STORYMIRROR

Manab Mondal

Abstract Drama Romance

3  

Manab Mondal

Abstract Drama Romance

বাউন্ডুলে

বাউন্ডুলে

6 mins
46

পেটের দায়ে বিদেশে এসে বুঝতে পারলাম। পরিবারের মতো কিছু নেই। আমাদের জীবনের গভীরতম ও সবচেয়ে ভালো সম্পর্কের ভিত্তি হলো পরিবার । সংসার সেই পরিবারের ভিত।  যেখান থেকে আমরা যে নিঃশর্ত ভালোবাসা পাই যা সত্যিই অনন্য ও অসাধারণ। সাময়িকভাবে অনেকেই অনেক ভালোবাসা দিতে পারে কিন্তু সংসার অর্থাৎ পরিবারের ভালোবাসাটা মজবুত। জীবনের প্রধান ঘটনা ও ছুটির দিনগুলোতে আপনাকে স্বাভাবিকের চেয়ে আপনার পরিবারের প্রশংসা করতে পারে করতে পারে, তবে আপনার প্রিয়জনদের সম্পর্কে আনন্দ করার জন্য আপনার বিশেষ উপলক্ষের প্রয়োজন নেই। আপনি এগুলো ভাইবোনের সাথে ভাগ করে নেওয়া বন্ধনের মূল্যায়ন করছেন, পিতামাতার সাথে অতীত নিয়ে হাসছেন বা দাদা-দাদির সাথে কাটানো সময়কে লালন করছেন।
সংসার আমাদের জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়কে স্পর্শ করে। সংসার মানে শুধু স্বামী-স্ত্রী নয়—এটি ভালোবাসা, দায়িত্ব, ত্যাগ ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার এক জটিল কিন্তু সুন্দর বন্ধন। জীবনের প্রতিদিনের ছোট ছোট বিষয়, হাসি-কান্না, ক্লান্তি ও শান্তির মিশ্রণই গড়ে তোলে একটি পূর্ণাঙ্গ সংসার। যদিও আমার নিজের সংসার করা হয়নি। আমি হয়তো বাউন্ডুলে।
সংসার মানে একে অপরের প্রতি বোঝাপড়া, দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়া এবং পারস্পরিক ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাবোধ। এটি একটি যৌথ যাত্রা যেখানে স্বামী-স্ত্রীকে একসাথে কাজ করতে হয়, একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হয় এবং ছোট ছোট বিষয়গুলোতে মানিয়ে নিতে হয়। সুখের জন্য হিংসা পরিহার করা এবং একসাথে কাজ করার মানসিকতা থাকা জরুরি।
যেটা নীলাঞ্জনা সাথে তৈরি হয়েছিল ভালোই প্রথম প্রথম। আমাদের বিয়েটা ভালোবাসার। ও এককাপ চা বানতে পারতো না। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই বাড়ির কর্ত্রী হয়ে উঠলো যে মেয়েটাকে মা উরনচন্ডী বলে ছিলো। এবং বিয়ে করতে না করেছিলো। সেই মেয়েটি সংসার কেন আত্মীয় স্বজনদের প্রিয় পাত্র হয়ে উঠলো। মা নিজের সাম্রাজ্য থেকে কর্তৃত্ব হারাচ্ছে দেখে অশান্তি শুরু করে দিলো। সেই সময় আমার জীবনে কঠিন মুহুর্ত। ও চেয়েছিলো একটা ঘর ভাড়া নিয়ে একা থাকতে কিন্তু আমি সাহস পেলাম না। কারণ আমি ওকে কষ্ট দিতে চাই নি। ওকে একটু মানিয়ে নিতে অনুরোধ করলাম।
ও মানিয়ে নিলো। একটা সময়ের পর সংসারটা হয়ে যায় শুধুই দায়বদ্ধতা।  সংসার সামলানো, আসলে একটাদায়িত্ব পালন করা। সবার মন রাখার চেষ্টা করে , আমরা দুইজনের  সংসার করাটা ভালো ভাবেই চলছিলো।

কিন্তু ওর কাছে হঠাৎ মনে হলো ,সবকিছু চলছে শুধুমাত্র অভ্যাসে। অভ্যাসের বাহিরে কিছু নয়; বা একটা দায়বদ্ধতা। ও একটা চাকরি করছিলো। ওর টাকা দিয়ে ও ওর বাড়ি সংসারটা চালতো। মা বাবার আপত্তি ছিলো না। আমার চাকরিটা ছিলো নরবরে। কিন্তু লেখা লেখি, জীবন বীমা বেচে সন্মান জনক টাকা রোজগার করে নিতাম। তবে আমার বাড়ির অবস্থা ভালো বলে। আমি ওদের সংসারের অসুবিধা গুলো মেটাতাম। কেউ প্রতিবাদ করতো না। কিন্তু ও আমাকে জোর করতো। আমি আমার ভবিষ্যৎ কথা ভেবে শেয়ার বাজারে টাকা লাগাতাম। ও ভবিষ্যতে নয় বর্তমানে বাঁচাতে। ও কিছু টাকা আমাদের বাড়িতে দিতে জোর করলো। ও জোর দিতে লাগলো ফাটকা আয় বন্ধ করে স্থায়ী চাকরি করতে।

জানেন একে অপরের প্রতি কতটুকু ভালোবাসা আছে সেটা জানার কিংবা বুঝার দরকার পড়ে নি আমার কখনো। সবকিছু সামলাতে সামলাতে আমরা ভুলেই গেছিলাম এই নিত্যদিনকার অভ্যাসের বাহিরে আমাদের নিজেদেরও একটু সময় দরকার। আমি ওর স্বপ্ন পূরণ জন্য মুম্বাই চলে গেলাম।

আমাদের চতুর্থ বিয়ে বার্ষিকী  ছুটে এলাম মুম্বাই থেকে। রাতে প্রবল উৎসাহ নিয়ে ওকে আদর করতে যাবো। ও বললো "বিয়ে করছো কি আমাকে রক্ষিতা বানিয়ে রাখতে" আকাশ ভেঙে পরলো মাথায়।

একসাথে হাজারটা রাত কাটানোর পরও অনেক কিছুই জানার বাকি থেকে গেছে হয়তো আমার। এতো বছর পরও অনেক কথাই না বলা রয়ে গেছে হয়তো, বোঝাতে পারি নি মানুষটাকে আমি কতটা ভালোবাসি। অথচ হাতের উপর হাত রেখে একসাথে পার করে দিয়েছে জীবনের অনেকগুলো বসন্ত কাটিয়েছি স্বপ্ন দেখেছি কত।
কিন্তু ওর ছোট কথাটা আমার কাছে বড় অচেনা হয়ে গেলো নীলাঞ্জনা।এতো বছর পরও কি দুজনের মাঝে ভালোবাসার অভাববোধ হয়?শুধুমাত্র রোজ ছুঁয়ে দিলেই ভালোবাসার গভীরতা অনুভব করা যায় না। কখনো  তো পাশের  কাছে জানতে চাই আমি- আমাদের মাঝে কি আদেও ভালোবাসা আছে, নাকি সবটাই অভ্যাস? কিন্তু ওর কথাটি অনেক প্রশ্ন জন্ম দিলো। কিন্তু নীরব হয়ে গেলাম। নীরবতা দূরত্ব তৈরি করলো।

ভালোবাসার তীব্র অভাবে হাহাকার করতে থাকে আমাদের সম্পর্ক। ছোট্ট এই জীবনে ভালোবাসার অভাব মানুষকে ভীষণ করে একা করে দেয়। সেটা যেকোন বয়সের যেকোন মানুষকেই। কিন্তু ও একা ছিলো না ওর ফোনে রোজ ওর অফিসে দিদিদের সাথে  কথা হতো, শুনতে পেতাম ওরা বলতো "তোর বাবা পড়াশোনা করানোর টাকা ছিলো না তাই তুই ওর টাকা পয়সায় পড়াশোনা করেছিস। কিন্তু ও তোকে ভালোবাসতো বলেই তোর জন্য তখন সব কিছু করেছে। তোর মতো টেলেন্টেট মেয়ে ও বিয়ে করা যোগ্যতা আছে নাকি??কম বয়সে বিয়ে হয়েছে তোদের। তুই নিজের যোগ্য ছিলিস বলে পড়াশোনা করেছিস। অন্য মেয়ে হলে ছানা পোনা নিয়ে আটক যেতো। এখনও সময় আছে ডির্ভোস চা। ওর থেকে খরপোশ নিবি না তাহলে এই দশ বছর যা ও করেছে সব শোধ। আর ওতো এমনই এমনি করেনি, হি সিল্প উইথ ইউ। তাই বেটার ফিউচার জন্য ওকে ছেড়ে দে। "
আমি নীরব শ্রোতা হয়ে থাকালাম, কারণ কিছু দিন আগে আমি আমার লেখায় লিখেছিলাম। আধুনিক দর্শনে বিবাহিত জীবন একটি সামাজিক চুক্তি । এই দর্শন অনুযায়ী, বিবাহ শুধুমাত্র বংশ রক্ষা বা সামাজিক সংহতির জন্যই নয়, বরং এটি ব্যক্তিগত চাহিদা, যেমন—ভালোবাসা, স্নেহ, এবং মানসিক ও আর্থিক নির্ভরতা পূরণের একটি মাধ্যম। আধুনিক বিবাহে, একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা, বোঝাপড়া এবং অংশীদারিত্বের গুরুত্ব অনেক বেশি। তবে  আজকাল একটি সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে, প্রতিটি অংশীদারকে নিজস্ব লক্ষ্য পূরণে  , অন্যের থেকে সহযোগিতা এবং উৎসাহ পেতেই হবে নয়তো সম্পর্ক ভাঙন হবেই।
ও তাই বোধহয় সব কথা গুলো ও বোধাহয় আমাকে ইচ্ছা করেই শুনিয়েছিলো।  অভিমান না হমিক ছিলো জানি না। কিন্তু আমি নিরুত্তাপ ছিলাম ওর সব ব্যবহারে। আমি কোন চেষ্টা করলাম না ওকে আটকানোর। কারণ আমাকে অনেক দিন আগে লোকজন ওর মাইনে বেড়েছে খবরটা দিয়েছিলো। বাবা আমাকে একটা ছোট হাতি কিনে দিয়েছিলো ওটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিল। তখন রাহুল দা কাছে কিছু টাকা ধার চেয়েছিলাম। তখন উনিই বলেছিলেন। এই সামন্য টাকা তো তুমি নীলাঞ্জনা থেকেই নিতে পারো। বৌ কাছে টাকা চাইতে লজ্জা কিসের। ও হয়তো হঠাৎ প্রোরশন পেতেই  প্রদীপের সাথে সম্পর্ক জরিয়ে গেছিলো। তারপর সেইদিনটা হাজির হলো যেখানে ও দাবি করলো আমাকে ঠিক করতে ও কিছু দিনের জন্য একা থাকতে চায়। পঞ্চম বিবাহ বার্ষিক দিন ও বাড়ি ফিরলো। ভালো কাটলো দিন রাত টা । ভোর অফিস বেরিয়ে গেলে রেখে গেলো আমাকে লেখা ওর শেষ চিঠিটা। মজার ব্যাপার ঢিঠীটা সেই দিন পড়ার সুযোগ পাই নি। মন্ডল স্যার ইমেইল এসেছিলো, রাতের বেলায় সকালে দেখলাম দুপুরে ফ্লাইট। মুম্বই যেতে হবে। অফসরে চাকরি। চিঠি পড়ার সময় পেলাম তখন যখন ও ডিভোর্স ফাইল নোটিশ পাঠালো। আদালতে যেতে হয়নি আমাদের অনেক অভিযোগ ছিলো আমাদের বিরুদ্ধে কিন্তু ও চেয়েছিলো শুধু মুক্তি। আমাকে শাস্তি দিতে চাই নি ও। হয়তো মনের গোপন কোনে তখন আমার জন্য ওর ভালো বাসা ছিলো।এই ভালোবাসা এবং নির্ভরতায় বাঁচুক আমাদের প্রতিটি সম্পর্ক ,আমাদের প্রতিটি সংসার। কারণ সবার চোখে আমি বাউন্ডুলে হলেও আমি বেঁচে আছি আমাদের স্মৃতির সংসারে।
বিয়ে আর করলাম না কেন?? ঐতিহ্যবাহী ‘বিবাহ’ প্রথার যে যে উদ্দেশ্যগুলো ছিল, তা বিজ্ঞান-প্রযুক্তির কল্যাণে এবং পুঁজিবাদের বিকাশের দরুন বিবাহ ছাড়াই পূরণের সুযোগ তৈরি হয়েছে। সুতরাং প্র্যাক্টিক্যালি যৌন, আর্থিক, প্রজন্মগত, স্বাস্থ্যগত— কোনো কারণেই আধুনিক সভ্যতার ‘বিয়ে’র দরকার নেই। তাহলে  আর কেন বিয়ে করে একটা অভ্যাসের দাস হওয়া???
আপনি বলবেন সেই সমাজকে দোষারোপ করছি কেন? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে লক্ষ্য করুন সমাজ কিভাবে পরবর্তী হলো। অর্থনৈতিক লম্ফঝম্পের উদ্দেশ্যে নারীদের ব্যাপকভাবে জবমার্কেটে আনা ও রাখা প্রয়োজন। ৬০-এর দশকে শুরু হল নারীবাদের ২য় ওয়েভ, একই সময় দেয়া হল ‘জেন্ডার-রোল থিওরি’। বাধা মনে হল পরিবার ও সন্তান, ৬০ এর দশকেই এলো ‘পিল’। মিডিয়া তার কাজ শুরু করল। সন্তান ধারণ ও লালন আর রইল না ‘বিবাহের উদ্দেশ্য’। জনপ্রিয় হতে লাগল ‘লিভ-টুগেদার’ কালচার।

পশ্চিমা বিবাহ-দর্শন আরও স্পষ্ট হবে যদি  ডিভোর্স-দর্শনটা নিয়ে আলোচনা করা যায়। ১৯৬৯ সালে ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে প্রথম পাশ হয় no-fault divorce আইন। যদি উভয়ের যে কারও বিবাহ কন্টিনিউ করতে ইচ্ছে না করে, সে নো-ফল্ট ডিভোর্স দিতে পারে, যেখানে সঙ্গী/সঙ্গিনীর কোনো দোষ উল্লেখের প্রয়োজন নেই। ১৯৭৫ সালে অস্ট্রেলিয়াও এই আইনের মুল বক্তব্য হলো তাদের বিবাহ-দর্শনে কোনো দায়বদ্ধতা, কোনো স্বার্থত্যাগ, সন্তানের দিকে চেয়ে কোনো কম্প্রোমাইজের কোনো বিষয় নেই। পাশ্চাত্য ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী দর্শনের অনিবার্য ফল এসব আইন এলো। আর হৃদয় স্পন্দন, ঢুড়ি  ঝকার কানে আসা বন্ধ হলো আমাদের এখন এটিএম মেশিনের শব্দটা সবচেয়ে প্রিয় আমাদের।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract