ভুষণ্ডী
ভুষণ্ডী
হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী কয়েকটি চরিত্র চিরজীবী । মার্কেন্ডয় মুনির কথা আগে বলেছি।এছাড়াও আছেন দৈত্যরাজ বলি , ভক্ত প্রহ্লাদ , রাজা মরু এবং অবশ্যই ব্রহ্মার মানসপুত্র সাতজন ঋষি - মরিচী , অত্রি, পুলহ , পুলস্ত্য , ক্রতু , অঙ্গিরা এবং বশিষ্ট । যেটা মজার কথা তা হল এই তালিকাতে রয়েছে একটি প্রাণী - এক চিরঞ্জীব কাকও রয়েছে! অবাক হয়ে গেলে তাে? এই চিরজীবী কাকের নাম হল ভুশুণ্ড। এই কাক ত্রিকালজ্ঞ। অর্থাৎ স্বর্গ, মর্ত, পাতালে এমন কোনও বিষয় নেই, যা এই কাক জানে না। মেরু পর্বতের কল্পবৃক্ষে সবচেয়ে উঁচু ডালে এই আবেগহীন ও পরােপকারী কাক থাকে। সাধিকা অলম্বুষার পােষা চণ্ড কাক ও ব্রাহ্মী (ব্রহ্মার স্ত্রী বা সাধিকা) র পােষা হাঁসের একুশটি সন্তান হয়। এরা প্রত্যেকেই ভুশুণ্ড কাক বলে পরিচিত এবং চিরজীবী হয়। কিন্তু কুড়িটি কাক চিরজীবী হওয়াকে অভিশাপ মনে করে প্রাণত্যাগ করে। বেঁচে থাকে একটি ভুশুণ্ড। সে নাকি ঋষি বশিষ্ঠকে পাঁচবার জন্মাতে দেখেছে, ভগবান বুদ্ধকে ছবার জন্মাতে দেখেছে, সমুদ্রমন্থন দেখেছে, রাম রাবণের যুদ্ধ দেখেছে এবং কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধও দেখেছে। আর কী-কী যে দেখেছে, সে ওই কাকই জানে। কুরুক্ষেত্রে স্বয়ং ভগবান কৃষ্ণকে বেশ কড়া-কড়া জ্ঞান দিতেও ছাড়েনি এই কাক !কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের শেষে শ্রীকৃষ্ণ ভুষণ্ডীকে যুদ্ধের বিবরণ জিজ্ঞাসা করলে, উত্তরে ভুষণ্ডী বলেছিলেন যে, সত্যযুগে শুম্ভ-নিশুম্ভ যুদ্ধে বিনা আয়াসে তিনি দৈত্যের রক্ত ও মাংস আহার হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। ত্রেতাযুগে লঙ্কা-যুদ্ধে তাকে অল্প পরিশ্রম করতে হয়েছিল। কিন্তু কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে তার কষ্টের সীমা ছিল না। মহাভারতের পশ্চিম ভারতের লোকগাথায় এই কাকের একাধিক উল্লেখ পাওয়া যায়। বাংলা বাকধারা তেও ভুষণ্ডীর কাক বা ভুষণ্ডীর মাঠ (রাজশেখর বসুর বিখ্যাত নাটক) অর্থে সুপ্রাচীন এবং সর্বজ্ঞ কোনো মানুষ বা সাক্ষীকে বোঝায়। তার সূত্রপাত ও এই গল্পে।