লেখালেখির অনুপ্রেরণা
লেখালেখির অনুপ্রেরণা
সেই অর্থে আমি লেখক নই। কোনোদিন স্বপ্নেও ভাবিনি যে লেখক বা কবি হব। কারণ, ছোটবেলায় একটা তীব্র আকর্ষণ ছিল বড় খেলোয়াড় হওয়ার। সেই থেকেই যাবতীয় উদ্দীপনা খেলাকে কেন্দ্র করে।
গগনচুম্বী স্বপ্ন ছিল একদিন কলকাতার মাঠে ক্রিকেট খেলব। তাই পড়ার বাইরে খেলা নিয়েই মেতে থাকতাম।
ধীরে ধীরে স্বপ্ন বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে এগিয়ে চলা ছোটবেলা থেকেই। আর এই সাথে জুটে গিয়েছিল বেশ কিছু ক্রিকেট খেলার উৎসাহী বন্ধু। মাঝেমধ্যে যে একেবারেই লেখালেখি করতাম না, তা নয়! বিদ্যালয়ের প্রথম তিনজনের মধ্যে থাকার জন্য একটা বিশেষ স্থান ছিল শিক্ষকদের মনে। তাঁদের কথায় লেখালেখি করতেই হতো। কখনও বা দেওয়াল পত্রিকায়, আবার কখনও বা বিদ্যালয়ের ম্যাগাজিনে।
তারপর কালের নিয়মে পরিণত হ'য়ে চলে গেলাম ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে। খেলার স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছিল মাধ্যমিকের ঠিক পরেই। ছোটখাটো খেলা ছাড়া আর বিশেষ কিছু করতে পারিনি তারপর। পরবর্তীতে ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে রেলওয়েতে যোগদান। আর জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার গতানুগতিক অধ্যায়। মোটামুটি এইভাবেই চলছিল জীবন যাপনের দিনলিপি।
বিগত কয়েক বছর আগে একদিন হঠাৎই আমার এক সহকর্মীকে মোবাইলে বাংলায় ম্যাসেজ ক'রে পাঠালাম অজান্তে। সেটা ছিল চার লাইনের অণুকবিতা। অত শত ভেবে লিখিনি। সেই দাদা অফিস থেকে ফেরার পথে আমায় ডেকে জিজ্ঞেস করলেন যে আমি আগে কোনোদিন লেখালেখি করতাম কিনা?
আমি তো আকাশ থেকে পড়লাম! কী বলে রে বাবা! আর লেখক বা কবি সম্বন্ধে বিন্দুমাত্র উৎসাহ নেই আমার। সামান্যতম ইচ্ছাও নেই লেখক হওয়ার। কিন্তু তিনি শুনলেন না কোনও অজুহাত, সেইসব উপেক্ষা করে আমায় লেখা চালিয়ে যেতে বললেন।
প্রথমে ভেবেছিলাম আমার সাথে মস্করা করছেন তিনি। কিন্তু পরদিনই আবার আমার লেখা পড়তে চাইলেন। ইচ্ছা-অনিচ্ছার দোটানায় আমি যা মনে হয় লিখতে শুরু করলাম। আর এই সূত্রে লেখার তরীতে ভাসতে শুরু করলাম....
এক নতুন যাত্রার সাথে নিজেকে সংযুক্ত করলাম।
তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে লাগল নিত্যনতুন লেখা। কবিতাই বেশি, তবে ইত্যবসরে নিবন্ধ, ছোট গল্প, ছড়া, বড়ো গল্প কিছুই বাদ যায়নি লেখার স্রোতে।
আমার অনুপ্রেরণা বলতে সেই দাদাটিই।