কে বলে যাও যাও
কে বলে যাও যাও
হস্তিনাপুরে যেদিন পাণ্ডুর শ্রাদ্ধ হয়ে গেল, সেদিন ত্রিকালদর্শী ব্যাস জননী সত্যবতীকে সাবধান করে দিয়ে বললেন সুখের দিন অতিক্রান্ত হয়ে গেছে মা, যে সময় আসছে তােমার পক্ষে তা মােটেই ভাল নয়- "অতিক্রান্তসুখাঃ কালাঃ"। ব্যাস আরও বললেন-মা! | পৃথিবী তার যৌবন হারিয়ে ফেলেছে, সামনের সমস্ত দিনই পাপে আর কষ্টে ভরা—"শ্বঃ স্বঃ পাপিষ্ঠ-দিবসাঃ পৃথিবী গতযৌবনা।" মহাকালের এমন কাব্যিক ব্যঞ্জনা পৃথিবীর কটা সাহিত্য সৃষ্টি এভাবে ধরতে পেরেছে জানিনা । কি অনায়াসে মহাভারতের ক্রান্তদর্শী কবি বুঝিয়ে দিলেন সময়ের সাথে সাথে সবাইকে সরে যেতে হবে তবুও সে হবে " যাওয়া তো নয় যাওয়া" ।
আসলে প্রত্যেক মানুষের জীবনে যতদিন যৌবনকাল, যতদিন কর্মক্ষমতা, এই পৃথিবীও তার কাছে ততদিন যুবতী। কিন্তু মানুষের প্রৌঢ়ত্বের সঙ্গে পৃথিবীও প্রৌঢ়া হয়ে যায়, মানুষের বৃদ্ধত্বে পৃথিবীও বৃদ্ধা। অর্থাৎ ততদিনে সেই পৃথিবী আমার সন্তান বা সন্তানকল্পদের কাছে যুবতী রূপে ধরা দেয়। ওঁরা বলেন, জেনারেশন গ্যাপ' আমরা বলিতুমি যত বুড়াে হবে, তােমার পৃথিবীও তােমার সঙ্গে বুড়ি হবে, তুমি আর মেলাতে পারবে না। তােমার যুবক সন্তানের যুবতী পৃথিবীর সঙ্গে, তােমার বুড়াে বয়সের বুড়ি পৃথিবী মিলবে না। ব্যাস তাই বললেন—পৃথিবী গতযৌবনা।
মহাভারতের শেষ লগ্নে যখন কুন্তী চলেছেন গান্ধারী-ধৃতরাষ্ট্রের সাথে বনে বানপ্রস্থে , সেই কথাই আবার একবার মনে করিয়ে দিয়েছেন ব্যাসকবি - ধরায় প্রাণের খেলা চির তরঙ্গীত। সময় বুঝে মুকুট মাথা থেকে না নামালে এই কালচক্র ক্ষমা করবে না আমাদের-কারো সেটা আগে , কারো খানিক পরে !!