অণুগল্প: ইমারত
অণুগল্প: ইমারত
রেলের নতুন ভবন উদ্বোধন করতে আসছেন প্রতিমন্ত্রী শিলাজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়।
তার সম্বর্ধনার জন্য উঁচু করে স্টেজ বাঁধা হয়েছে নতুন স্টেশন ভবনের ঠিক সামনে। থাকছেন এলাকার জনপ্রিয় প্রতিনিধি সঞ্জীব শিকদার। আরো অন্যান্যরা। এলাহী ব্যাপার স্যাপার। দু'দিন ধরে পাড়ায় পাড়ায় প্রচার হয়েছে অটোতে। বিকেল তিনটের মধ্যে লোকে লোকারণ্য।
এলাকার মান্যগণ্যরা বক্তব্য রাখলেন। এমএলএ তহবিল থেকে কত টাকা দিয়ে নতুন ভবন তৈরী হয়েছে, সেই হিসেব পেশ হলো, পরবর্তী ইলেকশানের কথা মাথায় রেখে।
শিলাজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় উঠে জানালেন কীভাবে তিনি পরিশ্রম করেছেন এই স্টেশন ভবনের জন্য। কীভাবে তারই তদারকিতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পূর্ণ হয়েছে পুরো কাজ। আগামী দিনে জনগণের জন্য আরও অনেক কাজ করবেন, জানালেন তিনি।
সবশেষে উপস্থিত জনতার ভীড় থেকে কিছু গরীব বাচ্চাকে ডেকে নেওয়া হলো। কর্পোরেট সোশ্যাল রেস্পন্সিবিলিটির অধীনে দুঃস্থ ছাত্রদের স্কুল ইউনিফর্ম দিচ্ছে রেল।
এক এক করে শি
লাজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ওই বাচ্চাগুলির হাতে তুলে দিচ্ছেন একটি করে প্যাকেট।
"এই যে, তোমার নাম কী ?" একজনকে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন শিলাজিৎবাবু।
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে ছোট্ট ছেলেটি। এতো বড়ো বড়ো ব্যাপার সে কখনো দেখেনি। ভীড়ের দিক থেকে কারুর আর্তি ভেসে এলো তার উদ্দেশ্যে, "নাম বল, নাম -"
"আমার নাম - নকুল। নকুল সরদার।" ঢোঁক গিলে বললো ছেলেটি। তারপর অবলীলাক্রমে নিষ্পাপ একটা আঙ্গুল তুলে দেখালো সদ্য তৈরী হওয়া ষ্টেশন ভবনের দিকে। "আমার বাবা এই ষ্টেশানটা তৈরী করেছে।"
মঞ্চে থাকা বাকি অভ্যাগতদের দিকে একবার অবাক হয়ে দেখে নিলেন শিলাজিৎবাবু। তারপর ছেলেটিকে আবার জিজ্ঞাসা করলেন, "কী করেন তোমার বাবা ?"
"আমার বাবা বালি সিমেন্টের কাজ করে। বাবা তৈরী করেছে এই ষ্টেশানটা। আমি দেখেছি।"
কোনোমতে ইউনিফর্মের প্যাকেটটা চুপচাপ তার হাতে তুলে দিলেন শিলাজিৎবাবু। তাকে দেখে তখন মনে হচ্ছিলো কেউ যেন মুখে ঝামা ঘষে দিয়েছে।
~~~