অন্য পুরুষের গল্প

Abstract Romance Tragedy

3  

অন্য পুরুষের গল্প

Abstract Romance Tragedy

মেল প্রস্টিটিউট একজন পুরুষ বেশ্যার গল্প ৫

মেল প্রস্টিটিউট একজন পুরুষ বেশ্যার গল্প ৫

6 mins
726



প্রেম ছিল গোপন অভিসার, প্রেম ছিলো

শাপলাফুলে

জলের বিন্দু পসরা নিয়ে, খেলার ছলে

টিফিন ভুলে

দশক দশক পথ পেড়িয়ে

ফেসবুকের অন্ধকারে,

মন খারাপের সাদা পাতা

কেউ কি তারে ফেলতে পারে?

আমিও সেটা কুড়িয়ে রাখি, মনন সিন্দুকে

সাজিয়ে রাখি

ক্যানভাসেতে রামধনু রঙ

ফুলের বাগান দোয়েল পাখী।


আমি ও অনুভবঃ


“তোমার কি কোন ইচ্ছেই মনে পড়ে না?”

“আমার মনের বাসনা মরে গিয়েছে। নিজের ইচ্ছে ভাবতে বসলে ফাঁপা লাগে।”

“আমি চাই তোমার মনের ভেতরের শূন্য জায়গা ভরাতে।”

“অবাক লাগছে আমার।”

“কেন প্লাবন?”

“সবাই ভাড়া করে দেহের আদিম সুখ নিতে, ভাড়া করে উষ্ণতায় নিজের সমকাম সেঁকতে, ভাড়া করে আমাকে শারীরিক যন্ত্রণা দিয়ে আনন্দ উপভোগ করতে।”

“সেইগুলো ভুল প্লাবন।”

“তাহলে এটা কেন ঠিক অনুভব?”

“কেন নয়?”

“তুমি আচমকা কেন আমার মুহুর্তগুলোকে রামধনু রঙে সাজিয়ে দিচ্ছো? আমার কাছে তোমার কি চাহিদা?”

“আমি কোন ক্ষতি করব না প্লাবন। আমি তোমার কথা শুনতে ভাড়া দিলাম, টাকা দিয়ে তোমার অতীতের কষ্ট-দুঃখ কিনলাম, পয়সা দিয়ে তোমার চুরমার হয়ে যাওয়া স্বপ্নগুলো জানলাম। আমি তোমার এই যন্ত্রণার অনুভূতিগুলো কাল সকালে কাঞ্চনজঙ্ঘার রুপালী বরফে সমর্পন করব। আমি তোমাকে একমুঠো বাঁচার আশ্বাস উপহার দেবো প্লাবন।”

“অনুভব!!!”

“এই কবিতা তোমার জন্য প্লাবন।”


ম্যাক, প্লাবন হয়ে

আবার কি ফেরা যায় না?

ইডেনের সবুজ গালিচা আর ধূসর কলকাতা,

নীলাভ চাদরে ঢাকা সাতরঙা ভালোবাসার মহল,

খুনসুটি, আলপনা ও সামান্য ব্যস্ততা

বলবে প্লাবন যায় কি?

এই আজকের দিনে,

একটু আগে বাঁধলাম নতুন সুর একসাথে...

যেদিন ওই পথ হারিয়ে যাওয়া পথিক হলাম তোমার সাথে।


“তুমি ঠিক কে অনুভব? কি তোমার পরিচয়? আমার কথা কেন জানতে চাও? আমি কিভাবে বিশ্বাস করব?”

“অবিশ্বাসের কি আছে প্লাবন? এই আমার কার্ড। আমি একটা সংস্থার হয়ে কাজ করি। আমাদের কাজ তোমাদের কাছে সামান্য সুখের আলো পৌঁছে দেওয়া। কেউ চাইলে তাকে আবার জীবনের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনা।”

“মানে!!! আমাকে পেলে কিভাবে? এটা কি প্ল্যান করে ফাঁদে ফেলা?”

“ফাঁদের কি দেখলে তুমি? তোমার কি ভালো থাকার কোন ইচ্ছে নেই? তোমার এই দিনরাতের এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তির বাসনা নেই প্লাবন?”

“সেটা কি এখন এতোই সহজ?”

“কঠিনও না। অবশ্য তুমি না চাইলে আমি জোর করব না। তোমাকে শুধু কয়েকটা সাতরঙা দিন উপহার করলাম। ভয় নেই, তোমার বিপদ হবে না।”

“আমার মতন আর কতজনকে নতুন জীবন দিয়েছো?”

“খুব বেশী নয় এবং সংখ্যাটা বড় নয়।”

“কেন?”

“কারণ আমরা বেশীদিন কাজ শুরু করিনি। অনেকেই বিশ্বাস করে না যেমন তুমি। অনেকেই কিন্তু নিজের কথা বলতে গিয়ে কেঁদেছে আবার অনেকে শুধুই শরীরের খিদে মেটাতে চেয়েছে।”

“এইসব কাজ কেন করছো? কতো টাকা পাও?”


একটা মন চেয়ে থাকে রোজ,

নদীর দুইকূল পাড় করে...

অন্য তারাটা না বলা কথায়,

ছন্দ খোঁজে রোজ ভোরে।

একটা মনন খুব সিরিয়াস,

পাহাড়প্রমাণ বই...

মুখ গুঁজে তার সময় কাটে

খেলার সময় কই।

ওই মনটার দামাল ঠোঁটে,

মনভোলানো হাসি...

আঁকার তুলি ক্যনভাসে তার,

আলপনা রাশি রাশি।

একটা আবার চঞ্চল মনের,

মেঘ-বৃষ্টির লুকোচুরি,

সুর্য-চাঁদের রামধনু রঙ

ফোটায় কতো কুড়ি।


“প্লাবন আমরা বা আমি টাকা নয় বরং মানুষের জন্য করি এইসব। মানুষগুলো যদি একটু ভালো থাকে, একটু কম কষ্ট পায় তাই এইসব করা। আমাদের বিশ্বাস, সামান্য ভালোবাসার স্পর্শে লহমার জন্য হলেও মরা বেঁচে ওঠে। ওই সামান্য সময়ের ওইটুকু ভালোলাগা-ভালোবাসা বাকি জীবন বেঁচে থাকার রসদ দেয়।”


অন্যদিকে তাকিয়ে চোখের জল মোছে প্লাবন। কয়েকটা পুরুষ-ছেলের জন্য আজ এই অবস্থা, আর এই ছেলেটা বলছে মুদ্রার দুটো পিঠ আলাদা।


“আমি কি তাহলে কাল চলে যাই?”


অনুভবের মনমরা চোখদুটো কাঁদিয়ে দেয় প্লাবনকে। ‘কল বয়’, ‘জিগোলোদের’ আসল পরিচয় দিতে নেই বলে আজ একরাশ মিথ্যের ভিড়ে প্লাবনের আসল অস্তিত্ব হারিয়ে গিয়েছে। আজ ইচ্ছে করছে এই অনুভবকে সবকিছু বলতে। আর ভয় নয়... আলতোভাবে অনুভবের চোখের জল মোছায় প্লাবন।


“প্রজ্জলিত হবে সেদিন নিরক্ষীয় প্রভাবে,

ভোরের আলোয় টাটকা ফোটা রূপ,

স্তব্ধ করে দেবে।

মুগ্ধতাটুকু রেখে গেলাম সবিস্ময়ে,

সেই অনুপম কান্তিকে জানাই শ্রদ্ধা-

আগন্তুক পরিচয়।

তোমার রূপের অপরিসীম উজ্জ্বলতা-

আকাশের ললাটের তিলকসম অঙ্গরাগ,

আর প্রাকৃতিক উচ্ছলতা। 

শৈলপ্রান্তের রজতশুভ্র হেমকান্তি তুষারবৃত,

আলিঙ্গনে মত্ত মেঘমালা, তার

বক্ষঃস্থলে আশ্রিত।

অভিহিতকরণের সঠিক ভাষা, সঙ্গা,

আজও অজ্ঞেয়; তুমি একমেবঅদ্বিতীয়ম,

কেবল কাঞ্চনজঙ্ঘা।”


সকালের কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ মহিমা দেখে মুগ্ধ প্লাবন ও অনুভব।


“প্লাবন একটা কথা বলব?”

“বলো।”

“তুমি চাইলে একবার বাবা-মা...”

“সেটা কি আমি নিজেই যেতে পারতাম না অনুভব। নাহ... আমি আর পেছন ফিরে দেখতে চাই না আমার দগদগে ঘা। হ্যাঁ মানছি পরিস্থিতি অনুকূলে ছিলো না কিন্তু নিজের সন্তানের বিপদে তারা পাশে দাঁড়ান নি। আমার ডকুমেন্টস আনার সময়ে খোঁজ নেননি আমি কোথায় আছি। আমি ফিরতে চাইনি আমার অতীতে। আমাকে বাকিদের মতন আমার বাবা-মা বিশ্বাস করে নি বরং অপরাধী ভেবেছে। একটা ছেলেকে কেউ ধর্ষন করবে এই সত্য তারা মানতে চান নি। পেডোফিলিক অনেক মানুষ এই সমাজের বুকে ফুলিয়ে ঘুরছে এটা তারা জানেন না বলেই আজ আমরা এই অবস্থায় অনুভব।”

“প্লাবন!!!”


প্রেমের আকুতির এ কোন আশায়,

সুর বাঁধি আমি এ কোন ভাষায়?

কালবৈশাখীর ঝড়ে সব ঝরে পরে,

মনের আঙিনায় রাধামাধব গান ধরে।


“জানো অনুভব কতো বড়-বড় হোটেলে দামী ব্র্যান্ডেড পোশাক পড়ে উচ্চবিত্তের সাথে মেল এসকর্ট হিসেবে যাই বা আমন্ত্রণ পাই। কেউ মানতে চায়না সেইসব কথা। একটা মেয়ের সাথে বহুদিন আগে থেকে একটা ছেলের শরীরও আজ বাজারের পণ্য আর তাই জন্য আর্জেন্টিনাতে গে ট্যুরিজম আজ জনপ্রিয়। সমাজের কোন কোণাতে কি অন্ধকার জমেছে সেটা বাকিরা জানে না কিংবা জানতে আগ্রহী নয় বলেই এই কমিউনিটির ওপর অর্ধশিক্ষিতের মতন হামলে পড়ে।”

“প্লাবন!!!”

“এই কবিতাটা তোমার জন্য অনুভব।”


তোমার জন্য আজও প্রেম কাননে

রক্তপলাশ ফোটে,

ভালোবেসে এই সাতরঙা বই

রাখলাম মানসপটে।

মননের অঙ্গনে, কতো যে কে জানে

অলি করে আনাগোনা,

তোমার বিরহে জীবন না রহে

পড়ে থাকবে দেহখানা।

লজ্জায় লুকাই আমি, যানে অর্ন্তযামী

রাঙাব কেমনে কাল

খুলি অবগুন্থন-লাজ, সাজায় আমার আজ

দামাল মাদল ঢাল।


প্লাবনের কাঁপতে থাকা হাতদুটো আঁকড়ে ধরে অনুভব। দুইজন কতক্ষণ চুপ করে আছে সেটা গুনতে হয়ত সময় ভুলে গিয়েছে।


“চলো বাতাশিয়া লুপ যাবো।”

“চলো।”

“আজ শুনবে এই মেয়েলি পুরুষের কথা?”

“সব শুনব।”


ভালোবাসার কোন রঙের?

আছে কি তার কোন গন্ধ?

মানুষ হয় ভালোবাসায় অন্ধ?

ভালোবাসার সীমা কি আছে? আছে কি তার কোন ভাষা?

সব কিছুর পরেও মানুষ করে ভালোবাসার আশা...


“জানো প্লাবন আজকাল অনেককিছুই আমাকে অবাক করে না কারণ সেইরকম পুরুষ আমি দেখি নি কোনদিন কোথাও। আমাকে মুগ্ধ করবে এমন কাউকে পাইনি কোথাও। তাই হয়ত ওই সুদূর সবুজ গালিচায় পায়ুসঙ্গমে লিপ্ত হইনি বহুকাল।”


না আমি পুরুষ নই, কারণ আমার কামাই বেশী না,

না আমি পারি না পরিবারের জন্য কিনতে নতুন জিনিস ,

হ্যাঁ আমার আছে মুখভরা ব্রণ আর ছোট্ট একটা শিশ্ন

“তোমার পরিচয় মানে তোমার বাবা-মা?”

“সেটাই আমাদের পরিচয় এই সমাজে। অবশ্য সেইভাবে আমি স্বনামধন্য ডাক্তার অভিজ্ঞান ব্যানার্জী ও ডাক্তার তমালিকা ব্যানার্জীর সন্তান। জানো প্লাবন আমার ছোটবেলায় অনেক অনেক স্বপ্ন ছিলো, আমি অনেক অনেক কিছু ভাবতাম।”

“কিন্তু সমস্যা কোথায়?”

“সমস্যা দাম্পত্য সম্পর্কে।”

“মানে!!!”

“সমাজের চোখে সুখী দম্পতির মুখোশ আমি খুলতে দেখছি রোজ রাতে। দুইজন শিক্ষিত যখন ভাষা ভুলে চিৎকার করত তখন পাশের ঘরে বালিশ আঁকড়ে কাঁদত এই ছোট্ট অনুভব।”


না আমি একদম পুরুষ না, আমি ফুটবল কিংবা বক্সিং আর গাড়ি

পছন্দ করি না,

নিজেকে প্রকাশ করতে ভালো লাগে,

এমনকি পছন্দ করি বন্ধুদের কাঁধে হাত রাখতে।

“সম্পর্কের অবনতি আমার ১৩-১৪ বছর বয়স থেকে। তোমার বা তোমাদের মতনই আমারও নতুন কোন স্বপ্ন নেই। অভিমান করবার মতন কোন বাহুডোর নেই, কাঁদার জন্য কোন কোল নেই। আমিও তোমার মতন পেডোফিলিয়ার শিকার প্লাবন।”

“মানে!!!”

“আমাকে দেখাশুনার জন্য যাকে রাখা হয়েছিলো সেই কাকু, আমার প্রাইভেট টিউশানের স্যার।”

“কাউকে বলো নি?”

“কাকে বলব, শোনার ফুরসৎ কার আছে?


না না না আমি পুরুষ না, আমি সমাজ-নির্মিত পুরুষের ভূমিকায়

অভিনয়ে বেমানান, আমার ভূমিকা আমাকে বেঁধে দিয়েছে

পার্ক স্ট্রিট, আনন্দলোক, বলিউড আর সত্যজিতে।

টেলিভিশন আমার আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না

আর আমি মাত্র পাঁচফুট চার ইঞ্চি।


আমি একেবারেই পুরুষ না, একবার একটা কাঠবিড়ালিকে গুলি করে

আমি খেয়েছিলাম প্রতিজ্ঞা করব না কখনো খুন।

মাংস খাওয়া ছেড়েছিলাম। রক্ত দেখলেই আমার অসুস্থ লাগে।

আমি ফুল খুব ভালোবাসি।


“কেন?”

“কারণ তারা কেউ আমার দিকে ফিরেও তাকায় নি। শুধু চাহিদা মতন টাকা জুগিয়েছে। আমি আমার জন্য একটা আলাদা জগত বানিয়ে নিয়েছিলাম আমার মতন করে।”

“কিন্তু সমস্যা হলো কোথায়?”


হ্যাঁ আমি পুরুষ না, আমি খসড়া আইনের বিরোধিতা করে

জেলে গিয়েছিলাম। যখন একজন আসল পুরুষ

আমাকে মারে এবং কাপুরুষ, নপুংসক বলে, আমি তার

প্রত্যুত্তর দেই না, আমি সহিংসতা অপছন্দ করি।

আমি নপুংসক। আমি কখনো কোন নারীকে ধর্ষণ করিনি।

আমি কালোদের ঘৃণা করি না।


আমি পুরুষ না, আমি কখনোই হাততালি পাইনি।

আমি পুরুষ না, প্লেবয় আমার প্রিয় পত্রিকা না।

আমি পুরুষ না, অসুখে আমি কাঁদি।

“আমি রাতে কখন বাড়ি ফিরি কিংবা নাইবা ফিরলাম এমনকি বাড়িতে কাউকে আনলাম কিনা সেই ব্যাপারে দেখার কেউ ছিলো। একদিন কি একটা কারণে আমি সন্ধ্যেবেলা বাড়ি ফিরে দেখি একজন জিগোলোর সাথে আদিম খেলায় মত্ত আমার বাবা-মা।”

“মানে!!!”

“মানে আজকের কমিউনিটি যাকে ত্রিসাম সেক্স বলে। আমি সেইদিন ঘেন্নায় বাড়ি ছেড়ে আমার নামে লেখা ফ্ল্যাটে গিয়ে উঠি। আমার দাদু আমার নামে প্রচুর সম্পত্তি লিখে গিয়েছেন জানো প্লাবন।”

“দাদু?”

“হ্যাঁ আমার মায়ের বাবা ছিলেন গ্রামের জমিদার। কোটি কোটি টাকার মালিক ছিলেন এবং সেইসব আমার নামে লিখে দেওয়া।”

“তাহলে তুমি এইসব কাজ কেন করো?”

“কিভাবে সময় কাটাব। মানে একটু নিজের মতন করে জীবন দেখা প্লাবন।”


আমি পুরুষ না, আমি নিজেকে নারীর চেয়ে উৎকৃষ্ট ভাবি না।

আমি কোন ব্যাটাই না, আমি আঁটোসাটো আর দেখিয়ে রাখা

মাচো জাঙ্গিয়া পরি না।


আমি পুরুষ না। কারণ আমি কবিতা লিখি।

আমি পুরুষ না, আমি ভালোবাসা ও শান্তির সাধনা করি।

হ্যাঁ, হ্যাঁ, আমি পুরুষ না। আমি তোমার ধ্বংস-ও চাই না।


ক্রমশ


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract