Gopa Ghosh

Fantasy Inspirational Others

4.0  

Gopa Ghosh

Fantasy Inspirational Others

ইচ্ছা

ইচ্ছা

4 mins
229


শামুক আজও ব্যর্থ হয়ে ফিরে এলো। এই নিয়ে প্রায় সপ্তাহ খানেক ও ঘুরছে পাবলিশার্স এর অফিসে অফিসে কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পাণ্ডুলিপি খুলে দেখানোর আগেই বাইরে যাওয়ার রাস্তা দেখিয়ে দেয়। আবার অনেকে কপি রেখে যেতে বলে দায় সারেন। শামুক প্রায় দিন রাত এক করে এই লেখাটি প্রস্তুত করেছে কিন্তু দ্যাখাবে কাকে। মনটা মাঝে মাঝে ভেঙে পড়তে চাইছে না তা নয়, তবে ইচ্ছেটা তাকে আবার এক চাগারে তুলে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। শামুক জানে তার লেখা যদি কেউ মন দিয়ে পড়ে, তার ভালো লাগতে বাধ্য। তাই সেই চেষ্টায় এই সারাটাদিন ধরে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো। অফিস কামাই হয়ে গেছে বেশ কয়েকদিন। ওদের আবার নো ওয়ার্ক নো পে, বাঁচার জন্য পয়সারও তো প্রয়োজন। এছাড়া এক বন্ধুর কথা খুব মনে ধরলো শামুকের। পল্লব সব শুনে বলেছিল "তুই ফেসবুক আর অনলাইন দেখে লেখা পাঠা, ওরা ডাকলে তখন যাবি"। এরপর থেকে বেশ কয়েক জায়গায় লেখা পাঠালো। সত্যি করেই এক পত্রিকা থেকে ফোন করে ডেকে পাঠালো শামুককে। কিন্তু ফিরলো নিরাশ হয়ে। বেশ বড় অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে তারা ওর লেখা গল্পটি প্রকাশ করতে ইচ্ছুক। শামুক সরাসরি না বলেই ফিরেছে। লেখার মূল্যায়ন নয়, অর্থের বিনিময়ে শুধু মাত্র ছাপা অক্ষরে তার গল্পটি দেখতে সে নারাজ। 


এভাবেই ঘা খেতে খেতে শামুক লিখে ফেলল আরো বেশ কয়েকটি লেখা। নিজে বারবার পড়ে, আর নিজের মনেই বিড়বিড় করে "খুব সুন্দর লিখেছি"। এক এক বার ভাবে কেউ না পড়ুক, কেউ না ভালো বলুক, আমার নিজের লেখার পাঠক আমি নিজে, আবার সমালোচকও আমি। এত কিছুর পরেও শামুকের ইচ্ছে টা এক বিন্দুও দুর্বল হয়ে পড়ে নি, সে যখনই সময় পায় লিখতে বসে। কেউ দেখলো কি দেখলো না তাতে তার কিছু যায় আসে না। তাই তো পল্লবের একটা কথার উত্তরে বলেছিল "আমি আমার জন্য লিখি"।


একদিন অফিস থেকে ফেরার পথে একটা ফোন আসে, শামুকের মোবাইলে কোনো অজানা নম্বর থেকে। ফোন রিসিভ করে জানতে পারে এক পাবলিশার্স ওর পাণ্ডুলিপি দেখে দেখা করতে ডেকেছে। শামুক তখন ঘর পোড়া গরু, তাই সিঁদুরে মেঘ দেখলেই আতঙ্কিত হয়। কারণ ও জানে আগের মতোই আবার নতুন কেউ দর কষাকষির জন্য ডাকছে। শামুকের মন যেতে সায় দেয় না।


মোবাইল নম্বরটিও মুছে যায় এক সময়। শামুক ঘটনাটি ভুলতেই বসে ছিল যদি না শতাব্দীর সাথে সেদিন দেখা হতো। শতাব্দী ওর কলেজের বান্ধবী। আসলে শতাব্দীর বাবার একটি বইয়ের দোকান আছে । দোকানটি অবশ্য শান্তিনিকেতনে। শতাব্দী বীরভূমেরই মেয়ে, কলকাতায় হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা করেছে। একদিন বই পাড়ায় দেখা হতেই শামুক ওর লেখা গল্পের কথা তোলে। শতাব্দী সব শুনে বাবাকে বলে, কিছু একটা করবে বলে কথা দেয়। শামুক অবশ্য তাকে সতর্ক করতে ভোলে না পাণ্ডুলিপি পছন্দ না হলে সে বই প্রকাশ করতে চায় না। সেদিন শান্তিনিকেতন থেকেই এক পাবলিশার্স এর মালিক ফোন করেছিলো কিন্তু শামুক ধরে নি। শতাব্দীর কথা শুনে শামুকের মনটা যে একেবারে খারাপ হলো না তা নয়, তবে এত দিনের অভ্যাস বসত তা তাকে খুব একটা কাবু করতে পারলো না। 


  1. এর মাঝে ছোটো খাটো বেশ কিছু লেখা অনলাইন ম্যাগাজিন এ প্রকাশ হয়েছে শামুকের, সেগুলো প্রশংসিতও হয়েছে। তবে শামুকের মন ভরে নি। সে তার নিজের লেখা একটা গল্পের বই চায়। তার অদম্য ইচ্ছে একদিন তাকে সুযোগ করে দিলো তার নিজের লেখা বই প্রকাশের। শতাব্দী ওর বাবার পরিচিত পাবলিশার্স সাথে যোগাযোগ করে সব ব্যবস্থা করে দিলো। পাণ্ডুলিপি জমা পড়ল। শুধু বাকি বইটি প্রকাশের। শামুক খুবই আনন্দিত, ওর এতদিনের স্বপ্ন পূরণের দিন আসন্ন। পল্লব কে সব জানিয়ে নিমন্ত্রণ করলো ওই দিন উপস্থিত থাকার জন্য। পল্লব সেই দিন নয় আগের দিন এলো শামুকের সাথে দেখা করতে। সেদিন পল্লবের সাথে শামুকের যা কথা হলো তাতে শামুক যেনো এক ঝটকায় গিয়ে পড়লো স্বপ্নের বাইরের জগতটায়। শতাব্দী বেশ কিছু অর্থের বিনিময়ে শামুকের গল্পটি প্রকাশের ব্যবস্থা করেছিল, আর এই কথা শামুক কে না জানানোর শর্ত রেখেছিলো প্রকাশকের কাছে। শামুক কি করবে ভেবে পায় না, সে কি সত্যি শামুকের মতো গর্তে ঢুকে যাবে, না শতাব্দীকে বেশ দু কথা শুনিয়ে প্রাণটা ঠান্ডা করবে? কোথায় গেলো তার ওই অদম্য ইচ্ছে শক্তি ? তবে কি বাস্তবের কাছে সে এতটাই ফিকে যে ভালো করে দেখাই যায় না? সেদিন শামুক তার বই প্রকাশের অনুষ্ঠানে যায় নি। ফোন সুইচড অফ করে রেখেছিলো। বেশ কয়েকদিন পর কাগজের তৃতীয় পেজে একটা ছোট্ট খবরে চোখ পড়ে, সেখানে লেখা "শামুক সেনের লেখা ' ইচ্ছা ' বইটি একটি অসাধারণ বই, গল্পের বুনন এবং লেখকের ভাষা প্রয়োগ এক কথায় অসাধারণ"। শামুক বেশ কয়েকবার লাইন দুটি পড়লো। তবু মনে একটা কাঁটা খোঁচা দিয়ে যাচ্ছে অনবরত। শামুক ফোন করলো শতাব্দী কে। কোনো কুশল বিনিময় নয় একেবারে সরাসরি জিজ্ঞেস করে বসলো "আমার বই প্রকাশে কত টাকা লেগেছে?" শতাব্দী বেশ ঠাণ্ডা গলায় উত্তর দিলো "একটি পয়সাও না, তোর পাণ্ডুলিপি পড়ার আগে পর্যন্ত পয়সা নেওয়ার কথা হয়েছিল, কিন্তু পরে প্রকাশক নিজে উদ্যোগ নিয়ে বইটি প্রকাশ করেন। তুই যা ভাবছিস তা ঠিক নয় শামুক, এটা তোর সাফল্যের প্রথম সিঁড়ি"। শামুক তার বই প্রকাশের দিন অনুপস্থিত থাকার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে। শামুক যেনো স্পষ্ট দেখতে পায় তার স্বপ্নগুলো সারি বেঁধে তাকে হাত নেড়ে ডাকছে। নতুন উদ্যোগে বসে পড়ে আবার নতুন বই লেখার কাজে। 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Fantasy