ক্ষমা করো
ক্ষমা করো
টমাস ফুলার:বলতেন মানুষকে ভালোবাসা শেখা উচিত, কারণ তাহলে জীবনে ভালোবাসার অভাব হবে না। আসলে ইংরেজ ঐতিহাসিক ছিলেন একজন ধর্মযাজক এবং লেখক, যিনি তার লেখার মাধ্যমে চার্চ, ইতিহাস এবং বাস্তব জীবনের নীতি-নৈতিকতার উপর আলোকপাত করেছেন। তার দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি মূলত মানবতাবাদ, ধর্ম এবং ইতিহাসের গভীর পর্যালোচনার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল।
"সব সম্পর্কের নাম হয় না" এই উক্তিটি বোঝায় যে কিছু সম্পর্ক আছে যেগুলোর কোনো নির্দিষ্ট সংজ্ঞা বা নাম দেওয়া যায় না, যেমন বন্ধুত্ব, ভালোবাসা বা পরিবারের সম্পর্ক। এই সম্পর্কগুলো প্রায়শই গভীর এবং মানসিক বন্ধন দ্বারা তৈরি হয়, কিন্তু এদেরকে নির্দিষ্ট কোনো শ্রেণিতে ফেলা কঠিন। এদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো "লেবেলবিহীন সম্পর্ক" বা "situationship" হতে পারে, যেখানে কোনো স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি থাকে না, আবার কেউ হয়তো, কেবল মানসিক সংযোগের একটি সূক্ষ্ম বন্ধন।
আবার মজার বিষয় ফ্রয়েড ইডিপাস কমপ্লেক্স: তত্ত্বে বলে যে একটি ছেলে তার মায়ের প্রতি ভালোবাসার অনুভূতি এবং বাবার প্রতি ঈর্ষা অনুভব করে। একইভাবে, একটি মেয়ে তার বাবার প্রতি ভালোবাসা থাকে বেশি। মায়ের প্রতি ঈর্ষা অনুভব করে। আবার বোনের প্রতি ভাইয়ের, ভাইয়ের প্রতি দিদির ভালোবাসা বেশি থাকে। ফ্লয়েডের মতে, এই প্রাথমিক সম্পর্কগুলো প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে প্রেমের সম্পর্ককে প্রভাবিত করে।
কিন্তু আমার জীবনে এই সব সম্পর্কের কোন তত্ত্ব প্রভাব ফেলে নি। আমার ছোট বেলাটা আপনাদের থেকে আলাদা।বাবার কাজ না থাকলে সংসারে অভাবে পড়লে, মামারা আমাকে মামা বাড়িতে নিয়ে আসতো। মামার বাড়িতে মানুষ হওয়া মানেই যে আদর যত্নে মানুষ হওয়া যায় এটা কিন্তু সত্য কথা নয়। আমার কাছে সম্পর্ক তৈরি থেকে বেচে থাকার জন্য মানুষের লাড়াইটা বড়ো হয়ে উঠেছিল। মামা বাড়িতে ছোট একটা করখানা ছিলো। আমরা পরিবারের মতোই থাকতাম মালিক শ্রমিকরা। কালিয়া মামার মেশিনে হাত কেটে গেলো। যে মানুষটাকে মামীমা প্রতি বছর ভাই ফোটা দিতো, রাখী পড়াতো। তাকে হাসপাতালে কেউ দেখতে গেলো না। অন্যদিকে আমার থেকে ভাই পড়াশোনা ভালো হয়ছে দেখে, বাবা মা ওর ওপর খরচ করতো বেশি। আমি বুঝেছিলাম সব সম্পর্ক আসলে একটা লেনদেন হিসাব। সুক্ষ্ম ভাবে কিছু পাওয়ার হিসাব থাকে সম্পর্ক থেকে। যেমন বাবা মায়ের ছেলে মেয়েকে ভালো করে মানুষ করে নিজেদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে , কখনো কখনো নিজের অপূর্ণ স্বপ্ন পূরণ করতে। কার্ল মার্কস কথা যেনো ঠিক,সম্পর্ক আসলে একটাই উৎপাদনের সাথে জড়িত, তুমি উৎপাদন যোগ্য হলেই তুমি ভালোবাসা পাবে।
যাইহোক আমি ছোটবেলা থেকেই দেখলাম অর্থনৈতিক বৈষম্য ছবি। আমার পাড়াতুতো বন্ধু আপুরা বড়ো লোক। ও সব সময় বলতো ওকে সবাই ভালোবাসে। আসলে ওকে সবাই উপাহার দেয় কথায়, কথায়, । ওর জন্মদিন হতো সবাই নিমন্ত্রণ পেতো তাই ওর বন্ধু বেশি ছিলো। ওর বাবা মা মধ্যে কখনো ঝগড়া হতে দেখি নি। আমার মা বাবার ঝগড়া হতো তো একটাই কারণ, একটাই কথা ভাঙা রেকর্ড "চাল বাড়ন্ত মালিক কাছে টাকা চাও , নয়তো অন্য জায়গায় চাকরি যাও"
বাবা বলতেন " উনি ঠিক টাকা দিয়ে দেবে। একটা সময় তো উনি আমাদের বিপদে সব সময় পাশে ছিলো " তারপর কথায় কথায় কথা বড়তো দুই জনেই খাওয়া দাওয়া বন্ধ করতো। হয়তো দুইজনেই ভাবতো নাখেলে সন্তানদের মুখে দুই দিন বেশি ভাত তুলে দিতে পারবে।
ছোট বেলায় আশু দাদু আমাকে খুব প্রভাবিত করেছিলো। উনি পাচিলহীন একটা পৃথিবীর স্বপ্ন দেখাতেন। আমি ভাবতাম সত্যিই যদি আপু আর আমার বাড়িটা এক হলে ভালো হতো।আমি ভাই তো ওদের ফেলে দেওয়া খাবার খেয়ে ভালো ভাবে বেঁচে থাকতাম।
রাশিয়ার সামজ তন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবার পর, ভারতবর্ষের স্বাধীনতা গনতন্র প্রতিষ্ঠা কিন্তু একটা সামাজিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মালিক আর শ্রমিক স্বার্থ এক সাথে রক্ষা করা চেষ্টা করছে এই রাষ্ট্র।কিন্তু পরে চরিত্র বদলালো ।পরে বোঝা গেলো বামপন্থী নামে দাবি করা দল গুলোও মালিকের স্বার্থ দেখে, তাইতো সিঙ্গুর বলুন নিউটন বলূন কৃষক জমি দখল করতে পিছপা হয়নি ওরা।তাই দৃঢ় বিশ্বাস তৈরি হয়েছিল, আমার ভোট লড়াই করতে হলেতো কম্পানি মালিকদের থেকে টাকা নিতে হবে। তাই ভোটে জিতলে শ্রমিকদের দেখবো কি করে। তাই বিপ্লব মধ্যে দিয়ে দিন বদলের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলাম।যাইহোক আমার করা দলটা শেষ হয়ে গেলো। আমার নামে অনেক মিথ্যা কেস দেওয়া হলে। সবাই বললো " সেলেন্ডার করে লাভ নেই ওরা তোকে মরে ফেলবে। "
তাই পালনো পরিকল্পনা নিলাম। নতুন পরিচয় নিয়ে নতুন পাসপোর্ট করে, একটা ভিসা জোগাড় করে বিদেশে পালাবো ঠিক করলাম।তার আগে আগে কিছু দিন আত্মগোপন করতে চাইলাম সুন্দর বনে সজনে খালীতে। আগে আপুদের বাড়িতে কাজ করতো রাঙা দিদি। আপুদের বাড়িতে কোন অনুষ্ঠান হলে। ও লুকিয়ে লুকিয়ে আমাকে খাবার দিতো। বলতো ওর আমার মতো একটা ভাই ছিলো। যে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছে সাপে কেটে ছিলো। অবাক দেশ এখানে পাঁচ মিনিট পিজ্জা ডেলিভারি হয়। আর ওর ভাইকে পাঁচ ঘন্টা ধরে এই হাসপাতালে থেকে ঐ হাসপাতালে ছুটে ও একটা ইনজেকশন না পেয়ে মৃত্যু হয়েছিল ওর ভাইএর।
রাঙাদিদি বাড়িতে ঝোলে ভাতে ভালোই দিন কাটছিলো। হঠাৎ একটু রাত হতে দিদি ছুটে এসে বললো চৌকির নিচে টিনের ট্যাঙ্কের পিছনে লুকিয়ে যেতে। পুলিশের বড়বাবু এলো, আমাকে কোথায় রেখেছি, খোঁজ করলো, আসবাস পত্র বাসন কাসন খেলার আওয়াজ সাথে সাথে , দিদির একটা কথা কানে এলো " বড় বাবু ঘটি বাটিতে দেখে কি হবে অতো বড় মানুষটাকে কি চালে হাড়িতে লুকিয়ে রেখেছি। ঘরে যখন এসছিস , তুই এতোদিন ধরে যা চাইছিস। পেয়ে যাবি।গরীব মানুষ আমি, তোরা আমার মশলা পাতি চাল ডাল গুলো নষ্ট করিস না। "
বড় বাবু বললো " শালী আমি যা চাই তাই দিবি। তো সকালে তোর যা লাগবে সব দেবো। নাগরের কিছু হবে না। তোকে রানী করে রাখবো, বল রাজী, শালী আমাকে খুশি করতে। "
চৌকি নড়াচড়া বন্ধ হতেই বড় বাবু ফোন করলো " মধু বাবু , মাগীটা আজ রাজী হয়েছে, ঐ ওর নতুন ৎনাগরকে বাঁচাতে, আপনি এসো মজা করো, ওকে কথা দিয়েছি ওই মাষ্টার কিছু হবে না। সব দায়িত্ব আমার লোকটাকে তোমার হোটেলে বা বাগন বাড়ি রাখতে হবে। বাত বাকিটা সামলে নেবো"
তারপর অনেকবার দরজা খুললো বন্ধ হলো চৌকিটা নড়াচড়া করলো, অস্পষ্ট গোঙানি আওয়াজ কানে এলো। বড় সেজে ছোটো সবাই সামলাতে সামলাতে দিনের আলো ফুটলো।নৌকার ঘটে দূরে থাক, ঘর থেকে বেড়াতে পারলো না। তবে ঘর থেকে বেড়াতে গিয়ে ওকে প্রণাম করলাম। ও বাধা দিতো , কিন্তু ওর নিজের শরীরটুকু ধাকতে সময় পেলো না। তারপর কতো ভাই ফোটা গেলো, রাখী গেলো। একটা নতুন কাপড় কিনে রাঙাদিদিকে উপহার দেওয়া হলো না। অথচ ও সেই দিন আমার জন্য কাপড় খুলতে বাধ্য হয়েছিলো। ক্ষমা করো দিদি আমাকে। ,,
