Apurba Kr Chakrabarty

Abstract

4.5  

Apurba Kr Chakrabarty

Abstract

কুমারী মা (প্রথম পর্ব)

কুমারী মা (প্রথম পর্ব)

5 mins
658


দূর্গা পূজোর ইতিহাস তো সুপ্রাচীন, বৈদিক যুগে যেমন দূর্গা পূজোর আরাধনার উল্লেখ আছে,মহাভারত, বিষ্ণু পুরান ,ভাগবত পুরান,দেব পুরানেও এর উল্লেখ পাওয়া যায়।আর শারদীয়া দূর্গা পূজা বা অকালবোধনে দেবী দূর্গার প্রথম আরাধনা করেন শ্রীরাম চন্দ্র এমনই মনে করা হয়। লংকারাজ রাবন বধ করে স্ত্রী সীতাকে উদ্ধারের জন্যই রাম চন্দ্র এই পূজার আয়োজন ছিল।

 পৌরাণিক মতে শরৎ কাল দেবী দূর্গার আরাধনা বা পূজা শুভ নয়। বিশেষ প্রয়োজনে রামের এই সময়ে দূর্গার পূজো আয়োজন করেছিলেন,তাই শারদীয়া আশ্বিনের শুক্লা পক্ষে দেবী দূর্গার এই বিশেষ আরাধনা অকালবোধন। অকাল কথার অর্থ হল অসময়, শুভকাজের যোগ্য নয় এমন অনুপযুক্ত সময়, বোধন বা জাগানো বা বিশেষ কারনে নিদ্রাভঙ্গ করে দেবীর আরাধনা, তাই রামচন্দ্রে এই দেবীর আরাধনাকে অকালবোধন বলা হয়।

দেবী এ সময় মর্তে পিতৃগৃহে থাকেন তাই রামের এই আরাধনা, এমন অনেকেরই মত । পুরান মতে দেবী আদি পূজার কাল ছিল চৈত্র মাস, যা আজও বাসন্তী পূজো রূপে পালিত হয়। আবার ব্রহ্মবৈবর্ত পুরান মতে কৃষ্ণ প্রথম দেবী দূর্গার আরাধনা করেছিলেন। পৃথিবীর প্রথম দূর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছিল, পৌরাণিক মতে, মারকন্ডেয় পুরান বা শ্রী শ্রী চন্ডী পুরানে যার উল্লেখ আছে, গড় জঙ্গলে মেধাস মুনির আশ্রমে ,বর্তমানে যা পশ্চিম বর্ধমান জেলায় অবস্থিত।


বাংলায় প্রথম এই দেবী দূর্গা মহিষাসুর মর্দীনি রূপেই পূজিত হোক। যদুবংশীয় রাজা সুরথ বলিপুর বর্তমানে বোলপুরের নিকট যার রাজ নিবাস ছিল। রাজা সুরথের দেবী দূর্গার এই আরাধনা কালের অনেকেই কোন ঋতুর নাম উল্লেখ করেন নেই , আবার মতান্তরে বসন্ত ঋতুর চৈত্র মাসে শুক্লা পক্ষে তাঁর দেবী আরাধনার সময় কালের কথা অনেকেই উল্লেখ করেছেন। তাঁর দেবীর আরাধ্য রূপ মহিষাসুর মর্দীনি আজও এই রূপেই বাংলায় অধিকাংশ দেবী দূর্গা পুজিত হোন। অসুর এখানে মহিষ রূপী।পৌরাণিক উল্লেখিত সুরথ রাজার প্রতিষ্ঠিত সুরথেশ্বর শিব মন্দির বোলপুর বীরভূমে আজও আছে।

বাংলায় প্রথম শারদীয়া দূর্গা পূজোর ঐতিহাসিক প্রমান্য স্বরূপ তথ্য ভিত্তিতে মনে করা হয়, পনের শো শতকের শেষ দিকে।মালদহের তাহেরপুরের রাজা কংসনারায়ন শারদীয় দূর্গা পূজোর প্রথম আয়োজন করেন বা মতান্তরে নদীয়ার ভবানন্দ মজুমদার প্রথম বাংলায় শারদীয় দুর্গা পুজোর আয়োজন করেছিলেন।

বারোয়ারী দূর্গা পূজোর প্রথম আয়োজন করেন গুপ্তি পাড়ার বারো জন বন্ধু মিলে, সেটা সতেরশো নব্বই সাল ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমল। সে তুলনায় কলকাতায় প্রথম বারোয়ারী শারদীয় দূর্গা পূজোর আয়োজন করা হয়, ঊনিশশো দশ সালে।সেটা অনেক পরে।আর বাংলায় বিভিন্ন শহর ও গ্রামে বারোয়ারী পূজোর প্রচলন বেশী বেশী শুরু হয় দেশ স্বাধীন হবার পর। তার আগে বড় বড় সম্পন্ন ধনী , জমিদার ও ব্যবসায়ীদের পারিবারিক ভাবেই দূর্গা পুজো ব্যাপক ভাবে বাংলায় সর্বত্র ছাড়িয়ে পড়েছিল। মুলত ইংরেজ আমল বা বৃটিশ সরকারের শাসন কালে এর বিস্তার লাভ করে । শারদীয়ায় দেবীর দূর্গার এই পারিবারিক পূজা বা আরাধনা শ্রদ্ধা ভক্তি ও নিষ্ঠার সাথে জড়িয়েছিল আভিজাত্যের অহংকার আর গর্ব।

আবার অনেক সময়ই স্বপ্নাদেশ ফলে দূর্গা পূজোর আয়োজন দেখা যায়। সামান্য দরিদ্র ঘরেও বৃটিশ আমল থেকেই এমন পারিবারিক দূর্গা পুজোর আয়োজন দেখা মেলে। ভবিষ্যতে তাদের আর্থিক কারণ বা অনুপস্থিতি বশত দূর্গার এই পারিবারিক পূজোর ভার বা দ্বায়িত্ব অন্য কোন সম্পন্ন পরিবার নিজের পারিবারিক পূজোয় পরিনত করেছেন । এই রকম পারিবারিক পূজো আবার কালের স্রোতে বন্ধও হয়েছিল। বিশেষত অধুনা এই বাংলাদেশ, একাত্তরের আগে পূর্ব পাকিস্তান, থেকে দেশ স্বাধীন হবার আগে ও পরে পালায়ন কারনে।সে সময়ের বৃটিশ পরাধীন ভারতের অবিভক্ত বাংলা প্রদেশের পূর্বাংশে বিস্তীর্ণ অংশ ছিল মুসলিম গরিষ্ঠ এলাকা।

এটা ঐতিহাসিক ভাবেই সত্য ,যে মুসলিম ধর্মী মানুষদের একটা অংশ দেশ ভেঙ্গে পাকিস্তান রূপে মুসলিম রাষ্ট্র নির্মানে জন্য সে সময় প্রত্যক্ষ সংগ্রাম বা ডাইরেক্ট অ্যাকশন নামে হিন্দুদের বিরুদ্ধে এক সশস্ত্র সন্ত্রাস হিংস্রতায় লিপ্ত হয় ।

বিশেষত নোয়াখালীর হিন্দু গনহত্যা লুট নারীধর্ষন অপহরণ কান্ডে সে সময়ে অনেক সচ্ছল বনেদী হিন্দু পরিবার নিঃস্ব হয়ে তাদের স্বদেশ জন্মভূমি জমি সম্পত্তি বাড়ির ঘর সব কিছুই ছেড়ে দেশ বিভাগের আগে ও পরে তারা ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও অত্যাচারের ভয়ে ভারতে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিল। শুধুমাত্র প্রান বাঁচাতে, মেয়েদের ইজ্জত সম্মান বা অপহরণ থেকে তাদের বাঁচানোর জন্য। যাদের অনেকেই সচ্ছল ছিল,বনেদী ঘরানায় গৃহের সুপ্রাচীন ঐতিহ্যময় দূর্গামন্ডবে দেবীর আরাধনা চলত।কিন্তু তাৎক্ষণিক এমন বিপদে দেবীর বিগ্রহ সবার পক্ষে আনা সম্ভব ছিল না বা এদেশে এসে ছিন্ন মুল উদ্বাস্তু দশায় অনেকের আর্থিক দুরবস্থা বা দারিদ্র্যতা এতটাই করুন ছিল, সেই কারনে পারিবারিক ঐতিহ্য দেবীর পূজা আরাধনা তারা পরিত্যাগ করেছিল।

শারদীয় উৎসব দুর্গা পুজো আজও বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব । বাংলার সাথে রাম চন্দ্রের অকালবোধন সেই কবে থেকেই স্মৃতি জড়িয়ে। যারা রাম চন্দ্র কে বাংলার সাথে জড়াতে চায় না,তাদের শারদীয় দূর্গা পুজো বা রামে চন্দ্রের অকালবোধন আয়োজন না করে দেবীকে চৈত্র মাসে বাসন্তী পূজোর আরাধনা করা উচিত। অথবা তারা দ্বিচারী অজ্ঞ ।

 অকালবোধন রামের স্মৃতিচারণ, যিনি দেবীকে তুষ্ট করে রাবনকে পরাজিত করার জন্যই অসময় আশ্বিন মাসের শুক্লাপক্ষে দূর্গাকে তুষ্ট করতেই এই আরাধনা আয়োজন করেছিলেন। এই সত্য অস্বীকার আর নাস্তিকতার সমতুল্য। রামচন্দ্র তাই বাংলার এক স্মরনীয় শ্রদ্ধেয় অনুকরণীয় নাম। আজ থেকে ছশো বছরের ইতিহাস তার সাক্ষ্য বহন করছে। আজ শারদীয় দূর্গা পূজো শুধুমাত্র বাংলার শ্রেষ্ঠ উৎসব নয়।বিশ্বে বাংলার শারদ উৎসবকে ইউনেসকো হেরিটেজ ঘোষনা হয়েছে।

বারোয়ারী শারদীয় দুর্গা পুজো সাধারণত ছাগ বলি হয় না। ঐতিহ্য সংস্কৃতি শ্রদ্ধা নিষ্ঠা ভক্তির চেয়েও আনন্দ বিনোদন হৈহুল্লোর যেন বেশী। প্রতিমার রূপের নানান প্রতিযোগিতা পরীক্ষা নিরীক্ষা আর থিমের আজ রমরমা ,যা অনেক সময়ই মাথামুন্ডু হীন সনাতন ধর্মে নিজস্বতা কে নষ্ট করে এমন কী ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করে। উদ্যোক্তাদের তাতে বয়ে গেছে। তাদের প্রচার আর অর্থের দরকার। ভক্তি আর আধ্যাত্মিকতা আবেগবোধ বিন্দু মাত্র থাকে না।

কখনও তা রুচি শীলতা থাকে। প্রাচীন অনেক ঐতিহ্য ফুটে ওঠে। আলোর সৌন্দর্য প্যান্ডেলের নতুনত্ব কারুকার্য অন্যান্য রূপে আকর্ষণীয় করে দর্শকদের টেনে আনার জন্য কোটি কোটি টাকার খরচ হলেও যেন সত্যি এক গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক মেলবন্ধন, ধর্মীয় উৎসবের সাথে শিল্প বানিজ্য কৃষ্টি বিনোদন জড়িয়ে । কত শত মানুষের জীবিকার সম্পর্ক।মৃৎশিল্প,প্যান্ডেল নির্মাণ কর্মী, আলোক শিল্পী,ঢাকী সহ নানা বাদ্যকর, ফুলমালী, নাপিত বামুন থেকে রন্ধন কর্মী সমাজের প্রতিবর্গে কত শ্রম দিবস সৃষ্টি হয়, এমন উৎসব বিরল। আবার বাজারে বস্ত্র থেকে অলংকার,নানান খাবারের দোকান রেস্টুরেন্ট, বিনোদন সামগ্রী, বিউটি পার্লার থেকে ট্যুরিস্ট ট্যুরিযম, নিত্য সামগ্রী ক্রয় ও গৃহ সাজানো উপকরণ,এর ব্যপ্তি তাই সর্বমুখী।

অনেক পারিবারিক পূজো প্রতিমা বিহীন ঘট বা কলসে দেবীকে চিন্ময়ী রূপেই পূজিত করা হলেও, কোন বারোয়ারী শারদীয় দূর্গা পূজো প্রতিমা বা মূর্তি বিহীন ঘট বা কলসে পূজিতা হোন দেখা দুর্লভ। দুর্লভপুরে রায়পাড়ার বারোয়ারী দেবী দূর্গার আরাধনা এ ভাবেই হয়ে আসছে দীর্ঘ দিন ধরে। এর ইতিহাস বড় করুন। এক আংশিক সত্য কাহিনী জানতে গল্পটি পড়ুন।

  


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract