Ayan Banerjee

Children Stories Fantasy Children

4.9  

Ayan Banerjee

Children Stories Fantasy Children

শিবপুরাণ এর গল্প

শিবপুরাণ এর গল্প

4 mins
1.8K


মহেঞ্জোদড় র সময় থেকেই যে শিবঠাকুরের অর্চনা হয়ে আসছে এত আমরা অনেকেই শুনেছি। শিব যে অবৈদিক দেবতা তথা অনার্য দের আরাধ্য সেটাও ঐতিহাসিকরা মোটামুটি মেনে নিয়েছেন। এমনকি খোদ ঋগ্বেদ ও বলছে রুদ্রের নাম বৈদিক দেবতাদের মন্ত্রোচ্চারনের আগে না নিতে-গ্রিফিথ সাহেবের অনুবাদে "one who should not be named "!! এহেন শিব ঠাকুর পরবর্তী কালের পৌরাণিক হিন্দুত্ত্বে ত্রিমুর্তির ভিতর স্থান পেলেন বটে - আর শুধু পেলেন না দেবাদিদেব হিসেবে পেলেন। কিন্তু শিবপুরাণ বা লিঙ্গপুরাণের বর্ণনায় এই বৈদিক আচার বিচারের বিরুদ্ধ protagonism উঠে এসেছে বার বার। এক অনার্য দেবতার যজ্ঞে আমন্ত্রণ নেই , প্রতিবাদে স্ত্রী অপমানে দেহত্যাগ করেছেন আর শোকে পাগল শিব তার ভুত দানব চেলা দের নিয়ে এসে লন্ডভন্ড করে দিচ্ছেন বৈদিক যজ্ঞের অনুষ্ঠান।এমনকি শেষ অব্দি মিটমাট হয়ে গেল , দক্ষ প্রাণ ফিরে পেয়ে শিবের উদ্দেশ্যে হবি উৎসর্গ করলেন কিন্তু তাতেও রাগ গেলনা শিবঠাকুরের। লিংগপুরান বলছে , সেই হবি এক কুকুরকে খেতে দিয়ে শিব ফিরে গেলেন শ্মশানে । স্বয়ং ঋগ্বেদ বলছে কুকুরের ঘ্রানে দেবতার হবি অশুদ্ধ , সেই কুকুর কে দিয়ে শিবঠাকুর নিজের representation করালেন এটাও একটা protest statement নয় কী! আবার এটাও খেয়াল করার মত বৈদিক সমাজ শিবঠাকুর কে মেনে নিলেও যোগী কিন্তু ফিরে গেছেন সেই শ্মশান ভূমিতে , যেখানে শব অর্থাৎ মৃত্যুর সাথে সংযুক্তি থাকায় বৈদিক শাস্ত্রের অনাগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মত। সুতরাং সেই শিবপুরাণে বৈদিক ব্রাহ্মনকে নিয়ে একটা দুটো রূপক গপ্প থাকবে না তা কি হয়?!?আজকে শোনাই তেমন একটা গল্প ।রাজা শতানীক ছিলেন পরম দয়ালু এক রাজা। তার রাজত্ত্বে ব্রাহ্মণদের সম্মান ছিল প্রবল। সর্বদা লেগে থাকতো যাগ যজ্ঞ আর সেই সুবাদে বৈদিক ব্রাহ্মণদের অর্থ এবং অন্ন সংস্থানের অসুবিধা হত না। তার উপর ছিল রাজমশায়ের ব্রাহ্মণ ভোজন আর দান ধ্যান । এমন ভালো রাজা একদিন মারা গেলেন। ব্রাহ্মণ পুরোহিতরা স্বর্গ কামনায় বিস্তর যাগ যজ্ঞ করলেন। সিংহাসনে বসলেন এবার রাজকুমার সহস্রাণীক। নতুন রাজা ক্ষমতায় বসেই নিয়ম দিলেন উল্টে।সব যাগ যজ্ঞ বন্ধ , শুধু দরিদ্র প্রজা ছাড়া কেউ রাজার থেকে দান পাবে না। বামুন ঠাকুররা পড়লেন মহা বিপদে রোজগার পাতি বনধ হয়ে যাওয়ায়। তারা গিয়ে নতুন রাজা কে বোঝাতে শুরু করলেন যে তার প্রয়াত পিতা ঠাকুর কত পুন্য করে গেছেন আর তার সন্তান হয়ে এটা ঠিক কাজ করছেন না।সহস্রাণীক বললেন , আমার বাবা যখন এত পুন্য করে গেছেন আবার তার পরেও স্বর্গ লাভের জন্য এত উপাচার করা হল যখন , তার মানে তিনি নিশ্চয় এখন স্বর্গে। আপনাদের মধ্যে কেউ স্বর্গে গিয়ে একবার দেখে আসুন গিয়ে আমার বাবা এখন স্বর্গে কতটা সুখে আছেন। সেইমত আমিও আমার বাবা র মত যাগ যজ্ঞ আর ব্রাহ্মণ ভোজন-দানে মন দেব। বামুন ঠাকুর রা পড়লেন বিপদে। এমন যোগবল তো সাধারণ ব্রাহ্মনের থাকে না যে সূক্ষ শরীরে স্বর্গে গিয়ে এসব দেখে আসতে পারে। তারা গিয়ে ধরলেন কাশ্যপ মুনিকে। কাশ্যপ সবার অনুরোধে গেলেন স্বর্গে রাজা শতানীকের সাথে দেখা করতে।গিয়ে তিনি অবাক। রাজার সঞ্চিত পুন্য শেষ তাই তিনি এখন নরকে। অবাক হয়ে কাশ্যপ হাজির হলেন নরকে।শতানীকের কাছে প্রশ্ন করলেন এরকম হল কী করে। রাজা বললেন ঠাকুর কী আর বলব -সারাজীবন যাকে ধর্ম বলে জানলাম সেই আমার নরকবাসের কারন।কাশ্যপ বুঝলেন না। রাজা বোঝালেন-তার দেয়া সম্পত্তি ভোগ করে তার রাজ্যের ব্রাহ্মণরা পঠন পাঠন সাধু সঙ্গ ভুলে লোভী হয়ে গেছেন। রক্ত ঘাম ঝরিয়ে শূদ্র বৈশ্যরা রাজকোষ ভরিয়েছে আর ফায়দা তুলে গেছে বামুনগুলো। তাতে সমাজে শুধু বৈষম্য আসেনি তার সাথে সাথে ব্রাহ্মনরা ও হারিয়েছে তাদের ব্রহ্ম জ্ঞান। সেই পাপে শতানীকের নরকবাস। কাশ্যপ গিয়ে জানালেন এই সংবাদ সহস্রাণীক কে। মুচকি হেসে সহস্রাণীক বললেন আমি জানতাম-আপনাদের এই যাগ যজ্ঞ পূজা উপাচার মানুষকে স্বর্গে পাঠায় না এমনকি পুণ্য অর্জন করতেও।সাহায্য করে না। আমি চললাম এক বছরের তীর্থযাত্রায়।যে ভুল আমার বাবা করেছেন তার প্রায়শ্চিত্ত করে তার নরকবাসের অবসান করানো এখন আমার প্রধান কাজ। রাজা পথে নেমে তীর্থ ঘুরে বুঝলেন মোক্ষ রয়েছে শূদ্রের শ্রমে , বৈশ্য র বাণিজ্যে আর ক্ষত্রিয়ের শৌর্যে।পথে বেরিয়ে ছদ্মবেশে রাজা যোগ দিলেন মজুরদের দলে। এক বছর কায়িক পরিশ্রম করে লব্ধ উপার্জন নিয়ে রাজা ফিরে এলেন রাজবাড়ীতে। প্রায়শ্চিত্তের শেষ হল। ব্রাহ্মণদের ডেকে নিজের উপার্জিত ধন দান করে বললেন এতদিন আপনারা অসৎ উপায়ে গরিবের থেকে কেড়ে নেয়া ধন পেতেন রাজকোষ থেকে আর গরীবরা থাকতো অভুক্ত। আজ প্রথম আপনারা পেলেন শ্রমের মাধ্যমে অর্জিত ধন।আপনাদের পাপ স্খলন হল এতদিনে। ব্রাহ্মণরা ফিরে পেলেন জ্ঞান শূদ্রের ঘামের ছোয়ায়।শতানীকের নরকবাস শেষ হল আর সাধারণ প্রজারা ধন্য ধন্য করতে লাগলো নতুন রাজা সহস্রাণীক-এর


"তিনি গেছেন যেথায় মাটি ভেঙে

       করছে চাষা চাষ--

       পাথর ভেঙে কাটছে যেথায় পথ,

          খাটছে বারো মাস।

       রৌদ্রে জলে আছেন সবার সাথে,

       ধুলা তাহার লেগেছে দুই হাতে;

       তাঁরি মতন শুচি বসন ছাড়ি

          আয় রে ধুলার 'পরে।


Rate this content
Log in