কিডন্যাপ
কিডন্যাপ


তখন সকাল সাতটা। রোববারে মিস্টার সিনহা একটু বেলা করে ঘুম থেকে ওঠেন। কানের কাছে মোবাইলটা ক্রিং ক্রিং করে বেজে ওনার ঘুমটা ভাঙিয়ে দিল। বিরক্ত হয়ে ফোনটা তুলে দেখলেন একটা অজানা নাম্বার। কানে ফোনটা লাগিয়ে হ্যালো বললেন। ওদিক থেকে একটা অপরিচিত আওয়াজ ভেসে এলো। "আপনার মেয়ে আমাদের কাছে আছে,মেয়েকে যদি জীবন্ত দেখতে চান তাহলে 40 লাখ টাকা আমাদের কাছে জমা করুন আজ সন্ধ্যার মধ্যে। একঘন্টা বাদে আমরা আবার ফোন করবো, কোথায় টাকাটা দিতে হবে সেটা বলে দেওয়া হবে।" নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না মিস্টার সিনহা, ফোনটা রেখেই, তাড়াতাড়ি মেয়েকে একটা ফোন লাগালেন। ওনার মেয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য অস্ট্রেলিয়া গেছে।
মেয়ের ফোন বন্ধ। উনি তাড়াতাড়ি মিসেস সিনহা কে ডেকে তুললেন। আর সমস্ত কথা খুলে বললেন। দুজনেই ভীষণ ভয় পেয়ে গেলেন। পুলিশকে জানানো বুদ্ধিমানের কাজ হবে না,তাই নিজেদের প্রিয় বন্ধু সমরেশ কে ডেকে পাঠালেন?
সমরেশ সমস্ত শুনে বললো, আমার মনে হয় তোমার টাকাটা জমা করে দেওয়া উচিত। ইতিমধ্যে একটা ছবি ওনাদের হোয়াটসঅ্যাপে আসলো। ওনাদের মেয়ের চোখ বাঁধা, মুখ বাঁধা।
বিকেল চারটে নাগাদ একটা ফোন এলো, টাকা-পয়সা কোথায় পৌঁছাতে হবে সেটা বলে দেওয়া হল। রবিবার ব্যাংক বন্ধ। তাই এটিএম থেকে ঘুরে ঘুরে টাকাগুলো তুলে আনা হলো অনেক কষ্টে।
যথাসময়ে মিস্টার সিনহা জায়গামতো টাকাটা পৌঁছে দিলেন। ওনার কাছে মেসেজ এলো মেয়ে কাল সকালে নিজের বাড়ি পৌঁছে যাবে।
সারা রাত প্রায় না ঘুমিয়ে কাটালেন সিনহা দম্পতি। পরের দিন সকালে আটটা নাগাদ মেয়ের ফোন এলো। "হ্যালো বাবা, জানো তো, আমরা খুব সুন্দর একটা জায়গা থেকে বেড়িয়ে এলাম।"
"কোথায় গেছিলিস তোরা?"
"আমরা এক জায়গায় ট্রাকিং করতে গিয়েছিলাম, সেখানে ফোনে কভারেজ থাকেনা।আগে জানতাম না। আমরা খুব মজা করলাম, ক্যামফায়ার করলাম, গান গাইলাম, কানামাছি খেললাম।"
মিস্টার সিনহা অবাক হয়ে গেলেন।
"তোকে কেউ ধরে নিয়ে যায়নি?"
"না তো, কেন?"
সব কথা নিজের মেয়েকে খুলে বললেন। ওনারা বুঝতে পেরেছেন একটা কিছু বিশাল ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। মিস্টার সিনহা পুলিশকে সমস্ত কথা জানালেন। পুলিশ সেই নম্বরটা নিয়ে অনেক চেষ্টা করল খোঁজার, কে ফোন করেছে। কিন্তু কোনোভাবেই কোনো হদিস পাওয়া গেল না। ওনারা বললেন মিস্টার সিনহা কে যে এই ধরনের ভার্চুয়াল কিডন্যাপিং অনেক হচ্ছে। লোকে জানে না তাই খুব সহজেই এর শিকার হয়।