হতভাগ্য
হতভাগ্য
কেনাকাটির পাঁচকাহন হয় নাকি আসলে তো সাতকাহন হয় । কাল বিয়ে আর আজ যদি মা তুমি বলো যে আজ আমার বাজার যাওয়া হবে না তা হলে থাক বিয়ে আমি কাল করবো না । এই বলে আলহাদী মুখ ভার করে বসে রইল । মা পড়েছে আতান্তরে , তিনি নিজের মেয়েকে খুব ভালো করেই চেনেন নামে সে আলহাদী স্বভাবেও সে আলহাদী । যখন বলেছে বিয়ে করবে না কাল আবার সত্যি না যদি করে দেয় তা হলে হয়েছে ।
একে কে বোঝাবে যে বিয়ের আগের দিন আইবুড়ো ভাত খাওয়া হয়ে গেছে আর বেরোতে নেই । এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে আলহাদীর মা প্রতিমা রাজি হলেন । আলহাদী সেজেগুজে পার্স নিয়ে নিজের অলট্রা টা নিয়ে বেরিয়ে গেল । আলহাদী নিউ মার্কেটে পৌঁছে যায় ওখানে আগে থেকেই অপেক্ষা করছে মৌ ওর বেস্ট ফ্রেন্ড । দুজনে মিলে পেন্ডিং কেনাকাটা করতে শুরু করে । কিছু জিনিস শপিং এর সময় ভুলে কেনা হয়নি তাই শেষ সময়ে এই মার্কেট আসা । একটা নিউ ডিজাইনার নথ আর একটা রাজস্থানি টিকলি নিলো আলহাদী । মায়ের ওই পুরোনো দিনের সোনার নথ আর টিকলি পড়তে তার বয়েই গেছে । একটা আই ল্যাস নিলো ও , সেদিন কসমেটিক বাজার করতে এসে যখন ওটা কিনতে চায় আলহাদী মা সটান না করে দেয় , কি যুক্তি ওগুলো পড়লে নাকি বহুরূপী লাগবে ওকে । তার পর মল থেকে একটা ডিজাইনার ব্লাউজ ডিপ নেক এর । ওই লোকাল টেলারের কাছে বানানো বিচ্ছিরি ব্লাউজ গুলো পড়লে দেবার্ঘ দের বাড়িতে প্রেস্টিজ থাকবে ? মা টা না কিছুই বোঝে না । যাই হোক বাজার থেকে বেরিয়ে মৌকে হালদিরামের কাছে ছেড়ে দিয়ে আলহাদী যখন বাড়ির রাস্তা ধরলো তখন ঘড়ির কাঁটা দশটা ছুঁই ছুঁই । এদিকে কোন আটটা থেকে মা বাবা হবু বর দেবার্ঘ একের পর এক ফোন করে যাচ্ছে । কাল ভোরেই দধী মঙ্গল , সত্যি তো দেরি হয়ে যাচ্ছে তাই গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিল আলহাদী । হটাৎ ফাঁকা রাস্তার মাঝে একটা কাউকে পড়ে থাকতে দেখে জোরে ব্রেক কসালো সে । সামনে কিছু একটা পরে আছে আর ওটা না সরলে গাড়ি এগোনোর চান্স নেই তাই সে গাড়ি থেকে নেমে এগিয়ে গেলো । একটা মানুষ সামনে পরে আছে , শুনশান রাস্তা ওকেই দেখতে হবে ব্যাপারটা কি তাই একটু ঝুঁকে সে দেখার চেষ্টা করে কি । তার পর , হটাৎ তীব্র জ্বালা সাড়া মুখে ছড়িয়ে পড়লো তার । যে এতক্ষণ রাস্তায় পরে ছিল সেই আলহাদীর মুখে ছুড়ে দিয়েছে এসিড । তীব্র জ্বলুনি , তার পর আলহাদী জ্ঞান হারিয়ে ফেলে । আক্রমণ করা সেই লোকটা সংজ্ঞাহীন আলহাদী কে রাস্তার পাশে ফেলে গাড়িটা নিয়ে সা করে বেরিয়ে যায় । গাড়ি চুরি করতে এই দলটা এভাবেই শিকার করে , তার পর গাড়ি অন্য রাজ্যে নিয়ে গিয়ে রং , গাড়ির পার্স পাল্টে বিক্রি করে দেয় । প্রতিমা দেবী যখন রাত এগারোটাতে ও মেয়ে ফিরলো না তখন আলহাদীর বাবাকে বললো পুলিশের কাছে যেতে । পরের দিন আলহাদী কে উদ্ধার করা হয় ওই রাস্তার পাশে মৃত । এসিড নিক্ষেপের পর ওই রাস্তায় পড়ে থাকার পর সারা রাত শিয়াল কুকুর ভাম ইত্যাদি খুবলে খেয়েছে মেয়েটাকে তার পর না জানি কত কষ্ট পেয়েই জীবনটা গেছে ওর । সন্ধ্যায় মেয়েকে সম্প্রদান করার কথা ছিল প্রতিমা দেবীর তার বদলে মেয়েকে চির বিদায় দিতে হচ্ছে , কেনাকাটা করতে ভালোবাসতো মেয়েটা তাই সাদা মার্কিনের বদলে বিয়ের জন্য নতুন কেনা লাল বেনারসিটাই মেয়ের উপর চাপিয়ে শেষ বিদায় দেয় মেয়েকে এক হতভাগ্য মা ।
