Nityananda Banerjee

Fantasy Thriller

3.1  

Nityananda Banerjee

Fantasy Thriller

ললন্তিকা ধারাবাহিক

ললন্তিকা ধারাবাহিক

6 mins
322


নবম পর্ব

বেশ ফুরফুরে মেজাজেই ছিলেন মিঃ আরণ্যক বসুরায়।

উকিলের পরামর্শ মত ঝামেলা মিটিয়ে নিতে চেয়েছিলেন।

সম্মুখে ললন্তিকা এবং তার জলবল দেখে প্রথমে একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। নিজেকে ঠিক রেখে ললন্তিকাকে

একটু ঘুরিয়ে কথা বললেন ।

- তোমার লেখাগুলো অত্যন্ত নিম্নমানের। এর মধ্যে সাহিত্যের কোন অবশেষ নেই । সুতরাং যতই দলবল নিয়ে এস আর যাই করি তোমার লেখা প্রেসে দিতে পারব না ।

জনৈকা ভদ্রমহিলা যিনি ললন্তিকার পাশের চেয়ারে বসেছিলেন ; তিনি বললেন - আমায় চিনতে পারেন মিঃ আরণ্যক বসুরায় !

মিঃ বসুরায় ভদ্রমহিলার দিকে চাইলেন। রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারম্যান মিসেস মালবিকা দত্তগুপ্তা ।

- আরে আপনি মিসেস দত্তগুপ্তা ! এর সঙ্গে আপনার কি ভাবে যোগাযোগ হল ?

- আপাতত সেটা গোপন থাক । এখন যে কাজের জন্য এসেছি তা বলি ?

- কাজ ! আপনি কি কোন আর্টিকেল ছাপাতে চাইছেন ? দিয়ে যান , দিয়ে যান, আমি এমনই ছাপিয়ে দেব । কোন মূল্য দিতে হবে না ।

মিসেস দত্তগুপ্তা - আর ন্যাকামী করতে হবে না । এখন বলুন তো ললন্তিকার সঙ্গে আপনি কত বছর ধরে ঘনিষ্ঠতা রেখেছেন ?

- হোয়াট ডু য়ু মিন ? ঘনিষ্ঠতা বলতে আপনি কি বোঝাতে চাইছেন ?

- এই ধরুন পরিচয়, প্রণয়, বা শারীরিক মিলন।

মিসেস দত্তগুপ্তা বললেন ।

- ছি: ছি: ! এসব আপনি কি বলছেন ।

- যা বলছি তার জবাব দিন । নিজের নামডাক ভাঙিয়ে আমাদের শায়েস্তা করতে পারবেন না। অতএব যা প্রশ্ন করছি তার জবাব দিন ।

- আমার যা বলার আদালতে বলব । আপনাদের বলতে যাব কেন ?

- বেশ, তাহলে আদালতেই দেখা হবে । চল চল সবাই। আমরা তথ্যগুলো বিচার বিশ্লেষণ করে দেখি ।

ওঁরা চলে গেলেন । মিঃ আরণ্যক বসুরায় বিষণ্ণ হয়ে পড়লেন । ললন্তিকা উকিল, মহিলা কমিশনেও দরবার করেথে। তার অর্থ আদালতের বাইরে মীমাংসার যে পরামর্শ মিঃ সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন তাতে আর লাভ হবে না ।

তিনি ফোন করলেন তাঁর নবনিযুক্ত উকিল মিঃ সিদ্ধান্তকে । আনুপূর্বিক সব ঘটনা বলে তাঁর পরামর্শের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন ।

মিঃ সিদ্ধান্ত বললেন - দশ মিনিট পর আপনাকে বলছি। প্লীজ ওয়েট ফর দ্য টাইম বিং ।

আরণ্যক অপেক্ষায় রইলেন । মি: সিদ্ধান্ত ফোন করলেন ললন্তিকার উকিল মিঃ জগন্নাথ মিত্রকে।

দু'জনে কুশল বিনিময় করলেন । মিঃ সিদ্ধান্ত বললেন - আমি একটা কেস পেয়েছি যা আমাকে তোমার বিরুদ্ধে লড়তে হবে । তুমি তো আমার জুনিয়ার ছিলে ; তাই তোমাকে জানিয়ে দেওয়া কর্তব্য মনে করেছি ।

- ঠিকই করেছেন স্যার । কিন্তু কোন কেসটা যদি বলেন ।

মিঃ সিদ্ধান্ত বললেন - ললন্তিকা সেন নামে জনৈকা লেখিকা তোমাকে একটা কোহ্যাবিটেশনের কেস দিয়েছে বিখ্যাত কবি সাহিত্যিক এবং প্রকাশক মিঃ আরণ্যক বসুরায়ের এগেইনস্টে -

- হ্যাঁ স্যার। দিয়েছে বৈকি । আর আমি সেইমত ওনাকে নোটিশও ধরিয়েছি । আজ তো শনিবার - কোর্ট বন্ধ । আগামী সোমবার ফার্স্ট আওয়ারে কোর্টে আপীল করব।

- আমার এ বিষয়ে কিছু বলার ছিল - বলব ?

- কেন নয় স্যার। আপনি বলুন । তবে একটা ভালো কেস পেয়েছি স্যার। বেশ কিছু আয়হবে মনে হচ্ছে। প্লীজ আপনি আমাকে এটা ছেড়ে দিতে বলবেন না । আর আমি ছেড়ে দিলেও অন্য কেউ ধরে নেবে স্যার ।

মিঃ সিদ্ধান্ত একটু নরম সুরে বললেন - কত আয় অরবে তুমি ? আমি তার দ্বিগুণ, তিনগুণ, এমনকি দশগুণ টাকা পাবার ব্যবস্থা করে দেব । শুধু আমি যা করতে বলছি সেইমত করবে ।

- বলুন, বলুন স্যার । আমি সব শুনছি ।

যা কিছু বলবার মিঃ মিত্রকে বলে দিয়ে মিঃ সিদ্ধান্ত ওঁকে বললেন - কাল আমার বাড়ি ঊলে এস। জমিয়ে খাওয়া দাওয়া হবে, আড্ডা হবে । আর ফেরার পথে তোমার পাওনার এডভান্স চেক নিয়ে যেও। যদি মনে কর অনলাইন ট্রান্সফার হলে ভালো হবে তবে তারও বন্দোবস্ত করে দেব ।

হাতের মুঠোয় গাদা গাদা অর্থের হাতছানিতে মজে গেলেন মিঃ জগন্নাথ মিত্র মহাশয় । ফোন রেখে একটা সিগারেট ধরিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে লাগলেন ।

এদিকে ছটফট করছিলেন মিঃ আরণ্যক বসুরায়। সিদ্ধান্তের ফোনের অপেক্ষায় বসে আছেন । কুড়ি মিনিট পর রিং ব্যাক করলেন মিঃ সিদ্ধান্ত। বললেন -

- মিঃ বসুরায় ! সব ব্যবস্থা করে নিয়েছি। কিন্তু আগামীকাল দুপুরে দু'লাখ টাকা নিয়ে আমার বাড়িতে চলে আসুন । এখানেই খাওয়াদাওয়া করবেন ।

আরণ্যকের মাথায় তখন মান সম্মানের প্রশ্নটা বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। টাকা তো গৌণ। আজ আছে, কাল নেই; আবার পরশু আসবে। এ যাত্রা বেঁচে গেলে রক্ষে পান ।

মিঃ জগন্নাথ মিত্র ফোন করলেন ললন্তিকা সেনকে।

- হ্যালো ম্যা'ম ! মিঃ মিত্র বলছি ।

- হাঁ স্যার বলুন !

- ম্যা'ম আগামীকাল দুপুরে একবার আমার বাড়িতে আসতে পারবেন ?

- কেন বলুন তো ? আগামীকাল আমার এক প্রি-অকুপায়েড এনগেজমেন্ট আছে একটি সাহিত্য সভায় । পরশু গেলে চলবে ?

- না ম্যা'ম । আমি অনেক কষ্টে আমার সিনিয়র উকিলকে রাজী করিয়েছি । তিনি আগামীকাল দুপুরে টাইম এলট করে দিয়েছেন। আপনার কেস নিয়ে আইনি পরামর্শ দেবেন । সেইজন্য আপনার সাথে কথা বলবেন ।

- ও আচ্ছা ! তবে তো যেতেই হয় ! ঠিক আছে আমি ওদের জানিয়ে দিচ্ছি যেতে পারব না । আপনি যে এতবড় একটা কাজ করে ফেলেছেন তার জন্য ধন্যবাদ।

আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসার পরিকাঠামো তৈরি করতে পেরে মিঃ মিত্র খুব খুশি হলেন ।

এদিকে মিঃ আরণ্যাক বসুরায় চোখের সম্মুখে আশার আলো ফুটছে দেখে মন মনে অত্যন্ত প্রীত হলেন । দু'লাখ টাকার বাণ্ডিল নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।

মিঃ সিদ্ধান্ত অপেক্ষাতেই ছিলেন। আরবান ব্লু গাড়িটা এসে দাঁড়াল সিং দরজার সামনে। গাড়ি থেকে নেমে এলেন আরণ্যক। তাঁকে অভ্যর্থনা করে ভেতরে নিয়ে এলেন ।

- আপনার কেস মিটে যাবে আশা করছি ।আর কিছক্ষণের মধ্যেই ললন্তিকা সেনকে নিয়ে হাজির হবেন উকিল জগন্নাথ মিত্র ।আপাতত আপনাকে অন্তত তাঁদের আসার সময় পর্য্যন্ত একটু অন্তরালে থাকতে হবে । ততক্ষণে আপনি খেয়ে নিয়ে বিশ্রাম করুন । আমি মি. মিত্র এবং মিস সেনকে নিয়ে প্রথমে আলোচনায় বসব । তারপর ফোন করে আপনাকে ডেকে নেব । কিন্তু ফোন পেয়েই চলে আসবেন না যেন ; অন্তত আধঘন্টা পর আসবেন । ঠিক আছে ?

মাথা নাড়িয়ে মি. বসুরায় সম্মত হলেন ।

ললন্তিকা তার উকিলের বাড়িতে এল । মি. মিত্র ললন্তিকাকে দেখে বললেন - একটু দেরী করে ফেললেন মিস সেন । চলুন বেরিয়ে পড়ি ।

ললন্তিকা ঘড়ি দেখে বলল - ইয়েস, আই অ্যাম টু লেট। সরি, বাসে বাসে আসতে হল তো !

- ওকে। এবার চলুন । সিনিয়র ইতিমধ্যে তিনবার খবর নিয়েছেন ।

ওঁরা মি. মিত্রের গাড়িতে সিদ্ধান্ত সাহেবের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন ।

আধঘন্টার মধ্যে পৌঁছে গেলেন । মি. সিদ্ধান্ত ওঁদের নিয়ে গেলেন দোতলার একটি বড় হলঘরে মি: সিদ্ধান্ত ললন্তিকাকে বললেন - আপনার মামলার কপি পড়লাম।

উদ্বুদ্ধ হয়ে ললন্তিকা বললেন - স্যার কেসটা জিতব তো !

সেইজন্যই তো আপনাকে ডেকেছি । কিন্তু আগে খাওয়া দাওয়া হয়ে যাক । তারপর ধীরেসুস্থে আলোচনা করব।

খাওয়া দাওয়ার পাট চুকলো। সবাই হলঘরে বসে আছেন। শুধু আরণ্যক অন্তরালে রয়ে গেলেন মি. সিদ্ধান্তের পরামর্শ মত ।

উদ্বিগ্ন ললন্তিকা সেন পুনরায় জিজ্ঞাসা করল - স্যার আমার বিষয়ে যাবতীয় তথ্য মি. মিত্রকে দিয়েছি । বড় আশা নিয়ে আছি স্যার । জেতার কোন সম্ভাবনা দেখছেন ?

মি. সিদ্ধান্ত বললেন - আশা প্রায় নেই বললেই চলে। যদি কোন অলৌকিক ঘটনা ঘটে তবে হয়তো জিতে যেতে পারেন । আমার বন্ধুটি সাদাসিধে মানুষ। সব দিক খতিয়ে না দেখেই আপনার কেস হাতে নিয়ে ফেলেছেন।

আমি হলে রিফিউজ করতাম ।

ললন্তিকা হতাশা প্রকট করে বলল - তবে যে মি. মিত্র বলেছেন আপনি জিতবেনই ?

মি. মিত্র বললেন - জিতবেন না - এ কথা এখনও বলব না । তবে এও তো ঠিক আপনি যা প্রমাণ করতে চাইছেন তা' আপনি সহজে পারবেন না। আমার সন্দেহ হল বলে আমি আপনাকে আমার স্যারের কাছে নিয়ে এসেছি ।

ললন্তিকা বলল - তা' হলে কি হবে ?

মি. সিদ্ধান্ত বললেন - তারই জন্য আপনাকে এখানে ডেকে পাঠিয়েছি । যাই হোক, এবার আপনার সঙ্গে কেসের খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচনা করব।

ওঁরা তিনজন বসলেন। ফাইলপত্র এবং ডকুমেন্টস চেক করে মি: সিদ্ধান্ত গম্ভীর মুখে বললেন - নাহ্ জেতা তো দূরের কথা ; উল্টে মনে হচ্ছে আপনি উল্টো কেস খাবেন ।

ললন্তিকার বুক ঢিপঢিপ করতে লাগল ।

( ক্রমশ )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Fantasy