arijit bhattacharya

Abstract

5.0  

arijit bhattacharya

Abstract

মালবের রূপমতী

মালবের রূপমতী

4 mins
547


"আউর ধন যাচতা হ্যায় রী মেরে

তো ধন প্যায়রে কে প্রীত পুঁজি................................

দিন দিন বাড়ে সবায়ো দুনো বাড়ে

ঘটে না এক গুণজী।"

বিন্ধ্য পর্বতের সীমান্তবর্তী এক নয়নাভিরাম রাজ্য হল মালব। এই মালবের সৌন্দর্য আজও সকলের মন কাড়ে,চোখ জুড়োয়।মালবের মাণ্ডু নূরজাহানের প্রিয় ভ্রমণস্থল,এখনোও সেখানে প্রকৃতির নয়নাভিরাম শোভা পর্যটকদের বাকরুদ্ধ করে দেয়। মাণ্ডু মানেই জাহাজমহল,আজও মাণ্ডু সুলতান বাজ বাহাদুর ও রাণী রূপমতীর অমর প্রেমকাহিনীর দেশ। তাদের অভিসারের চিত্র অঙ্কিত হয়েছে চিত্রকরদের হস্তে,কবিরা লিখেছেন কবিতা। বাজ বাহাদুর ও তাঁর সঙ্গীতপ্রিয়া রাণী রূপমতীর প্রেমের সৌরভে এখনোও সুরভিত হয়ে আছে মধ্যপ্রদেশের মাণ্ডু। 


নর্মদাতটে ধরমপুর দুর্গের অদূরে সারঙ্গপুর মল্লের সুলতান শুজাত খানের প্রিয় মৃগয়াক্ষেত্র। এই সুজাত খানেরই জ্যেষ্ঠপুত্রের নাম বায়াজিদ,যিনি ভবিষ্যতে পরিচিত হবেন বাজ বাহাদুর নামে। তো কি হল,তখন মৃগয়া ছিল সকল রাজা ও সুলতানদের প্রিয় অবসরযাপন। সেই মৃগয়া করতে নির্জন বনপথে প্রবেশ করলেন মল্লাধিপতির জ্যেষ্ঠ পুত্র বায়াজিদ। এদিকে দুর্গাধীষের কন্যাও নর্মদা নদীতে স্নান সেরে সখীদের সাথে ফিরছিল বনপথ ধরে। নর্মদার প্রতি অসম্ভব ভক্তি এই কন্যার,দিনে নর্মদামাঈ য়ের অর্চনা করতেই হবে। নর্মদাই সারঙ্গপুরের প্রাণশক্তি। ধরমপুর দুর্গের অধিপতি থানসিংহ রাঠৌরের এই মেয়ে যেমন ভক্তিমতী,তেমনই সঙ্গীতকলা ও কাব্যে পারদর্শিনী। চন্দ্রের ন্যায় মুখমণ্ডল,যেন ঈশ্বর সমস্ত সৌন্দর্যসুষমা নিয়ে তাকে গড়ে তুলেছেন,নর্মদামাঈয়ের আশীর্বাদপ্রাপ্তা সে,সে ধরমপুরের দুর্গেশনন্দিনী রূপমতী।


নির্জন বনপথ,মাঝে মাঝে আলো আঁধারি।যাই হোক,সেদিন স্নানস্নিগ্ধা পীতবসনা তরুণীকে দেখে প্রথম দর্শনেই প্রেমে পড়লেন বায়াজিদ। আর হবেন না কেন,তিনি তাঁর প্রাণাধিকার কোকিলকন্ঠের খ্যাতি শুনেছিলেন। তাঁর হৃদয় বিদ্ধ হয়েছিল কামদেবের শরে। তিনি নিজেও যে পরম সঙ্গীতানুরাগী মানুষ। প্রতিজ্ঞা করলেন,আরোও একবার দর্শন লাভ করবেন তাঁর হৃদয়হারিণীর।


রূপমতীর শিক্ষকের নাম শেখ উমর,তাঁকে বায়াজিদ চেনেন । তিনিও যে অতি উচ্চ মার্গের সঙ্গীতশিল্পী। বায়াজিদ ঠিক করলেন শেখ উমরের কাছে তিনিও শিষ্যত্ব গ্রহণ করবেন। সঙ্গীত দিয়ে সমৃদ্ধ করবেন নিজেকে। শেখ উমরের কাছে এসে এবার রূপমতীর সাথে পরিচিত হলেন বায়াজিদ। রূপমতী জানতে পারল যে,বায়াজিদ সারঙ্গপুরের জায়গীরদার। শ্রদ্ধাবনত হল সে। আর বায়াজিদও জানতে পারলেন,এই তরুণী মল্লের ধরমপুরের দুর্গেশনন্দিনী রূপমতী। এই কন্যা কোকিলকন্ঠী,এর প্রতিটি সুরে রাগ রাগিণী খেলা করে। কাব্যরচনাতেও পারদর্শিনী। এইভাবেই ঘটল বায়াজিদের প্রথম প্রেমের সন্দর্শন।


এদিকে বায়াজিদের মতো সুকন্ঠী ভারতভূমে মেলা ভার। এতোদিনে শুধু ছিল প্রতিভা ,এবার তার সাথে যোগ হল অনুশীলন। রাতদিন রেওয়াজ আর কঠোর পরিশ্রম অপ্রতিদ্বন্দ্বী গায়ক করে তুলল তাঁকে। এদিকে 

বায়াজিদের সঙ্গীতানুরাগ,নম্র -মার্জিত ব্যবহার রূপমতীকে করে তুলল তাঁর অনুরাগিণী। প্রেমে পড়ল রূপমতী। শুরু হল মন দেওয়া নেওয়া। অবশেষে কিন্নরকন্ঠী রূপমতীকে বিবাহের ইচ্ছা প্রকাশ করলেন বাজ বাহাদুর।কিন্তু রূপমতী জানালেন এ অসম্ভব,কারণ চান্দেরির বুন্দেলা রাজপুতের সাথে আগেই বিয়ে হয়েছে তার। অনেককাল আগের কথা। বাল্যবিবাহ। কিন্তু চান্দেরির পাহাড়ঘেরা দুর্গে তার মন টেকে নি ,কারণ চারদিকে পাহাড় আর পরিখা দিয়ে ঘেরা সেই মেঘ পাহাড়ের রাজ্য চান্দেরিতে নর্মদামাঈয়ের দর্শন অসম্ভব ছিল। তাই রূপমতী ফিরে এসেছিল নিজের বাড়িতে। প্রতিদিন সে নর্মদামাঈয়ের পুজো অর্চনা করে।

মাণ্ডু গেলে নর্মদা দর্শনই বা করবে কিভাবে!মাণ্ডুতে তো রয়েছে এক মিষ্টি জলের সরোবর,যাকে লোকে বলে রেবাকুণ্ড! 


আরেক বাধা,রূপমতীর পিতা থানসিং রাঠৌর।থানসিং তাঁর মেয়ের এই প্রণয়কাহিনী জানতে পারলে রূপমতীকে কখনোই মাণ্ডুতে থাকতে দেবেন না বায়াজিদের সাথে,হয়তো দুর্গে নজরবন্দি করে রাখবেন,অথবা হত্যা করবেন অথবা পাঠিয়ে দেবেন চান্দেরির শ্বশুরবাড়িতে। সেখানেও হবে মানসিক তথা শারীরিক নির্যাতন। আগুন কখনোও চাপা থাকে না, এদিকে বায়াজিদ আর রূপমতীর প্রেমকাহিনীও ইতি উতি ছড়াতে শুরু করেছে।রূপমতী বিপদে পড়ে যাবে,

নয়তো তার প্রেমিককে বায়াজিদকে তার আশা ছাড়তে হবে। 

এইসময়ে ভগ্নচিত্তে মালবে ফিরে গেলেন বায়াজিদ। শুজাত খানের মৃত্যু হয়েছে। তিনি বাজ বাহাদুর নাম নিয়ে সিংহাসনে বসলেন। বন্ধু জাদু রায়ের উদ্যোগে আবার দেখা করলেন তাঁর হৃদয়হারিণীর সাথে। সবুজ অরণ্য মুখরিত হয়ে উঠল কিন্নরকন্ঠী প্রেমিকযুগলের নির্ঝর সঙ্গীতে।

এদিকে রূপমতীর গোপন অভিসার ও সুলতান বাজ বাহাদুরের সাথে তাঁর বিবাহিত কন্যার প্রেমকাহিনী প্রবেশ করল দুর্গাধিপতি থানসিংহ রাঠৌরের কানে। এতো বড়ো সাহস। কতো আদর পেয়েছে তাঁর মেয়ে! কিন্তু একজন রাজপুতকন্যা হয়ে সমগ্র রাজপুত কুলকে কালিমালিপ্ত করার প্রয়াস করার দুঃসাহস এল কোথা থেকে! না মেয়েকে এর দণ্ড তিনি দেবেনই।


মল্লের সুলতানরা অসীম শক্তিশালী। মল্লের সুলতান বাজ বাহাদুরের ধৃষ্টতার শাস্তি দেওয়ার সাহস তাঁর মতো ক্ষুদ্র সামন্তের নেই। কিন্তু তাঁর কন্যা,তাঁর সেই আদরের সবেধন নীলমণিই তো সুলতানের প্রেমাকাঙ্ক্ষিণী  তাঁর রাজপুতকুলে কলঙ্ক লেপেছে, তাকে যথোচিত শাস্তি তিনি দেবেনই। নাহলে ,তিনি নিজে রাজপুতকুলশিরোমণি হিসাবে কলঙ্ক।


ঠিক করলেন বিষপ্রয়োগে হত্যা করবেন রূপমতীকে। কিন্তু ঈশ্বর চাইলে অসম্ভবও সম্ভব হয়ে ওঠে। আর রূপমতী যে নর্মদামাঈয়ের আশীর্বাদপ্রাপ্তা, তাঁর প্রেমকে স্বয়ং দেবী রক্ষা করছেন।

ইতিমধ্যে রূপমতীর অনুপ্রেরণা ও অসীম উদ্যোগে রেবাকুণ্ডের সাথে নর্মদানদীর সংযোগ করতে সক্ষম হয়েছেন বাজ বাহাদুর। পবিত্র নর্মদাবারির পরশে ধন্য হয়েছে মাণ্ডু। পূর্ণতা পেয়েছে বাজ বাহাদুর ও রূপমতীর প্রেম।

স্বপ্নে নর্মদামাতা দর্শন দিলেন বাজ বাহাদুর ও রূপমতীকে। রূপমতীকে বললেন,তিনি স্বচ্ছন্দে মাণ্ডুতে প্রবেশ করেছেন। রেবাকুণ্ডতেও তাঁর অধিষ্ঠান। রূপমতী মাণ্ডুর জাহাজ মহলে গিয়েও তাঁর দর্শন করতে পারে,আর বাজ বাহাদুরকে জানালেন তাঁর ভক্তের ওপর আসন্ন বিপদের কথা।সেই রাতেই ধরমপুর দুর্গ আক্রমণ করলেন বাজ,উদ্ধার করলেন তাঁর হৃদয় অধিষ্ঠাত্রী গজগামিনী রূপমতীকে।অতি সুরক্ষিত মাণ্ডুর দুর্গে নর্মদামাতাকে সাক্ষী রেখে পরিণয়ে আবদ্ধ হলেন তাঁর স্বপ্নচারিণী রূপমতীর সাথে। 

সব প্রেমকাহিনী বিরহে শেষ হয়ে যায় না,কিছু প্রেমকাহিনীর শেষে প্রেমিকযুগলের ঘটে মধুর মিলন। পাঁচশো বছর পেরিয়ে গেছে,কিন্তু আজও মাণ্ডুতে কান পাতলে শোনা যায় সুলতান বাজ বাহাদুর ও রাণী রূপমতীর অপরূপ প্রেমকাহিনী। Love is immortal!

"চিত চন্দেরি মন মালোয়া

হিয়া হিড়োতি ম্যায়।

রনতভয়ো মেঁ শেজ বিছাওয়া

শোয়া মাণ্ডুর ম্যায়।"


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract