Kumar Archita

Comedy Drama Romance

4.0  

Kumar Archita

Comedy Drama Romance

ঝাল মুড়ি

ঝাল মুড়ি

6 mins
552


ঝাল মুড়ি টক-ঝাল-মিষ্টি দিয়ে বানানো হয় আমাদের প্রেম জীবনটাও ঠিক ঐ ঝাল মুড়ির মতো কখনো ঝগড়া হয় মানে ঝাল, কখনো অভিমান হয় মানে টক,আর কখনো খুব ভালোবাসা আদর যত্ন হয় তখন মিষ্টি। আমাদের জীবনের থেকে কম বেশি এই ঝাল মুড়ির স্বাদ অনেকের জীবনে আলাদা হয়ে ফুটে ওঠে ঠিক তেমনই শর্বরী আর অমলের জীবন কাহিনীটা ঠিক এই ঝাল মুড়ির মধ্য দিয়ে শুরু হয়।তাদের প্রথম দেখা হয় হাওড়া স্টেশন রেলওয়ে কম্পার্টমেন্টে, তখন অমল ট্রেনের জানলার পাশে হাতপাখা দিয়ে হাওয়া করছে কারণ গ্রীষ্মকাল আর ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকলে তো কিছু বলারই নেই গাছপালা ও তো আশেপাশে সেরকম নেই যে তার থেকে বাতাস বয়ে আসবে,


 অগত্যা অমল তার কালো অফিস ব্যাগের ভেতর থেকে একটা ছোট হাত পাখাটা বার করে হওয়া করছে। ঠিক সেইসময় মস্ত একটা বড় ব্যাগ নিয়ে সেই কম্পার্টমেন্টে ঢুকে পড়ল শর্বরী,তার হাতে একটা ছোট ঝাল মুড়ি ঠোঙা আছে। তার হাতে সিটের নাম্বারটা দেখে অমলের ওপর বেজায় চটে গেল আর চেঁচানোর ভঙ্গিমায় অমলের দিকে তাকিয়ে বলল, 

"মশাই আপনি কি পড়াশোনা", জানেন না,নাকি অপরের সিটে বসবার খুব ইচ্ছা হয় তাই নিজের সিটে না বসে আপনি আমার সিটে বসে বসে রাজাদের মত পাখার হাওয়া খাচ্ছেন....?আপনার লজ্জা করে না...। অমল এরকম চরম বিনা দোষে অপমান সহ্য করতে না পেরে সে দাঁড়িয়ে উঠে-পড়ে বলল," আপনি যান যেখানে ইচ্ছা গিয়ে বসে পড়ুন", এখানে কি আপনার নাম লেখা আছে......যে এখানেই আপনাকে বসতে হবে। শর্বরী আরো গম্ভীর হয়ে বলল, নাহ্ !!.. লেখা নেই কিন্তু এটাই নিয়ম যার যেটা সিট তাকে সেখানেই বসতে হয়। আচ্ছা!মশাই...আপনি শুরন তো, আমি ওই সিটে বসব আমার হাতে এতো ভারী একটি ব্যাগ দেখতে পাচ্ছেন না..আপনি কি কানাও নাকি...? এতক্ষণ তো জানতাম যে আপনার লজ্জা নেই আর এখন তো দেখছি আপনার নাক কান সবই কাটা...। নিন নিন... নিন তো দেখি আমি একটু ব্যাগটা রেখে বসি,রীতিমতো ধাক্কা দিয়েই শর্বরী বসে পড়ল সিটের ওপরে। শর্বরীর এই বেয়াদপির জবাব দেবে বলে অমল মনে মনে ঠিক করে নিল।শর্বরী আপন-মনে গুনগুন গান করতে করতে ঝাল মুড়িটা খেতে লাগল....সে শিয়ালদা স্টেশনের এক নামি ঝাল মুড়ি বিক্রেতা থেকে সে কিনে এনেছে। শর্বরীর ঝাল ঝালমুরি খুব পছন্দ তার মধ্যে একটু টক হলে তো আর কোন কথাই নেই।শর্বরী কে ঝাল মুড়ি খেতে দেখতে দেখতে অমলের আর সহ্য হলো না সে গিয়ে ফট করে শর্বরীর হাত থেকে ঝাল মুড়িটা ছিনিয়ে নিয়ে খেতে শুরু করল,শর্বরী তখন রেগে গিয়ে ওকে একটা সজোরে চর কসালো....।গালে চড় পড়তেই ঝাল মুড়িটা অমলের হাত থেকে পড়ে গেল...., এই প্রথম তাদের ঝগড়ার সূত্রপাত হলো। কিন্তু ঝাল মুড়িটাতো পড়ে গেল,কিন্তু তাদের ঝগরা কিন্তু থামল না...উত্তরে উত্তর খালি কথার উপরে কথা দিয়ে বাড়তে লাগলো।পরে খেয়াল পড়তে তাদের মনে হল যে তারা রাস্তায় এরাম ভাবে কুকুরের মত ঝগড়া করছে তারা নিজেদের সব ঝগড়া থামিয়ে একে অপরকে দিকে মুখ ভেংচিয়ে চলে যায়।


দ্বিতীয়বার তাদের দেখা হয় একটা বাচ্চাদের পার্কে এখানেও তাদের ঝাল মুড়ি নিয়ে ঝগড়া সূত্রপাত হয়....এইবারে ঝগড়ার সূত্রপাতটা হয়েছিল অমলের দিক থেকে। ব্যাপারটা হয়েছিল কি...? অমল পার্কের মধ্যে বসে থাকা একটা ঝালমুড়িওয়ালার কাছ থেকে ঝালমুড়ি কিনে আরাম সে খেতে খেতে কানে হেডফোন গুঁজে গান শুনতে শুনতে পার্কের মাঠের মাঝখান দিয়ে হাঁটছিল তখনই শর্বরী ওপাশ থেকে আসার সময়ে একটা কুকুরের লেজে পা পড়ায়... কুকুরের তাড়া খেয়ে শর্বরী দৌড়াচ্ছিল আর সেই কুকুরের হাত থেকে বাঁচতে গিয়েই দৌড়াতে দৌড়াতে গিয়ে অমলের ঘাড়ে গিয়ে পড়ল। দুজনেই হুমড়ি খেয়ে পড়ল আর তার সঙ্গে পড়ে গেল ঝাল মুড়িটাও প্রথমদিকে বুঝতে পারেনি যে সে কার সঙ্গে ধাক্কাটা খেয়েছে তারপর অমল যখন তাঁর উঠে দাড়ালো তখন মেয়েটার মুখের দিকে তাকাতেই সে বুঝতে পারলো যে এটাই সেই মেয়েটা না যে তার সঙ্গে ঝাল মুড়ি নিয়ে ঝগড়া করেছিল অমল বলল..." আপনি আমার এখান পর্যন্ত পিছু নিয়েছেন...."।আপনি আমাকে সেদিন বলেছিলে না যে আমি অভদ্র নাকি আমার কোনো শিক্ষাদীক্ষা নেই আর তাহলে আপনারও কোন শিক্ষাদীক্ষা নেই....কেন অকারণেই আপনি দৌড়ে এসে আমাকে ধাক্কা দিলেন আর আমার ঝাল মুড়িরটাকে ও ফেলে দিলেন। ও !.... আচ্ছা এবার আসল কথাটা বুঝতে পারলাম আমি যেমন আপনার ঝাল মুড়ি টাকে ফেলে দিয়েছিলাম,তাই আপনি আজকে আমার ঝাল মুড়িটা কে ফেলে দিয়ে বদলা নিয়ে নিলেন।তাহলে বেশ আপনার বদলা নেওয়া হয়ে গেছে তাহলে নিশ্চয়ই এখান থেকে আর আমার পিছু নেবেন না....। এই সব উল্টাপাল্টা কথা শুনে শর্বরী খেপে গিয়ে আসল কথাটা না বলে, বলে উঠল.....বেশ হয়েছে!....আমি যেমন সেদিন কে খেতে পারিনি আপনি ও আজকে খেতে পারলেন না এই বলে সে হাসতে হাসতে চলে গেল।তৃতীয়বার তাদের দেখা হয় তাদের দুজনের বিয়ের কথা বলতে মানে শর্বরী বাবা-মা আর অমলের বাবা-মা শর্বরী আর অমলের বিয়ের জন্য অমলের বাবা-মা শর্বরীর বাড়িতে কথা বলতে গিয়েছিল। অমল সেখানে শর্বরীকে দেখে চেঁচিয়ে উঠে বললো... আমি এই বিয়ে করতে পারব না কারণ...উনি খুব হিংসুটে আর অসভ্য টাইপের মহিলা।উনি সবার থেকে বদলা নেওয়ার মেন্টালিটি রাখেন তাই আমি ওনাকে বিয়ে করতে পারবোনা। ওপাশের সোফার উপরে বসা শর্বরী বলে উঠল..." আমার আপনাকে বিয়ে করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই",আপনার মত হ্যাংলা,পেটুক এবং বাঁদর ছেলে আমি আজ পর্যন্ত দেখিনি আর আশা করব এরপরে আর আমার যেন আপনার মত কোন বাঁদর ছেলের সঙ্গে কোনদিনও দেখা না হয়।তাদের কথাবার্তা দেখে তাদের পরিবারের লোক বুঝতে পারল যে শর্বরী আর অমল একে অপরকে চেনে কিন্তু একে অপরকে বিয়ে করতে একদম ইচ্ছুক নয়।কিন্তু এদিকে শর্বরী দাদু মশাই অমলের দাদা দাদা মশাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছিল সে বলেছিল বড় নাতনির সঙ্গে আপনার বড় নাতির বিয়ে হবে।কারণ অমলের দাদুর শর্বরীকে খুব পছন্দ হয়েছে আর অমলের দাদু শর্বরীকে প্রথম দেখাতেই পছন্দ করে ফেলেছিল।অমলের দাদুর সঙ্গে শর্বরীর দেখা হয় একটা শিব মন্দিরে শর্বরী তার মা শকুন্তলা দেবীর সঙ্গে মন্দিরের শিবরাত্রির পূজা দিতে গিয়েছিল। সেখানেই শর্বরীর সঙ্গে আলাপ হয় অমলের দাদু অম্বরিশ সেন।অমলের বাবা দেবেশ সেন এই ব্যাপারে জানতেন আর অমলের বাবা-মা তাদের মতামত দিয়ে দিয়েছিলেন যে শর্বরীর সঙ্গে অমলের বিয়েতে তাদের কোনো আপত্তি নেই।


কিন্তু এ তো দেখছি খুব বড় বিবাহ বিভ্রাট হয়ে গেল কারণ বর আর পাত্রী দুজনেই তো বিয়ে করতে মানা করে দিয়েছে...., অনেক ঝক্কি পোহাতে হলো অমলের আর শর্বরীর পরিবারকে শর্বরী আর অমলকে একে অপরকে বিয়ে করার জন্য রাজি করতে।পাকা দেখার পর শর্বরীর পরিবার বিয়ের জন্য একটা খুব ভালো দিন ঠিক করল সেই তারিখটি হল পহেলা বৈশাখ মানে 14ই এপ্রিল।বিয়ের দিন তাদের মেনুর মধ্যে যেটা সবথেকে স্পেশাল মেনু রাখা হয়েছিল সেটা হলো ঝাল মুড়ি.....। অমলা আর শর্বরীর এটাই সর্ত ছিল যে তারা বিয়ে করতে রাজি হবে যদি তাদের বিয়েতে সবথেকে স্পেশাল মেনুতে ঝাল মুড়িকে রাখা হয়। অজ্ঞতা শর্বরী আর অমলের মা-বাবাকে ছেলে মেয়ের কথা রাখতে হলো।যদি ও ঝাল মুড়ি নিয়ে এত ঝগড়া সৃষ্টি হয়েছিল সেই ঝাল মুড়ি রাখা হলো তাদের বিয়ের মেনুতে।বিয়ের দু 'মাসের মাথায় তারা বুঝতে পারলো যে তাদের যে ঝগড়াটা হয়েছিল সেটা একটা অহেতুক একটা মিছে ঝগরা মাত্র। ঝগড়াটা শুরু হয়েছিল সে শর্বরীর জায়গায় গিয়ে বসে ছিল আর সে শর্বরী হাত থেকে ঝাল মুড়িটা ছিনিয়ে নিয়ে খেয়ে ফেলেছিল শর্বরীর জায়গায় যদি অন্য কোন মেয়ে থাকতো সেও ঠিক এরকম রিয়েক্ট করত, কারন ভুলটা হয়েছিল।


অমলের সে স্বীকার করল যে সে ট্রেনের জানালার পাশে বসতে ভালবাসে তাই সে জানালার পাশের সিটটা থেকে সে উঠতে চাইনি আর তার খুব খিদে পেয়েছে তাই শর্বরীকে তার প্রিয় খাবার ঝাল মুড়ি খেতে দেখে সহ্য করতে না পেরে সে শর্বরীর হাত থেকে ঝাল মুড়িটাকে ছিনিয়ে নিয়ে খেতে শুরু করে দিয়েছিল। শর্বরীও স্বীকার করল যে তারও জানালার পাশের সিট খুব পছন্দ তাই সে প্রত্যেক সময় জানার পাশের সিটটা বুক করে থাকে আর তারও নাকি ঝাল মুড়ি খুব পছন্দ তাই ট্রেনে উঠলেই সে সবসময় ঝাল মুড়ি কেনে। তারা একে অপরের কাছে খুবই লজ্জিত আর ক্ষমাও চায় আপনারা এখন থেকে ঠিক করেছে তারা ঝাল মুড়ির মতো সামান্য ব্যাপার নিয়ে ঝগড়া করবে না।তাদের বিয়ের পাঁচ বছর পর একটা ছোট্ট ফুটফুটে পুত্রসন্তান আর কন্যা সন্তান হয় আর তারা তাদের নাম রাখি আলু কাবলি আর ভেলপুরি.....,কারণ শর্বরী যখন প্রেগন্যান্ট ছিল তখন সে আলু কাবলি আর ভেলপুরি খেতো। কিন্তু যেই প্রধান জিনিসটার জন্য তাদের বিবাহ সম্পন্ন হল আর তার একে অপরকে বুঝতে পারল জানতে পারল আর ভালোবাসলো সেই ঝাল মুড়িকে সে তার প্রেগনেন্সির সময়ও ভোলেনি।সে প্রত্যেকদিন বিকেলবেলা একবার করে তার স্বামীর অমলের হাতে মাখা ঝাল মুড়ি খেত আর মনে মনে হাসতে থাকতো অমল নিজের হাসি চেপে রাখতে পারত না সে হা হা.....করে হেসে ফেলতো।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Comedy