STORYMIRROR

Ayan Banerjee

Children Stories Fantasy Children

3  

Ayan Banerjee

Children Stories Fantasy Children

পরমহংস

পরমহংস

4 mins
255


এক ছিল কাক ৷ সে এক ধনী বৈশ্যের ছেলের উচ্ছিষ্ট খেয়ে জীবিকা নিৰ্ব্বাহ করতো। বৈশ্যের ছেলেরা তাকে মাংস, ভাত, দই, দুধ, ক্ষীর, মধু, ঘি প্রভৃতির ভুক্তাবশিষ্ট খেতে দিত। এই সব সুস্বাদু ও পুষ্টিকর আহার পেয়ে কাক বেশ মোটাসোটা হয়েছে। ধনীর উচ্ছিষ্টভোজী হয়েও তার লজ্জা নেই। হীনযোনি কাক অহঙ্কারে স্ফীত। পরের খেয়ে পালোয়ান হয়ে সে কাউকে গ্রাহ্যই করে না। নিজের সমান পক্ষীদের অপমান তো করেই, অন্য শ্রেষ্ঠ পক্ষীদেরও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে। সে যেন একটা কেউকেটা।

এক ঝাক হাস উড়তে উড়তে সমুদ্রতীরে। সুন্দর সেই হাঁসগুলি। শরীরে চক্রচিহ্ন। গতি যেন গরুড়ের তুল্য, অথচ নীচে থেকে মনে হয় স্থির। আর তাদের মনে আনন্দও বেশ।

“কাক! তুমি তো পক্ষীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। দেখ তো হাঁসগুলি কত উঁচু দিয়ে উড়ছে। তুমি বোধহয় ইচ্ছে করেই এত দূরে উড়তে চেষ্টা কর নি। এক বার উড়না, আমরা দেখি।” — একদল বালকের পরিহাস। মূর্খ কাক বুঝতে পারে নি এই ঠাট্টা। মনে করেছে ঠিক বলেছে। আমিই বা কম কিসে। ইচ্ছে করলেই হাঁসদের স্পর্দ্ধা করতে পারি। এক জাঁদরেল হাঁসকে প্রতিযোগিতায় আহ্বান করে বলে “এস, আমরা দু’জনে উড়বো।”

হাঁস তো হেসে লুটোপুটি – “আরে কাক! আমরা মানস সরোবরের বাসিন্দে - সারা পৃথিবীতে বিচরণ করি, আমরা প্রচুর উড়তে পারি। তাই সব পাখীরাই আমাদের সম্মান করে। দুৰ্ম্মতি! কাক হয়ে হাঁসের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা? আচ্ছা, বেশ! এখন বল দেখি তুমি কি ভাবে আমাদের সঙ্গে উড়বে?”

“আমি একশো এক রকম ভঙ্গিতে উড়তে পারি। প্রত্যেক পদ্ধতিই শত শত যোজন পৰ্য্যন্ত হয় এবং প্রত্যেকটা পদ্ধতিই আবার নানা রকমের, আর বিচিত্র।”


“কাক, তুমি অবশ্যই একশত এক প্রকারে উড়তে পার। কিন্তু, আমি তো ভাই, মাত্র এক রকম উড়বার নিয়মই জানি, যা সকল পাখীই পারে। আমি তো এক ছাড়া দু'রকম কায়দা জানিনে। হে তাম্রাক্ষ কাক! তুমি ভাই যে ভাবে পছন্দ কর, সে ভাবেই উড়তে থাক।”


 “দুয়ো! দুয়ো। জানে না, জানে না। এক রকম ছাড়া অন্য কায়দা জানে না। এই হাঁসটা এক রকম কায়দায় এক শ এক কায়দার কাককে কি উপায়ে জয় করবে ?*

আশে পাশের বোকা কাকগুলি কলরব করে, আর হাসে। তারা স্থির করে ফেলেছে, এই আকাশ প্রতিযোগিতায় দর্পী কাকের জয় অবশ্যম্ভাবী। আর স্বজাতির জয়ে কার না উল্লাস হয় !

শুরু হয় এবার বুদ্ধিমান হাঁসের খেলা। সে গতি বাড়িয়ে চলে আসে মাঝ সমুদ্রে আর বাহাদুরি দেখিয়ে টেক্কা দিতে কাক ও হাজির হয় সেখানে। কিন্তু ওস্তাদ কাক এবার শ্রান্ত ।চারিদিকে জল - ক্লান্ত ডানা জুড়াবার জন্য এক চিলতে মাটিও নেই যেখানে সে নেমে দুদণ্ড বিশ্রাম নেবে। এদিকে যদি ওড়া বন্ধ হয়ে যায় মাঝ সমুদ্দুরের ভয়ংকর প্রাণীরা ছিঁড়ে খাবে কাক কে। অথচ হাঁস তখন ও ধীর স্থির ভাবে উড়ে চলেছে। ওদিকে কাক বুঝতে পারছে তার প্রাণ ওষ্ঠাগত।

কাকের এ রকম দশাই তো হাঁসের অভিপ্রেত ছিল সে বুঝতে পেরেছে কাকের আর দম নেই। অনেক পিছনে পড়ে গেছে কাক। হাঁস এবার গতি শিথিল করে। অপেক্ষ করতে থাকে কাকের জন্য। ইতোমধ্যে হাঁপাতে হাপাতে কাক কোন মতে হাঁসকে ধরেছে। শোচনীয় অবস্থা। জলের ভিতরে হুমড়ি খেয়ে পড়ে এবার। পাখা জলে ভিজে গেছে মুখ থুবড়ে পড়ে জল খাচ্ছে।


"ভাই কাক। তুমি তো একশ এক রকমের উড়বার কায়দা ব্যাখ্যা করেছ। কিন্তু এখন যে ভাবে উড়ছে, সেই গোপন কায়দার কথা আগে বলো নি কেন? এখন তুমি যে ভাবে উড়ছে, সে ভঙ্গিটার নাম কি? তুমি দু'টো পাখা আর ঠোঁট দিয়ে জল স্পর্শ করছো কেন?

দর্পী কাক বুঝতে পারে নিজের মূর্খ ব্যবহারের ফল। 

"ভাই হাস। কি জানি আমরা। আমরা শুধু থ কা কলরব করি। ভাই, জীবনরক্ষায় আমি তোমার শরণাগত। তুমি আমাকে বাঁচাও, সমুদ্রের তীরে পৌঁছে দাও। আমার ঘাট হয়েছে।” বলতে বলতেই পরিশ্রান্ত ও পীড়িত কাক সমুদ্রের জলে লুটিয়ে পড়ে। উড়বার ক্ষমতা আর নেই। পাখা দুটো অবশ, অচল। সে এখন মৃত্যুর মুখোমুখি।


“ওরে বাহাদুর। তুমি এত বড়াই করছিলে , একশ এক রকম কায়দা জান। সেগুলি এখন স্মরণ কর। একটা উপযোগী কায়দা খাটাও। তুমি তো ভাই, আমার চেয়ে বহুগুণে শক্তিমান। তুমি কেন ডুবে মরবে?”


"আমি উচ্ছিষ্টভোজী কাক। আমি না বুঝে অত্যন্ত দর্পিত হয়ে পড়েছিলাম। অন্য কাক ও অন্য পাখিদের তিরস্কার করেছি, আর নিজকে গরুড়ের ন্যায়ই বলবান বলে জাহির করেছি। উচিত শিক্ষা হয়ে গেছে। জীবনে এমন কাজ আর করবো না। তুমি আমাকে বিপদ থেকে বাঁচাও। আমি তোমার শরণাগত। আমাকে দ্বীপের মধ্যে পৌঁছে দাও !!"


সদাশয় হংস এবার এগিয়ে আসে। কৌশলে পা দিয়ে তাকে ঝটিতি পিঠে তুলে নেয়। তারপর উড়তে থাকে তীর বেগে। একটা দ্বীপের মাটিতে ছেড়ে দিয়ে হাঁস যাত্রা করে তার নিজের লক্ষ্যে।


ক্ষমতার বাইরে বাহাদুরি দেখাতে গেলে সেই আস্ফালনের কি পরিণাম, বীরদপী কর্ণ তা বুঝুক এবং সে দর্প পরিত্যাগ করুক। নিজের জীবন যদি বাঁচাতে চায় তবে কর্ণের উচিত কৃষ্ণ ও অর্জুনের শরণাগত হওয়া। এই কথা বলেছিলেন মহারাজ শল্য। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে মহারথ কর্ণের সারথ্য স্বীকার করে কর্ণেরই শক্তি লাঘবের জন্য এই গল্পের অবতারণা। মহাভারতের কর্ণ পর্বের একচল্লিশ অধ্যায়ের এই গল্প আমাদের শেখায় মূর্খের অহংকার আর যোগীর ড্রপের মধ্যে ফারাকটা ঠিক কোথায় !


Rate this content
Log in