মার্কণ্ডেয়
মার্কণ্ডেয়
ভারতীয় পুরাণে হাজার হাজার মুনি ঋষিদের উল্লেখ আছে। সেই সৃষ্টির ঊষাকালে পিতামহ ব্রহ্মার মানস সন্তান সাত ঋষি ধ্যানে বসলেন সৃষ্টির সৃজনে , তারপর থেকেই যেকোনো গল্পে যেকোনো রাজার মূল ঘটনা তন্তুতে জড়িয়ে আছেন কোনো না কোনো মুনি
মহাভারতের বনপর্বে এমন এক মুনির কথা আমরা জানতে পাই- মারকেন্ডয় মুনি। তার কাছে পাণ্ডবরা , বিশেষ করে যুধিষ্ঠির অনেক গল্প শুনছেন - তৈরি করছেন নিজেদের আগামীর যোগ্য রাজা হিসেবে।
দেবাদিদেব মহাদেবের বরে অমর হয়েছিলেন ঋষি মার্কণ্ডেয়। মার্কণ্ডেয় পুরাণ এবং ভাগবত পুরাণে এই ঋষির অমরত্বের কাহিনি বর্ণনা আছে। কথিত আছে, ভৃগু বংশীয় ঋষি ও ঋষিপত্তী মূকন্দু ও মরুপমতী ভগবান শিবের কাছে একটি সন্তান প্রার্থনা করেন। শিব তাদের দু'টি সন্তানের মধ্যে বেছে নিতে বলেন। একটি সন্তান যে অত্যন্ত বুদ্ধিমান, কিন্তু অল্প বয়সে তার মৃত্যু ঘটবে এবং অপর সন্তান দীর্ঘজীবী হবে কিও সে বােকা হবে। ঋষি প্রথম সন্তানকেই বেছে নিলেন এবং মার্কণ্ডেয়র জন্ম হল। ছােটবেলা থেকেই মার্কণ্ডেয় খুব শিবভক্ত ছিল। মাত্র ষােলাে বছর বয়সে মার্কণ্ডের মৃত্যুর ক্ষণউপস্থিত হল। মার্কণ্ডে স্থির করলেন, শিবলিঙ্গকে আলিন করে শিবের নাম নিয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করবেন। যথাসময়ে যমদূতরা এসে উপস্থিত হলেন। কিন্তু। মার্কণ্ডেয়র শিবাত্তি দেবে না। কিছুতেই তাকে নিয়ে যেতে পারলেন না। অবশেষে যমরাজ স্বয়ং এসে উপস্থিত হলেন। মার্কণ্ডেয়কে বেঁধে ফেলার জন্য দড়ির ফাঁস ছুড়তেই সেই ফাঁসে শিবলিঙ্গ অর্থাৎ মহাদেব বাঁধা পড়লেন। আর অমনি মহাদেব আর যমরাজের মধ্যে যুদ্ধ বেঁধে গেল।
মনে পরাজিত করার পর মহাদেব মার্কণ্ডেয়র নিষ্ঠা ও ভক্তিতে খুশি হয়ে তাঁর আয়ু যে শুধু বাড়িয়ে দিলেন তাই নয় , তাকে একেবারে চিরজীবী করে দিলেন। মৃত্যুকে আটকে দিয়ে শিবের নাম হল কালান্তক ।
মার্কণ্ডেয়কে ঘিরে অপর কাহিনিটির উল্লেখ রয়েছে ভাগবত পুরাণে। একবার ভগবান বিষ্ণু মার্কণ্ডেয়র সঙ্গে দেখা করতে আসেন এবং তাঁকে একটি বর প্রদান করার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। মার্কণ্ডেয় বিষ্ণুকে বলেন, বিষ্ণু যে এই পৃথিবীর আদি ও অন্ত সেটাই তিনি দেখতে চান। বিষ্ণু তখন পদ্মপাতার উপর বসে থাকা একটি র ছােট বালকের রূপ ধারণ করেন। তিনি মার্কণ্ডেয়কে নিজের মুখে প্রবেশ করতে বলেন। সেখানে প্রবেশ করে বিষ্ণুর পেট পর্যন্ত পৌছে তাে মার্কণ্ডেয় অবাক। বিষ্ণুর পেটের মধ্যে রয়েছে, সপ্ত সাগর, সপ্ত পর্বত সহ গােটা বিশ্ব। এই পৃথিবীকে যে বিষ্ণু সত্যিই নিজের মধ্যে ধারণ করেছেন সেটা মার্কণ্ডেয় বুঝতে পারলেন। মার্কণ্ডেয় যখন বিষ্ণুর পেটের ভিতর থেকে বেরিয়ে এলেন , দেখলেন কয়েক হাজার বছর পার হয়ে গেছে।
পরিশেষে বলি , মারকেন্ডয় পুরাণ হিন্দু শাস্ত্রের , বিশেষ করে র একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। মহালয়ার দিন যে উদাত্ত কণ্ঠে চন্ডী পাঠ হয় তার অধিকাংশ এই পুরাণের অংশ