কাশীধাম
কাশীধাম
স্কন্ধ পুরাণের গল্প শোনাবো আজকে।
শিব ঠাকুর কৈলাসে ছিলাম তপস্যায় মগ্ন। তার কোন অসুবিধা না হলেও তার গনেদের খাবার অসুবিধা হচ্ছিল বিস্তর, কারন বরফ ঘেরা কৈলাসে না আছে শস্য না আছে ফল মূল। এভাবে কেটে যাচ্ছিল কিন্তু সংসারে পার্বতী আসার পর শুরু হল আসল সমস্যা। প্রচন্ড ঠান্ডায় পার্বতীর হেঁসেল বন্ধ। ছেলেমেয়েরা এমনকি শিবের ছেলে চামুন্ডা রা অব্দি খেতে পাচ্ছে না, যদিও ভোলানাথের কোন হুঁশ নেই তিনি সংসার ক্ষুধা এসব মানসিক বৃত্তির অনেক ঊর্ধ্বে।
পার্বতী রেগে মেগে সংসার নিয়ে নেমে এলেন কাশী তে। সেখানে তার রূপ হল অন্নপূর্ণা। পিছন পিছন বাধ্য হয়ে ছেলে চামুন্ডা সমেত নেমে এলেন শিব ঠাকুর। তাকেও সংসারের অমোঘ মায়ায় সারা দিতে হল । শিব হলেন সামাজিক শঙ্কর।
দিব্যি চলছিল এভাবে। হঠাৎ কাশী তে শুরু হল এক দুর্ভিক্ষ। গাছ গেল শুকিয়ে , শস্য গেল নষ্ট হয়ে । ব্রহ্মা বুঝলেন ঘোর অধর্মের ফল এই দুর্যোগ। কিন্তু প্রথা অনুযায়ী যে মঙ্গলাচরন যজ্ঞ করা হবে তার জন্য একজন আদর্শ শুদ্ধ জীবন যাপনকারী যজমান চাই। খুঁজতে খুঁজতে ব্রহ্মা দেখা পেলেন একটি যুবকের। গহীন বনের মধ্যে সে করে চলেছে ভয়ঙ্কর তপস্যা। ব্রহ্মার অনুরোধ মেনে সেই যুবক , নাম তার রিপুঞ্জয় , সম্মত হলেন যজ্ঞ করতে । কিন্তু তার ছিল এক শর্ত। যজ্ঞ শেষ হবার পরেই সমস্ত দেব দেবীকে কাশী ত্যাগ করতে হবে। রিপুঞ্জয় কাশীর রাজা হয়ে একাই ধর্ম স্থাপন করতে চান কাশী তে। ব্রহ্মা ও দিলেন সেই বর- সাথে দিলেন এক শর্ত যেদিন রিপুঞ্জয়ের রাজ্যে সামান্য অধর্ম প্রবেশ করবে সেদিন থেকে এই বর আর কাজ করবে না।
সমস্যা হল শিবঠাকুরের। শীতকাল উপস্থিত আবার কিন্তু আর তিনি কাশী তে ঢুকতে পারছেন না ব্রহ্মার এই বরের দৌলতে।এদিকে মন পড়ে আছে কাশী তে। শিবঠাকুর পাঠালেন তার বিশ্বস্ত সহচর নন্দী ভৃঙ্গি কে যাতে তারা রাজা কে বুঝিয়ে শিব ঠাকুরের ফেরার ব্যবস্থা করতে পারে। তারা কাশীর সুন্দর রাজ্য দেখে সেখানেই থেকে গেল। ভুলে গেল প্রভুর আদেশ।
বিরক্ত শিব পার্বতীর বুদ্ধিতে চৌষট্টি যোগিনীকে পাঠালেন কাশীতে অনর্থ করতে। তারাও বিশেষ সুবিধা করতে পারল না রাজার বৈদিক যজ্ঞের এতই প্রভাব। এবার চেষ্টা করলেন স্বয়ং বিষ্ণু যদি রাজা কে ধর্ম চ্যুত করা যায় তার মোহিনী মূর্তি দিয়ে। রাজা রিপুঞ্জয় অর্থাৎ যিনি কিনা ষড় রিপু কে জয় করেছেন তিনি সেই প্রলোভনেও ভুললেন না । এরপর ব্রহ্মা গেলেন রাজার কাছে। গিয়ে বললেন এবার তুমি অশ্বমেধ যজ্ঞ কর , মনে এই বাসনা ছিল যে রাজা যদি যুদ্ধে প্রাণ হারান বা নিদেন পক্ষে ব্যস্ত হয়ে পড়েন সেই সুযোগে শিব ঠাকুর ঢুকে পড়বেন কাশীতে। রাজা দশ টি ঘোড়া পাঠালেন চারদিকে। তারাও বিনা ঝামেলায় ফিরে এলে , রাজা হলেন রাজচক্রবর্তী।কাশীর দশাস্বমেধ ঘাট সেই গল্পের পরিচয় বহন করে আজ ও।
শিব ঠাকুর আশা ছেড়ে দিয়ে বেজার মুখে বসে রইলেন। এগিয়ে এলেন গণেশ বাবার এই কষ্ঠ দেখে।
বললেন , এই রাজা এত যাগ যজ্ঞ করেন স্বর্গ লাভের জন্য এটাই একমাত্র রাজার চরিত্রের দুর্বলতা। গনেশ কাশীতে গেলেন জ্যোতিষী সেজে। সহজেই নাম ডাক হল তার। খুব স্বভাবতই তার ডাক পড়লো রাজার দরবারে। রিপুঞ্জয়ের নাম তখন রাজা দিবোদাস।
জ্যোতিষী হাত দেখে রাজাকে বললেন , মহারাজ সব ই তো আছে আপনার কিন্তু হাতে মোক্ষলাভের তো লক্ষণ দেখছিনা। রাজা মুষড়ে পড়লেন আর এটাই চাইছিলেন গনেশ ঠাকুর। রাজা প্রত্যাশা মত প্রশ্ন করলেন "কী করলে মোক্ষ লাভ হবে ঠাকুর পথ বাতলে দিন আমাকে।"
গনেশ এই সুযোগ আর হাতছাড়া করলেন না, গম্ভীর মুখে বললেন একটাই রাস্তা রাজা। শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করে পুজো শুরু করুন, সপ্তম দিনে আবাহন হবে স্বয়ং দেবাদিদেবের । তাকে কাশীর অধিশ্বর করে আপনি চেয়ে নিন শিবলোক। রাজা সেই মত স্থাপন করলেন বিশ্বেশরের মন্দির। শিব ঠাকুর সদল বলে হাজির হলেন কাশীতে । আর প্রসন্ন চিত্তে বড় দিলেন রাজা কে মোক্ষলাভের। শুধু তাই নয় সমস্ত মানবজাতি রিপুঞ্জয়ের এই আবাহন এ বর পেলো যে কাশীতে এসে যে কোনো মানুষ ই জীবনের শেষ প্রান্তিক লগ্নে লাভ করবেন মোক্ষ - শিবলোকে প্রবেশের অনুমতি।
সেই থেকে হিন্দু দের বিশ্বাস কাশীতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে পারলেই জন্ম মৃত্যুর অনন্ত খেলা চক্র থেকে মুক্তি মিলবে
