Ayan Banerjee

Children Stories Classics Inspirational

4.7  

Ayan Banerjee

Children Stories Classics Inspirational

দান

দান

4 mins
243


মহাভারতের বনপর্বের গল্প শোনাবো আজ

রাজা অষ্টক তার তিন ভাই কে নিয়ে রথে চেপে ঘুরতে বেড়িয়েছেন পথে দেখা দেবর্ষি নারদের সাথে 

রাজা অষ্টক দেবর্ষি নারদকে দেখে যথাবিহিত অভিবাদনপূর্ব্বক তাঁকে নিজের রথে তুলে নেন। এই অষ্টক রাজর্ষি বিশ্বামিত্রের তনয়।


ঐ রথে ছিলেন অষ্টকের আর তিন ভাই – প্রতৰ্দ্দন, বসুমনা ও ঔশীনর। তিন ভ্রাতার আগমন হয়েছিল অষ্টকের আয়োজিত অশ্বমেধ যজ্ঞের আশীর্ব্বাদ গ্রহণে। যজ্ঞশেষে চার ভাই রথে বেড়াতে বেরিয়েছেন। 

পরম বিষ্ণুভক্ত দেবর্ষি নারদ। স্বর্গে ও মর্ত্যে তাঁর অবাধ গতাগতি। মহাপুরুষ ত্রিকালদর্শী। সমস্তই তিনি জানেন। এক ভ্রাতার প্রশ্ন – - “আমরা চারজনেই তো দীর্ঘায়ুঃ

চারজনেই স্বর্গজনক প্রচুর যাগ যজ্ঞ করি। মুনিবর, বলুন, আগে কার মর্ত্যাবতরণ হবে।” 


-“এই রাজা অষ্টকের!"


“কেন?”


“আত্মশ্লাঘাই এর কারণ। আমি পূর্ব্বে একবার অষ্টকের গৃহে আসি। অষ্টক আমাকে রথে নিয়ে নগরের বাইরে বেড়াতে যান। এক জায়গায় বহু সহস্র নানা বর্ণের গরু দেখে আমি যখন প্রশ্ন করি, তখন অষ্টক বলেন যে, 

ঐ গরুগুলি তিনিই দান করেছেন। দানের বড়াই করার ফলে তাঁরই হবে আগে পতন।” অন্য তিনজনের মধ্যে আগে কার স্বর্গচ্যুতি? 

দেবর্ষি এই প্রশ্নের উত্তরে প্রতৰ্দ্দনের নাম উল্লেখ করেন।


প্রতৰ্দ্দনও দান করেছিলেন, কিন্তু তার দান ছিল দোষযুক্ত। নারদকে নিয়ে প্রতৰ্দ্দনও একদিন রথে চড়ে বেড়াতে বেরিয়েছিলেন। 

পথে এক ব্রাহ্মণ এসে রাজার কাছে একটা ঘোড়া চান। রাজা বলেন – আচ্ছা দিব, ফিরে আসি। কিন্তু ব্রাহ্মণ তক্ষুণি চান, তার সবুর সইছে না। ব্রাহ্মণকে দান করা উচিত মনে ক'রে প্রতদন রথের ডান পাশের ঘোড়াটি খুলে তাঁকে দান করেন।

কিছু দূর যেতেই আর এক ব্রাহ্মণ। তিনিও ঘোড়া চান। তিনি পেলেন রথের বা পাশের অশ্নটি। তৃতীয় ব্রাহ্মণের আবির্ভাবে তাকে দেওয়া হয় রথের সামনের দিকের বাঁ দিকের ঘোড়াটি।

এবার চার নম্বর ব্রাহ্মণের আগমন। আশ্চর্য্য, তিনিও প্রার্থনা করেন ঘোড়া। রাজা বলেন - আমি রাজধানীতে ফিরে গিয়ে আপনাকে দিব। কিন্তু ইনিও বিলম্ব সইছেন না। তক্ষুণি দিতে হবে। রাজা অগত্যা শেষ অশ্বটি ব্রাহ্মণকে দান ক'রে নিজেই রথ টেনে নিয়ে যান। 

বিরক্ত হয়ে বলেন- বামুনদের চাওয়ার মত আর কিছু নেই।

প্রতৰ্দ্দন দান করেছিলেন, আবার অসূয়া প্রকাশও করেছিলেন। দান করতে হয় অসুয়াশূন্য হয়ে। বসুমনা এবং ঔশীনর এঁদের ভিতরে বসুমনার আগে স্বর্গচ্যুতি ঘটবে। তাঁর দানও বিশুদ্ধ নয়।


একদা নারদ বসুমনাকে শশীর্ব্বাদ করেছিলেন, তাঁর বহুতর পুষ্পক রথ হবে। প্রথম পুষ্পক রথখানির প্রশংসা করায় বসুমনা বলেন – 'এ রথ তো আপনারই।' নারদের - দ্বিতীয় বার পুষ্পক রথের প্রয়োজন হলে বসুমনা ঐ একই কথার পুনরুত্তি করেন "এ রথ তো আপনারই।" - 

তৃতীয় বারেও রাজা একই উক্তি করেন এবং চাওয়া মাত্রই দিয়ে দেন। কিন্তু তৃতীয় রথ দানের সময় ব্রাহ্মণদের দেখাতে দেখাতে দেবর্ষির দিকে চেয়ে বসুমনা বলেন –

"আপনি পুষ্পক রথ সম্বন্ধে ভাল আশীর্ব্বাদই করেছিলেন।” অর্থাৎ, বারে বারে দিয়ে বারে বারে চেয়ে নেওয়া তো নিরর্থক আশীর্ব্বাদ।


বসুমনার মন বিদ্রোহী। এই রকম বিদ্রোহের দানে অক্ষয় স্বৰ্গ হয় না। 


তিন জনের পতন হয়ে গেল। অবশিষ্ট আছেন ঔশীনর আর স্বয়ং দেবর্ষি নারদ। প্রশ্ন আসে “আপনার সঙ্গে এক জনের স্বর্গে যেতে হবে। কে আগে যাবেন?”

দেবর্ষির দ্ব্যর্থহীন বলিষ্ঠ উত্তর “শিবি আগে যাবেন, আমি পতিত হব। কারণ, আমি তাঁর সমান নই।” মহামতি নারদ নিজের চেয়েও ঔশীনরকে অধিক গৌরব দিচ্ছেন তাঁর মহৎ দানের জন্য। অত্যাশ্চর্য্য, অভূতপূর্ব্ব তাঁর দানমাহাত্ম্য।


একদিন এক ব্রাহ্মণ এসে রাজাকে অন্ন প্রস্তুত করতে বলেন। তিনি মাংসের ঝোল আর ভাত খাবেন। নরমাংস চাই।রাজার নন্দন বৃহৎগর্ভের মাংস তার পছন্দ। ঐ পুত্রকে বধ ক'রে তার মাংস রান্না করে রাজাকে প্রতীক্ষা করতে বলা হয়। বামুনটা কি রাক্ষস না কি!

কিন্তু দানবীর ঔশীনর অবিচলিত। মাংস রান্না করে তিনি ব্রাহ্মণকে খুঁছেন।

এদিকে ব্রাহ্মণ বাধিয়ে দিয়েছেন এক ভয়াবহ কান্ড । আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন রাজার বাসগৃহে, কোষগৃহে অস্ত্রগৃহে স্ত্রীগৃহে, অশ্বশালায়, হস্তিশালায়। কত কোটি কোটি টাকার সম্পত্তিনাশ! এ আবার কোন্ যুগের বিক্ষোভ, বন্ধ, ধৰ্ম্মঘট! কিন্তু রাজা নির্বিকার।

ব্রাহ্মণকে দন্ডদান তো নয়ই, বরং বিনীত কণ্ঠে রাজা বলেন-“ভগবন, আপনার অন্ন প্রস্তুত।"ব্রাহ্মণ বিস্ময়ান্বিত।

“ভগবন্! আপনি অন্নভোজন করুন।”—পুনরায় নিবেদন। কিছুক্ষণ নীরবতার পর ব্রাহ্মণ উত্তর দেন – “আপনিই খান।"


ছেলের মাংস খাবে বাবা। এ কখনো হয়? এ হয়তো তার মহাপরীক্ষা। রাজা নির্ব্বিকার চিত্তে ভোজনে উদ্যত হলে অমনি ব্রাহ্মণ হাসতে হাসতে তাঁর হাত চেপে ধরেন - “ধন্য ধন্য। রাজন। আপনি ক্রোধকে জয় করেছেন। ব্রাহ্মণকে আপনার অদেয় কিছুই নেই।”


ঔশীনর মুখ তুলে চেয়ে দেখেন -আশ্চৰ্য্য ঘটনা! দেবকুমারের ন্যায় পবিত্র, সুন্দর ও অলঙ্কৃত পুত্রটি তাঁর সম্মুখেই রয়েছে। কিন্তু ব্রাহ্মণ অন্তর্হিত। স্বয়ং বিধাতাই এসেছিলেন শিবিকে পরীক্ষা করতে।

দান করতে হয় খোলা মনে। অহঙ্কার, অসুয়া, দ্রোহের স্র বশে যে দান, অথবা যে দানের পিছনে কোন বিশেষ মতলব = থাকে বা প্রতিদানের প্রত্যাশা থাকে, সে দান সাত্ত্বিক দান তা রাজসিক ও তামসিক দান। ঐ দানে স্বর্গ, হেভেন্ কোনটাই নেই।


অধুনা এক শ্রেণীর তথাকথিত দাতার আবির্ভাব ঘটেছে যারা সেবাব্রতের ছদ্মবেশে অর্থবিত্ত সাহায্যদানের । বিনিময়ে নীরিহ, দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের প্ররোচিত করছেন। এঁদের দান ও সেবাব্রত র উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তারা বিত্তের বিনিময়ে মানুষ কিনতে চেষ্টিত। এই মেকী দানকৰ্ম্মে কি লাভ?স্বৰ্গ - না, নরক?



Rate this content
Log in