবিকা বহন করে নি।সে জানে না কিভাবে শিবিকা বহন করতে হয় ।তবে আবার শিবিকা চলল। এবার আর শিবিকা আগের মতো চলল না।শিবিকা টলতে টলতে চলল।কখনও জড়ভরত শিবিকার দণ্ড ধরে ঝুলে পড়ে তো কখনও সে নিজে লাফিয়ে ওঠে। কখনও শ্লথ গতিতে চলে।ফলে শিবিকার অন্য বাহকগণ তার সঙ্গে তাল মেলাতে পারে না।রাজা শিবিরের মধ্যে ওলটপালট খেতে লাগল ।রাজা গেল ক্ষিপ্ত হয়ে ।রাজা তখন অন্ধ, তমোগুণে আচ্ছন্ন হয়ে পড়লেন ।তমোগুণে আবৃত মানুষ আলো দেখতে পায় না ।সূর্যের আলো তাদের চোখেই পড়ে না ।তাই শ্লেষ করে বললেন - আহা, তোমার তো খুব কষ্ট হচ্ছে ।তোমার যা ক্ষীণ কলেবর, এই যৌবনেই তুমি জরাজীর্ণ বৃদ্ধ হয়ে পড়েছ।নাকি তোমার মনে হচ্ছে, অন্য বাহকদের শক্তি তোমার কাছে কিছুই নয়, তারা দুর্বল, তোমার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছে না।

  জড়ভরত উত্তরে কিছুই বলে নি।সে আনন্দ করেই শিবিকা বহন করতে লাগল ।

  অবিদ্যার দৈন্যতা রাজাকে গ্রাস করেছে বলে জড়ভরত সম্পর্কে কোনো ধারণাই করতে পারে নি।ঈশ্বরের কৃপা ছাড়া এই মায়াসৃষ্ট জগৎ থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো উপায় নেই । জড় কেবলমাত্র হরিনাম করে।এই জড় পূর্বের পূর্বজন্মে ভরত নামে রাজা ছিল।ভরত রাজা থাকাকালীন সে তার পালিত মৃগের কথা স্মরণ করতে করতে মারা যায় বলে সে মৃগজন্ম লাভ করে।এই জন্মে সে মৃগজন্ম ত্যাগ করে জড় নামে জন্ম নেয় ।জড়ের বাবা তাকে বেদ বেদান্ত শেখানোর চেষ্টা করেন ।কিছু জড় ঐসব না শিখে কেবল হরিনাম জপ করে ।তারপর বাবার মৃত্যু হলে অনির্দ্দেশ্যের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে এবং ইক্ষুমতীর তীরে অবস্থান করে আর জড়ভরতের মত বসে থাকে আর হরিনাম করে।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Fantasy