লক ডাউন (১৩)
লক ডাউন (১৩)
আজ সকালে রান্নাঘরে গিয়ে অবাক হয়ে যাই। রান্নঘরে জিনিস পত্র বেশ কম। এই সেদিন কেনা নতুন প্রেশার কুকার খুঁজতে গিয়ে তাজ্জব হয়ে যাই – সে রান্নাঘরে কোথাও নেই। নতুন জিনিসের কদরই আলাদা হয়। গত রাতে সব কাজের শেষে তাকে রান্নাঘরের সিঙ্কের পাশে সযত্নে শায়িত দেখেছিলাম। চায়ের জল ফুটে গেছে চা পাতা দিতে দিতে ভাবলাম বিষয়টা তদন্ত সাপেক্ষ কিন্তু খুব সতর্কতার সঙ্গে কন্ঠস্বর একদম নীচের সাএ করে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। না হলেই একজনের সঙ্গে আরেকজনের সংঘর্ষ অবধারিত। কোনো গ্রহ যদি প্রদক্ষিন করতে করতে অন্য গ্রহের কক্ষপথে অনিচ্ছাকৃত প্রবেশ করে তাহলে ঠিক যেমন সংঘর্ষ হওয়ার কথা অনেকটা সেরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।
এমনিতে লকডাউনের ফলে বাড়ির সদস্যদের অসুবিধার শেষ নেই। যিনি হয়ত বাড়িতে অধিকাংশ সময় একা থাকতেন টিভি চালিয়ে এবং গৃহ সহায়িকাদের সঙ্গে কথা বলে আর তাঁদের কাজের তদারকি করে, এখন সেখানে তাকে ছেলে –বউ নিয়ে দিনের পর দিন কাটাতে হচ্ছে। কখনও বউয়ের লেখার বানান বলতে হচ্ছে আবার কখনও ছেলের আনা শাক কাটতে হচ্ছে । উল্টে মুখপোড়া ‘করোনা’ র জন্য বাংলা সিরিয়াল গুলোও বন্ধ হয়ে গেছে। টিভি দেখতেও এখন আংশিক মালিকানা। কখন সিনেমা চলছে কখনো আবার কার্টুন চলছে। মনের সুখে কথাও বলা যায় না। এই অফিসের কাজ চলছে, কখনো কারোর অনলাইন ক্লাস হচ্ছে।কখনো মাঝ রাতে কেউ গান গাইছে। কারোর বেলা এগারোটায় সকাল হচ্ছে । কেউ আবার লগ ডাউনে মুখে মাস্ক লাগিয়ে সকাল আটটায় গেটে উপস্থিত হচ্ছে । যেন জীবনের মধ্যগগনে প্রেমিকা আসছে। ভার্চুয়াল প্রেমেও আকাল। বাড়ির সব কাজ করে তবে না সবুজ আলো জ্বলবে, তবে না প্রেম দীর্ঘজীবি হবে। দেখা গেল আমার প্রাণনাথ কিছু জিনিস সরিয়ে রান্নাঘর পরিষ্কার করেছে। প্রচুর অপ্রয়োজনীয় জিনিস যেমন প্রথম যে দিন swiggy থেকে জিনিস আনা হয়েছিল এবং শেষ যেদিন আনা হয়েছে সমস্ত কনটেনার সযত্নে ছিল – সেগুলোর ভিতর আরশোলারা তাঁদের সাম্রাজ্য বিস্তার করেছিল। নতুন প্রেশার কুুুুুকার সে খুঁঁজে এনে আমায় দিল। আরশোলা বিদায় হয়েছে জেনে আমি উৎফুল্ল হয়ে উঠলাম।