লকডাউন ( অষ্টম পর্ব )
লকডাউন ( অষ্টম পর্ব )


চার দেওয়ালের মধ্যে বন্দী থেকে মনে প্রাণে অভ্যস্ত হবার চেষ্টা করছি কিন্তু মাঝে মাঝে দম বন্ধ হয়ে আসছে। নিজের ছোট্ট পোস্ত দানার মত মনকে নিজেই স্বান্তনা দিচ্ছি। একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। ঠিক হয়ে যাওয়ার জন্য সামাজিক দূরত্ব একমাত্র ঔষুধ। ভাবছি যারা বাড়ির বাইরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন -ডাক্তার,নার্স,স্বাস্থ্যকর্মী থেকে সাফাই কর্মী, পুলিশ থেকে সিকিউরিটি গার্ড, পৌর সভার কর্মীরা আরো কতো মানুষ, কাজ করে চলেছেন। তাঁদের প্রিয়জনদের সব সময় কত দুশ্চিন্তা। না পড়া কত বই, না শোনা কত গান সময় পেলে শোনার কথা ছিল কিন্তু বই পড়া হচ্ছে না, গান শোনাও হচ্ছেনা। শুধুই সময় এগিয়ে চলেছে। কাজ করছি কিন্তু তাল কেটে গেছে। জীবনের ছন্দ হারিয়ে গেছে। ভালো-লাগারা কোথায় হারিয়ে গেছে। মনের চারপাশে খারাপ লাগা ঘিরে ধরেছে। বাড়িতে সারদিন কাজের শেষ নেই কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে নিদ্রাহীন রাত কাটাচ্ছি।
এরকম অবস্থা চললে কত মানুষ কাজ হারাবে। কত মানুষ প্রাণ হারাবে, না খেতে পেয়ে। সামনে কি আছে কেউ জানেনা তবুও এখনো কিছু মানুষ নিজেরটুকু গোছাতে বড্ড ব্যস্ত।‘করোনার’ ছোবলে হয়ত প্রাণ গেলে প্রানহীন শরীরও জীবন্ত মানুষ ছুঁয়ে দেখবেনা। প্রিয়জনেরাও শেষ বিদায়ে থাকবেনা। তবুও মানুষ এখনো নিজের ছোট্ট পরিসরে ব্যস্ত। এখনো মনের সংকীর্ণতা কাটিয়ে আমি নই আমরা -এই উত্তোলন মানুষের সম্ভব হচ্ছেনা। কিছু মানুষ সব সময়ই ব্যতিক্রমী। তাঁরা আপ্রাণকাজ করে চলেছেন, নিজের কথা না ভেবে শুধুমাত্র মানুষের জন্য মানুষের পাশে থেকে একটা সামাজিক ব্যবস্থাকে সক্রিয় রাখার তাগিদে। আশা রাখি পৃথিবীর গভীর অসুখ একদিন সেরে যাবে। আমরা আবার বাড়ির বাইরে পা বাড়াবো। ততদিনে যন্ত্র নয় মানুষের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করবো। প্রয়োজন ছাড়া যন্ত্রকে সরিয়ে মানুষকে জড়িয়ে ধরবো। সম্পর্কের বাগানে যে গাছ গুলো শুকিয়ে ধুঁকছিল। ঠিক মতো জল পেয়ে, যত্ন পেয়ে তাঁরা আবার সজীব হবে।