Sayandipa সায়নদীপা

Comedy Drama

3  

Sayandipa সায়নদীপা

Comedy Drama

খটকাই আর পটকাই

খটকাই আর পটকাই

9 mins
2.3K


আম, জাম, কাঁঠাল, বট, অশ্বত্থ, পলাশ, শিমুল সহ আরও কত রকমের ছোটবড় গাছগাছালি দিয়ে ঘেরা ছবির মত শান্ত গ্রাম দনাই। গ্রামের পাশ দিয়েই কুলকুল করে বয়ে চলেছে দনাই খাল, এই খালের জলেই গ্রামের মানুষের সারাবছরের চাষবাস চলে। দনাই খাল পেরোলেই ওপাশে কুশপুর গ্রাম। কুশপুর গ্রামেই রয়েছে এই চত্বরের একমাত্র ইস্কুল, দুই গ্রামের ছেলেমেয়েরাই পড়ে তাতে। কিন্তু নোনতা, বল্টু আর ফটকে, দনাইয়ের তিন বিখ্যাত দুষ্টুর নাম ইস্কুলের খাতাতেই শুধু আছে, নামের পাশে দাগ পড়ে না কোনদিন। পড়াশুনোর নাম শুনলেই ওদের কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। রোজ খেয়েদেয়ে বইখাতা নিয়ে বাড়ির থেকে বের হয় ঠিকই তবে ইস্কুল অবধি আর না গিয়ে চুপিচুপি দনাইয়ের পাড় ধরে চলে আসে খেলার মাঠে। সেখানে সারা দুপুর খেলা করে ছুটির সময় হলেই ভালো মানুষের মত আবার পৌঁছে যায় বাড়ি।

আজ দনাইয়ের পাড়ে পৌঁছেই বল্টু বললো, “তোদের কিছু মনে হচ্ছেনা? আজকে আশেপাশটা কেমন অন্যরকম লাগছে যেন।”

“অন্যরকম আবার কি! আজকে আসলে অতিরিক্ত রোদ উঠেছে তাই এরকম মনে হচ্ছে। ইশ এমন দিনে বেশ লবণ লঙ্কা মাখিয়ে পেয়ারা খেতে পারলে জমে যেত দিনটা।” ব্যাজার মুখে বললো ফটকে।

“ঢ্যান টা না…” মুখে অদ্ভুত শব্দ করে তিনটে পেয়ারা ব্যাগ থেকে বের করলো নোনতা। সেই দেখে আনন্দে লাফিয়ে উঠলো বল্টু আর ফটকে, “চল তাড়াতাড়ি মাঠে গিয়ে কোনো একটা গাছের ছায়ায় বসে আরাম করে খাবো।”

এই বলে মনের আনন্দে তিন বন্ধু খেলার মাঠের কাছাকাছি আসতেই একটা ধাক্কা খেলো। বুড়ো বট গাছটার তলায় এ কে বসে আছে! খালি গায়ে লাল রঙের কৌপিন পরা, কপালে লাল সিঁদুরের টিপ, একমাথা জট পড়া চুল নিয়ে যে লোকটা বসে আছে তাকে দেখেই ভয়ে ঢোক গিলল গ্রামের তিন বিখ্যাত বিচ্ছু। বল্টু ওদের মধ্যে একটু ভীতু ধরণের, সে বন্ধুদের ফিসফিস করে বললো, “এখান থেকে পালাই চল, লোকটাকে ঠিক সুবিধের লাগছে না।”

“পালাবো কেন! একটু দেখিই না, আমরা তো আমাদের খেলবো শুধু।” এই বলে নোনতা একটু এগোতেই আচমকা চোখ খুলল লোকটা। চমকে উঠলো নোনতা, লোকটার চোখ দুটো জবা ফুলের মত লাল।

“কে তোরা? কি চাই এখানে?” বজ্রগম্ভীর কণ্ঠ ধেয়ে এলো ওদের দিকে।

“আমরা এখানে রোজ খেলি, আজও খেলতে এসেছি।” বললো ফটকে।

“রোজ খেলিস! কিন্তু আজ থেকে আর খেলবি না। এখন এটা আমার জায়গা।”

“বললেই হলো? এটা তো আমাদের গ্রামের জায়গা, আমরা গ্রামের ছোটোরা এখানে খেলি রোজ। তুমি কোথা থেকে এলে?” সাহস করে বললো নোনতা।

“কি এতোটুকু ছেলের এতো বড় সাহস! জানিস আমি কে? আমি হলাম বিখ্যাত তান্ত্রিক জটাধর। কত ভুত আমার কাছে বন্দি আছে তা জানিস?”

“ভুতকে কি করে বন্দি করবে গো, তারা তো হওয়ার মত। হিঃ হিঃ..” হেসে উঠলো নোনতা।

“কি তুই আমাকে অবিশ্বাস করছিস? দেখবি আমার ক্ষমতা?” এই বলে জটাধর হাতে গুঁড়ো গুঁড়ো কি একটা যেন নিয়ে সজোরে ছুঁড়ে দিল নোনতার দিকে।

“আহ… আহ… বাঁচাও গো বাঁচাও..” চিৎকার করে উঠলো নোনতা, তার হাতটা যেন জ্বলে যাচ্ছে।

“হাঃ হাঃ হাঃ…” অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল জটাধর, “পালা বলছি এখান থেকে।” প্রাণপণে ছুটলো তিনবন্ধু।

সামনে বই খুলে নিয়ে বসে আছে নোনতা, মনটা তার ভারী খারাপ। কতদিন হয়ে গেল ভালো করে খেলা হয়নি। সেদিন ওই তান্ত্রিকের হাত থেকে অনেক কষ্টে বেঁচে পালিয়েছিল তারা। এরপর মায়ের মুখে শুনেছে গ্রামের বড়রা নাকি প্রতিবাদ জানাতে গিয়েছিল কিন্তু ওই দুষ্ট তান্ত্রিক তাদেরকেও নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছে। এসব কথাই যখন এক মনে বসে ভাবছিল নোনতা, তখনই ঘরের জানালায় কে যেন ঠকঠক করে শব্দ করলো দু’বার। কিন্তু সেদিকে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেলোনা নোনতা। অবাক হয়ে সে শুধোলো, “কে?”

“ভেতরে আসবো?”

“কে তুমি? জানলায় কেন?”

“ভেতরে এসে সব বলছি।”

সেই অদৃশ্য কন্ঠস্বর থেমে যেতেই নোনতার মনে হল এক দমকা ঠান্ডা বাতাস যেন পাক খেতে খেতে জানলা দিয়ে ঢুকে পড়ল তার ঘরে। তারপর ক্ষণিকের মধ্যেই সে দেখলো তার সামনে বসে আছে একটা কালো সিরিঙ্গে মতন জিনিস, মানুষের মত অবয়ব কিন্তু ঠিক যেন মানুষ নয়। বেশ ভয় পেয়ে গেল নোনতা। কাঁপা কাঁপা গলায় সে জিজ্ঞেস করলো, “ক্ক… কে তুমি?”

“ভয় পেয়ো না বন্ধু। আমার নাম খটকাই, আমি হলাম একটি ছোটো ভুত।”

“ভু… ভুত…!” আচমকাই চিৎকার করে উঠল নোনতা।

“আহা তুমি ভয় পাচ্ছ কেন? আমি কি একটুও ভয়ঙ্কর?” রেগে গেলে ভুতটা।

একটা ঢোঁক গিলল নোনতা। নাহ, এই ছোট্ট জিনিসটা নামে ভুত হলেও ভয়ঙ্কর তো মোটেই নয়।

“ত… তুমি আমার কাছে কি মনে করে?”

“তোমরা আর দুপুরে মাঠে খেলতে যাও না তাই ভাবলাম জিজ্ঞেস করে আসি কি ব্যাপার।”

“তুমি কি করলে জানলে আমরা দুপুরে খেলতে যাই?”

“বাহ্ রে আমি জানবো না! আমিও যে তোমাদের সঙ্গে খেলতাম। আমারও না ইস্কুল যেতে একদম ভালো লাগে না।”

“তোমাদেরও ইস্কুল আছে!”

“নেই আবার! খুব আছে। কিন্তু আমার যেতে ভালো লাগে না বলে আমি পালিয়ে এসে তোমাদের সঙ্গে খেলতাম। তোমরা টেরই পাওনি।”

“মাঝে মাঝে মনে হত বটে গুটি গুলো যেন আপনা থেকেই সরে যাচ্ছে কিংবা বলটা যেন নিজ থেকেই গড়াচ্ছে কিন্তু সেসবে পাত্তা দিইনি তখন। তার মানে ওটা তুমি ছিলে?”

“হ্যাঁ গো। কিন্তু এবার বল যে তোমরা আর খেলতে যাচ্ছ না কেন!”

“তুমি জানো না মাঠটা এখন ওই জটাধর তান্ত্রিক দখল করে নিয়েছে, আমাদের আর খেলতে দেয়না।”

“জটাধর তান্ত্রিক! ওহ সেই জটাধারী লোকটা?”

“হুমম।”

“ধুরর ওই লোকটাকে অতো ভয় পাওয়ার কি আছে? আমি তো ওকে এক্ষুণি শায়েস্তা করে দেব।”

“সত্যি বলছো? কিন্তু ও যে বললো ও ভুতেদের বন্দি করতে জানে।”

“আরে ধুরর ওসব মিছে কথা। আমি ওকে এমন শায়েস্তা করবো না…”

“তুমি তো পুঁচকে একটা ভুত। তুমি কি পারবে সত্যিই?”

“বিশ্বাস হচ্ছে না? যাবে নাকি আমার সঙ্গে?”

“এখন গেলে তো মা পিটুনি দেবে।”

“তাহলে আজ রাতে সবাই ঘুমিয়ে গেলে?”

“উঁহু আজ না কাল, বল্টু আর ফটকেকে না জানালে ওরা আবার ভারী রাগ করবে আমার ওপর।”

“একদিনের অপেক্ষা! আচ্ছা তাই সই। এখন আমি চললাম তবে।”

বাইরে একনাগাড়ে ঝিঁঝিঁ ডেকে চলেছে। মা বাবা ঘুমিয়েছে খানিক আগেই কিন্তু নোনতার চোখে ঘুম নেই। কখন আসবে খটকাই! আজ রাতেই তো ওই তান্ত্রিককে শায়েস্তা করার কথা হয়েছিল। সত্যিই আসবে তো সে নাকি এমনি এমনি গুল দিয়ে গেল নোনতাকে! তাই যদি হয় তাহলে তো ভারি মুশকিল হবে; অনেক কষ্টে বল্টু আর ফটকেকে নোনতা বিশ্বাস করিয়েছে যে একটা কুচো ভুত এসে সত্যিই তাকে আশ্বাস দিয়ে গেছে, ওরা তো কিছুতেই মানতে চাইছিল না, ভাবছিল নোনতা বুঝি স্বপ্ন দেখছে। এবার খটকাই যদি না আসে তবে…

ঠক ঠক… জানলার গায়ে টোকা পড়তেই লাফিয়ে উঠলো নোনতা, ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল, “খটকাই?”

“হুঁ। জেগে আছো তো? বেরিয়ে এসো।”

অনেক কসরৎ করে জানালা ডিঙিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো নোনতা। তারপর সে আর খটকাই মিলে এক এক করে বল্টু আর ফটকেকেও ডেকে নিলো, ওরাও অপেক্ষায় ছিলো এতক্ষণ।

বাইরে শিশির পড়ছিল বলে গা’টা কেমন যেন শিরশির করছিল তাই নোনতার পরার্মশ মত গা গরম করতে দৌড়োতে শুরু করলো তিনজন, খটকাইও চললো ওদের সঙ্গে, তবে দৌড়ে নয়, উড়ে উড়ে। শেষমেশ যখন ওরা মাঠে পৌঁছালো তখন রীতিমত ঘাম দিচ্ছে শরীরে। দূর থেকে ওরা দেখতে পেল জটাধর আগুন জ্বেলে সেই আগুনকে ঘিরে অদ্ভুত ভঙ্গিতে নাচ করছে আর বিড়বিড় করে কিসব যেন বলে চলেছে মুখে। ভয়ার্ত গলায় বল্টু বললো, “ওরে ফিরে চল। আমার বড় ভয় করছে।”

“আহ বল্টে তোর এতো যখন ভয় কেন এলি কেন! আর এসেই যখন পড়েছিস চুপচাপ দাঁড়া। খটকাই তো আছে আমাদের সঙ্গে।” ধমকে উঠলো নোনতা। খটকাই এবার ইশারায় ওদের চুপ করে ওখানে দাঁড়াতে বলে হুশ করে উড়ে গেল জটাধরের সামনে। খটকাইয়ের ওড়ার চোটে জটাধরের আগুন গেল ফুস করে নিভে। রাগে চিৎকার করে উঠলো জটাধর, “এই কে রে আমার আগুন নেভালি?” এই বলে কি একটা নিয়ে সেই নিভে যাওয়া আগুনের ওপর ছুঁড়ে দিতেই আবার জ্বলে উঠলো সেটা। এবার খটকাই তার আসল রূপে গিয়ে দাঁড়ালো জটাধরের সামনে, “আমি নিভিয়েছি তোমার আগুন। এই মাঠ ছেড়ে চলে যাও নয়তো আবার নিভিয়ে দেব।”

“তবে রে সিরিঙ্গে ভুত আমাকে ভয় দেখাচ্ছিস! জানিস আমি কে?”

“আমার জেনে কাজ নেই বাপু। এই মাঠ হলো ছোটো ছেলেদের খেলার মাঠ আর তুমি এখানে তাদেরই খেলতে দিচ্ছ না! এ ভারী অন্যায় কাজ, তুমি মাঠ ছেড়ে চলে যাও নয়তো খুব খারাপ হবে কিন্তু।”

“তুই আমার কি খারাপ করবিটা শুনি এইটুকু পুঁচকে ভুত?”

“আমি ছোটো বলে অবহেলা কোরো না, আমি কিন্তু খুব রাগী।”

“রাগী! হাঃ হাঃ হাঃ… তা কেমন রাগ তোর দেখা দিকি।”

“আমাকে রাগীও না বলছি।”

“চোপ ভুতের বাচ্চা। আমার রাগ দেখবি? আমি কি করতে পারি দেখ তবে।

হাঃ হাঃ হাঃ…” এই বলে অট্টহাস্য করতে করতে ঝোলা থেকে একটা বোতল বের করল জটাধর, তারপর বোতলের তলায় থাকা গুঁড়ো গুঁড়ো জিনিসটা হাতে ঢেলে নিয়ে কিসব মন্ত্র বিড়বিড় করতে করতে সজোরে সেটা ছুঁড়ে দিলো খটকাইয়ের গায়ে। নোনতারা অবাক হয়ে দেখলো চিৎকার করে উঠল খটকাই, তারপর আচমকাই ছোট্ট এইটুকুনি হয়ে গিয়ে ঢুকে গেল সেই বোতলের ভেতর।

“এ কি রে নোনতা এ যে তোর ভুত বন্ধুকেও কুপোকাত করে দিল!”

“সেই তো দেখছি রে।”

ওরা ভয়ে ভয়ে দেখলো জোরে জোরে হাসতে হাসতে খটকাই সুদ্ধ বোতলটাকে ঝোলায় ভরে ফেললো জটাধর। তারপর হাসি থামিয়ে এগিয়ে এলো আগুনটার সামনে; আবার বোধহয় নাচতে শুরু করবে।

“ভালো কথা বলছি চল পালাই এখান থেকে, নয়তো একবার যদি ধরতে পারে তাহলে আর রক্ষে নেই।” ভয়ার্ত গলায় পরামর্শ দিলো বল্টু।

“ঠিক বলেছিস। চল পালাই।” এই বলে নোনতার হাতটা ধরে টান দিলো ফটকে। ওরা যেই ছুটে পালাতে যাবে ঠিক সেই মুহূর্তে আবার ফুস করে নিভে গেল জটাধরের আগুন। সে চিৎকার করে উঠলো, “কে রে?”

“কি ভেবেছিলে আমাকে এতো সহজে বোতলে বন্দি করে ফেলবে?”

চাঁদের আলোয় নোনতারা অবাক হয়ে দেখলো খটকাই আবার এসে দাঁড়িয়েছে জটাধরের সামনে, আনন্দে লাফিয়ে উঠতে ইচ্ছে করলো নোনতার কিন্তু অনেক কষ্টে সংবরণ করল নিজেকে। খটকাইয়ের এই আচমকা আবির্ভাবে যথেষ্ট অবাক হয়ে গেছে জটাধরও, সেই সঙ্গে ভয়ও পেয়েছে খানিক, “তুই! তুই বেরোলি কি করে?”

“তুমি কি ভেবেছিলে সত্যি সত্যিই আমাকে বন্দি করে ফেলেছো নাকি! হাঃ হাঃ… আমি তো বোতলে ঢুকে একটু মজা করছিলাম তোমার সাথে।”

“এ কি করে হয়!”

“সব হয়… তুমি ভন্ড তান্ত্রিক। তোমার লজ্জা করে না ছোটো বাচ্চাদের ভয় দেখিয়ে তাদের খেলতে না দিতে? গ্রামের মানুষকে অকারণে ভয় দেখিয়ে রাখতে?”

“এই ছোঁড়া চুপ কর, আগে বল তুই বেরোলি কি করে?”

“বললাম তো তুমি আমাকে বন্দীই করতে পারোনি। তোমার কোনো ক্ষমতা নেই। হাঃ হাঃ তুমি নিজেকে বড় তান্ত্রিক বলো আর এদিকে আমার মত একটা পুঁচকে ভুতকে পারলেনা বন্দি করতে!”

“না… না… এ হতে পারে না… দাঁড়া তোকে দেখাচ্ছি মজা।” এই বলে নিজের ঝোলা থেকে কি যেন বের করতে গেল জটাধর কিন্তু ভয়ে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ঝোলাটা গেল বেদী থেকে পড়ে আর সঙ্গে সঙ্গে খানখান শব্দ উঠলো বাতাসে। কিসের যেন আতঙ্কে চিৎকার করে উঠলো জটাধর, আর নোনতারা অবাক হয়ে দেখলো ঝোলা থেকে হুশ হুশ করে কেমন কালো কালো ধোঁয়া বেরোচ্ছে; তারপর সেই ধোঁয়াগুলো আস্তে আস্তে কুণ্ডলী পাকিয়ে পাকিয়ে একেকটা ভুতের আকার নিলো। তারা সমস্বরে চিৎকার করে উঠলো, “ধরো ধরো দুষ্ট তান্ত্রিককে ধরো… আমাদের বন্দি করে রেখেছিল দুষ্টটা… ধরো ওকে… ধরো… ধরো…”

আর্তনাদ করে উঠে ছুটতে শুরু করলো জটাধর, তার পেছনে পেছনে ছুটলো ভুতগুলো। খটকাই এবার হুশ করে চলে এলো নোনতাদের সামনে, “আর ভয় নেই তোমাদের, ওই দুষ্ট তান্ত্রিক আর ফিরবে না।”

“ওহ তোমায় কি বলে যে ধন্যবাদ জানাই বন্ধু।” এই বলে খটকাইয়ের দিকে নিজের হাতটা বাড়িয়ে দিলো নোনতা, কিন্তু একি খটকাইয়ের পেছনে ওটা কে দাঁড়িয়ে! আরেকটা খটকাই! সামনে দাঁড়ানো খটকাই নোনতার মুখটা দেখে সজোরে হেসে উঠলো, “অবাক হলে তো? আমি খটকাই নয় পটকাই। খটকাইয়ের যমজ ভাই।”

“যমজ ভাই!” অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল নোনতা।

“কেন যমজ কি শুধু মানুষেরই হতে পারে?”

“হেঁ হেঁ আমি আর পটকাই মিলে প্ল্যান করেছিলাম পুরোটা। আসলে দুষ্ট লোকেদের নিজেদের ওপর বিশ্বাস বড় কম। তাই তো আমাকে বোতলে বন্দি করার পর পটকাই যখন ওর সামনে গিয়ে বললো যে সে খটকাই তখন তান্ত্রিক কি সুন্দর বিশ্বাস করে নিলো।”

“আর তাই তো নিজেই ভয়ে নিজের ঝোলাটা ফেলে দিলো নিচে। আমাকে আর কিছু করতেই হলো না।”

“সত্যিই তোমাদের জবাব নেই বন্ধু, অনেক ধন্যবাদ তোমাদের।” মুগ্ধ স্বরে বললো নোনতা।

“উঁহু এভাবে হবে না। একটা কথা দিতে হবে তোমাদের তবেই তোমাদের ধন্যবাদ আমি স্বীকার করবো। খটকাই তোকেও কিন্তু কথা দিতে হবে।” বললো পটকাই।

“কি কথা?”

“কথা দাও যে আর তোমরা কোনোদিনও স্কুল পালাবে না। মন দিয়ে পড়াশুনো করবে তারপর বিকেলে যত ইচ্ছে খেলবে।” এই বলে নিজের হাতটা বাড়িয়ে দিলো পটকাই।

নোনতারা একে অন্যের মুখে চেয়ে তারপর মৃদু হেসে পটকাইয়ের হাতে হাত মেলালো। আর তখনই কোথাও থেকে যেন একটা ভোরের পাখি ডেকে উঠে স্বাগত জানাল এক নতুন সকালকে…

শেষ।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Comedy