মার্বেলের ফুলদানিটা
মার্বেলের ফুলদানিটা


অনেক দরাদরির পর ৩২০০ টাকার ফুলদানিটা ২০০ টাকায় কিনেই ফেললেন বিকাশ বাবু। একদম খাঁটি মার্বেল পাথরের তৈরি জিনিস। বসকে এটা গিফট করলে দারুণ খুশি হবেন বস। মুখে একটা চওড়া হাসি ঝুলিয়ে টাকে হাত বোলাতে বোলাতে প্রফুল্ল চিত্তে হোটেলে ফিরলেন তিনি। ইতিহাসে পড়া অজন্তার গুহাচিত্র চাক্ষুস করে আর সেখান থেকেই এমন একটা জিনিস হস্তগত করতে পেরে পুলকে হোটেলে ফেরা মাত্রই নিদ্রাদেবীর কোলে ঢলে পড়লেন বিকাশ বাবু। আচমকা ঘুমটা ভাঙলো একটা অদ্ভুত শব্দে, মনে হল কেউ যেন গোঙাচ্ছে। ঘুমটা ভাঙার পরেও ঘুমের আবেশ থেকে বেরিয়ে চোখটা খুলতে আরও খানিকটা সময় লেগে গেল। তবে চোখ খোলার পর আর গোঙানির শব্দটা পেলেননা তিনি। স্বপ্ন দেখেছিলেন ভেবে উঠে মোবাইলটা অন করেই চমকে উঠলেন বিকাশ বাবু, রাত একটা বেজে বারো মিনিট। এতক্ষণ ঘুমিয়েছেন! রাতের খাওয়াটাও হলোনা আজ। নাইট ল্যাম্পের আলো ছাড়া আপাতত একটাও আলো জ্বলছেনা ঘরে। পর্দা সরিয়ে জানালার বাইরে তাকাতেই পূর্ণিমার চাঁদটা দেখতে পেলেন তিনি, একাগ্রচিত্তে সে আলো ছড়াচ্ছে চারিদিকে। পর্দাটা নামিয়ে পেছন ঘুরতেই চোখটা সাময়িক ঝলসে গেল। টেবিল সংলগ্ন নীল নাইট ল্যাম্পের নীচেই রাখা মার্বেলের ফুলদানিটা। নাইট ল্যাম্পের আলোয় অপূর্ব দেখাচ্ছে ওটাকে। মোহাবিষ্টের মত পায়ে পায়ে সেদিকে এগিয়ে গেলেন বিকাশ বাবু। সব ভুলে মেঝেতে বসে পড়ে ফুলদানিটার দিকে তাকালেন তিনি। কি অপূর্ব, কি নিখুঁত কাজ… ঠিক যেন একটা রূপকথার গল্প। কাঁচুলি পরা মেয়েটা ছুটে যাচ্ছে, সামনে থাকা একটা বৃক্ষ থেকে ফুল ঝরে পড়ছে তার মাথার ওপর, মেয়েটার পেছনে ছুটছে একটা লম্বা দাড়িওয়ালা লোক। আচ্ছা লোকটা কি মেয়েটার প্রেমিক নাকি মেয়েটাকে তাড়া করছে সে! উত্তর খোঁজার জন্য মেয়েটার মুখের দিকে ভালো করে তাকালেন বিকাশ বাবু। "অপূর্ব!"... এতো সুন্দর চোখ আর কখনও দেখেছেন বলে মনে পড়ল না, পাথরের মধ্যেই একেবারে নিখুঁত করে ফুটে উঠছে মেয়েটার শরীরের প্রতিটা ভাঁজ, প্রতিটা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। একটা ঢোঁক গিললেন বিকাশ বাবু, পেশীগুলো ক্রমশ শক্ত হয়ে উঠছে তার, শরীরের ভেতরে শুরু হয়েছে হরমোনের চাঞ্চল্য। কাঁপাকাঁপা হাতে মেয়েটার নাভির কাছে আঙ্গুল ছোঁয়ালেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে অনুভব করলেন একটা হ্যাঁচকা টান….
★★★
হোটেল অজন্তা প্যালেসে সকাল সকাল এক দাড়িওয়ালা পাগলের আবির্ভাব ঘটেছে, অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছে লোকটা। এদিকে আবার অজন্তা প্যালেসের বোর্ডার বিকাশ পানকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। সব জিনিসপত্রের সাথে অবিকৃত অবস্থায় তাঁর রুমে পড়ে রয়েছে অপূর্ব দেখতে একটা মার্বেলের ফুলদানি, যার গায়ে খোদাই করা একটা গল্প--- একটা সুন্দরী মেয়ের পেছনে ছুটছে একটা টাকমাথা লোক।
শেষ।